বিদায় রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

বিদায় রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৮৩

বিদায় রানা – বইটির এক ঝলকঃ

করিয়ে দেয়। সামনের দিকটা পানি থেকে জেগে আছে মোটে হাতখানেক। বিশ সেকেন্ড পর পর একের পর এক ঢেউ এগিয়ে এসে মাথায় তুলে নিচ্ছে বোটটাকে। দেখতে দেখতে রানার মনে হলো, বিশাল জলধির প্রতিনিধিত্ব করছে ঢেউগুলো; শ্রদ্ধা জানাচ্ছে তারা মানুষের বুদ্ধিকে ।
‘সাউথ শেটল্যান্ড থেকে আসছে না বুঝলে কিভাবে?’ হালকা সুরে বলল রানা।
স্টার বোর্ডের সামনের রো-লকের উপর হাঁটু ভাঁজ করে একটা পা রাখল গলহার্ডি। চেয়ে আছে সেই দূরে, দিগন্তে। কুয়াশার ভিতর কি দেখতে চেষ্টা করছে সেই জানে। পশমের জ্যাকেটে মোড়া শরীরটা টান টান। শুনতে পায়নি যেন রানার কথা ।
খুশি খুশি মনটা হেসে উঠতে চাইছে রানার। লম্বা বৈঠা আটকাবার লোহার বারের ফ্রেমের উপর বসে বৈঠাগুলোর মাঝখান থেকে ওর স্পেশাল নাইলন নেটের জন্যে আর একটা লিড সিঙ্কার তুলে নিল রানা। নেটটা বটম বোর্ডে নিখুঁত ভাবে গুটানো আছে। হানড্রেড ফ্যাদম লাইনে লিড সিঙ্কারটা বেঁধে গিট লাগাল সে ধীরে সুস্থে। গলহার্ডির সাবধানের মার নেই ভঙ্গিটাকে আমল দেবার কোন কারণ দেখতে পাচ্ছে না ও ।
আর যদি হুট করে বিপদ এসেও পড়ে, গ্রাহ্য করবে না ও। কর্মজীবন থেকে আচমকা ধাক্কা মেরে বের করে দেয়া হয়েছে ওকে, ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে শূন্যে—যেখানে ইচ্ছা পড়ার জন্যে তৈরি হয়ে গেছে ও ইতোমধ্যে। কায়মনোবাক্যে চাইছে সাংঘাতিক, অকল্পনীয় কিছু একটা ঘটুকই বরং ।
রঙচটা উইন্ডব্রেকারের নিচে দাঁড়িয়ে কাঁধ ঝাঁকাল গলহার্ডি। দেখে মুচকি হাসন রানা। যদি জেলে হয়ে সারাটা জীবন সমুদ্রে কাটিয়ে দিতে পারতাম — ভাবছে
31
মাছ শিকার করছে না রানা। তবে জেলেদের মাছ ধরার মতই জাল ফেলে প্ল্যাঙ্কটন আবিষ্কারের নেশাটা পেয়ে বসেছে ওকে।
‘হুঁ’ গলহার্ডি বাতাসের সাথে, নাকি ড্রেকস প্যাসেজের সাথে আলাপ করছে ঠিক বুঝতে পারল না রানা। জন্মগত সতর্কতা রয়েছে লোকটার মধ্যে। জাতশত্রু সাগরে বেঁচে থাকতে হলে এটাই দরকার। অ্যান্টার্কটিকার এই পানি পৃথিবীর অন্য যে কোন পানির চেয়ে অনেক বেশি হিংস্র এবং নির্মম।
“আমি জানি, রানা। ড্রেকস প্যাসেজের স্বভাব চরিত্র আমার চেয়ে আর কে ভাল জানে?’
