আঙ্গুল কাটা জাগলু – হুমায়ূন আহমেদ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ হুমায়ূন আহমেদ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১০৭
আঙ্গুল কাটা জাগলু – বইটির এক ঝলকঃ
কুকুর বেঁধে রাখা হয়েছে।
আমি বাঁধাবাঁধির মধ্যে নাই। অন্য বাড়িতে কুকুর পাঠিয়ে দিতে হবে। আমার বাবা কোথায়? বাবাকে কখন ফেরত পাব?
উনাকে সঙ্গে নিয়ে আসব।
উনাকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন?
অবশ্যই। ফ্যালো কড়ি মাখো তেল অবস্থা। মাল ডেলিভারি দিয়ে টাকা নিয়ে চলে আসব। জগলু ভাইয়ের এইটাই সিস্টেম।
আমার কথা শেষ হবার আগেই জগলু ভাই খপ করে হাত থেকে টেলিফোন নিয়ে নিলেন। তাঁর মুখ সেগুন কাঠের মতো শক্ত। চোখ এখন মারবেলের মতো। তিনি সর্গ স্টাইলে হিসহিস করে বললেন, মাল ডেলিভারি নিয়ে যাবে মানে? কী মাল?
মনসুর সাহেবকে নিয়ে যাব। তাকে তো এখন আমাদের দরকার নাই । তাকে দরকার নাই এই গুরুত্বপূর্ণ খবর তোমাকে কে দিয়েছে? আপনি চান আমি একা যাই?
অবশ্যই। আগে টাকা আসুক, তারপর বুড়োর ব্যাপারে কী করা যায় আমরা বিবেচনা করব ।
আমি এর মধ্যে নাই ।
কী বলতে চাও তুমি?
জগলু ভাই, আমি যেটা বলতে চাই পরিষ্কার করে বলব। মন দিয়ে শুনুন। আপনাদের দরকার টাকা। বুড়ো লোকটাকে আপনাদের দরকার নাই। টাকা আমি এনে দেব তবে বুড়োকে ফেরত দিতে হবে। রাজি থাকলে বলুন। রাজি না থাকলে আমাকে পানিতে চুবান ।
জগলু ভাই তাঁর মারবেলের চোখে ইশারা করলেন। নিমেষের মধ্যে এরা আমাকে ঘাড় পর্যন্ত পানিতে চুবিয়ে ধরল।
শৈশবে এই পদ্ধতির ভেতর দিয়ে আমি গিয়েছি। আমার জ্ঞানী বাবা আমাকে এ ধরনের জলচিকিৎসা বেশ কয়েকবার করিয়েছেন। নিশ্বাস নিতে না পারার কষ্টটা অনুভব করার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি যা করতেন তা মাথা পানিতে চুবিয়ে উঁচু গলায় কথা বলতেন। পানির নিচে সেই কথা অন্যরকমভাবে কানে আসত। তাঁর কথাগুলো ছিল :
হলো,
হে পত্র। তুমি কঠিন অবস্থায় আছ। অক্সিজেন নামক অতি ক্ষুদ্র কিছু অণুর জন্যে তোমার সমস্ত শরীর এখন ঝনঝন করছে। মানুষের মস্তিষ্ক অক্সিজেন সবচেয়ে বেশি বেশি ব্যবহার করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার মস্তিষ্কের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাবে। তখন মস্তিষ্ক স্বরূপে আবির্ভূত হবে। মস্তিষ্ক তোমাকে অদ্ভুত
সব অনুভূতি দেখাবে, দৃশ্য দেখাবে। ভয় পেও না ।
এখানে আমি বাবার কথা শুনতে পাচ্ছি না, তবে অন্যদের কথা শুনতে পাচ্ছি। মনসুর সাহেবের কান্না শুনতে পাচ্ছি। মতি নামের লোকটার কথা শুনতে পাচ্ছি। সে বিড়বিড় করে বলছে, ওস্তাদ, মনে হয় শেষ হয়ে গেছে। তুলব?
