বিদ্রোহী জাতক – শফিউদ্দিন সরদার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

বিদ্রোহী জাতক – শফিউদ্দিন সরদার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ শফিউদ্দিন সরদার

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৭২

বিদ্রোহী জাতক – বইটির এক ঝলকঃ

দেবাসিংহ তার চেয়েও চড়া কণ্ঠে বললেন- না, ওরা কেউ নয়। এর জন্যে দায়ী আমরা। অধিক দায়ী তোমার মতো কুলিনেরা। নিজের জাতি কোন লোক ছাড়তে চায় সহজে। ছাড়তে যখন তাদের বাধ্য করা হয়, তখনই তারা ত্যাগ করে স্বধর্ম।
শিব সিংহ বললেন-মানে ?
দেবসিংহ ধিক্কারের সাথে বললেন, তোমাদের লজ্জা হয়না? ভিন ধর্মের লোকেরা তাদের আচরণ দিয়ে তোমার ধর্মের লোকদের তাদের ধর্মে টেনে নেয়, আর তোমরা তোমাদের আচরণ দিয়ে নিজ ধর্মের লোকদের নিজ ধর্মে রাখতে পারোনা, এরপরও দণ্ডের সাথে কথা বলতে আসো?
শিব সিংহের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। তিনি চিৎকার করে বললেন- আমি জানতে চাই, আপনার উদ্দেশ্য কি?
বজ্র কঠিন কণ্ঠে দেবসিংহ বললেন- আমি তোমাকে হুশিয়ার করে দিচ্ছি- এরপর আর একটা মানুষকেও যদি অন্যায় ভাবে নির্যাতন করো তুমি, তাহলে শুধু দ্বারভাঙ্গা থেকেই তোমাকে আমি পদচ্যুতই করবোনা। নির্মমভাবে হত্যা করবো তোমাকে।
ক্রোধে ফুলতে ফুলতে শিবসিংহ বললেন- আপনার যা খুশী তাই আপনি করবেন। কারো রক্তচক্ষুকে কখনও কোন পরোয়াই আমি করিনা।
বলেই রাজার কোন অনুমতির তোয়াক্কা না করে দর্পভরে দূরবার কক্ষ ত্যাগ করলেন শিবসিংহ। তা লক্ষ্য করে চরম আদেশ দিতে গিয়েও বাৎসল্যজনিত কারণে দেবসিংহ নিশ্চল হয়ে রইলেন।
এর পরের ঘটনা করুণ। শিবসিংহ তার আচরণতো পরিবর্তন করলেনই না, বরং তলে তলে পিতাকে সিংহাসনচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অসৎ আর বেঈমান সভাসদদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন। অনেক প্রলোভন ও লোভ দেখিয়ে গোপনে সৈন্যদের হাত করতে লাগলেন। তাঁর স্বেচ্ছারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে দেবসিংহ যখন সত্যি সত্যিই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করলেন, তখনই তিনি তাঁর পরামর্শদাতাদের যুক্তিতে বাংলা মুলুকে ধর্ণা দিলেন এবং রাজা গণেশের শরনাপন্ন হলেন।
রাজা গণেশের লক্ষ্য এতদঞ্চল থেকে মুসলমানদের উৎখাত করে হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠা করা, শিবসিংহের লক্ষ্য ত্রিহতের মসনদ। সঙ্গে সঙ্গে মিল হলো দুজনের। রাজা গণেশ শিবসিংহকে সৈন্যসামন্ত দিয়ে সাহায্য করতে এই শর্তে রাজী হলেন যে, ত্রিহুতের মসনদ অধিকার করতে পারলে শিবসিংহকে ত্রিহুত থেকে মুসলমানদের সমূলে উৎখাত করতে হবে।
শিবসিংহ আগে থেকেই মুসলমানদের বরদাস্ত করতে পারতেন না। এই শর্ত তিনি এক কথায় মেনে নিলেন। অতঃপর রাজা গণেশের সাহায্যে শিবসিংহ ব্রিহত রাজ দেবসিংহকে পরাজিত ও বন্দি করে হত্যার আদেশ দিলেন এবং ত্রিহুতের রাজারূপে নিজে সিংহাসনে আরোহণ করলেন। এই শিবসিংহ মসনদে বসার পর থেকেই শুরু হয়েছে মুসলমান নিধন অভিযান। এ প্রক্রিয়া এখন চরম পর্যায়ে উঠেছে। দ্বারভাঙ্গাতে অনেক মুসলমান সুফী সাধক ও ধর্ম প্রচারক বাস করতেন। এঁদের অধিকাংশকেই শিবসিংহ ইতিমধ্যেই হত্যা করেছেন এবং অবশিষ্ট মুসলমানদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে জান প্রাণ সঁপে দিয়ে লেগেছেন।
বক্তা সেপাইটি তার কাহিনী শেষ করে সুফী হযরত নূর কুতুব-ই আলম সাহেবকে অবশেষে জানালেন যে, শিবসিংহের হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর তাকিদে দ্বারভাঙ্গা থেকে পালিয়ে এরা বাংলা মুলুকে এসেছে। এখানে যে আরো বেশী মুসিবত বিদ্যমান, এরা নিশ্চয়ই তা সঠিকভাবে জানেনা।
সেপাইটির কথা শেষ হলে শায়খ আনোয়ার সাহেব আফসোস করে বললেন-এর পরও কি কিছুই করার নেই আমাদের? জালেমের জুলুম চলতেই থাকবে এইভাবে?