ভারী লিড সিস্কারটা বোটের গা ঘেষে পানিতে ফেলে দিল রানা। জানে ও, গলহার্ডির কথায় যৌক্তিকতা আছে। সমুদ্রই ওর জীবন। হয়তো মরণও। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এইচ.এম.এস স্কটের লিডিং টর্পেডো ম্যান ছিল লোকটা। ওদের বেস ছিল ডিসেপশন আইল্যান্ড, দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে পাঁচশো মাইল দক্ষিণে। হিজ ম্যাজেস্টিজ সাউথ শেটল্যান্ড ন্যাভাল ফোর্সের ডেস্ট্রয়ার এইচ.এম.এস স্কটের দায়িত্ব ছিল প্যাসিফিক ওশেন এবং আটলান্টিক ওশেনের মধ্যবর্তী সী প্যাসেজ (ড্রেকস প্যাসেজ) পাহারা দেয়া। জার্মান আর্মড মার্চেন্ট শিপ, রেইডার, [J-বোট এবং জাপানী সাবমেরিনগুলোর অত্যন্ত প্রিয় রূট ছিল ড্রেকস প্যাসেজ। প্রিয় হবার কারণ, ড্রেকস প্যাসেজ কখনও শান্ত হয় না। সমস্ত রুটটাই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ কুয়াশায় মোড়া, মাত্র পাঁচ মাইল কাছের জাহাজের অস্তিত্ব আবিষ্কার করাও অসম্ভব। ঠাট্টা করে গলহার্ডি বলে, ড্রেকস প্যাসেজ থেকে পোয়াটেক পানি তুলে নিয়ে এসে দাও আমাকে, চিনতে না পারলে ওই পানিতেই ডুবে মরব।
মুখ তুলে রানা দেখল কাঠের মূর্তির মতই সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। ফের মুচকি হাসল ও। এমনভাবে তাকিয়ে আছ, মনে হচ্ছে সেই সাউথ পোল পর্যন্ত দেখার চেষ্টা করছ।
‘দেখতে পেলে তো আর কথা ছিল না,’ বলল গলহার্ডি। ‘জানতে পারতাম কি ধরনের বাতাস আসছে ছোবল মারতে।’
চারদিকের প্রায় শান্ত পরিস্থিতিটা দেখে নিয়ে ঘাড় ফেরাল রানা পিছন দিকে। ব্রোটের পিছনে, কয়েক মাইল দূরে দেখা যাচ্ছে বড় দ্বীপটাকে। দেশ, বাড়ি, আবাসভূমি, যাই বলা হোক, গলহার্ডির ওটাই সব।
‘কিছুই ছোবল মারতে আসছে না,’ বলল রানা দৃঢ় গলায়। ‘খামোকা ভয় পাচ্ছ তুমি।
ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল গলহার্ডি। রানার দিকে নয়, দ্বীপটার দিকে। বলল, “ট্রিসটান ডা চানহার টাওয়ার থেকে ওয়াচম্যান নামে না কখনও। সেজন্যেই আমরা আইস্যান্ডাররা আজও বেঁচে আছি। রানা, সামান্য এই বাতাসের পিছনেই রয়েছে প্রচণ্ড একটা ঝড়।’
রানা তখন কোথায়! গলহার্ডির কথা কানে যায়নি ওর। তাকিয়ে থাকতে থাকতে দ্বীপটার চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যে হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে ও।
আকাশ ছুঁই ছুঁই দ্বীপটার কালো গায়ে প্রকাণ্ড একটা সাদা ধবধবে আলোর বৃত্তের মত দেখাচ্ছে ঝাঁক ঝাঁক পায়রাগুলোকে। তার সাথে মিল রেখে সাত হাজার ফুট উঁচু আগ্নেয়গিরির মাথায় মুকুটের মত চারদিক জুড়ে বসে আছে তুষার। ট্রিস্টান ডা চানহা, অ্যান্টার্কটিক আইস কন্টিনেন্টের কাছ থেকে প্রায় দু’হাজার মাইল দূরে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরিবিলি বাসোপযোগী দ্বীপপুঞ্জ পুঞ্জ এই কারণে যে দ্বীপটার ছোট্ট দুটো পড়শী আছে। ম্যাপে চোখ রেখে, মনে মনে দক্ষিণ অফ্রিকার কেপটাউন থেকে দক্ষিণ আমেরিকার মন্টিভিডিও পর্যন্ত একটা রেখা টেনে দেখেছে রানা, রেখাটা ছুঁয়ে যায় দ্বীপটাকে। এই দ্বীপ থেকে কেপটাউনে ফিরতে চাইলে সতেরোশো ত্রিশ মাইল পাড়ি দিতে হবে ওকে।
লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ট্রাভেলিং স্টুডেন্টশিপ ইন ওশেনোগ্রাফী অ্যাড লিমনোলজির পঁয়তাল্লিশ দিনের শর্টকোর্স শেষ করার সময় ট্রিস্টান ডা চানহার নাড়ি নক্ষত্র সব জেনে নিয়েছে বাংলাদেশের ছাত্রটি। নেপোলিয়নের যুগ আরম্ভ হবারও আগে ব্রিটিশ এবং আমেরিকান সিলিং শিপগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল দ্বীপটা, ওখান থেকে অভিযান পরিচালনা করা হত জমাট দক্ষিণ সাগরে মাছ শিকার করার জন্যে। সিভিল ওয়ারেরও পঞ্চাশ বছর আগে তিনজন আমেরিকান সেইলর এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্যে আসে। নেপোলিয়ন যখন সেন্ট হেলেনা প্রবাসী, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ একটা গ্যারিসন বসায় এই দ্বীপে। গ্যারিসনের লোকজন এবং ওই তিন সেইলরই হলো বর্তমান ট্রিস্টান ডা চানহার পূর্বপুরুষ। একটানা দেড় দু’শো বছর আইল্যান্ডারদের সাথে সভ্যতার কোন সম্পর্ক বলতে গেলে ছিলই। না, ডুমুরের ফুলের মত কদাচ বা ভুলক্রমে দু’একটা জাহাজ এসেছে কি না এসেছে তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
দ্বীপে পা দেবার সাথে সাথেই যে সব ঘটনা ঘটে তা কোনদিন হয়তো ভুলতে পারবে না রানা। রাহাত খানের চিঠিটা সম্পূর্ণ তখনও বুঝি পড়া হয়নি গলহার্ডির, স্বাক্ষরটা দেখে চিনতে পেরেই থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে দু’হাত বাড়িয়ে রানাকে সেই যে বুকের মাঝখানে চেপে ধরল, তিন মিনিটের আগে ছাড়ানোই গেল না তাকে। সে কি হাপুস নয়নে কান্না তার কঠোরদর্শন বিশাল দেহটার ভিতর এত আবেগ আছে, ভাবা যায় না। প্রথম কথাটাই ছিল তার, ‘মেজর জেনারেল কথা দিয়েছিলেন তিনি আসতে না পারলে তাঁর ছেলেকে পাঠাবেন।’ রানাকে ছেড়ে দিয়ে দু’পা পিছিয়ে গিয়েছিল গলহার্ডি, প্রশংসার দৃষ্টি দিয়ে রানার আপাদমস্তক দেখতে দেখতে বলেছিল, “ত্রিশ বছর আগে ঠিক এই চেহারা ছিল স্যারের। সেই চোখ, সেই চিতানো বুক, সেই ব্যাকব্রাশ করা চুল—হুবহু বাপের মত দেখতে হয়েছ তুমি।
ভুলটা তখুনি ভেঙে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু মনে আঘাত পাবে বা নিরাশ হবে ভেবে ক্ষান্ত ছিল রানা। পরে কাজটা আরও কঠিন মনে হওয়ায় চেষ্টাই করেনি ও আর ভুল ভাঙাতে। গলহার্ডি যা জানে তা জেনে যদি সুখী হয় হোক না, ক্ষতি কি, এই ভেবে মনে মনে মিটিয়ে ফেলেছে সে সমস্যাটা ।
প্রথম রাতটা ঘুমুতে পারেনি রানা ঘন্টাখানেকের বেশি। গলহার্ডি মেজর জেনারেলের গল্প শুনিয়েছে ওকে রাত ভর জাগিয়ে রেখে। কৌতূহল রানারও কম ছিল না। চীফের রহস্যময় অতীত সম্পর্কে জানার সুযোগ ঘটেনি ওর কখনও । সুযোগটাকে সুবর্ণ বলেই মনে হয়েছিল।
