রক্ত রঞ্জিত পথ – নাজিব কিলানী – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ মুহাম্মদ আবদুল মা’বুদ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২১০
রক্ত রঞ্জিত পথ – বইটির এক ঝলকঃ
আব্বা বুঝতে পারলেন, তার মাথায় এখন কি ঘুরপাক খাচ্ছে। ত্বরিত তিনি বলে ফেল্লেন, তার সাথে অতিরিক্ত নতুন লাভও যোগ করে নেব। ভয়ের কিছু নেই।
এভাবে নতুন লেনদেনের পর্বটি শেষ হলো।
আবার অবস্থা সম্পর্কে বেশী কিছু বলতে পারবো না, যখন মুরসের ছেলে হাসান এসে মহিষটির দড়ি ধরলো, মনে হচ্ছিল, যেন তাঁর এক প্রিয়জনকে তিনি হারাচ্ছেন। অথবা মহিষটি যেন তাঁর পরিবারেরই একজন সদস্য ছিল। এখন কেউ তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। লায়লা, আর সেই সাথে মাহমুদও মহিষটিকে আঠার মত জড়িয়ে ধরলো। তারা দু’জন ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো যাতে মহিষটি বেরোতে না পারে। আর আমার দাদী আমাকে বলতে লাগলেন, ওরে সুলায়মান, ওরে আমার দাদাভাই। জন্তু-জানোয়ার খুবই বিশ্বস্ত। তারা নিজ মালিক চেনে। তাকে ছেড়ে যেতে তাদের খুবই কষ্ট হয়। তুমি কি আমাদের মহিষটিকে দেখতে পাচ্ছো না, কিভাবে সে ব্যথা-বেদনায় বিলাপ করছে, তার দু’টি চোখ থেকে কিভাবে শ্রাবণের ধারা নেমেছে?
দাদী যখন দেখতে পেলেন, আমার চেহারায়ও আবেগের ছাপ ফুটে উঠছে, বললেন, বাছা মনে কোন কষ্ট নিও না। অর্থ এবং জীব-জানোয়ার সব সময় হাত বদল হয়ে থাকে। আজ যাচ্ছে তো কাল আবার ফিরে আসছে। নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের এ কষ্ট দূর করবেন। আমরা তখন অন্য একটি কিনে নেব। তুমি যাও, তোমার পড়া মুখস্থ কর। তারপর তিনি চোখ দু’টি লম্বা করে বিনীতভাবে ভিক্ষা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলতে লাগলেন, ইয়া রব! আমার পেটের ছেলে আবদুদ দায়েম, তার ছেলে সুলায়মানকে আপনি নিজ হাতে তুলে নিন। আপনি তাকে কামিয়াবী দিন, তাকে বড় চাকুরে বানিয়ে দিন। ইয়া রাববুল আলামীন, আপনি তো আমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত।
আমার আম্মা বেচারী একটি কথাও বলতে পারেননি। তাঁর এ নীরবতার মধ্যে ছিল একটা গভীর ব্যথা ও আক্ষেপ। তিনি সকল ব্যথা পুঞ্জীভূত করে রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন। কোনদিন কারো কাছে মুখ খুলে প্রকাশ করতেন না। আর এ কারণে যখন-তখন তাঁর বুকে যে ব্যথাটি দেখা দিত, এ মুহূর্তে তা চরমভাবে দেখা দিল। আরামে একটু ঘুমাতে পারছিলেন না, কিছু খেতেও ভালো লাগছিল না। এমনকি তাঁর চেহারার ছায়াটি আরো ঘন হয়ে গেল, তিনি শক্তি হারিয়ে ফেল্লেন। আমি নামাযে যাচ্ছিলাম। দেখলাম তিনি সিজদা করছেন। বেশ লম্বা সিজদা। মনে মনে বললাম, হয়তো বেশী বেশী বিনীত ভাব প্রকাশ করছেন। কিন্তু যখন তা বেশী দীর্ঘ হতে চললো, তখন আমার মনে সন্দেহ ও সংশয় দেখা দিল। এগিয়ে গিয়ে নাড়া দিতেই আমি দেখতে পেলাম তিনি অজ্ঞান। তাঁর চোখে-মুখে পানির ছিটা দেয়ার জন্যে এখানে-ওখানে পানির জন্যে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলাম। একটা