মরু সাইমুম – নসীম হেজাযী – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ ফজলুদ্দীন শিবলী
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩৪১
মরু সাইমুম – বইটির এক ঝলকঃ
সমবেত কবিরা তার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বললোঃ ‘খামোশ! খামোশ!!’
সা’দ চিৎকার দিয়ে বললো,
‘আমি খামোশ হব কেন? স্পেনের বাগ-বাগিচায় আমার পূর্বসূরীরা রক্ত সিঞ্চিত করেছেন। এ জাতির ইজ্জত, আমার ইজ্জত জাতির পরাজয়, আমার পরাজয়। তাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত আমার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত।
ইবনে আম্মারের ইশারায় ছয়-সাত জন সেপাই ওকে ঘিরে নিল এবং নিষ্ঠুর মনোবৃত্তির পরিচয় দিয়ে ওকে ধাক্কাতে লাগল। ওকে যখন ওরা বাইরে নিয়ে গেল তখনও বুলন্দ আওয়াজে বলছে ও…,
‘তোমরা সবে সাক্ষী। আমার জিম্মা আমি আদায় করেছি কওমের কথা মুতামিদের কানে দিয়েছি পৌঁছে। তোমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে …. তোমরা আজ জনতার রক্ত তবে রগ-রসের আসর জমিয়েছ, কাল আল-ফা তোমাদের হাড্ডির ওপর বালাখানা নির্মাণ করবে .. সুলতান মুতামিদ। চোখ বন্ধ করে কাল চক্রের নিঠুর ছোবল থেকে নিজকে রক্ষা করতে পারবে না।’
পাহারাদাররা সা’দকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজার বাইরে নিয়ে গেল। শক্তিশীল ক’জন ওকে জাপটে ধরেছিল, বাদ বাকীরা ঠেলছিল সাধ্যমত। ক’জন ওর চারপাশে সশস্ত্র অবস্থায় টহলও দিচ্ছিল। সা’দের জোশ ততক্ষণে স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তাই পাহারাদারদের সাথে ধস্তাধস্তি না করে ওদের নির্দেশ মেনে চলছে ও।
দেউড়ীর ত্রিশ কদম অদূরে এসে পূর্ণ শক্তিতে ঝাকুনি দিয়ে নিজকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত পালাতে লাগল সা’দ। সিপাইরা ওর পিছনে ছুটতে লাগল চিল্লাতে চিল্লাতে। দেউড়ীতে মোড় নিতেই ওর সামনে নেয়া উচিয়ে দাঁড়াল দু’জন। এক নিমিষেই ওরা সাদ’কে বুঝি ঝাঝরা করে দিবে। হয়ত সা’দ লুটিয়ে পড়বে যমীনে, কিন্তু ওদের আশায় গুড়ে বালি দিয়ে সা’দ দ্রুত প্রাচীরে চড়তে লাগল। প্রাচীরের পর প্রাচীর টপকে এগুলো সামনে। প্রাচীরগুলো বেশ চওড়া থাকায় গাঢ় অন্ধকারেও ওর চলতে তেমন একটা বেগ পেতে হলো না। এতদূর অগ্রসর হয়েও স্বস্থি পাচ্ছিল না ও। ও জানেনা, এ চলার গন্তব্য কোথায়? তবে এতটুকু বুঝতে পারছে— যেদিকে ও ছুটছে, সমুদ্র সেদিকটায় ।
পাহারাদাররা ‘ধর ধর’ করে মহল কাঁপিয়ে দেউড়ীতে চড়তে লাগল। পঞ্চাশ গজ চলার পর ওর কানে ভেসে এলো পাহারাদারদের চিৎকার… ‘ওকে ধর, গ্রেফতার করো, প্রবেশদ্বারগুলো জলদী বন্ধ করে দাও!