পলহার্ডির মুখ থেকে ঝড়ের বেগে যে সব উচ্ছ্বাস বেরুল সেরাতে তা থেকে শুধু এইটুকু তথ্য উদ্ধার করল রানা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জন ওয়েদারবাইয়ের অধীনে রয়্যাল নেভী এবং সাউথ আফ্রিকান এয়ারফোর্সের সম্মিলিত একটা দল ট্রিসটান ডা চানহায় আসে একটা রেডিও স্টেশন ফিট করার জন্যে। দ্বীপে ওরা যখন কাজ করছিল তখন রাহাত খান যুদ্ধ করছিলেন জার্মানীর বিরুদ্ধে আফ্রিকায়। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি বন্দী হন। গ্রেফতার করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কেপটাউনে। তাঁকে পরাজিত এবং বন্দী করতে পেরে জার্মান সৈন্যরা আনন্দে এমনই মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল যে তারা তাদের নিয়ম বিরুদ্ধ একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। সিদ্ধান্তটা ছিল, অফিসারকে সোজা পাঠানো হবে হিটলারের কাছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল পাঠাবার উপায় নিয়ে।
আফ্রিকায় তখন জার্মানদের সৈন্য সংখ্যা খুবই কম। যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাড়াহুড়ো করে যা হোক কিছু একটা ব্যবস্থা করতে না পারলে মিত্রবাহিনী ছিনিয়ে নিতে পারে রাহাত খানকে। সেই সময় মিটিওর, জার্মান রেইডার, কেপটাউনে নোঙর ফেলে। ঠিক হলো, মিত্রবাহিনীর বন্দীকে তুলে দেয়া হবে রেইডারের ক্যাপ্টেন কোহলারের হাতে। কোহলার সুযোগ মত জার্মানীগামী কোন জাহাজে স্থানান্তর করবে তাঁকে।
রাহাত খানকে নিয়ে মিটিওর সমুদ্র যাত্রায় রওনা হয়। কিন্তু পাঁচদিনের দিন, রাহাত খান রাতের অন্ধকারে একটা বোট চুরি করে পালিয়ে যান। একুশ দিন দক্ষিণ আটলান্টিক সাগরের সাথে লড়াই করেন তিনি এবং অবশেষে পৌঁছান ট্রিসটান ডা চানহাতে। ওখানে তাঁর বন্ধু জন ওয়েদারবাই এবং ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার এইচ.এম.এস. স্কট আগে থেকেই ছিল। রাহাত খানের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে এইচ.এম.এস. স্কট মিটিওরকে খুঁজতে বেরোয়। জন ওয়েদারবাইয়ের অনুরোধে ডেস্ট্রয়ারে তাঁর সঙ্গী হন রাহাত খান। আর নব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টর্পেডোম্যান হিসেবে ডেস্ট্রয়ারে স্থান পায় গলহার্ডি।
মিটিওর ফল্স রেডিও মেসেজ পাঠিয়ে মিত্রবাহিনীর জাহাজগুলোকে সমুদ্রের বিপজ্জনক এলাকায় যেতে বাধ্য করত এবং নিজের নিরাপদ পজিশন থেকে কামান ছুঁড়ে ডুবিয়ে দিত সবগুলো জাহাজকে। মিটিওরকে ঘায়েল করাই ছিল জন ওয়েদারবাইয়ের টাস্ক ফোর্সের অন্যতম দায়িত্ব।
তুষারের মুকুট থেকে নেমে এল রানার দৃষ্টি। অস্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে ও দ্বীপটার পাশে নাইটিঙ্গেল এবং ইনঅ্যাকসেসিবলকে। শব্দ শুনে ঘাড় ফেরাতে দেখল, মাস্টের ফোরসেইল ফরওয়ার্ডের ত্রিভুজটার হুক খুলছে গলহার্ডি। এবার আর হাসতে পারল না রানা। লোকটা যে সত্যিই কিছু একটা আশঙ্কা করে সাবধান হতে চাইছে তাতে কোন ভুল নেই। দুশ্চিন্তা থেকে ওকে টেনে তোলার জন্যে অপ্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্ন করল ও, যাতে খেপে ওঠে লোকটা।
‘এর চেয়ে ভাল একটা বোট যোগাড় করা গেল না, গলহার্ডি?’
