চলে যায় বসন্তের দিন – হুমায়ূন আহমেদ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ হুমায়ূন আহমেদ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১০১
চলে যায় বসন্তের দিন – বইটির এক ঝলকঃ
জহিরের বাবা এরপরেও বেশ সহজভাবে খাওয়া শেষ
করল। বেসিনে হাত ধুয়ে এসে আবার খাবার টেবিলে বসল। জহিরের খাওয়া তখনো শেষ হয় নি। জহিরের বাবা শান্তমুখে ছেলের খাওয়া দেখতে লাগল। খাওয়া শেষ হবার পর জহিরের বাবা বলল, নয় তারিখে তুই পরীক্ষা দিতে যাবি। যদি না যাস তাহলে ঐ দিনই এক বস্ত্রে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। কথা চালাচালি আমার পছন্দ না। আমি আমার কথা বলে শেষ করলাম। এই বিষয়ে নয় তারিখ পর্যন্ত আর কোনো কথা বলব না।
জহির বলল, আচ্ছা।
হিমু, এই হলো ঘটনা। জহিরের বাবাকে আমি মোটেই দোষ দিচ্ছি না। সে তো তাও ধৈর্য ধরে ছেলের কথা শুনেছে। আমার ইচ্ছা করছিল খাবার টেবিলেই ঠাস করে ছেলের গালে এক চড় মারি। যাতে এক চড়ে মাথার সব আইডিয়া নাকের ফুটো দিয়ে বের হয়ে যায় ।
ঐ ঘটনার পর আমি তোর খালুকে ফুলফুলিয়া মেয়েটার কথা বলেছি। আমি চিন্তা করে দেখলাম, ছেলে যেভাবে বিগড়াচ্ছে ফুলফুলিয়ার ব্যাপারটা আর গোপন রাখা ঠিক হবে না। ক্যাসেট করা কথাবার্তাও তোর খালুকে শুনিয়েছি। বেচারা যে কী পরিমাণে শকড হয়েছে তুই বিশ্বাস করবি না। তিনদিনের একটা কনফারেন্সে তার সুইডেনে যাবার কথা ছিল। এটা সে বাতিল করেছে। সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিল, আবার সিগারেট ধরেছে। ভোস ভোস করে দিনরাত সিগারেট টানছে। আমি কিছু বলছি না। সিগারেট টেনে যদি টেনশন কিছু কমে তাহলে কমুক। গতকাল রাতে ঢাকা ক্লাবে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরেছে মদ খেয়ে। সিগারেটের সঙ্গে মদ খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিল। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে আবারো মদ ধরবে। চিন্তা করে দেখ আমি কী বিপদে পড়েছি। তোর খালুকে আমি এখন কিছুই বলব না। নয় তারিখ পার হোক। তারপর দেখা যাক পানি কোন দিকে গড়ায় ।
হিমুরে, আমি মহাবিপদে আছি। তোকে যে বাড়িতে আসতে বলব, তোর সঙ্গে পরামর্শ করব সেই উপায় নেই। জহিরের বাবা তোর এ বাড়িতে ঢোকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। দারোয়ানকে ডেকেও বলে দেয়া হয়েছে তুই যেন এ বাড়িতে ঢুকতে না পারিস। জহিরের বাবার ধারণা তার ছেলের এই সমস্যার মূলে আছিস তুই। তুই না-কি মানুষের মাথায় হালকা বাতাস দিয়ে আইডিয়া ঢুকিয়ে দিয়ে সটকে পড়িস। আমি তাকে বলেছি- এটা ঠিক না। হিমু আমাদের দলে। জহিরের কথাবার্তা খুব কায়দা করে হিমুই রেকর্ড করে এনেছে। তোর খালু বলেছে— হিমু সব দলেই আছে। জহির যদি ফুলফুলিয়াকে বিয়ে করে তাহলে দেখা যাবে উকিল বাবা হিমু। তোর খালুর কথাও আমি ফেলতে পারছি না। বল তো আমি কী করি?