সুফী হজরত নূর কুতুব-ই-আলম সাহেব নীরব হয়ে গেলেন। নিষ্প্রাণ পাথরের মতো তিনি অসাড় হয়ে বসে রইলেন। দৃষ্টি তাঁর উদাস-লক্ষ্য তাঁর ঝাপসা।
ইতিমধ্যেই আর এক কাণ্ড ঘটে গেল। দ্বারভাঙ্গা থেকে আর একটা ছোট্ট দল ছুটতে ছুটতে এসে সুফী সাহেবের খানকা শরীফে হাজির হলো। তারা এসে দাঁড়াতেই শায়খ আনোয়ার সাহেব ফের আফসোস্ করে বললেন- ওরে কমবকতের দল, হেফাজতির উম্মিদে এ কোন আগুনের মধ্যে ছুটে আসছো তোমরা? দ্বারভাঙ্গার চেয়েও যে এ এলাকা এখন আরো বেশী খতরনাক্, এখবর কি কেউ তোমরা জানোনা?
নবাগতদের একজন সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো-না হুজুর আমরা এখানে এক লহমাও থাকার জন্যে আসিনি। আমরা ফের এখনই ওয়াপস্ যাবো অন্যদিকে। আমরা এসেছি এক নাখোশ পয়গাম বয়ে নিয়ে। আমরা জানতে পেরেছি দ্বারভাঙ্গার সুফী হজরত মখদুমশাহ সুলতান হোসেন সাহেব পান্ডুয়ার পাকদীল সুফী সাবেবের সহপাঠী ও দোস্ত। সেই পবিত্ৰাত্মা মখদুমশাহ সুলতান হোসেন সাহেবের ওপর চরম আঘাত হানার জন্যে রাজা শিবসিংহ স্বয়ং বেরিয়ে গেছেন ফৌজ নিয়ে। হজরত মখদুম শাহ সুলতান হোসেন সাহেবের সন্ধান যদি ইতিমধ্যেই শিবসিংহ পেয়ে থাকেন, তাহলে এতক্ষণ তাঁর পবিত্র খুনে দ্বারভাঙ্গার মাটি রঞ্জিত হয়ে গেছে। দ্বারভাঙ্গার অবশিষ্ট আলেমগণ এই পয়গাম সহ আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, সারা জাহানের অপরাজেয় মুসলমান শক্তি জিন্দা থাকতে হজরত মখদুম শাহ সুলতান হোসেন সাহেবের মতো ইসলামের এমন একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র যদি অকালে ঝরে যায়, তাহলে এটা যেমন একদিকে এ কওমের সকলের জন্যে এক মস্তবড় গুনাহ, অন্যদিকে তেমনি এক নিদারুণ লজ্জার ও দিগদারীর ব্যাপার। সকলের এ কসুর মার্জনার অতীত। কারণ সব জেনে শুনেও যার যতটুকু সাধ্য তা আমরা করছিনা বা যে এর বিহিত করতে পারে, তকলিফ করে তাঁর তালাশে ছুটছিনা।
বক্তা একটু থামলো। তারপর সে ফের বললো- এ অঞ্চলের সুফী শ্রেষ্ঠ পুন্যাত্মা হজরত নূর কুতুব-ই-আলম সাহেবের কাছে আমাদের আরজ এ ব্যাপারে যা সমীচিন মনে করেন তা অবশ্যই তিনি করবেন।