পিঁয়াজও খোঁজাখুঁজি করলাম, যাতে তা নাকের গোড়ায় ধরলে তিনি শুকতে পারেন। এভাবে আমি ছুটাছুটি করলাম। তিনি বেহুশ হয়ে পড়লে আমিও দিকবিদিক জ্ঞানহারা হয়ে পড়তাম। অনেকক্ষণ ধরে আমি ব্যথা অনুভব করতাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়তাম। আমার ভয় হতো, আম্মা বুঝি অচৈতন্যের শিকারে পরিণত হতে চলেছেন। তাহলে আমার প্রাণটিও তো বেরিয়ে যাবে। কিন্তু দাদী তাঁর অভ্যস্ত গতিতে হেঁটে আমার দিকে এগিয়ে এসে পড়তে লাগলেনঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। হে প্রতিপালক, হে পথ প্ৰদৰ্শক ! সাহায্য করো।…..হে সাইয়্যেদ ঈসা আল-ইরাকী, মানুষের কুতুব। আপনার হাতটি একটু বাড়িয়ে দিন। ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর তিনি আমার আম্মাকে নাড়াতে এবং পাশ ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করতেন। বিড়বিড় করে কিছু দোয়া দুরূদ পড়তেন। কিছু সময় পর খুব আস্তে-ধীরে আমা চোখ দু’টি খোলার চেষ্টা করে কি হয়েছে তা জিজ্ঞেস করেন। যেন নতুন করে তাঁর মধ্যে প্রাণ সঞ্চারিত হচ্ছে এমনিভাবে। আমি বুঝতাম আম্মা একটি কঠিন ফাঁড়া কেটে উঠছেন। সর্বান্তকরণে আমি আল্লাহর প্রশংসা করতাম এবং মসজিদে ছুটে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ সিজদায় পড়ে থেকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতাম। ঘটনাটি সব সময় এভাবে অতিক্রান্ত হতো। দাদী কোনরূপ মন্তব্য করতেন না। মাঝে মাঝে সামান্য তিরস্কারের সুরে বলতেনঃ সুলায়মানের মা, নিজের জানের ওপর একটু দয়া করো। তুমি অসুস্থ, দুর্বল। তোমার শরীরের জন্যে বিশ্রাম প্রয়োজন। তারপর ঠোঁট দু’টি একটু বেঁকিয়ে বলতেন, কিন্তু কে পড়ে, আর কে-ইবা শোনে। আমার কথা তো হাওয়ায় উড়ে যায়। বেশী দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে পুষে রাখলে, জীবন খাটো হয়ে যায়। সুলায়মানের মা, আমার কথা একটু শোন, একটু ভালো কাজ কর।
সে সময় মানুষ ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচার জন্যে নিজ নিজ জান হাতে নিয়ে শহর থেকে পালাচ্ছিল। মিসরের গ্রামে-গঞ্জে ফিরিঙ্গি পোশাক পরা লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এরই মধ্যে আমার ফরীদ চাচা কায়রো যাওয়ার জন্যে মনস্থ করলেন। তিনি মৃত্যুর পরোয়া করেন না, ধ্বংসের ভয় করেন না। তাঁর সারা জীবনে তিনি এ রকম বেপরোয়া ভাব দেখিয়েছেন। মনে করতেন, জীবন ও মৃত্যু ভাগ্যের হাতে। মানুষ যেমন বলে থাকে, “আমার কপালে পালানো লেখা নেই’- এ কথায় তিনি দারুণভাবে বিশ্বাস করতেন।
আমার চাচার অনুভূতিটা ছিল একজন লক্ষ্যহীন গন্তব্যহীন লোকের মত, যার সামনে না থাকে পথের কোন দিশা কিংবা নির্দিষ্ট কোন মাইলপোস্ট। তিনি যখন গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন তাঁর পকেটে কয়েকটি টাকা মাত্র, যার তিনি মালিক। তাঁর সামনে প্রশস্ত, হৈহট্টগোল পরিপূর্ণ কায়রোর জগত। এ ভিড়ের মধ্যে তিনি আশা করছেন একটি বাড়ীর, তা যত সংকীর্ণই হোক না কেন। ভাবা যায়, তাঁর পরিণতি কি হতে পারে ?
