বুমেরাং – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৫০
বুমেরাং – বইটির এক ঝলকঃ
আছে বদ্ধ বাতাসের গুমোট ভাব আর ঘামের দুর্গন্ধ। পিঠে ধাক্কা দিয়ে কামরার ভেতর রানাকে ঢুকিয়ে দিল ইন্ডিয়ান লোকটা ঘটাং শব্দে বন্ধ হয়ে গেল লোহার দরজা।
বেশিরভাগ কয়েদী মেক্সিকান। রুক্ষ চেহারা, লাল চোখে আহত পশুর দৃষ্টি । পরনে ছেঁড়া-ফাটা ট্রাউজার, কারও জ্যাকেটে বোতাম নেই, অনেকেই খালি গায়ে। এক কোণে দাঁড়িয়ে ট্রাউজারের বোতাম খুলে পেচ্ছাব করছে একজন, ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে আছে নতুন আগন্তুকের দিকে, লজ্জা-শরমের বালাই নেই। হুড়মুড় করে ছুটে এল কয়েকজন রানাকে কাছ থেকে দেখার জন্যে। একজন ওর জ্যাকেট ধরে টান দিল। আরেকজনের একটা হাত ঢুকে গেল ওর পকেটে। কব্জিটা ধরে অনায়াস ভঙ্গিতে মোচড় দিল রানা, ঘন ঘন হোঁচট খেয়ে কামরার আরেকদিকে ছিটকে পড়ল লোকটা। বাকি সবাই ভদ্রস্থ দূরত্বে সরে গেল। বেঞ্চের ওপর টিনের একটা গামলা, পা দিয়ে সেটা ফেলে দিয়ে সেখানটায় বসল রানা, ধীরেসুস্থে সিগারেট ধরাল, আশা, ধোঁয়ায় দুর্গন্ধ খানিকটা কমবে।
খালি চোখে ধরা না পড়লেও পুলিস চীফের আচরণে গভীর একটা তাৎপর্য আছে। টাকাগুলো মেরে দেয়াই তার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। তা যদি হত, ওকে আটকে না রেখে ছেড়ে দিত সে।
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্যে সদ্য খালি কোণটায় আরেক লোক হাজির হলো । ট্রাউজার খুলে ওদের দিকে পিছন ফিরল সে, বসে পড়ল টিনের একটা গামলার ওপর। উৎকট দুর্গন্ধ বিদ্যুদ্বেগে ছড়িয়ে পড়ল কামরার চারদিকে। দু’হাঁটুর মাঝখানে মুখ গুঁজল রানা।
“সিগারেটের শেষ টানটা পাব, সিনর রানা?’
মুখ তুলে রানা দেখল হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে বুড়ো আমেরিকান লোকটা। তার সারা মুখে অনেক কাটাকুটির দাগ, সবই তাজা ক্ষত। ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে অনেক কষ্টে বেঞ্চের ওপর নিজেকে তুলল সে। প্যাকেট থেকে বের করে তাকে একটা সিগারেট দিল রানা। কি ব্যবহার করেছে ওরা, হাতুড়ি?
“এই এলাকার অত্যাচারীদের সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নেই, সিনর রানা,’ ব্যথা সহ্য করার জন্যে মুখে একটা হাত চাপা দিয়ে কথা বলছে বুড়ো। ‘সার্জেন্ট মানটু আর তার এক ইন্ডিয়ান সহকারী কাস্ত্রো, ওরা হাত দিয়ে মারতে জানে না। শুধু পা চালাতে পারে।’ রানার বাড়ানো লাইটার থেকে সিগারেট ধরাল সে ।
‘তুমি ওদেরকে বলেছ আমি মাসুদ রানা।’ অভিযোগ বা প্রশ্ন নয়, মন্তব্যের সুরে বলল রানা । বুড়োর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও।
‘ওরা আমাকে বাধ্য করেছে, সিনর। চেহারা দেখে বুঝতে পারছেন না, একেবারে শেষ মুহূর্তে বলেছি?’
