মানুষ ও দেবতা – নসীম হেজাযী – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ নসীম হেজাযী
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৩৭
মানুষ ও দেবতা – বইটির এক ঝলকঃ
মোহিনী বলল, “ঝিলের কাছে গিয়েছিলাম, বাবা! বকের বাচ্চা দেখেছি। এই দেখ পদ্মফুল এনেছি। দেখ তো কত সুন্দর ফুল।”
অৰ্জ্জুন বলল, “হায় ভগবান! ফুল তুলতে গিয়ে যদি জলে ডুবে মরতে, তাহলে কি
হাত?”
“আমরা তো জলে নামিনি বাবা। একটি ছেলে আমাদের ফুল তুলে দিয়েছে। ওর নাম মাধব। সবাইকে সে ফুল আর শালুক তুলে দিয়েছে। মাধব ভাল বাঁশীও বাজায়, বাবা!” “মাধব কে?”
“ঝিলের ওই পারে থাকে।”
“হায়! হায়! ওরা তো শূদ্র। শূদ্রের হাতের ফুল অপবিত্র। ফেলে দাও, ফেলে দাও।” মোহিনী বলল, “না, বাবা। মাধব খুব সুন্দর। পরিষ্কার পরিচ্ছন। ঝিল থেকে তাজা ফুল তুলে এনেই আমাদের হাতে দিয়েছে। ফুল কখনো অপ হয় না, বাবা।”
অৰ্জ্জুন ফুলগুলো টান মেরে উঠানে গরুর সামনে ফেলে দিল। বলল, “দেখছ। শূদ্রের হাতের ছোঁয়া ফুল গরুও খাচ্ছে না।”
রনবীর বলল, “কাকা বাবু। গরু তো পদ্মফুল খায় না।”
অৰ্জ্জুন রাগ করে বলল, “হ্যাঁ, আমাকে শেখাতে হবে না। দু’জনই শূদ্র ছেলের হাত থেকে ফুল আর শালুক নিয়ে এসেছ। ওসব ফেলে দিয়ে ‘চান’ করে তবে ঘরে যেও।”
সাবিত্রীকে ডেকে অৰ্জ্জুন বলল, “তোমার মেয়ে কি করে এসেছে দেখ। শূদ্র ছেলের তোলা ফুল নিয়ে এসেছে। ওকে ‘চান’ করিয়ে পবিত্র করে নিও।”
রনবীর বলল, “কাকা বাবু। মাধবকে আমরা ভগবান দেখাবার জন্য মন্দিরে নিয়ে গিয়েছিলাম। শংকর তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমিও পাথর মেরে শংকরের মাথা ভেঙ্গে দিয়েছি। বাবার কাছে বলে শংকরকে মন্দির থেকে বের করে দেব।”
অৰ্জ্জুন বলল, “তোমরা অপবিত্র শূদ্র ছেলেকে ভগবানের মন্দিরে নিয়ে গেলে
: কেন ?”
“মন্দির দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম।”
“শূদ্র ছেলে মন্দিরে প্রবেশ করলে মন্দির অপবিত্র হয়ে যায় জানো না?”
মোহিনী প্রশ্ন করল, “কেন, বাবা? মাধব তো ঝিলের জলে স্নান করে পরিষ্কার হাত পা নিয়েই মন্দিরে গিয়েছিল। তবু মন্দির অপবিত্র হবে কেন?”
“পাগলী মেয়ে! শূদ্র স্নান করার পরও অপবিত্রই থাকে। তারা ভগবানের মন্দিরে যেতে পারেনা।”
“কেন বাবা! ভগবান ওদের সৃষ্টি করেন নি?”
“করেছেন। কিন্তু তিনিই ওদের অপবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন।”
“তাদের হাত-পা, নাক, চোখ-মুখ সবই তো আমাদেরই মত। কোথাও তো অপবিত্র কিছুই দেখা যায় না। ”
“বোকা মেয়েকে বুঝানো মুশকিল! ভগবান নিজেই ওদের সমগ্র শরীরটাই অপবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন।”
“তাহলে তো ভগবান খুবই খারাপ কাজ করেছেন বাবা। শংকরের মত বদ লোককে পবিত্র আর মাধবের মত ভাল ছেলেকে অপবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি এমন অন্যায় কেন করেন বাবা!”