ঘাড় ফিরিয়ে করুণার চোখে তাকাল আইল্যান্ডার রানার দিকে।
‘যুদ্ধের দু’বছর পর মেজর জেনারেল ফিরে আসেন আমাদের দ্বীপে,’ বলল গলহার্ডি। ‘কার্গোশিপ থেকে নেমে তিনি আমাকে প্রথম কি কথাটা বলেছিলেন, জানো তুমি? বলেছিলেন, গলহার্ডি, তোমার এই বোটটা আমাকে দিতে হবে, এটা ছাড়া গ্রেটেস্ট সী মিস্ট্রি সমাধান করা অসম্ভব!’ মেইনসেইল গুটাতে গুটাতে সস্নেহে দৃষ্টি বুলাচ্ছে গলহার্ডি তার হোয়েল বোটের গায়ে। ‘একজন আইল্যান্ডারের কাছে তার বোট চাওয়া মানে তার হৃৎপিণ্ড চাওয়া! এই বোটটাই আমাকে ট্রিসটান ডা চানহার সবচেয়ে ধনী করেছে।’ একটু থেমে বলল আবার সে। ‘তুমি তো জানো না, কাঠ আমাদের কাছে সোনার চেয়েও দামী।’ কাঠ নয়, লোহার ফ্রেমের সাথে ছয়টা লম্বা বৈঠা বাধা রয়েছে। ট্রিসটানে কাঠ নেই বললেই চলে, তাই আইল্যান্ডাররা বোট তৈরি করে ক্যানভাস দিয়ে। সার্বক্ষণিক ঝঞ্ঝা সইতে হয় বলে আপেল গাছগুলো জন্মায় শক্ত হয়ে, এই আপেল গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি পলহার্ডির হোয়েল বোটের পাজরগুলো। রানা আগেই লক্ষ করেছে, বোটের ফরওয়ার্ড পোর্ট সাইডটা জায়গায় জায়গায় ভেঙে ফেটে এবড়োখেবড়ো, কোথাও ছুঁচাল হয়ে আছে। মেরামত করে হবে, আদৌ হবে কিনা বলতে পারে না গলহার্ডি। কাঠ পেলে তবে তো! বোটটাকে জবরদস্তভাবে রঙ করা হয়েছে বলাটা ঠিক হবে না, ডাবল রানা । গাঢ় লাল, হলুদ এবং নীল রঙ যেখানে যত বেশি সম্ভব অকৃপণ হাতে ঢালা হয়েছে। রঙের এই ব্যবহার আইল্যান্ডারের রুচি বিকৃতির চিহ্ন নয়, ক্যানভাসকে ওয়াটারপ্রুফ করার জন্যে রঙের উপর রঙ চড়ানো হয়েছে, যখন যে রঙ পাওয়া গেছে, বাছবিচার না করেই।
রানা জানে, সমুদ্রগামী জলযান হিসেবে এই বোটের জুড়ি নেই। দশজন ট্রিসটান বোটম্যান আর একটা ট্রিস্টান বোট নিয়ে মহাসমুদ্রের যে কোন এলাকায় যেতে দ্বিধা করবে না কোন নাবিক ।
তিনহাত তফাতে চোখ পড়তে পানির ঠিক নিচেই লম্বা একটা মানুষের লাশ দেখে লাফিয়ে উঠছিল রানা, পরমুহূর্তে ভুলটা বুঝতে পেরে সামলে নিল নিজেকে। কের-এর জমাট একটা স্তর ভেসে যাচ্ছে। ঘাড় ফিরিয়ে আবার পিছন দিকে তাকাল রানা। পাঁচ মাইল চলে এসেছে ওরা দ্বীপটা থেকে। নিচু প্রাচীরের মত ঘেরাও দিয়ে রেখেছে দ্বীপটাকে কেন-এর একটা বিশাল ব্যারিয়ার। ব্যারিয়ারের ভিতর সাগরের পানির রূপই আলাদা, প্রশান্ত গাম্ভীর্যে টইটুম্বুর।
“এনি লাক?”