দূর থেকে কয়েদীরা তাকিয়ে আছে রানার দিকে, ফিসফাস করছে নিজেদের মধ্যে। খুক করে কাশল বুড়ো। ‘আমার নাম ট্যালবট, সিনর। আপনাকে আমি হোমায়রার সাথে কথা বলতে দেখেছি। আপনি জানেন লোকটা কে?’
হঠাৎ কামরার আরেক প্রান্তে দুই কয়েদীর মধ্যে মারামারি বেধে গেল। বক্সিং, কুস্তি, কারাতে, সব একসাথে চালাচ্ছে ওরা। বিশ-বাইশজন লোক সবাই চিৎকার জুড়ে দিল, হুটোহুটি করে কয়েক দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে তারা। সটান দাঁড়াল রানা, মহা শোরগোলের মধ্যে চাবুকের মত সপাং আওয়াজ বেরিয়ে এল কণ্ঠ ফুঁড়ে। ‘শাট আপ!’
কেউ বুঝল না কি মানে, কিন্তু কি চাওয়া হচ্ছে বুঝতে অসুবিধেও হলো না, মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেল কামরা। যে যার জায়গায় ফিরে এসে বসল সবাই, সবার আগে যারা লড়াই করছিল। রানার দিকে তাকিয়ে আছে কয়েদীরা। অবাক কাণ্ড, পুলিস চীফও তো এমন কর্তৃত্বের সাথে কথা বলে না !
নড়েচড়ে বসল কয়েদীরা, তবে সাবধানে। কথাও বলল, একদম নিচু স্বরে।
হ্যাঁ, কোন গোলমাল নয়,’ বলে বেঞ্চের ওপর আবার বসল রানা । “সিনর!’
‘হ্যাঁ,’ বুড়ো ট্যালবটের দিকে তাকিয়ে বলল রানা। ‘ডন হোমায়রার সাথে আমার কথা হয়েছে। তার খনিতে আমাকে কাজ করতে বলে সে।’
*ওই লোক দু’পেয়ে বেজন্মাদের চীফ, সিনর। লেজে পুলিস বাধিয়ে আমি যখন প্রথম মেক্সিকোয় ঢুকি, হোমায়রার খনিতে দিনকতক কাজ করতে হয়েছিল আমাকে। ঈশ্বর সাক্ষী, এত খারাপ লোক নরকও নিতে চাইবে না।’
‘তাকে তুমি আমার পরিচয় জানিয়ে দিয়েছ।’
“ছোট্ট একটা ভুল থেকে এতদূর গড়াল ব্যাপারটা। হোমায়রা প্রশ্ন করাতে বলেছিলাম, আমি তাকে আপনার সম্পর্কে কিছু জানাতে বাধ্য নই। জানাতে চাই না, এ-কথাটাই সব নষ্টের মূল হয়ে দাঁড়াল। হোমায়রা বুঝে ফেলল, তারমানে জানাবার কিছু আছে।
‘ফটো, ট্যালবট, মৃদু গলায় বলল রানা। ‘কে এনেছিল? কাদের দেখিয়েছে?’
‘লোকটা নিজের পরিচয় দিল এফ.বি.আই. বলে, সিনর। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে। পরিচয়-পত্র দেখতে চাইলাম, দেখাল না। ফটোর সাথে আপনার চেহারা খুব যে মেলে তা নয়, তবে বেশ খানিকটা মেলে। লোকটা বলল, শুধু আমেরিকানদেরই দেখানো হচ্ছে, কারণ ফটোর লোকটা আমেরিকান, সাহায্যের দরকার হলে সে একজন আমেরিকানের কাছেই আসবে। এই এলাকায় আমিই একমাত্র আমেরিকান, সিনর।’
‘অদ্ভুত, তাই না? শুধু আমেরিকানদের ফটো দেখানো?’