বলেই সে তার দল নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো এবং যেদিক থেকে এসেছিল এই কাসেদের দলটি আবার সেই দিকে ছুটে গেল। সুফী হজরত নূর কুতুব-ই-আলম সাহেবের চোখ দিয়ে এবার জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড ঠিকরে পড়তে লাগলো। এই মখদুম শাহ সুলতান হোসেন সাহেব শুধু একজন পুণ্যাত্মা লোক বা তাঁর সহপাঠীই ছিলেন না, নূর কুতুব-ই-আলমের পিতা উত্তর ভারতের বিখ্যাত দরবেশ আলাউল হক সাহেবের প্রিয় শিষ্য ছিলেন তিনি।
হজরত নূর কুতুব-ই-আলম সাহেব এবার অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে তাজউদ্দীন আর ভুলু খাঁর দিকে তাকাতেই তারা সিনা উচু করে বললো- তামাম অঘটনের মূল এই রাজা গণেশ। এজাযত দিন হজরত, যেটুকু সামর্থ আছে আমাদের, তাই নিয়ে গণেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি আমরা। এইভাবে হাতপা গুটিয়ে বসে থেকে আর এতটা বরদাস্ত করা যায়না।
উপস্থিত সকলেই তাদের তৎক্ষণাৎ সমর্থন দিলেন। কিন্তু পাথরের মতো শক্ত হয়ে হজরত নূর-কুতুব-ই-আলম সাহেব যেমন ভাবে বসেছিলেন তেমনি ভাবেই বসে রইলেন। কিছুক্ষণ কোন কথাই তিনি বললেন না। পরে অত্যন্ত গম্ভীর কন্ঠে বললেন, তোমাদেরকি ধারণা যে, তোমাদের ঐ শক্তি দিয়ে গণেশের সাথে তোমরা নিশ্চিতভাবে এঁটে উঠতে পারবে?
জবাবে তাজউদ্দীন বললো- সত্যের অপলাপ না করলে বলবো, আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবানির ফলে অলৌকিক কোন ঘটনা না ঘটলে, এ শক্তি নিয়ে একটা প্রতিষ্ঠিত রাজশক্তিকে উৎখাত করতে না পারলেও, সে শক্তিকে আমরা পঙ্গু করে দিয়ে শহীদ হতে পারবো।
সুফী সাহেব এবার ক্লীষ্ট হাসি হাসলেন। অত্যন্ত পেরেশান দিলে বললেন-সমস্যার কি সমাধান হলো তাতে? তার শক্তি পঙ্গু হবে, কিন্তু আমাদের শক্তি বিলকুল নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমাদের ঐ শক্তিটুকু আছে বলেই রাজা গণেশ তার আকাঙ্খা মাফিক খেয়াল খুশীর ফোয়ারা ছোটাতে পারছেনা। তাকে হোঁচট খেতে হচ্ছে। তার জুলুমের ঐ বেপরোয়া প্লাবনের মুখে এই বাঁধটুকু না থাকলে গোটা বাংলা মুলুকে এতদিন আর একটা মুসলমানও অবশিষ্ট থাকতো না। তার শক্তিকে পঙ্গু করতে গিয়ে আমাদের সেই বাঁধটাই যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাহলে গণেশের পরবর্তী আক্রোশ সামাল দেবে কে?