সা’দ ওর পরিহিত আচকানকে ঝামেলা মনে করল। আচানক ওর সামনে উদ্ভাসিত হলো তলোয়ারধারী এক সেপাই। মশালের আবছা আলোয় আচকানে পেঁচিয়ে তাকে নীচে ফেলে দিল ও। ঐ পাহারাদারের পিছু পিছু এগিয়ে আসছিল আরো ক’জন। সা’দ ওকে নীচে ফেলার দরুন আগুয়ান সেপাইরা ভয়ে দাঁড়াল থমকে । ওদিকে সা’দ যাকে নীচে ফেলে দিয়েছিল প্রকাণ্ড এক পাথরের সাথে টক্কর খেয়ে থেতলে গেল তার মাথা।
এক পাহারাদার বুলন্দ আওয়াজে চিৎকার দিল, ‘আসামী উদ্যানমুখী হচ্ছে, হুঁশিয়ার।’ ততোক্ষণে সা’দ বুরুজ থেকে নেমে গেছে। আচমকা দেখতে পেলো, মশালধারী ক’জন। একটি থামের আড়ালে লুকালো ও মশালধারীরা ব্যস্ত হয়ে সামনে যাবার পর দেখতে পেল না ওকে। ওরা যাচ্ছে তাই গালি দিচ্ছিল। শেষে সকলেই চড়ল বুরুজের ওপর।
বাগানে প্রবেশ করেই সা’দ একটি গাছে চড়ে পরিস্থিতির দিকে নযর বুলালো। পাহারাদাররা সকলেই এগিয়ে আসছিল ওর দিকে। কারণ সা’দের বৃক্ষে ওঠার খস্ খস্ শব্দ ওরা শুনতে পেয়েছিল। সকলেই মশাল ধরাল। মুহূর্তে গোটা বাগান পরিণত হলো প্রকাশ্য দিবালোকে।
সাদ’ প্রমাদ শুনল। ভাবলো গাছ থেকে নামতেই সে ঝাঝরা হয়ে যাবে। কিন্তু ও যাবে কৈ। বুরুজে মশালধারী। বাইরের প্রাচীরেও রক্ষীরা তীর-ধনুক তাক করে আছে। ও জানে এক্ষণে সকল দরজা রুদ্ধ। কাজেই গাছ থেকে নেমে কোন লাভ নেই। সুতরাং গাছ থেকে কোনক্রমে উঁচু প্রাচীরে চড়তে পারলে প্রাণে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। যেতে পারে টহলদার পাহারাদারদের চোখে ধুলো দেয়া।
খানিকপর। আট-দশজনের মত লণ্ঠনধারী ছুটে এলো। গাছ থেকে বাদুড় ঝোলা হয়ে চড়ল প্রাচীরে ও। থাকলো সেখানে উবু হয়ে। অন্যদিক থেকে আরো দু’জন শিকারী কুকুরের দ্বারা এঁকে এঁকে ওর দিকে এগিয়ে আসলো। সা’দের পেরেশানী শংকায় রূপ নিলো। অসহায় ভাবে তাকালো ও এদিক ওদিক। আচমকা একটি গর্ত দেখতে পেয়ে পানি এলো ওর মনে। পুরানো কয়েকটা ইট খসে পড়ায় ওখানে যেন একটি সুড়ঙ্গ হয়েছে। উবু অবস্থায়-ই সা’দ টুপ করে নিজকে সঁপে দিল। এ সুড়ঙ্গের মধ্যে থেকে সা’দ মাথা তুললো। দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে দেখল-প্রাচীরটি নদীর তীরে দাঁড়ানো। পানি অনেক নীচে। এখান থেকে লাফ দিলে কলজে ফেটে যাবে। অনেকক্ষণ চিন্তা-ভাবনার পর সুড়ংগের থেকে বেরিয়ে এলো ও। দেখলো প্রাচীরের গা বেয়ে একটি প্রলম্বিত বটমূল পানির দিকে নেমে গেছে। কাল বিলম্ব না করে বটমূল ধরে আস্তে আস্তে নীচে নামতে শুরু করল সা’দ। কিছু দূর যাবার পর বটমূল শেষ হয়ে এলো। ততোক্ষণে মশালধারী