‘অদ্ভুত বৈকি। ব্যাখ্যাটা মনে ধরেনি আমার, তাই তাকে পরামর্শ দিলাম সে বরং থানায় গিয়ে অফিসারদের সাথে কথা বলুক। কিন্তু গেল না। আমাকে একটা টেলিফোন নম্বর দিয়ে গেছে, আপনাকে চিনতে পারলে ওয়াশিংটনে ফোন করতে হবে। বিনিময়ে মোটা টাকা পুরস্কার পাব আমি।’
‘ফোন করতে হবে কার কাছে?’ ‘জন হপকিন্স। ‘
নামটা মনে গেঁথে নিল রানা। সময় আর সুযোগ হলে প্রথমেই হার্মিসের বেতনভুক লোকটার ব্যবস্থা করতে হবে। ‘তুমি ঠিক জানো, আর কাউকে ফটোটা দেখানো হয়নি?’
‘ঠিক জানি, সিনর। স্টেশনে নেমেই আমার খোজ করল লোকটা, আমার সাথে কথা বলে পরবর্তী ট্রেনে চড়ে চলে গেল।
*ধন্যবাদ, ট্যালবট । এবার তোমার কথা বলো। হোমায়রার সাথে তোমার কথা হবার পর কি ঘটল? পুলিস ধরে নিয়ে এল থানায়?
‘হ্যাঁ। দ্বিতীয় বার মারধর করছে, এই সময় সেলে ঢুকল হোমায়রা। মানটু বলল, আমাকে মুখ খুলতে হবে, তা না হলে লাথি বন্ধ হবে না। যখন দেখলাম বাঁচব না, বলে ফেললাম। শুধু তাই নয়, হারমোজায় আবার কাজ করতেও রাজি করিয়েছে আমাকে।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ট্যালবট। ‘উপায় কি, বলুন!’
‘হ্যাঁ, তা ঠিক।’ প্যাকেটে আর একটা মাত্র সিগারেট রয়েছে, সেটা ভেঙে দু’টুকরো করল রানা, একটা ট্যালবটকে দিল। ট্যালবট সেটা তার মানিব্যাগে ভরে রাখল। ‘কি হলো; রেখে দিলে যে?’
“কখন কি ঘটে, কে কোথায় ছিটকে পড়ি, আর হয়তো আপনার সাথে না- ও দেখা হতে পারে—স্মৃতি হিসেবে থাক এটা।’ হাসতে গিয়ে মুখে ব্যথা পেল বুড়ো, পানিতে ভরে গেল চোখ দুটো। ওটা যে কান্না এবং শুধু ব্যথার কান্না নয়, বুঝেও না বোঝার ভান করল রানা ।
“ওটা কি?’ জিজ্ঞেস করল রানা, ট্যালবটের খোলা মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ও। মানিব্যাগের ভেতরে সুন্দর একটা পিকচার পোস্টকার্ড।
পোস্টকার্ডের ভাঁজ খুলল ট্যালবট। হারমোজার একমাত্র হোটেলের বিজ্ঞাপন ওটা। হোটেলের সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এমন তাজা আর জ্যান্ত তার চেহারা যেন এখুনি কথা বলে উঠবে। মেয়েটাকে দেখামাত্র ছ্যাঁৎ করে উঠল রানার বুক। ক’বছর হলো? হ্যাঁ, তা সাত কি আট বছর তো হবেই। হংকঙে পরিচয়, অল্পদিনের, কিন্তু অসম্ভব ভাল লেগে গিয়েছিল। বলা যায় না, পরস্পরের জন্যে এমনই পাগলপারা হয়ে উঠেছিল ওরা, শেষ পর্যন্ত হয়তো বিয়েই করে ফেলত। কিন্তু দুর্ভাগ্য রানার, কার অ্যাক্সিডেন্টে মারাত্মকভাবে আহত হলো মেয়েটা, দুটো পা-ই কেটে ফেলে দিতে হলো। খবর পেয়ে রানা যখন হাসপাতালে পৌঁছল, তখন সব শেষ। ঠিক যেন সেই মেয়েটাই। এমন হুবহু মিল হয়? আশ্চর্য তো!