এর জবাব আর কারো মুখেই কথা যোগালোনা। ক্ষণিকের জন্যে সকলেই খামোশ হয়ে বসে রইলেন। কিছুক্ষণ পর সুফী সাহেবের নাতি শায়খ জাহিদ সাহেব সুফী সাহেবকে লক্ষ্য করে বললেন-এবার তাহলে দাদুকেই বলতে হবে, আমরা কি করবো? তাঁকে আর আমরা নীরব দেখতে চাইনে।
সুফী সাহেব নজর তুলে নাভির দিকে তাকালেন। এরপর শান্ত কন্ঠে ধীরে ধীরে বললেন- আর বলাবলি নয়। এবার যা করার তা আমাকেই করতে হবে।
নীরব প্রাঙ্গণ এবার ফেটে পড়লো নিনাদে। হাজেরান মজলিস এ কথায় অতিশয় উৎফুল হয়ে উঠলো। অনেকের ধারণা হলো- নিশ্চয়ই সুফী সাহেব এবার তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি – প্রয়োগ করবেন। আবেগের আধিক্যে একজন বুলন্দ কণ্ঠে আওয়াজ দিয়ে উঠলেন- নারায়ে তকবির-
“”আল্লাহ্ আকবর” শব্দে সঙ্গে সঙ্গে খানকা শরীফ প্রকম্পিত হলো। হাত ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দিলেন সুফী সাহেব। বললেন-এর অর্থ অন্য কিছু নয়। কওমের অস্তিত্বের খাতিরে কওমের যে কোন সামর্থবান খাদেমের মদদ নেয়া দোষের নয়। আমি সেই মদদ বা সাহায্য আহবান করবো। যে কেউ একজন তৈয়ার হও। এক্ষুনি আমি খত লিখে আনছি। এই খত নিয়ে তোমাদের কাউকে এক্ষুণি রওনা হতে হবে।
হাজেরান মজলিসের একজন প্রশ্ন করলেন কোথায়? কার কাছে?
সুফী সাহেব বললেন- সুলতান ইব্রাহিম শর্কীর কাছে। তিনি আমাকে চেনেন। এ ছাড়া সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী সাহেবও জৌনপুরে আছেন। তাঁকেও আমি লিখবো। আমার খত পেলে তিনিও সুপারিশ করবেন সুলতানকে। আমাদের দাওয়াত সুলতান ইব্রাহিম কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারবেন না।
তাজউদ্দীন প্রশ্ন করলো ইব্রাহিম শর্কী?
সুফী সাহেব বললেন- হ্যাঁ, ইব্রাহিম শর্কী। এতদঞ্চলের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুসলমান শক্তি। যার রাজ্য সীমানা জৌনপুরের বাইরেও সুদীর্ঘ এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলা মুলুকের মুসলমানদের এই মুসিবতের দিনে সেই শক্তিমান সুলতান ইব্রাহিম শর্কীকে তার করণীয় করার জন্যে দাওয়াত পাঠাবো আমি। দাওয়াত নিয়ে কে তোমরা যেতে চাও তৈয়ার হও।
সুফী হজরত নূর কুতুব-ই-আলম একজন বুজুর্গ ব্যক্তি। পরিস্থিতির মোকাবেলায় যে সিদ্ধান্ত উৎকৃষ্ট তাই তিনি গ্রহণ করবেন- এ সম্বন্ধে সন্দেহের তিল পরিমাণ অবকাশ কারো দিলে ছিলনা। ফলে সুলতান ইব্রাহিম শর্কীর কাছে যাওয়া নিয়ে জনতার মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হলো। কওমের খেদমতে কিঞ্চিৎ তকলিফ করতে পারাটাকেও সকলেই খোশ-নসীব আর সওয়াবের কাজ বলে গণ্য করতে লাগলো।
কিন্তু ইব্রাহিম শর্কী সমীপে দাওয়াতটা তড়িৎ গতিতে পৌঁছানো প্রয়োজন। সে সাধ্য জনতার সবার ছিলনা। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সবার আগ্রহ নাকচ করে সুফী হজরত নূর কুতুব- ই-আলম সাহেব জনতার ভিড় সরিয়ে দিলেন। এর পর সীমিত পরিমণ্ডলে বসে স্থির করলেন- এই দূতগিরি করার কাজে দ্রুতগতি সম্পন্ন একজন রণবিদকে প্রেরণ করাই বেহতর। কাজেই ইব্রাহিম শর্কীর কাছে খত নিয়ে রওনা হবে তৌহিদ বেগ আর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানীর কাছে খত নিয়ে ছুটবে তৌহিদ বেগের বাহিনীরই একজন দ্রুতগামী সওয়ার।