“বোকা মেয়ে। ভগবান যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। ভগবানের কোন কাজই অন্যায় নয়। বাগানে দেখছ না, একটা গাছ বড়, আবার আর একটি গাছ ছোট। কারো গায়ের রং ফর্সা আবার কেউ বা কালো। মানুষের মধ্যেও কেউ উঁচু জাতের, আবার অনেকে নীচু জাতের। এসব ভগবানের লীলা। তুমি তা বুঝবে না। যাও, ‘চান’ করে এসো। আমার মাথার মগজ আর চিবিয়ে খেয়োনা।”
রনবীর বলল, “আমি কিন্তু শংকরকে দেখে নেবো কাকা বাবু।”
অৰ্জ্জুন বলল, “দেখ রনবীর। তুমি নগরপতির ছেলে। সামান্য একটা শূদ্র ছেলের সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব মানায় না। আর কখনও তার সঙ্গে মেলামেশা করোনা, বুঝলে?”
রনবীর মাথা নীচু করে বাড়ীর দিকে যেতে যেতে চিন্তা করছিল, মাধব অপবিত্র হল কি করে? ভগবান মানুষকে দু’ভাগে সৃষ্টি করেন কেন? এক ভাগ পবিত্র আর অপরভাগ অপবিত্র। অথচ তাদের চেহারা ও দৈহিক গঠনে কোন পার্থক্য নেই। কে পবিত্র আর কে অপবিত্র, তা বুঝবার উপায় কি? শংকরের মত নির্ণয় মানুষ পবিত্র হল কি করে? যার অন্তরে একটি ছোট ছেলের প্রতি মোটেও দয়ামায়া নেই, সে তো নিজেই অপবিত্র। অথচ মাধব ও তার মায়ের আচরণ কত সুন্দর! তারা নাকি অপবিত্র। তার কিশোর মগজ এ সব প্রশ্নের কোনই সদুত্তর দিতে পারলো না। ভগবান, মন্দির, পুরোহিত, শংকর, মাধব এ সবই যেন তার কাছে এক দূর্বোধ্য বিষয় মনে হ’তে লাগল। মাধব ও শান্তা ভগবানের অপরূপ সৃষ্টি। তাদের দৈহিক গঠন যেমন অতি চমৎকার, তেমনি তাদের কথাবার্তাও অতি মিষ্ট। মাধব এত সুন্দর সুরে বাঁশি বাজাতে পারে, ভজন গাইতে পারে। তার গলার স্বরও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তবু মাধব কেন অপবিত্র হল? কে তাকে অপবিত্র ঘোষণা করল? বিদঘুটে চেহারার শংকরই যে পবিত্র তারই বা প্রমাণ কি? রনবীর যতই চিন্তা করে ততই তার কাছে এসব হেঁয়ালী মনে হতে থাকে। চারটি বছর কেটে গেল। এ সময়ের মধ্যে মোহিনী এবং রনবীর সমাজের পরিবেশ থেকে বুঝতে পেরেছে যে, পূর্ব জন্মে তারা যে সব সৎ কাজ করেছিল, তারই প্রতিফল স্বরূপ এ জন্মে উঁচু জাতে তাদের জন্ম হয়েছে। আর যারা পূর্বজন্মে পাপ করেছিল, | তারাই এ জন্মে শূদ্ররূপ ধারণ করে পাপ মোচন করছে।
মাধবও বুঝতে পেরেছে, সে শূদ্র। উঁচু জাতের সঙ্গে মেলামেশা করার কোন অধিকার তার নেই। সে বস্তিতে জন্মেছে। বস্তির বাইরে শহরে যাওয়া তার জন্য নিষিদ্ধ। মাধব নিকটের একটি টিলার ওপর উঠে শহরের দৃশ্য দেখে। কি সুন্দর আলো ঝলমল নগরী। আর বস্তির মানুষ কি কষ্টে দিন কাটায়। রাত্রিবেলা অন্ধকারে হারিয়ে যায় | ঘাসপাতার তৈরী ঘরগুলে। দূরে মন্দির দেখা যায়। ভগবানের মন্দির। ভক্তিতে তার মাথা নুয়ে আসে। ভগবানই এমন সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। নীল আকাশ, সবুজ ধরণী, কলকলগামী নদী, মনোরম পাহাড় সবই তাঁর মহান সৃষ্টি। তিনিই তো মোহিনী ও রনবীরের মত সুদর্শন বালক বালিকা তৈরী করেছেন। মাধব তাদের ভুলতে পারে না। বিশেষ করে মোহিনীর মধূর চেহারাখানি বারবার তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যদি সে শূদ্রের ঘরে না জন্মাতো তাহলে তো অবশ্যই রনবীর ও মোহিনীর সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করতে পারতো। মাধব ভগবানের উদ্দেশ্যে মাথা নত করে বলে “ভগবান ! তুমি আমাদের সৃষ্টি করেছো। তোমার মহান সৃষ্টি কত সুন্দর! কত আনন্দময়! ভগবান, তুমি উচ্চ ও নীচের ভেদাভেদ দূর করে দাও। সকল মানুষই তোমার সৃষ্টি। তাদের | সকলকে অবাধে মেলামেশা করার সুযোগ দাও। একমাত্র তুমিই আমাদের সকলকে সমান করে দিতে পারো।”