ঠিক ওর মাথার উপরের প্রাচীরে জমায়েত হয়েছে। ওরা বটমূল কাটতে আরম্ভ করলো। সা’দের চোখে নেমে এলো রাজ্যের হতাশা। নির্ঘাত মৃত্যু যেন ওকে হাতছানী দিয়ে ডাকছে। চিন্তা করার ফুরসত নেই। নেই কারো সাহায্যের আশা। আল্লাহ ভরসা করে যেখানে ছিল ওখান থেকেই নদীতে লাফ দিয়ে পড়ল ও। পাহারাদাররা শিকড় কাটা বন্ধ করে এবার ওকে লক্ষ্য করে তীর বৃষ্টি শুরু করল। পানিতে পড়ার পর সা’দের দম আটকে আসার মত অবস্থা। অনেক উঁচু থেকে লাফিয়ে পরার দরুন ও পানির বেশ নীচে চলে গিয়েছিল। যার দরুন ঢোক কয়েক লবণাক্ত পানি অনিচ্ছান্তেও ওর পেটে চলে গিয়েছে। খানিক পর ডুব সাতার দিয়ে ভেসে ওঠে সা’দ। অমনি কয়েক পশলা তীর ওর চার পাশে আছড়ে পড়ে। ভাগ্যিস তীর বর্ষণকারীদের নিশানা ব্যর্থ হয়েছিল। অন্যথায় ওর জিন্দেগীর সফর শেষ হতো এখানেই। ডুব দিয়ে সা’দ নদী বক্ষের দিকে এগুতে লাগলো। আচানক একটি তীর এসে ওর রানে বিধল। ব্যথায় কুকড়ে ওঠল। এক্ষণে ওকে গাঁথা তীর নিয়েই নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে হবে। ও ভাবলো-কিছুক্ষণের মধ্যেই মহলের অন্যান্য পাহারাদাররা পুলিশসহ নদীর কিনারা ঘিরে ফেলবে। সুতরাং পূর্ণ শক্তিতে সাঁতরাতে লাগল ও।
মহলের প্রাচীর শেষে সুবিশাল বাগ-বাগিচা। এখানে সকাল-সন্ধ্যা সেভিলের তরুণ-তরুণী ছাড়াও অভিজাত ঘরের লোকজন হাওয়া খেতে আসে। নদী সাঁতরে সা’দ এসে এই বাগানে প্রবেশ করল। খানিক চলার পর তীরবিদ্ধ রানটি অসার হয়ে ওঠল। দু’ঠোট কামড়ে এক ঝটকায় তীর খুলে নিল ও। দৌড়াতে লাগলো দ্রুত। বাগান পেরিয়ে এসে দাঁড়াল একটি খোলা ময়দানে। বেশ কিছু নালা দেখা যাচ্ছে। গোয়াদেল কুইভার থেকে পানি এনে বাগান সিঞ্চিত করার লক্ষ্যে এগুলো খোদাই করা হয়েছে। সা’দ উবু হয়ে মুখ ধুয়ে ঢোক কয়েক পানি গলধঃকরণ করল।
আচানক ওর কানে এলো সম্মিলিত ঘোড়ার খট্ খট্ ধ্বনী। মুহূর্তে নালার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো ও। রইল খামোশ আসর হয়ে।
পনের জনের মত সওয়ার নালার কাছে এসে দাঁড়াল। পরস্পরে বলাবলি করল- আসামী বোধহয় বাগান অতিক্রম করতে পারেনি। হয়ত লুকিয়ে আছে ঝোপঝাড়ের মাঝে। পদব্রজী ফৌজ আসার আগ পর্যন্ত তোমরা কতকে এদিকটার খেয়াল রেখ। আমি ক’জন নিয়ে নদীর কিনারটা ঘুরে আসি। বললো এক সওয়ার।