তৌহিদ বেগ নামের এক বাহাদুর যোদ্ধা তাঁদের দলে আছে এখবর গোপনভাবে সুফী দরবেশ আর উলামায়ে কেরামগণ সকলেই জানতেন। এটা তাঁরা সযতনে গোপন করেও রেখেছেন। কিন্তু আঙ্গুলে গোণা কয়েকজন ব্যক্তিছাড়া এই তৌহিদ বেগের আসল চেহারা আজ পর্যন্ত কেউ তাঁরা দেখেননি। আজ তাঁদের কেউ কেউ সেটা দেখার আগ্রহী হলে সুফী সাহেব তাঁদের থামিয়ে দিয়ে বললেন- সংগত কারণেই সেটা গোপন রাখা হয়েছে এবং এখনও সেটা গোপনই থাকবে। অতঃপর তিনি তাজউদ্দীনের দিকে তীক্ষ্ণ নজর নিঃক্ষেপ করে বললেন-তাজউদ্দীন তৌহিদ বেগকে অতি সত্বর এখানে আমি তৈয়ার দেখতে চাই-
“জি আচ্ছা হুজুর” বলেই তাজউদ্দীন উঠে দ্রুত পদে চলে গেল।
এরপর সুফী সাহেবও উঠে তাঁর খাস কামরায় চলে গেলেন এবং সুলতান ইব্রাহিম শর্কী ও সিমনানীকে খত লিখতে বসলেন। তিনি ইব্রাহিম শর্কীকে লিখলেনঃ
পাক জনাবেষু,
বাদ তসলীম জানাই, বাংলা মুলুকের বর্তমান শাসনকর্তা গণেশ নামক একজন বিধর্মী। তিনি অত্যাচার করিতেছেন এবং রক্তপাত করিতেছেন। তিনি অনেক জ্ঞানী এবং পূণ্যাত্মাকে হত্যা এবং ধ্বংস করিয়াছেন। এখন তিনি অবশিষ্ট মুসলমানকে হত্যা করার এবং ইসলামকে এই দেশ হইতে ধ্বংস করার মনস্থ করিয়াছেন। যেহেতু মুসলমানদিগকে সাহায্য করা এবং রণ করা মুসলমান রাষ্ট্রনায়কের অবশ্য কর্তব্য, সেহেতু আমি এই কয়েকছত্র লিখিয়া আপনার মৃত্যবান সময় নষ্ট করিতেছি। এই দেশের বাসিন্দাদের খাতিরে এবং আমাকে বাধিত করার – না আমি এখানে আপনার শুভাগমন প্রার্থনা করিতেছি, যাহাতে মুসলমানেরা এই অত্যাচারী * সকের অত্যাচার হইতে নিষ্কৃতি পায়।
নার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
-নূরকুতুব-ই-আলম।
অপর একটি পত্র সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমানীকে লিখে খত দুখানা হাতে করে সুফী সাহেব পুনরায় বাইরে এলেন এবং এন্তেজার করতে লাগলেন। একটু পরেই সফেদ শিরস্ত্রাণ ও সফেদ লেবাস পরিহিত মুখোশ আঁটা তৌহিদ বেগ অশ্ব ছুটিয়ে এসে খানকা শরীফে হাজির হলো। অশ্ব নিয়ে তার পেছনে পেছেনে ছুটে এলো এক সওয়ার। সুফী সাহেবের সংক্ষিপ্ত নির্দেশ শুনার পর তাঁর হাত থেকে যত নিয়ে দুইজনই ফের অশ্বের মুখ ঘুরিয়ে দিলো এবং পাণ্ডুয়া থেকে উত্তর পশ্চিম দিক বরাবর ছুটতে লাগলো।
উৎসব শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রীয় উৎসব। সুলতান ইব্রাহিম শর্কী নিজ আসনে বসে তন্ময় হয়ে আনন্দ উৎসব দেখছেন। হরেক রকম বাজী ও রং তামাসা চলছে। বাংলা মুলুকের সাপুড়েরা ইব্রাহিম শর্কীর উৎসবে এসে সাপ খেলা দেখাচ্ছে। বানরের খেলা দেখাচ্ছে পূর্ণিয়ার যাযাবররা। আসামের বন থেকে হরেক রকম পাখী এনেছে পূর্বদেশের বেদেরা। প্রদর্শনীর সাথে তারা নানা রকম পাখীর খেলা দেখাচ্ছে। ময়দানের এক কোণে জোরদার লড়াই চলছে মোরগের। নানাদেশের সওয়ারীরা ঘোড়সওয়ারে নেমে গেছে খোলা মাঠের আর এক পাশে। মুগ্ধগিরি বা মুংগেরের বাদ্যকররা সমানে সুর ভাঁজছে শানাইয়ের। নানা রকমের বোল্ তুলে কাড়া নাকাট

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top