ভাগ্য কি তাঁর প্রতি প্রসন্ন হবে, তাঁর আশা কি পূর্ণ হবে এবং তাঁর হৃদয় কি একটু প্রশান্তি পাবে? না কাজের ধান্দায় ঘুরতে ঘুরতে তাঁর সীমিত টাকাগুলো খরচ করে ফেলবেন এবং শূন্য হাতে এমনভাবে রাস্তায় এসে দাঁড়াবেন যে, কোন টাকা পয়সা নেই, মাথা গোঁজার জায়গা নেই, খাবারও নেই ? এ রকম একটি মারাত্মক চিন্তা আমাকে দারুণভাবে নাড়া দিচ্ছে, আমার চিন্তার স্বচ্ছতাকে ঘোলাটে করে ফেলছে। এক মুঠো জীবিকার জন্যে চাচা যে কষ্ট ভোগ করবেন সে কারণে নয়, বরং অন্য একটি কারণে আমি তা ভালো করেই জানি। তিনি কখনো কারো কাছে হাত পাতবেন না। কোন পরিচিত জনের কাছে গিয়ে একটি রাত কাটানো বা এক গ্লাস পানি পান করা থেকে তিনি ভবঘুরের মত ক্ষুধাতৃষ্ণায় মৃত্যুকেই প্রাধান্য দিবেন।
চাচা, আল্লাহ আপনার সহায় হোন। আমি তাঁকে ভালোবাসি এত কিছু সত্ত্বেও। কারণ তিনি বড়ো ভালো, মহৎ এবং আমার প্রতি বড় দয়ালু। আমি জানি নেশাগ্রস্তরা খুব তাড়াতাড়িই রেগে যায় এবং তাদের মধ্যে সহজেই অনৈতিকতা ঢুকে পড়ে। আমার কল্পনায় তাদের যে ছবিটি ভেসে ওঠে, তা হলো বিক্ষিপ্ত গোঁফ, মরচেপড়া দাঁত, চোখ থেকে যেন আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে, হাতে মোটা লাঠি এবং রক্তাক্ত শরীর। কিন্তু আমার চাচার মধ্যে এমনটি কখনো দেখিনি।
সে দিনটির কথা কখনো ভুলতে পারবো না, যে দিন তিনি কায়রো যাত্রা করেছিলেন। আমি বসেছিলাম ক্লাসে। আরবী ভাষা শিক্ষকের বক্তৃতা শুনছিলাম। তিনি আমাদের সামনে একটি রচনার বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করছিলেন। রচনাটির শিরোনাম ছিল মিসরের শিল্প বিপ্লব। শিক্ষক তাঁর বক্তৃতার মাঝখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলেন একথা বলে, “বিদেশীরা আমাদেরকে বুঝিয়েছে, আমাদের এদেশটি কেবল একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কিন্তু ছেলেরা, প্রকৃত সত্য এই যে, মিসরের প্রভূত সম্ভাবনা আছে শিল্প প্রধান দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার। আমাদের আছে লোহা, পেট্রোল, অন্যান্য বহু খনিজ পদার্থ এবং বিদ্যুতের বহু উৎস যা কিনা শিল্প বিপ্লবের মূল ভিত্তি।’
শিক্ষকের কথার ধারাবাহিকতা আমি কেটে দিলাম এই বলেঃ তাহলে সরকার শিল্প বিপ্লবের জন্যে কাজ করছে না কেন?
