ভাড়ত নাট্যম – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

ভাড়ত নাট্যম – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৯৫

ভাড়ত নাট্যম – বইটির এক ঝলকঃ

হঠাৎ একটু খুট আওয়াজ হতেই চোখ মেলে রানা দেখল হাসছে সোহেলের উজ্জ্বল দুই চোখ। এতদিন পর রানাকে পেয়ে আনন্দে উদ্ভাসিত। কাঁধে একটা দেড় টাকা দামের ছোট্ট টাওয়েল। বয়-বেয়ারার সাদা ড্রেস পরা। কোমরের বেল্টে পিতলের মনোগ্রামে লেখা KUSHTIA REST HOUSE.
“কি নাম হে তোমার, ছোকরা?’ খুব ভারিক্কি চালে জিজ্ঞেস করল রানা।
দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে চোখ পাকিয়ে প্রথমে ঘুলি দেখাল সোহেল, তারপর বিনয়-বিগলিত কণ্ঠে বলল, ‘আজ্ঞে, রাখাল দাশ। চার নম্বর” বলেও ডাকতে পারেন।’ বুকে আঁটা নম্বর দেখাল সে।
‘বেশ, বেশ। ঘরটায় চট করে ঝাড়ু লাগিয়ে দাও তো, বাবা রাখাল। বড় নোংরা হয়ে আছে।’ চোখ টিপল রানা; ভাবটা—কেমন জব্দ !
সোহেল দেখল ওকে বেকায়দা অবস্থায় পেয়ে খুব এক হাত নিচ্ছে রানা । হেসে ফেলল সে। বলল, ‘আজ্ঞে, এখন ঝাঁট নিলে ধুলোয় টিকতে পারবেন না । আপনি বাইরে যাবার সময় চাবিটা দিয়ে যাবেন, পরিষ্কার করে দেব সব নোংরা।
“তাই দিয়ো। এখন চা-টা কি খাওয়াবে খাওয়াও দেখি জলদি। সন্ধের দিকে একটু বাইরে যাব ঘণ্টা খানেকের জন্যে।’
ইঙ্গিতটা বুঝল সোহেল। বাইরে মানে সোহেলের বাংলো। হেড অফিসের সঙ্গে কথা আছে বোধহয়। নীরবে বেরিয়ে গেল সে ঘর থেকে।
হাঁটার সময় সোহেলের ডান হাতটা দুলছে, বাঁ হাতটা স্থির হয়ে রয়েছে দেখে হঠাৎ তীব্র একটা বেদনা বোধ করল রানা। এক সময় রাহাত খানের সব চাইতে প্রিয়পাত্র ছিল ওরা দু’জন। বক্সিং, যুযুৎসু, পিস্তল ছোঁড়া, শক্তি, বুদ্ধি, সাহস, সব ব্যাপারেই দু’জন কেউ কারও চেয়ে কম যেত না। নিজেদের মধ্যে যেমন ছিল ওদের তীব্র প্রতিযোগিতা, তেমনি ছিল গভীর বন্ধুত্ব। কিন্তু ভাগ্য সোহেলের বিরূপ। একবার একটা অ্যাসাইনমেন্ট-এ চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে পাথরে পা পিছলে টাল সামলাতে না পেরে চাকার তলায় কাটা পড়ল বাম হাত। একেবারে ছাঁটাই না করে বিপজ্জনক কাজ থেকে সরিয়ে ওকে যশোর-কুষ্টিয়া ব্রাঞ্চের হেড করে দিয়েছেন রাহাত খান। কে জানে, হয়তো রানারও একদিন এমনি অবস্থা হবে। নিজের অজান্তেই ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল রানার বুক চিরে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ট্রে-তে করে এক পট চা আর কিছু বিস্কিট নিয়ে ফিরে এল সোহেল। রানার পাশে টিপয়টা টেনে দিয়ে সেগুলো নামিয়ে রাখতে রাখতে চাপা গলায় বলল, ‘তোকে চিনে ফেলেছে ওরা, রানা। আমার যদ্দূর বিশ্বাস জেনে গেছে ওরা তোর পরিচয়। জয়দ্রথ মৈত্রের কাছ থেকে এক টুকরো কাগজ নিয়ে ওদের দলের একজন প্রত্যেক ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাইকে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে খুব সম্ভব। আমি এখনও ওদের সন্দেহের বাইরে আছি। হিন্দু বলে বিশেষ ফেডারও পাচ্ছি। ‘একটা চাবি বের করল সোহেল পকেট থেকে। এই নৈ, আমার ওয়ারলেস রুমের চাবি। আমি সন্ধের সময় বেরোতে পারব না। তুই সোজা রেল-স্টেশনে চলে যাবি। ওখান থেকে আমার লোক তোকে নিয়ে যাবে আমার বাড়িতে। রাতে আমি নজর রাখব, আর হঠাৎ যদি দরকার মনে করিস, এই বেল টিপে দিস। আজই সকালে লাগিয়েছি।’ খাটের পায়ায় লাগানো গোপন কলিং বেলের সুইচ দেখিয়ে দিল সোহেল।