সা’দের কানে আসছে ওদের কথা। সঙ্গীদের ক’জন নদীর তীরে চলে যাবার পর বাদ বাকীরা নহরের আশ-পাশে টহল দিতে লাগল। তীরের আঘাতে প্রচুর রক্ত-ক্ষরণ হয়েছে সা’দের। ওর শরীর ক্রমশঃ অবনতির দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু এত ভাবাভাবির সময় নেই। পদব্রজী ফৌজ এসে পড়লে জীবন বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আচানক বাগানের থেকে কেউ চিৎকার করে ওঠল, ‘আসামী বাগানে ঢুকেছে। তোমরা খোলা ময়দান ছেড়ে বাগানে এসো।’
টহলদার পাহারাদাররা বাগানের উদ্দেশ্যে ঘোড়ার জিন কষলো। পানি এলো সা’দের মনে।
কিছুক্ষণ নহরের মধ্যে দিয়ে উবু হয়ে চলল ও। অতঃপর নহর থেকে উঠে পালাল দ্রুত। খোলা ময়দান পেরিয়ে সা’দ এসে সরকারি অফিসার কলোনীতে প্রবেশ করল। কয়েকটা অন্ধকার সরুখাল পেরিয়ে প্রশস্ত রাস্তায় এসে দাঁড়াল ও সামনে একটি মসজিদের মিনার দেখে ও ভাবলো, মনজিলে মাকছাদ খুব একটা দূরে নয়। ইদ্রীসদের বাসা মাত্র দেড়শ’ গজ দূরে, কিন্তু অসার পা যে আর চলতে চাচ্ছে না। সর্ষে ফুল দেখতে লাগলো ও। খানিক চলার পর মানুষ চলার পদধ্বনী কানে এলো ওর। আত্মরক্ষার জন্য জীর্ণ-শীর্ণ একটি পোড়া দেয়ালে লুকালো সা’দ। দেয়ালের অপর পাশ দিয়ে দ্রুত পালাতে থাকে ও। শেষ পর্যন্ত পৌঁছল ইদ্রীসদের বাসার সামনে। ও ভাবল-কুদরতের রহম ছাড়া বাঁচার কোন উপায় ছিল না। কুদরত-ই তাকে বাঁচিয়েছে। সড়কে টহলদার পাহারাদার ওর প্রায় নিকটে এসে গেল। ঘাড় কাত করে সা’দ দেখল, সংখ্যায় ওরা চার কি পাঁচ। ইদ্রীসদের বাসা ঠিক ওর নাক বরাবর। প্রধান ফটকে মেহমান খানা। কিন্তু রাস্তা পেরিয়ে ওখানে গেলে পাহারাদাররা দেখে ফেলবে। সা’দ তড়িৎ গতিতে সরু গলিতে প্রবেশ করল। গলি পেরিয়ে এসে দাঁড়াল বাসার পেছন দিকে।
চিরাচরিত নিয়ম মাফিক তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য উযু করতে বাইরে এলো মায়মুনা। আচানকও শুনতে পেল, টহলদার পাহারাদাররা যেন বলছে, আমি কোতোয়ালকে নিজ কানে বলতে শুনেছি, আসামী সাগরে লাফ দিয়েছে।’
দ্বিতীয় এক প্রহরী বললো, ‘আমরা মনে হয়, রাজম হল থেকে ও এখনো বেরুতে পারেনি।’
তৃতীয় কেউ বললো, ‘খালি হাতে মহলে না ফিরে এসো না, একবার নদীর তীরটা চষে ফেরা যাক।’
‘না। না। বাকী রাতটা এ বাসার আশে পাশে আমাদের লুকিয়ে থাকতে হবে। ভাগ্য ভালো হলে শিকার পেয়েও যেতে পারি।’ বললো প্রথম প্রহরী।
“কিন্তু সাগর সাতরে যদি ও ওপার গিয়ে থাকে?’ দ্বিতীয় প্রহরীর কণ্ঠে বিরক্তি ।
“কিন্তু আমি মনে করি-ও নিশ্চয় সাগর সাঁতরে ওপার যেতে পারেনি। বাস্তবিক পক্ষে ও সাগরে ঝাপ-ই দেয়নি, আবার মহলেও নেই। আমার যদ্দুর ধারনা-ও বড় গভীর পানির মাছ। একটা মানুষের পক্ষে গোটা প্রহরীদের চোখে ধুলো দেয়া কি চাট্টিখানি কথা?’
“কিন্তু ওর পরিচয় কি?