ব্যাঞ্জো টাইপ একটা বাজনা কানে আসছে। এটা মনে হচ্ছে শব্দের হ্যালুসিনেশন। এখানে নিশ্চয়উ কেউ ব্যাঞ্জো বাজাচ্ছে না। মস্তিষ্কের অক্সিজেনের অভাব হচ্ছে। সে হ্যালুসিনেশন দেখাতে শুরু করেছে। না হলে এই অবস্থায় ব্যাঞ্জোর বাজনা কানে আসত না। আমি হাত-পা নাড়ছি না। শরীর দোলাচ্ছি না। পরিশ্রম করা মানেই বাড়তি অক্সিজেন খরচ করা। এ-কাজ এখন করাই যাবে না। আমাদের ফুসফুসভরতি এখন কার্বন ডাইঅক্সাইড। এমন কোনো সিস্টেম যদি বের করা যেত যাতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ভেঙে জীবনদায়িনী অক্সিজেন পেতাম ।
CO2 + C + O2
কোনো-একটা বিশেষ ক্যাটালিস্ট কার্বন ডাইঅক্সাইডকে ভেঙে দেবে। জগলু ভাইয়ের গলা শোনা গেল, এই একে পানি থেকে তুলে দ্যাখ, এখনো আছে না গেছে।
আমাকে পানি থেকে তোলা হলো। বিরাট বড় হাঁ করে একগাদা অক্সিজেন আমি মুখে নিলাম না। সামান্য একটু নিলাম। হঠাৎ করে একগাদা অক্সিজেন নিলে আমাকে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যেতে হবে।
আমি তাকিয়ে আছি হাসিহাসি মুখে। এই অংশটা অভিনয়। দুই মিনিট অক্সিজেন ছাড়া যে থাকে তার মুখ হাসিহাসি হওয়া কঠিন ব্যাপার। সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তাদের চোখে বিস্ময় আছে, খানিকটা ভয়ও আছে। ভয়টা কীজন্যে আছে বুঝতে পারছি না।
আমি বললাম, আপনার সিদ্ধান্ত কী নিলেন তাড়াতাড়ি জানান। আমার হাতে এত সময় নাই। আমাকে পানিতে ডুবিয়ে মারতে চাইলে মারবেন। কোনো অসুবিধা নাই ।
জগলু ভাই বললেন, কোনো অসুবিধা নাই?
না, অসুবিধা নাই। আমরা সবাই মরব। আমি পানিতে ডুবে মরব, জগলু ভাই অন্যভাবে মরবে। তাকে কেউ হয়তো জ্বলন্ত ইটের ভাটায় ছেড়ে দিবে। ঠাণ্ডা মৃত্যু, গরম মৃত্যু। জিনিস একই। জগলু ভাই, আমাকে একটা সিগারেট দিতে বলেন না। লিকার চা আর একটা বেনসন সিগারেট।
জগলু ভাই বললেন, চা-সিগারেট খাবে?
আমি বললাম, কফি খেতে পারলে ভাল হত। কফির ব্যবস্থাতো নিশ্চয়ই নেই ।
সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। সবার চোখেই বিস্ময়। শুধু লাল চুলের পিশাচ টাইপ মানুষটার চোখ বিস্ময়মুক্ত। আমি আবার বললাম, চা- সিগারেটেই কি হবে?
জগলু ভাই মতিকে চা-সিগারেট দিতে বললেন। সিদ্ধান্ত হলো মনসুর সাহেবকে নিয়েই আমি যাব। আমার দায়িত্ব টাকার সুটকেস জগলু ভাইয়ের হাতে ফেরত দেওয়া ।
জগলু ভাই আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে কঠিন গলায় বললেন, আমি আঙুল কাটা জগলু, আমার সঙ্গে কোনো উনিশ-বিশ করলে আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়ব না ।
আমি বললাম, আমি হইলদা হিমু! আমার সঙ্গে কোনো উনিশ-বিশ করলে আমিও কিন্তু আপনাকে ছাড়ব না।
জগলু ভাই শীতল গলায় বললেন, তার মানে?