‘বেশ জমিয়ে নিয়েছিস দেখছি, দোস্ত!” সপ্রশংস দৃষ্টিতে চাইল রানা ওর দিকে। কিন্তু সেই সঙ্গে জুড়ে দিল, ‘দেখিস, ভুলে যাস নে আবার আমি বেরিয়ে গেলেই ঘরটায় একহাত ঝাড়ু লাগিয়ে দিস, বাবা! চোখে মুখে দুষ্টামি হাসি রানার।
“যা যা, বাজে বকিস না। ফাই ফরমাস খাটতে খাটতে জান বেরিয়ে যাবার জোগাড় হয়েছে। পিঠটা ব্যাকা হয়ে গেছে আমার। ঘর ঝাড়ু দেব না, শালা ফেটিয়ে তোর বিষ ঝেড়ে দেব।’
বেরিয়ে গেল সোহেল। আবার রানার চোখে পড়ল, বাম হাতটা স্থির হয়ে ঝুলছে সোহেলের। কিন্তু দমে যায়নি সোহেল। তেমনি হাসিখুশি চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জ্বল দুই চোখ। হার মানেনি সে ভাগ্যের কাছে।
সেই রাতে মিত্রা সেন সত্যিই মুগ্ধ করল রানাকে। নৃত্যকলাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকৃতি দিল সে এই প্রথম। কিন্তু নাচের শেষে অকুণ্ঠ প্রশংসা করতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হলো রানাকে। পরিষ্কার ঘৃণা প্রকাশ পেল মিত্রার ব্যবহারে। আহত রানা বুঝল, সত্যিই ধরা পড়ে গেছে সে। ঢাকা এয়ারপোর্টের সেই সানগ্লাস পরা ছোকরাকে অবজ্ঞা করা তার উচিত হয়নি।
চার
২৯ আগস্ট, ১৯৬৫
অনেক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। ঠিক বিড়ালের মত চোখ মেলে চাইল রানা। ঘুমের লেশমাত্র নেই সে চোখে যেন জেগেই ছিল এতক্ষণ। আবছা একটা ধস্তাধস্তির শব্দ এল কানে। তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসল রানা বিছানার ওপর। আন্দাজে বুঝল শব্দটা আসছে মিত্রা সেনের ঘর থেকে।
নিঃশব্দে বাথরুমের ছিটকিনি খুলে পা টিপে মিত্রার ঘরের দিকের দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়াল রানা। মৃদু আলো আসছে মিত্রার ঘর থেকে। একটা ফুটোয় চোখ রেখেই তাজ্জব হয়ে গেল সে। চোটা একবার কচলে নিয়ে আবার রাখল ফুটোতে। সেই একই দৃশ্য। টেবল্ ল্যাম্পটা মাথা নিচু করে জ্বালানো আছে টেবিলের ওপর। সেই আলোয় দেখা গেল চারজন যা মার্কা মুখোশধারী লোকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে মিত্রা সেন। মুখে রুমাল পুরে চিৎকারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আগেই। এবার দু’হাত পেছনে নিয়ে দুই কনুই একসঙ্গে টেনে বেঁধে ফেলা হলো। আঁচল খসে পড়ে শাড়িটা লুটোপুটি খাচ্ছে মাটিতে। কিন্তু সমানে পা চালাচ্ছে মিত্রা। সামনের লোকটার তলপেট বরাবর ঝেড়ে একটা লাথি মারুন সে। দু’পা পিছিয়ে গেল লোকটা। হঠাৎ পাশ থেকে একজন লোক এগিয়ে এসে চোখা ছুরিটা মারাত্মক ভঙ্গিতে বুকে ঠেসে ধরে নিচু গলায় কানের কাছে কিছু বলল। স্থির হয়ে গেল মিত্রা সেন। আর বাধা দেবার চেষ্টা করুন না। চোখ দুটো ভয়ে বিস্ফারিত। নিজের অসহায় অবস্থার কথা চিন্তা করে জল গড়িয়ে পড়ল ওর চোখ থেকে।