এদিকে ফুলফুলিয়া মেয়েটার বিষয়ে তোর খালুও কিছু খোঁজখবর বের করেছে। মেয়েটা কী করে শুনলে তুই মাথা ঘুরে পড়ে যাবি। সে একটা ক্লিনিকে আয়ার কাজ করে। রোগীদের ও মুত পরিষ্কার করে। অবস্থাটা চিন্তা করে দেখ ।
আমি মানত করেছি সমস্যা সমাধান হলেই আজমীর শরিফে চলে যাব। খাজা বাবার দরবারে শুকরানা নামাজ পড়ব। সেখানকার এতিম মিসকিনদের একবেলা খাওয়াব। আমার যে কী রকম অস্থির লাগছে তোকে বলে বুঝাতে পারব না।
তোর আমার বাড়িতে আসার দরকার নেই। তোর খালু মানসিক যে অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে আমি চাই না সেটা আরো খারাপ হোক। তবে তুই দূর থেকে আমার একটা উপকার করতে পারিস। ফুলফুলিয়া মেয়েটার ঠিকানা দিচ্ছি। তার সঙ্গে দেখা করে এই মেয়েটার বিষয়ে আমাকে একটা রিপোর্ট দে। ভয় দেখিয়ে কিংবা লোভ দেখিয়ে জহিরের কাছ থেকে মেয়েটাকে সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর। এর জন্যে টাকা পয়সা যা লাগে আমি খরচ করব। কেয়ারটেকারের কাছে ঠিকানা আছে। তুই তার কাছ থেকে ঠিকানাটা নে। ওর কাছে দশ হাজার টাকাও দিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনে গুণ্ডা লাগিয়ে মেয়েটাকে হুমকি ধামকি দিয়ে অন্য কোথাও সরিয়ে দে। এই উপকারটা তুই আমার কর ।
ইতি
তোর মাজেদা খালা
পুনশ্চ: হিমু আমার মাথাটা আসলেই খারাপ হয়ে গেছে। যে ঘটনাটা তোকে জানাবার জন্যে চিঠি লিখেছিলাম সেই ঘটনাই জানানো হয় নি। অথচ চিঠি শেষ করে বসে আছি। আসলে আমি আর টেনশন নিতে পারছি না বলে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সেদিন মাথা ধরার ট্যাবলেট ভেবে তোর খালুর দু’টা প্রেসারের ওষুধ খেয়ে ফেলেছি। তারপর দেখি ধুম করে প্রেসার নেমে যাচ্ছে। মাথায় পানি ঢালাঢালি — ডাক্তার ডাকাডাকি।
যাই হোক, মূল ঘটনাটা মন দিয়ে শোন। এখন পর্যন্ত ঘটনাটা নিয়ে কারো সঙ্গেই আলাপ করি নি। শুধু আমার কাজের মেয়ে তিনটিকে বলেছি। কাজটা ভুল হয়েছে। তিনটা মেয়ে ভয়ে অস্থির হয়ে আছে। তোর খালুকে ঘটনাটা বলতে গিয়েও বলি নি। তাকে যা বলব – সে গম্ভীর হয়ে বলবে, এটা কিছু না। তুমি স্বপ্ন দেখেছ। চোখের সামনে দেখা জলজ্যান্ত জিনিসকে কেউ যদি বলে ‘স্বপ্ন’ তাহলে কেমন রাগ লাগে তুইই বল ? ঘটনাটা ঘটেছে ভূমিকম্পের রাতে। তখন ঘটনাটা আমি নিজেও বুঝতে পারি নি। ভূমিকম্পের ভয়ে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কী দেখছি বা কী দেখছি না বুঝতেই পারি নি । যতই দিন যাচ্ছে ব্যাপারটা ততই পরিষ্কার হচ্ছে— আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।
ভূমিকম্পের রাতের কথা তোর নিশ্চয়ই মনে আছে। দরজা ভেতর থেকে লক করা। আমি দরজা খুলতে পারছি না। চাবি পাচ্ছি না। ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার উলট-পালট করছি। তোর খালু পাগলের মতো বিড়বিড় করছে। এক সময় ছুটে গেলাম জহিরের ঘরে। তখন তুই বললি বালিশের নিচে খুঁজে দেখতে। আমি গেলাম শোবার ঘরে। আমি মশারি খাটিয়ে ঘুমাই। ঢাকায় ডেঙ্গু রোগ দেখা দেয়ার পর থেকে এই ব্যবস্থা। রাত আটটা বাজতেই কাজের মেয়ে মশারি খাটিয়ে দেয়। আমি গেলাম শোবার ঘরে। মশারি উঠিয়ে বালিশের নিচে হাত দিয়ে খুবই অবাক হলাম দেখি বাড়ির চাবি। চাবি হাতে নিতে গিয়ে আরেকটা জিনিস দেখলাম দেখি বুড়ো একজন মানুষ কুঁজো হয়ে মশারির ভেতর বসে আছে। তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তখন আমার মাথাতেই নেই যে এটা একটা ভয়ঙ্কর দৃশ্য। আমার মশারির ভেতর কোনো বুড়ো মানুষ বসে থাকতে পারে না। ভূমিকম্পের ভয়ে আমি এতই অস্থির যে বুড়ো মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে এটা আমার মাথায় ঢুকল না। আমি চাবি নিয়ে দরজা খুলে দৌড়ে নিচে চলে গেলাম।
হিমু, ব্যাপারটা কী বল তো ? আমার কি মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ? কোনো সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে আমার কি কথা বলা উচিত ?