“কে ও?’ গলা বুজে গেছে বুঝতে পেরে নিজেই লজ্জা পেল রানা ।
‘ও হচ্ছে শীলা। মা-বাবা মারা যাওয়ায় ওই তো এখন হোটেলটা চালাচ্ছে।’
‘মেক্সিকান? তাহলে চেহারাটা এরকম কেন?
“বুঝতে পেরেছি, আপনি চোখ দুটোর কথা বলছেন, সিনর। শীলা হাফ চাইনীজ, হাফ স্প্যানিশ।’
‘ফটোতে যেমন দেখছি, মেয়েটা কি সামনে থেকেও সেরকম দেখতে?’
‘আরও অনেক, অনেক, অ-নে-ক সুন্দর, সিনর। শুধু সুন্দর নয়, এমন গুণবতী মেয়ে জীবনে আমি আর দেখিনি। বিশ্বাস করা কঠিন, শীলা হোমায়রার ভাইঝি। শীলার বাবা আর হোমায়রা, দু’জনের সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল—একজন ভালমানুষের গাছ, আরেকজন শয়তানের হাড্ডি। চীনা মহিলাকে বিয়ে করেছিল বলে ভাইকে দু’চোখে দেখতে পারত না হোমায়রা। ভাই বিয়ে করুক, এটাই সে চায়নি। বিয়ে না করলে শীলা আসত না। শীলা না এলে হোটেলটার মালিক বনে যেত সে। গত বছর শীলার বাবা মারা গেল, কিন্তু হোমায়রা কবর দিতে গেল না। কিন্তু শীলাও কম যায় না, কি করলে চাচার অন্তর্জালা বাড়বে ভালই বোঝে সে। নতুন একটা সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে হোটেলে।
‘নতুন সাইনবোর্ড? কি লেখা আছে তাতে?’ ‘শীলা হংকং।
হেসে উঠল রানা ।
‘যতবারই শহরে যায় হোমায়রা, সাইনবোর্ডটা তাকে দেখতে হয়। ওহ্, সিনর, আমাদের শীলা সত্যি একটা মেয়ে বটে!’
“তুমি তার খুব ভক্ত, বোঝা যায়,’ মন্তব্য করল রানা।
‘শুধু আমি, সিনর? বলতে পারেন, এই তল্লাটে এমন কেউ আছে যে শীলামণির ভক্ত নয়? এক হোমায়রা বাদে? শীলা শীলাই, সিনর, তার তুলনা মেলা সম্ভব নয়। হারমোজায় সে-ই তো রাজকন্যা । কবে রাজপুত্র আসবে তার জন্যে অপেক্ষা করছে।
অনেকটা সময় কেটে গেল। রানা ভাবছে, এখনও ওরা আসছে না কেন! ইতোমধ্যে খানিকটা ঝিমিয়ে নিয়েছে ট্যালবট, হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ রগড়াচ্ছে এখন। রানা তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘হারমোজার খনিতে লোক পেতে এত অসুবিধে হয় কেন?
‘খনি নয়, ওটা একটা মৃত্যুফাঁদ। ক’দিনই বা এসেছি আমি, এরই মধ্যে বড় ধরনের পাঁচটা ধস নেমেছে। ছোটখাট ধস তো প্রতিমাসেই লেগে আছে। কতা ইন্ডিয়ান যে মারা গেছে তার কোন লেখাজোখা নেই, সিনর। হোমায়রা ওখানে অ্যাপাচীদের ব্যবহার করে।’
“অ্যাপাচী ইন্ডিয়ান?’ বিস্মিত হলো রানা। “কি বলছ! ওরা তো পুরানো ওয়েস্ট-এর সাথে গত হয়েছে।’
“সিয়েরা মাদ্রেতে ওরা ইতিহাস নয়, সিনর, জলজ্যান্ত বর্তমান। অতীতে ওই জায়গাতেই ওদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। এখনও ওখানে প্রচুর আছে ওরা।’
‘খনিটা যদি অতই বিপজ্জনক, আবার তুমি ফিরে যেতে রাজি হলে কেন? পুলিস ছেড়ে দেয়ার পর পালিয়ে গেলেই তো পারো।’
কাঁধ ঝাঁকাল ট্যালবট। “কোথায় যাব, সিনর? কোথায় কে আছে আমার? বাজ পড়া এই দেশে নড়তে গেলে টাকা লাগে…’ অসহায় একটা ভঙ্গি করে চুপ মেরে গেল সে।
দরজা খুলে ভেতরে উকি দিল সার্জেন্ট মানটু। ‘সিনর রড, দয়া করে এদিকে আসবেন, প্লীজ?’