ছিটকিনির অবস্থান আন্দাজ করে নিয়ে জোরে একটা লাথি মারল রানা বাথরূমের দরজায়। খুলে গেল কপাট। কেউ কিছু বুঝবার আগেই সামনের দু’জন লোক ধরাশায়ী হলো রানার প্রচণ্ড ঘুলি খেয়ে। তৃতীয়জন ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল রানার ওপর। প্রথমে ছোরাসুদ্ধ হাতটা ধরে ফেলল রানা, তারপর যুযুৎসুর এক প্যাঁচে আছড়ে ফেলল মাটিতে। এবার দুই হাঁটু জড়ো করে ঝপাং করে পড়ল ওর পেটের ওপর। ‘হুক’ করে একটা আওয়াজ বেরোল ওর মুখ দিয়ে; নড়বার আর শক্তি রইল না। কিন্তু রানা উঠে দাঁড়াবার আগেই প্রথম আক্রান্ত একজন উঠে এসে পেছন থেকে সাপটে ধরল রানাকে। চতুর্থ লোকটি এবার কোমর থেকে টান দিয়ে একটা ফ্লোইং নাইফ বের করুন। মুখে বিজয়ীর হাসি ।
“আর কাঁহা যাওগে, উল্লুকে পাঠে
রানার বুক বরাবর ছুরিটা ছুঁড়তে গিয়ে থমকে গেল সে। যেন যাদুমন্ত্রের বলে পেছনের লোকটা রানার সামনে চলে এসেছে। একটু হলেই সেমসাইড হয়ে যেত। মাজার ওপর রানার প্রচণ্ড এক লাথি খেয়ে হুমড়ি খেয়ে লোকটা গিয়ে পড়ল চতুর্থ জনের ওপর। টাল সামলাতে গিয়ে চুরিটা পড়ে গেল হাত থেকে মাটিতে। আর মাটিতে পড়তেই পা দিয়ে এক ঠেলা দিয়ে মিত্রা সেটাকে পাঠিয়ে দিল ঘরের এক কোণে। খালি হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল ভীষণ আকৃতির চতুর্থ লোকটা রানার ওপর। নাক বরাবর রানার গোটা দুই নক-আউট পাঞ্চ খেয়ে সে ছিটকে পড়ল জানালার ধারে।
রানা চেয়ে দেখল জানালার সবক’টা শিক বাঁকানো। এই পথেই প্রবেশ করেছে লোকগুলো। বাইরে ঝমাঝম বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেছে কখন সে টেরই পায়নি। কি করবে ভাবছে রানা, এমন সময় বাইরের অন্ধকার থেকে মস্ত একখানা ঢিল ছুটে এসে খটাশ করে লাগল ওর কপালে। আঁধার হয়ে গেল রানার চোখ। পড়ে যাচ্ছিল, চেয়ারের হাতল ধরে সামলে নিল। মাথাটা ঝাঁ-ঝাঁ করছে। কিন্তু জ্ঞান হারিয়ে ফেললে চলবে না । এখন জ্ঞান হারালে নিশ্চিত মৃত্যু
যেন বহুদূর থেকে কয়েকটা কথা কানে এল রানার।
‘সালা ডাকু হ্যায় ভাগো। ভাগো সাবলোক ইয়াহাসে ‘
সেকেও চারেক পাঁজর বরাবর একটা ছুরির আঘাত এবং তাঁর বেদনা আশা করল রানা। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটল না। মাথাটা একবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল রানা। তখনও ঘুরছে মাথা। চেয়ে দেখল চারজন মুখোশধারীই অদৃশ্য হয়ে গেছে। মিত্রা ছাড়া ঘরে কেউ নেই। ছুটে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়াল । বৃষ্টির ছাঁট লাগল চোখে মুখে। একটু পরেই দেখল বড় রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি সোজা উত্তর দিকে চলে গেল সামনের অনেক দূর পর্যন্ত আলোকিত করে। মিত্রাও পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘চলে গেল?
তাই তো মনে হচ্ছে। ‘
ঘরের এক কোণ থেকে চুরিটা তুলে নিয়ে মিত্রা সেনের হাতের বাধন কেটে দিল রানা। তখনও থরথর করে কাঁপছে মেয়েটা। রানা বলল, ‘আপনি ওই চেয়ারটায় বসুন, আমি আপনার জন্যে একটু ব্র্যাপ্তি নিয়ে আসছি। বাথরুমের মধ্যে দিয়ে নিজের ঘরে চলে এল রানা।
সুটকেস থেকে বোতল বের করে আধ গ্লাস ব্র্যাণ্ডি ঢেলে নিয়ে পাশের ঘরে এল রানা। দেখল বিছানার ওপর বসে আছে মিত্রা সেন আড়ষ্ট ভঙ্গিতে।
‘চুক করে এটুকু খেয়ে ফেলুন, আমি মৈত্র মশাইকে ডেকে আনছি।’
চট করে একবার রানার চোখের দিকে চেয়ে নিল মিত্রা সেন। তারপর গ্লাসটা নিয়ে একহাতে নাক টিপে ধরে তিন ঢোকে খেয়ে ফেলল ব্র্যান্ডিটুকু। রানা ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, কি মনে করে মিত্রা ডাকল, ‘শুনুন।’
‘কি।’
মৈত্র মশায়কে ডাকা যাবে পরে। এখন এই চেয়ারটায় বসুন তো, কপালটা অসম্ভব ফুলে গেছে, জলপট্টি লাগিয়ে দিই। তাছাড়া, মৈত্র মশাই এসে এখন আহা- উহু ছাড়া আর কি করবেন?’
একটা রুমাল চার ভাঁজ করে এক মগ পানিতে ভিজিয়ে ভিজিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ফোলা জায়গাটায় ধরল মিত্রা, তারপর ভেজা রুমালটা কপালে বসিয়ে আরেকটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল রানার মাথাটা ।
‘মৈত্র মশায়কে ডাকার কোন দরকার নেই। বিপদগ্রস্তা ভদ্রমহিলার জন্যে নিরীহ, শান্তিপ্রিয় ফটোগ্রাফারের কাছাকাছি থাকাই বেশি নিরাপদ।
“ভাবছি, এই লোকগুলো কে। আপনি চেনেন এদের? আপনাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল কোথায়?’
আমি কিচ্ছু জানি না। কোনদিন এদের দেখিনি।’
“সাধারণ গুণ্ডা বলেই তো মনে হলো। কিন্তু কোন আভাসই পাননি আপনি, এ কেমন কথা?’
“এমনি কানাঘুষোয় শুনেছি, একটা বদমাইশের দল আছে, ইয়ং টাইগারস না কি একটা নাম–ওরা নাকি লোক লাগিয়েছে, সুযোগ পেলেই আমাকে ধরে নিয়ে যাবে ওদের আড্ডায়। তেমন কোন গুরুত্ব দিইনি এসব কথার।
ইয়ং টারগারস্-এর নাম শুনে একটু কঠিন হয়ে গেল রানার মুখ। তারপর স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল, ‘আপনার দলের কাউকে যদি ডাকতে বলেন তো ডেকে দিতে পারি। আর নইলে আপনি বিশ্রাম করুন, আমি আমার ঘরে যাই। রাত এখনও অনেক বাকি আছে, এভাবে গল্প করলে কাটবে না।’
উঠে দাঁড়াল রানা। তখনও ঝমঝম অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে। কাছেই কোন পুকুরে ব্যাঙ ডাকছে ক্যাঁ-কো, ক্যা-কোঁ একঘেয়ে সুরে। বিজলী চমকে উঠল আকাশ চিরে। মিত্রাও উঠে দাঁড়ান।
‘কেমন লোক আপনি? এই ঘরে একা আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন যে বড়। একা কি করে থাকব আমি এই জানালা ভাঙা ঘরে?
একটু ভেবে নিয়ে রানা বলল, ‘বেশ তো, আপনি আমার বিছানায় গিয়ে নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়ুন। আমি না হয় এই ঘরে আপনার পাহারায় থাকব।’
‘আমার এমনিতেই আজ রাতে আর ঘুম আসবে না। আসুন না, আপনার ঘরে বসে গল্প করে কাটিয়ে দিই রাতটা?’