‘শুনেছি এক খুবছুরত নওজোয়ান। গ্রানাডায় বাড়ী।’
‘সেভিলে গ্রানাডার হাজারো লোক রয়েছে। ইনশাআল্লাহ সকাল নাগাদ জানতে পারবে-সুচতুর নওজোয়ান ধরে পড়ে গেছে। ‘
মায়মুনার অন্তরে তোলপাড় শুরু হলো। লঘু পায়ে পৌঁছল দেউড়ীর কাছে। দেউড়ীর পার্শ্বস্থ কামরা থেকে নওকরদের বিচিত্র নাক ডাকা আওয়াজ আসছে। দেউড়ীতে প্রবেশ করল ও। বৃদ্ধ যে নওকরকে ও রাতের বেলা চৌকস থাকতে বলেছিল, চিৎ হয়ে নাক ডাকছিল সেও। নওকরদের জাগিয়ে তুলে মায়মুনা বললো,
‘তোমরা সবে অলস হয়ে গেছ যে। বাইরের সেপাইরা সা’দকে তালাশে করছে। সম্ভভতঃ ও বাসায় এসে দরজা বন্ধ দেখে চলে গেছে।’
নওকরদের একজন বললো, দরজার ছিটকানী খোলা। আমি এই মাত্র চোখ খুঁজেছি। সেপাইরা এলো কখন?’
ওরা সড়কে টহল দিচ্ছে। তাদের কথা আমি নিজ কানে শুনেছি।’
হাসান দেউড়ীর অপর পাশের কামরার থেকে বেরিয়ে বললো,
‘বোন মায়মুনা। আমরা জাগ্রত। ভাইজান এদিকে আসেননি।’ ‘তোমরা নৈশ প্রহরীদের কথা শুনেছো কি?’
মায়মুনা চারদিকের পরিস্থিতির উপর নযর বুলানোর জন্য উঠান পেরিয়ে ছাদে ওঠতে গেলে আচানক দেউড়ির কোনে টুপ করে একটি আওয়াজ হলো। চকিতে ফিরে দাঁড়াল ও। হয়ে পড়ল হতবাক। দেউড়ীর গায়ে দীর্ঘ এক নওজোয়ান দাঁড়ানো। চাঁদের আলোতে নওজোয়ান ক্রমশঃ ওর দিকে এগিয়ে আসছে। শেষ রাতের ঝাপসা আলোর আগস্তুকের চেহারায় নযর পড়লে মায়মুনার আনন্দানুভূতি দু’চোখে এসে জমায়েত হলো।
আগন্তুক নীচু আওয়াজে বললো, ‘ঘাবড়ে যেওনা মায়মুনা, আমি সাদ!’ মায়মুনা যেন স্বপ্ন দেখছিল। অনেক চেষ্টা করেও অনুভূতি প্রকাশের ভাষা খুঁজে পেলনা ও সা’দকে যেন ও হামেশা দূর অন্তরীক্ষের ঐ নীহারীকা কুঞ্জে দেখতে পায়। স্থানুর মত দাঁড়িয়ে থাকে ও। সা’দের লেবাছ কাদা-পানিতে একাকার।
পুরুষ শৌচাগারের দিকে পা বাড়াল সা’দ। বললো, ‘আমার ভায়েরা বোধহয় এদিকটায়।’
‘আপনি যখমী’ মায়মুনা ক্ষীণ কণ্ঠে আওয়াজ দিল, ‘ওরা আপনার পিছু নিয়েছে। আমার সাথে আসুন। মহলের এ দিকটা মাহফুয নয়। অন্দরে চলুন।’ সা’দের চোখে রাজ্যের অন্ধকার নেমে এলো। কিছু না বলে মায়মুনার অনুসরণ করল ও। দাঁড়ালো একটি স্তম্ভের সাথে ভর করে।
মায়মুনা এসে ওর বায়ু ধরে বললো, ‘আসুন!’
ক্ষীণ কণ্ঠে সা’দ বললো, ‘আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। মাথাটা আচানক কেমন করে উঠল। আমি এখন বেশ চাঙ্গা অনুভব করছি।’
দেউড়ী সংলগ্ন দরজা খুলে গেল অকাম্মাৎ। হাসান ভেতরে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, ‘ভাইজান এসেছেন কি?’
সা’দের দিকে নযর পড়তেই হাসান ভায়ের বায়ু ধরে নিয়ে চললো অন্দরে। থেমে থেমে বললো, ‘ভাইজান! আপনার তবিয়ত ভালো তো!’
‘আমি বিলকুল সুস্থ।’
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!