মেক্সিকানদের ভিড় ঠেলে এগোল রানা, পিছু নিল সার্জেন্টের। পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে উঠল ওরা, চুনকাম করা করিডর পেরোল, সবশেষে থামল অফিস কামরার দরজার সামনে। নক করল মানটু, একপাশে সরে দাঁড়িয়ে ভেতরে ঢোকার ইঙ্গিত দিল রানাকে ।
দামী চুরুটের মিষ্টি গন্ধে ঘরের বাতাস ভরে আছে। বসে নয়, টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুলিস চীফ দুবালিয়র পেরন, দাঁতের মাঝখানে জ্বলন্ত চুরুট। সেটা হাতে নিয়ে সহাস্যে রানাকে বলল সে, ‘এই যে, আসুন মি. রড, আসুন, আসুন। বসুন, প্লীজ। কথাটা বলতে পারায় কি যে আনন্দ হচ্ছে আমার। ইয়েস, সিনর, আপনার সব সমস্যা আমরা মিটিয়ে ফেলেছি!’
পেরনকে রানা লক্ষ করল কি করল না, ওর চোখ স্থির হয়ে আছে ডন হোসে স্যামুয়েল দ্য হোমায়রার ওপর। ধীরে ধীরে ঘুরে জানালার দিকে পিছন ফিরল লোকটা, বলল, “আবার তাহলে আমাদের দেখা হলো, কি বলেন, সিনর রড?’
“তাই তো দেখছি।’
‘শুনে আমি খুশি হলাম যে ডন হোমায়রা আপনাকে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন,’ গালভরা হাসি নিয়ে বলল পেরন। ‘উনি মহৎপ্রাণ, সজ্জন ব্যক্তি, সেজন্যেই তো আপনার জরিমানার সব টাকা নিজের পকেট থেকে দিতে রাজি হলেন।’
‘হোটেলে ছিলাম, সিনর রড,’ বলল ডন হোমায়রা। ‘যেই শুনলাম আপনি অ্যারেস্ট হয়েছেন অমনি হস্তদন্ত হয়ে ছুটে এলাম। এলাকার হর্তাকর্তাবিধাতা, সে যেই হোক, আমি বা আর কেউ, তাকে না জানিয়ে সম্মানীয় একজন বিদেশীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হবে, এ কেমন কথা?’ পেরনের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙাল সে। ‘খবরদার, আর যেন কখনও এ-ধরনের অনাসৃষ্টি কাণ্ড না হয়।’ ফিরল রানার দিকে। ‘আপনাকে যদি কোনভাবে অপমান করা হয়ে থাকে, সিনর, দয়া করে স্রেফ ক্ষমা করে দিন এবং ভুলে যান। চীফ অভ পুলিস এরইমধ্যে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ।
‘ধন্যবাদ,’ মৃদুকণ্ঠে বলল রানা। ‘আপনি আমার জন্যে অনেক করলেন। “সিনর পেরনের সাথে কথা বলার পর মনে হলো এবার বোধহয় আপনি আমার কাজের প্রস্তাবটা নতুন আলোকে বিবেচনা করবেন…
‘হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন।’ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে রানা। প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে বাঁশ কিনতে চাইছে ডন হোমায়রা, টের পাবে বাছাধন ! ‘তাহলে সন্ধের ট্রেনে আমি যদি হারমোজায় যাই, আপনি আমার সঙ্গী হবার জন্যে উৎসাহী?’
‘এক পায়ে খাড়া। কিন্তু আমার গাড়ির কি হবে?’ জিজ্ঞেস করল রানা।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!