‘না। আপনার ঘুম না এলেও আমার ঘুম আসবে।’ ঘুরে দাঁড়াল রানা। ‘আপনি আমাকে তাড়াতে পারলেই বাঁচেন মনে হচ্ছে।
” ‘কারণ? অনুষ্ঠানের শেষে দুর্ব্যবহার করেছিলাম, তাই?’
‘না।’ মিত্রার চোখের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চাইল রানা। ‘সেজন্যে নয়। কারণটা খুবই সাধারণ। মানুষে খারাপ বলে.. সব দোষ পড়ে মেয়েদের ঘাড়ে। মন দিয়ে কথাগুলো শুনল মিত্রা। বুঝল কথাটা বিশ্রী হলেও সত্য। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল ওর। তারপর হঠাৎ ঘুরে চলে গেল রানার ঘরে।
এক মিনিটের মধ্যেই আবার ফিরে এল মিত্রা। হাতে রানার ওয়ালথার পি.পি.কে. পিণ্ডল।
‘এই নিরীহ, শান্তিপ্রিয় বস্তুটি বালিসের তলায় থাকলে অসস্তি লাগছে। জিনিসটা আপনার কাছেই থাক কোন কাজে লেগে যেতে পারে।
ঘণ্টা দেড়েক পার হয়ে গেল। বাতি নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে উসবুস করছে রানা। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না। বালিশে মিত্রার চুলের সুবাস। বৃষ্টি থেমে গেছে বেশ কিছুক্ষণ, তাই দ্বিগুণ জোরে শোনা যাচ্ছে ব্যাঙের ডাক। জানালার বাইরে টিপ টিপ জোনাকির দীপ জ্বলছে, এখনও পুরোদস্তুর শহর হয়ে উঠতে পারেনি জায়গাটা।
বাথরুম চেপেছে কিছুক্ষণ ধরে। লাইট জ্বালাবার ঠিক আগের মুহূর্তে দেখতে পেল সে আবছা একটা লম্বা মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে ঠিক ঘরের মাঝখানে। হাতের পিস্তলটা ওর দিকে ফেরানো। চমকে উঠল রানা।
‘একটু নড়াচড়া করলেই খুলি ফুটো করে দেব,’ মৃদু অথচ গম্ভীর কণ্ঠস্বর।
মরার মত কাঠ হয়ে পড়ে থাকল রানা। অসতর্ক থাকার জন্যে ভয়ানক রাগ হলো নিজের ওপর। একবার ভাবল বালিশের তলায় পিস্তলটার কথা। কিন্তু এখন চেষ্টা করা বৃথা। দেখা যাক কি হয়।
‘কে?’ জিজ্ঞেস করল রানা।
‘তোমার যম!’ সংক্ষিপ্ত উত্তর।
এক পা এক পা করে পিছিয়ে গেল লোকটা। পিস্তলটা তেমনি ধরা। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে দিল সে। লোকটার চেহারা দেখেই অবাক হয়ে উঠে বসল রানা বিছানার ওপর।
“তুই! তুই শালা এত রাতে এ ঘরে ঢুকেছিস কেন?’
উজ্জ্বল হাসিতে উদ্ভাসিত সোহেলের মুখ।
“দিয়েছিলাম তো ঘাবড়ে, বোক-চন্দর! টেরও পেলি নে জলজ্যান্ত মানুষটা ঢুকলাম ঘরের ভেতর! কালই শালা তোর চাকরি খেয়ে দেব আমি দেখিস বুড়োকে
বলে।
ওর একান্ত প্রিয় নাইন মিলিমিটার হ্যামার লেস লগার পিস্তলটা প্যান্টের নিচে তলপেটের কাছে লুকোনো হোলস্টারে ঢুকিয়ে দিল সোহেল।
“আরে যা যা! তোর মত দশটা বয় বেয়ারা আমার এক ডাকে ছুটে আসে, তা জানিস? তুই আমার কচু করতে পারবি। আর একটু হলে যেই হার্টফেটা করতাম—বারোটা বেজে যেত তোর। কিন্তু দোস্ত, মনে হচ্ছে আজ রাতের সব ঘটনাই তোর জানা? ‘
‘স-অব, স-অব! সব দেখেছি তো আমি। আহাহা ! তোর কপালে যখন জলপট্টি লাগাচ্ছিল না, উহ্!’ জিভ দিয়ে একটা বিশেষ শব্দ বের করল সোহেল। তখন

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top