মাথা নাড়ল রানা। সী-মিস্ট্রি! ভাবছে ও। কিছুদিন আগে পর্যন্ত আলবাট্রেস ফুটের কথা জানা ছিল না পৃথিবীর কারও বেশ কয়েক বছর থেকে কানাঘুষা চলছে বটে কিন্তু আলব্যাট্রেস ফুটের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। অথচ ট্রিস্টান ভা চানহার অধিবাসীদের কাছে আলব্যাট্রেস ফুট জলজ্যান্ত সত্য। হুট করে কখন যে আসবে তা অবশ্য হলপ করে বলার যো নেই, কিন্তু আসে। রাহাত খানের ব্রিফিং স্মরণ করল রানা ।
আলবাট্রস ফুট একটা উষ্ণ জায়গান্টিক যোত। আফ্রিকা এবং সাউথ আমেরিকার মাঝখানে, সাউথ আটলান্টিক মহাসাগরে অনিয়মিত ভাবে দেখা দেয়। স্রোতটায় থাকে অণু আকৃতির অসংখ্য বিলিয়ন সী-ক্রিয়েচার, প্ল্যাঙ্কটন। দক্ষিণ সমুদ্রে কতরকম প্রাণী আছে তাদের সবার প্রধান খাদ্য এই প্ল্যাঙ্কটন। যোড়টা উত্তপ্ত বলে অ্যান্টার্কটিকার আশেপাশে বিশাল জায়গা জুড়ে জমে থাকা শক্ত কঠিন বরফের পাথর ভাঙে। আলবাট্রস ফুট নামটা ট্রিস্টানবাসীদের দেয়া। কারণ হলো প্রকাণ্ড আলবাট্রস পাখির পায়ে দুটো উষ্ণ শিরা থাকে। পাখির বাসার সাব-জিরো টেমপারেচারে একমাত্র জীবন রক্ষাকারী উষ্ণতা আনে এই ডাবল ভেইন। শিরা দুটোর উপর ডিম রেখে বাচ্চা ফোটায় আলব্যাট্রেস। উষ্ণ স্রোত, আইল্যান্ডারদের মতে একটা নয়, দুটো। এবং সে-দুটো দেখতে নাকি আলবাট্রস পাখির ওই ডাবল ভেইনের মত—তাই এই নাম, আলব্যাট্রেস ফুট। কিন্তু আলব্যাট্রেস ফুটের দ্বিতীয় শাখার কথা আজও কিংবদন্তি হয়েই আছে।
মেজর জেনারেল অবশ্য দেখেছেন সেটাও কিন্তু সে-দেখা নাকি যথেষ্ট দেখা হয়নি। পলহার্ডি গল্পটা পুরো এখনও শোনায়নি রানাকে।
“গন্ধ শুঁকেই বলে দিতে পারি কোথেকে আসছে বাতাসটা,’ স্বগতোক্তির ঢঙে খুব নিচু গলায় বলছে গলহার্ডি। বিপদ সম্পর্কে কথা বলার তার এই শান্ত ভঙ্গিটা জন্মগত। ‘সাউথ শেটল্যান্ড থেকে আসছে না, হলপ করে বলতে পারি।’
‘না হয় তোমার ধারণাই ঠিক,’ বলল রানা। ‘কিছু এসে যায়? ঝড় আসুক বা না আসুক, আমার দরকার অষ্টাশি মিলিয়ন প্ল্যাঙ্কটন।

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top