প্রতিদিন সে ঝিলের অপর কিনারায় গিয়ে রনবীর ও মোহিনীর আশায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার মত অদ্ভূৎ ছেলেকে তারা ভুলে গেছে মনে করে আবার সে ফিরে যায়। তার মন বলে ওঠে “না, মোহিনী আমাকে ভুলতে পারে না।” কত যত্ন করে সে নিজের ওড়না দিয়ে সেদিন মাথা বেঁধে দিয়েছিল। মায়া-মমতার এ দেবী কি করে ভুলে যেতে পারে।
একদিন মাধব ঝিলের কিনারায় গাছের ওপর বসে শহরের দিকে তাকিয়ে দেখছিল। সহসা সে রনবীর ও মোহিনীকে আর কয়েকটি বালক বালিকার সঙ্গে ঝিলের দিকে আসতে দেখল। মাধবের সমস্ত দেহ আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল। ইচ্ছে হচ্ছে, দ্রুত গাছ থেকে নেমে গিয়ে আগন্তুকদের সে অভ্যর্থনা জানায়। কিন্তু পরক্ষণেই তার সবকিছু স্মরণ হল। সে গাছের ঘন পাতায় ঢাকা একটি শাখায় এমন ভাবে বসে রইল যেন সেখানে বসে সে মোহিনীকে দেখতে পায়। মোহিনী ও রনবীর দলবল সহ ঝিলের নিকটে এসে হৈ চৈ করে ফুলতোলা ও সাঁতার কাটায় মেতে উঠল। মোহিনী ঝিলে নামেনি। গাছের শাখায় একটি কোকিল ‘কুহু’ ‘কুহু’ করে ডাকছিল। মোহিনীও তার সুমধুর স্বরে কোকিলের সঙ্গে সঙ্গে “কুহু” “কুহু” করতে লাগল। এক সময় সে ঝোপের নিকট আসতেই কোকিলটি উড়ে গেল। এবার মোহিনী ফিরে যেতে উদ্যত হল। মাধব তখনই মধুর সুর লহরীতে বাঁশী বাজাতে শুরু করল। মোহিনী ফিরে দাঁড়াল। বাঁশীর সুর তাকে যাদুর মত টেনে গাছের নীচে নিয়ে এলো। মোহিনী গাছের নীচে দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে বাঁশীর আওয়াজ শুনতে লাগল। আর মাধব মন প্রাণ দিয়ে বাঁশী বাজাতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর বাঁশীর সুর বন্ধ হতেই মোহিনী বলে উঠল, “কে, মাধব নাকি?”
মাধব অতি দ্রুত গাছ থেকে নীচে নেমে এসে বলল, “হ্যাঁ, মোহিনী। তুমি এসেছ? আমি তোমার জন্য কতদিন থেকে পথের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে করেছিলাম, আর হয়ত তোমার দেখাই পাব না।”
মোহিনী বলল, “আমি রনবীরকে নিয়ে আরও কয়েকবার এখানে এসেছি। তোমাকেও খুঁজেছি। কিন্তু দেখা পাইনি।”
মাধব বলল, “আমি তো মনে করেছিলাম, তুমি হয়ত কোনদিনই আমাকে তালাশ করবেনা।”
“কেন, তুমি এমনটি ভেবেছিলে
“তোমরা শহরের উঁচু জাতের লোক, আর আমি বস্তির গরীব ছেলে।”
“তাহলে কি হয়? তুমি যে ভাল বাঁশী বাজাতে পার। শহরে তো এমন সুন্দর করে কেউ বাঁশী বাজাতে পারে না।”,
“বাঁশীর সুর তোমার ভাল লাগে মোহিনী?”
“হ্যাঁ, খুব ভাল লাগে।
ওদের কথার মাঝখানে রনবীর ঝিল থেকে উঠে ডাকতে শুরু করল, “মোহিনী। কোথায় তুমি?”
O
মোহিনী ব্যস্ত হয়ে উঠল। বলল, “আমি যাই মাধব! রনবীর আমাকে ডাকছে। ওরা এখনই হয়ত চলে যাবে।”
মাধব চঞ্চল হয়ে উঠল। বলল, আর কোন দিন এদিকে আসবে না। ?”
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!