শিক্ষক মহোদয় মৃদু হাসলেন। সম্ভবত তিনি মনে করলেন, এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব নানান মুসিবতের দিকে তাঁকে ঠেলে দিতে পারে। তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ সেদিন বেশী দূরে নেই, যেদিন সব কিছুই হবে। হে ভবিষ্যতের যুবকবৃন্দ, তোমাদের সাহসের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত।
আমি আরেক বার কথা বলার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় ‘মুশরিফ’ অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক ক্লাসের দরজায় মৃদু খটখট আওয়াজ করলেন। বললেন, সুলায়মান আবদুদ
দায়েম।
-একটু এসো, সুপারের সাথে কথা বল।
আমি সুপারের কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম আমার চাচা অপেক্ষা করছেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর আরো কিছু বন্ধু-বান্ধব আছেন। তাঁরা তাঁকে রেল স্টেশনে বিদায় জানাতে এসেছেন। কায়রো যাত্রার প্রাক্কালে চাচা চেয়েছিলেন আমাকে এক নজর দেখতে । –সুলায়মান, কেউ জানে না এরপর আর কখনো তুমি আমাকে দেখতে পাবে কি না। কথা কয়টি আমাকে একটু তফাতে ডেকে নিয়ে বললেন। বারবার তিনি আমাকে উপদেশ দিতে লাগলেন। তখন তাঁর দু’চোখে পানি টলমল করছিল। তিনি তাঁর পূর্বের কথার জের টেনে বলে চললেন, এ বছর তুমি প্রাইমারী সার্টিফিকেট অর্জন করবে। সামনের বছরে তুমি ইনশাআল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে থাকবে। তারপর তুমি হবে একজন পুরুষ। আর তুমি জান পৌরুষের অর্থ কি? অর্থাৎ তুমি হবে একজন বড় দায়িত্বশীল। আমি আশা করি, তুমি হবে আমার থেকেও খোশনসীব। প্রথম ও শেষ কথা হলো, তুমি তোমার পড়ার প্রতি যত্নবান হবে। মিথ্যা বিক্ষোভ মিছিল পরিত্যাগ করবে। খারাপ কাজ থেকে সব সময় দূরে থাকবে। সুলায়মান, তোমার কাছে আমার একটি আরজু, আর তা হলো, সব সময় আমাকে চিঠি লিখবে।
আমি ইচ্ছা করলাম, তার ঠিকানা জিজ্ঞেস করি। কিন্তু দেখতে পেলাম, তিনি দরজার কাছে পৌঁছে গেছেন। প্রশ্নটি আমার দু’টি ঠোঁটের মধ্যেই আটকে রইল। আবার একটু মোড় নিয়ে তিনি আমার মাথায় চুমু খেলেন অত্যন্ত দরদ ও উদ্বেলিত আবেগের সাথে। যখন আমার হাতে হাত মেলালেন, তখন আর ছাড়তেই চান না। আমি তখন হতভম্ব হয়ে পড়েছি। একটু রসিকতা করে তিনি বললেন, এখনো তোমার আঙ্গুলে কালি লেগে ময়লা হয়ে থাকে? তুমি তো এখন আর ছোট নও, সুলায়মান। যা হোক, কারণটি আমি জানি। এ কারণে খুব শিগগিরই তোমার জন্যে পরিষ্কার ও সুন্দর একটি ফাউন্টেন পেন পাঠিয়ে দেব। তবে একটি শর্ত, তোমাকে পাস করতে হবে এবং তালিকায় প্রথম দিকে তোমার নামও থাকতে হবে।
তিনি তাঁর পথের দিকে এগুনোর আগে পাঁচ গুরুশের একটি চান্দির মুদ্রা হাতে নিয়ে আমার পকেটে ফেলে দিলেন। আমি যখন সেটি ফিরিয়ে দিতে চাইলাম, তখন আমার কথাটি তাঁর সতর্ক কানটিতে গিয়ে পৌঁছলো না। চাচা চলে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ আমি হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে রইলাম। শুনতে পেলাম সুপার তার টেবিলে ঠকঠক আওয়াজ করে বলছেন, সুলায়মান আবদুদ দায়েম, ক্লাসে যাও ।
সুপারের কক্ষ ত্যাগ করার পর আমি নিজেকে সম্বরণ করতে পারলাম না। আমার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো বন্ধ করার শত চেষ্টা সত্ত্বেও। একটা চাপা আবেগে আমার সত্তা প্রবলভাবে কেঁপে উঠছিল। আমি খুব তাড়াতাড়ি টয়লেটে গেলাম। স্থানটি ছিল নির্জন। কারণ তখন ছিল ক্লাসের সময়। সেখানে আমি আমার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলাম। আমার দু’চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঠেলে বের হলো। আমি অনুভব করলাম শুধু আমার চোখ নয়, আমার অন্তরটিও যেন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমি মুখ ধোয়ার চেষ্টা করলাম। ধোয়া শেষ হতে না হতে স্মরণ হলো চাচার সেই কথাটি, ‘কেউ জানে না সুলায়মান, এরপর তুমি আমাকে আর দেখতে পাবে কি না।’ আমি নতুন করে কাঁদতে শুরু করলাম। অবশেষে আমার ভয় হলো, ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যাবে। শেষ বারের মত মুখে পানি দিলাম। তারপর ক্লাসের উদ্দেশে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম। সিঁড়ির মাঝখানে আবার চোখ থেকে অশ্রু বেরিয়ে এলো। খুব দ্রুত হাত দিয়ে তা মুছে ফেল্লাম। কারণ আমার কাছে তো রুমাল নেই। অনুমতি নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করলাম। এবং চেষ্টা করলাম শিক্ষকের দিকে না তাকাতে। তিনি যেন আমার ব্যাপারটি বুঝতে না পারেন। কিন্তু তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে আমার চোখের পাতার ফোলা ফোলা ভাব ও চেহারায় বিষাদের স্পষ্ট ছাপ গোপন থাকলো না। তিনি বললেন, সুলায়মান, তোমার কি হয়েছে?