আমি মধুর ভঙ্গিতে হাসলাম। জগলু ভাই সেই হাসি কীভাবে নিলেন বুঝতে পারছি না। খুব ভালোভাবে নেবার কথা না ।
যে-মেঘ এতক্ষণ শহরের ওপর ঝুলে ছিল, শহরের মানুষদের ভেজাবে কি ভেজাবে না—এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না, সেই মেঘ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ইংরেজিতে এই বৃষ্টিকেই বোধহয় বলে – Cats and dogs. রিকশার হুড তুলে দেওয়া হয়েছে। পায়ের ওপর ব্রাউন কালারের প্লাস্টিক। কোনোই লাভ হচ্ছে না। আমি এবং মনসুর সাহেব ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেছি। ভদ্রলোকের গায়ের কাঁপুনি টের পাচ্ছি। শীতে কাঁপছেন বলেই মনে হচ্ছে। কিংবা তাঁর জ্বর এসে গেছে। জ্বর চলে আসা বিচিত্র না । তিনি এখনো ঘোরের মধ্যে আছেন। তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং আমি রিকশা করে তাঁর বাড়ির দিকে রওনা হয়েছি, এই সত্যটা মনে হয় এখনো গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছেন না। সারাক্ষণ এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন। একটু পরপরই রিকশার পেছনের পরদা উঠিয়ে পেছনটা দেখতে চেষ্টা করছেন।
আমার হাতে একটা মোবাইল টেলিফোন। জগলু ভাই দিয়ে দিয়েছেন যাতে সারাক্ষণ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি। নতুন একটা সিমকার্ড মোবাইলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ হলে এই সিমকার্ড ফেলে আরেকটা ঢোকানো হবে। কোন নাম্বার থেকে টেলিফোন করা হয়েছে কেউ ধরতে পারবে না।
মনসুর সাহেব গলা নামিয়ে বললেন, রিকশাওয়ালা কি ওদের লোক? আমি বললাম, না।
কীভাবে বুঝলে যে ওদের লোক না?
রিকশা ওরা এনে দেয়নি। আমি ঠিক করেছি।
ওরা কি আমাদের ফলো করছে?
না ।
কীভাবে বুঝলে ওরা আমাদের ফলো করছে না?
জগলু ভাই পুরো ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এই ধরনের মানুষ সবকিছু নিয়ে জুয়া ধরতে পছন্দ করেন। আমার ব্যাপারটাও তাঁর কাছে একটা জুয়ার মতো। জিতলে জিতবেন, হারলে হারবেন—এরকম ভাব।
হিমু ! জি?
তুমি সাধারণ মানুষের পর্যায়ের না ।
আমরা কেউই সাধারণের পর্যায়ে না। সবাই সাধারণের ওপরে। তুমি বিবাহ করেছ?
না । চাকরি করো?
না।
মাসে দশ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরির ব্যবস্থা আমি তোমার জন্য করব?
আমি কাজকর্ম তো কিছু জানি না ।
কাজকর্ম কিছুই জানতে হবে না। মাসের এক তারিখে তুমি হেড অফিসে চলে যাবে। সেখানে ক্যাশিয়ার ইয়াকুবউল্লাহর সঙ্গে দেখা করবে। সে নগদ দশ হাজার টাকা দেবে। ঠিক আছে?
অবশ্যই ঠিক আছে।
তুমি আমার জীবন রক্ষা করেছ। মাসে দশ হাজার সেখানে কোনো ব্যাপারই না। আজীবন এই এলাউন্স পাবে।
ধরুন কোনো কারণে এক তারিখ উপস্থিত হতে পারলাম না। তিন বা চার তারিখে উপস্থিত হলাম, তখন কি টাকাটা পাওয়া যাবে?
তুমি আমার কথাটা গুরুত্বের সঙ্গে নাও নাই বলে রসিকতা করার চেষ্টা করছ। রসিকতা করবে না। মাসের এক তারিখে ঠিকই তুমি টাকা পাবে। নাকি তুমি টাকা নেবে না?
কেন নেব না? আমি তো মহাপুরুষ না। মহাপুরুষদের টাকার দরকার থাকে না। আমি হামপুরুষ। আমার টাকার দরকার আছে।
হামপুরুষটা কী?
হাম হচ্ছে মহার উলটা।
তোমার সঙ্গে সিরিয়াস ধরনের কোনো কথাবার্তা বলা একেবারেই অর্থহীন। তার পরেও কিছু জরুরি কথা বলছি শোনো। মন দিয়ে শোনো । একটু উঁচু গলায় কথা বলতে হবে। বৃষ্টি পড়ছে তো। আপনার ফিসফিসানি কথা পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে না।
মনসুর সাহেব তার পরেও গলা উঁচু করলেন না। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন, তোমাকে আমি প্রটেকশন দেব। বুঝলে ব্যাপারটা? বাড়িতে পৌঁছার পরপর পুলিশ আমার বাড়ি ঘিরে রাখবে। জগলুর ওই আস্তানা রেইড করার ব্যবস্থা করব। কত ধানে কত চাল সে তখন বুঝবে।
আমি বললাম, তার মানে কি এই যে সুটকেসভরতি টাকার ব্যাগ নিয়ে আমি ফেরত যাব না?
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!