সাক্ষাতে এটা নিয়ে তোর সঙ্গে কথা বলব। আপাতত তুই ফুলফুলিয়ার ব্যাপারটা দেখ। প্রয়োজনে কেয়ারটেকারকে সাথে নিয়ে যা। এই ধরনের মেয়েরা হিংস্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। তাদের হাতে পোষা গুণ্ডাপাত্তাও থাকে। তোকে একা পেয়ে কিছু করে বসতে পারে। দু’জন থাকলে কিছুটা রক্ষা। ভালো থাকিস।
ফুলফুলিয়া যার নাম তার স্বভাব-চরিত্র যাই হোক সে দেখতে খুব সুন্দর হবে এরকম ধারণা হবেই। আমি ধরেই নিলাম মেয়েটিকে দেখে মুগ্ধ বিস্ময়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকব। মনে মনে বলব, বাহ্।
মেয়েটির বাসা ঝিকাতলায়। ঠিকানা লেখা কাগজ হাতে নিয়ে তার বাসা খুঁজছি আর কল্পনা করছি মেয়েটা দেখতে কেমন হবে। গায়ের রঙ গৌর বর্ণ । মাথা ভর্তি চুল। কুচকুচে কালো চুল না । সামান্য পিঙ্গল ভাব আছে। অতিরিক্ত ফর্সা মেয়েরা সাধারণত পিঙ্গলকেশী হয়। রোগা, গোলগাল মুখ। খুবই ছটফটে স্বভাবের মেয়ে। স্থির হয়ে এক জায়গায় বসেও থাকতে পারে না। অকারণে হেসে ফেলার বাতিকও আছে। সিরিয়াস ধরনের কথাতেও মুখ আড়াল করে হাসছে।
অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর যে মেয়েটি দরজা খুলে দিল সে-ই যে ফুলফুলিয়া এতে আমার মনে সন্দেহের তিল মাত্রও নেই। অথচ কল্পনার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। শান্ত চেহারার শ্যামলা মেয়ে। রোগাটা ঠিক আছে, তবে মুখ গোলাকার না, লম্বাটে। মনে হয় রুটি বানাচ্ছিল। হাতে ময়দা লেগে আছে। ফুলফুলিয়া অবাক হয়ে আমাকে দেখছে। আমাকে দেখে এত বিস্মিত হচ্ছে কেন, আমি বুঝতে পারছি না। আমার চেহারা বিস্মিত হবার মতো না। আমি সহজ গলায় বললাম, ফুলফুলিয়া কেমন আছ ?
মেয়েটা খানিকটা ভীত গলায় বলল, ভালো আছি।
রুটি বানাচ্ছিলে নাকি ?
মেয়েটার গলা থেকে বিশ্বয় ভাবটা চলে গেল। সেখানে চলে এলো আনন্দ । সে বলল, আপনি হিমু ভাই না ?
আমি বললাম, হ্যাঁ। চিনেছ কীভাবে? জাহির নিশ্চয়ই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার চেহারার বর্ণনা তোমার কাছে করেছে।
উনি কিছুই বলেন নি। উনি শুধু বলেছেন হিমু ভাইজান যদি তোমার কাছে আসেন তাহলে তুমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলবে। তিনি দেখতে কেমন, এইসব কিছু বলার দরকার নেই।
আমি যে হলুদ পাঞ্জাবি পরি এটা নিশ্চয়ই বলেছে।
না, হলুদ পাঞ্জাবির কথাও বলেন নি।
বাসা অন্ধকার কেন ?
বারান্দার বাতিটা চুরি হয়ে গেছে এই জন্যে অন্ধকার। ভেতরে আসুন, ভেতরে আলো আছে।
তুমি ছাড়া বাসায় আর কে আছে ?
রহমতের মা বলে একজন মহিলা আছেন । উনি আমার পাহারাদার। উনি ছাড়া আর কেউ নেই।
তোমার বাবা কোথায় ?
ফুলফুলিয়া মিষ্টি করে হেসে বলল, বাবা আমার উপর রাগ করে দুপুরবেলা চলে গেছেন। বলে গেছেন আর ফিরবেন না।
প্রায়ই কি এরকম রাগ করে চলে যান ?
জ্বি।
রাগ ভেঙে গেলে দিনে দিনেই কি ফেরেন?
না,
সব দিন ফেরেন না। এমনও হয়েছে চার পাঁচদিন পরে ফিরেছেন। আমি ফুলফুলিয়ার সঙ্গে একটা ঘরে এসে ঢুকলাম। ঘরে সম্ভার একটা খাট পাতা আছে। টেবিল চেয়ার আছে। আলনা আছে। আলনার কাপড়-চোপড় দেখে মনে হচ্ছে এই ঘরে ফুলির বাবা ঘুমান।
হিমু ভাইজান, দুধ ছাড়া এককাপ চা খাবেন?
খাব।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!