শিক্ষকের সম্মানে উঠে দাঁড়ালাম। আমার দৃষ্টি তখন আমার পায়ের পাতার দিকে । মনে হলো, আমি আবার ভেংগে পড়বো। কিন্তু শিক্ষক আমাকে তাড়াতাড়ি বসতে বললেন। তারপর তিনি পড়াতে শুরু করলেন।
বিকেলে বাড়ী ফিরলাম। আমার চাচার দেয়া পাঁচ গুরুশের রুপোর চাকতিটি তখনো আমার পকেটে। যখনই আমি সেটি স্পর্শ করছিলাম, তখনই আমার মধ্যে একটা শিহরণ অনুভূত হচ্ছিল। আমার হতভাগ্য চাচার কথা স্মরণ হচ্ছিল। আমার চাচার পকেটের প্রতিটি পয়সার প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করে আমি অন্তরে চাবুকের আঘাত অনুভব করলাম। নিজেকে আমার মনে হলো, অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অকৃতজ্ঞ। এ অপরাধবোধ আমাকে ভীষণ উত্তেজিত করে তুললো। একবার চিন্তা করলাম, এ পয়সা পাঁচটি আমরা যে খালটি পার হই, তার মধ্যে ছুঁড়ে ফেলি। কিন্তু তাতেও আমার কষ্টবোধ হলো। বাড়ীতে পৌঁছেই বুঝতে পারলাম গোটা বাড়ীটি শোকাভিভূত। বিষাদের একটা থমথমে পরিবেশ বাড়ীর চারপাশে যেন তাঁবু গেড়ে বসেছে। প্রথমেই আমার দাদীকে পেলাম। তাঁর সেই উৎফুল্ল ভাব ও দৃঢ়তা কোথায় যেন পালিয়েছে। দু’চোখ ফেটে তাঁর অশ্রু বিগলিত হচ্ছে। আব্বা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছেন। আর আম্মা তাঁর সেই অভ্যেস অনুযায়ী বুকের যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছেন। আমি কোন কথা না বলে রুপোর চাকতিটি আম্মার ঘরে ছুঁড়ে মারলাম।
সাঈদ হাফেজ কিন্তু সব সময় আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিল। যদিও আজ আমি চাচাকে হারালাম দীর্ঘ সময়ের জন্যে, কিন্তু সে তো তাঁর বোন বাসীমাকে হারিয়েছে আরো আগে। এভাবেই বিপদগ্রস্তদের ওপর বিপদ জমা হতে থাকে।
পরের দিন সাঈদ আর আমি যখন স্কুলের পাশে ঢালু স্থানটিতে নামছিলাম, দেখতে পেলাম একজন বৃদ্ধলোক দু’চাকার একটি ঠেলাগাড়ী সামনের দিকে ঠেলছে। বিভিন্ন ধরনের বই-পুস্তক, পুরনো ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকা ও পকেট সাইজের গল্প-উপন্যাসে গাড়ীটি ভরা। লোকটি তার এসব জিনিসের ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রশংসা করছে এবং খুব চড়া দামের কথা বলছে। তার কাছে কি আছে তা জানার একটা ঔৎসুক্য আমাদের পেয়ে বসলো। ছোট্ট একখানি চটি বই সাঈদ হাতে তুলে নিল। বইটি লিখেছেন একজন এডভোকেট দানওয়ার ঘটনাবলী ও তার রক্তাক্ত ট্রাজেডিসমূহ সম্পর্কে। সাঈদ বইটি
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!