বেনামী বন্দর – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৫৮
বেনামী বন্দর – বইটির এক ঝলকঃ
মান এবং মাপ ঠিক আছে কিনা দেখার জন্যে। চেকিং-রিচেকিঙের পর যে-সব তথ্য পাওয়া গেল সেগুলো মেলানো হবে ফুয়েল ব্যবহারের জায়গায় ডিউটিরত ইন্সপেক্টরদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সাথে ধরুন, সেটা হবে একটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন। আরেকটা কথা, ফ্যাক্টরীতে যেটুকু নষ্ট হয় তারও মাপ নেয়ার এবং অ্যানালাইজ করার নিয়ম আছে। ইন্সপেকশন আর ডাবল-চেকিঙের এই সিস্টেম রেডিওঅ্যাকটিভ আবর্জনার শেষ গন্তব্যের পর্যায় পর্যন্ত চালু থাকে। সবশেষে, বছরে অন্তত দু’বার ফ্যাক্টরীতে স্টকের হিসেব নেয়া হয়।
‘আচ্ছা!’ ভাব দেখাল মুগ্ধ হয়েছে, কিন্তু মনে মনে সাংঘাতিক নিরাশ হলো রানা। সন্দেহ নেই, সিস্টেমটা সম্পর্কে বাড়িয়ে বলছে রেফার, কিন্তু যতটুকু বলছে তার অর্ধেক চেকিংও যদি করা হয়, ওদের কম্পিউটরকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবেই বা একজনের পক্ষে একশো টন ইয়েলোকেক গায়েব করে দেয়া সম্ভব? রেফারের কাছ থেকে আরও কথা আদায়ের জন্যে বলল ও, তাহলে, যে কোন সময় চাওয়া হলে, ইউরোপের কোথায় কতটুকু ইউরেনিয়াম আছে তার নিখুঁত হিসেব বলে দিতে পারবে আপনাদের কম্পিউটর?’
“শুধু সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বেলায়-ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গ। আর, শুধু ইউরেনিয়ামই নয়, সমস্ত রেডিও অ্যাকটিভ মেটিরিয়াল।
‘পরিবহনের ব্যাপারটা কি রকম?’
*ওই সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপারে আগে থাকতে আমাদের অনুমতি নিতে হবে।’ নোট বই বন্ধ করল রানা। ‘অত্যন্ত চমৎকার সিস্টেম। কিন্তু সেটা কি রকম কাজ করছে তা দেখার উপায় কি? ধরুন, আমি যদি দেখতে চাই?’
‘এ-ব্যাপারে আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারব না। কোন ইনস্টলেশন ভিজিট করতে হলে অনুমতির জন্যে সদস্য রাষ্ট্রের অ্যাটমিক এনার্জি অথরিটির সাথে যোগাযোগ করতে হবে আপনার। কোন কোন দেশে গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা আছে।’
ফোন নাম্বারের একটা তালিকা দিতে পারেন?’
‘অবশ্যই।’ চেয়ার ছেড়ে একটা ফাইলিং কেবিনেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াল রেফার ।
একটা সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছে রানা, কিন্তু সেই সাথে নতুন আরেকটা সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হলো ওকে। ও জানতে চেয়েছিল, রেডিও অ্যাকটিভ মেটিরিয়াল কোথায় কতটুকু আছে। উত্তর রয়েছে ইউরাটম কম্পিউটরে। কিন্তু কম্পিউটরের আওতার মধ্যে যত ইউরেনিয়াম রয়েছে সেগুলোর ওপর এমন কড়া নজর রাখা হয়েছে যে ধরা না পড়ে চুরি করা অসম্ভব। রেফারের পিঠের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ হাসি পেল ওর। ওর মনের কথা যদি টের পেত লোকটা!
সাইক্লোস্টাইল করা একটা লিফলেট দিল রেফার। ভাঁজ করে সেটা পকেটে ভরল রানা। চেয়ার ছেড়ে বলল, ‘ধন্যবাদ।’
“কোথায় উঠেছেন আপনি?’
‘আলফায়, রেলওয়ে স্টেশনের উল্টোদিকে । সাথে সাথে দরজা পর্যন্ত এল রেফার। এনজয় লুক্সেমবার্গ।’
‘সাধ্যমত চেষ্টা করব,’ বলল রানা, তারপর হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিল।
ইংরেজী ছাড়া অন্যান্য বিদেশী ভাষা শিখতে গিয়ে একটা কৌশল রপ্ত করেছিল রানা, অনেক কাল পর আজ সেটা আবার কাজে লেগে গেল। অচেনা অক্ষর চেনার কৌশল হলো, সবগুলোকে একসাথে মনে গেঁথে নিতে চাওয়াটা ভুল একটাকে বেছে নিতে হয়, বাকি সবগুলোর কথা একদম ভুলে গিয়ে শুধু সেটাকে মনে রাখার চেষ্টা করতে হয়। ইউরাটম কর্মচারীদের মুখ চেনার ব্যাপারে সেই পুরানো কৌশলটা কাজে লাগাল ও ।
পিঠে শেষ বিকেলের রোদ নিয়ে কংক্রিটের একটা বেঞ্চের ওপর বসে আছে ও, মাথার ওপর গাছের ডালপালা। ওর সামনে, রাস্তার ওপারেই জাঁ-মোনেট। ইউরাটম কর্মচারীরা কাজ সেরে বাড়ি ফিরছে। এদের সবার ওপর সমান আগ্রহ নেই ওর। সেক্রেটারি, মেসেঞ্জার, কফি মেকার- এরা ওর কোন কাজেই আসবে না। সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটরও বাদ। এই দুই দলের মাঝখানে যারা রয়েছে তাদেরকে দরকার ওর কম্পিউটর প্রোগ্রামার, অফিস ম্যানেজার, ছোটখাট ডিপার্টমেন্টের হেড, পার্সোন্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট চীফ। এদের কারও কারও নামকরণও করল ও। ব্যক্তির বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা চোখে পড়ার মত ত্রুটি অনুসারে নামগুলো রাখল, পরে যাতে চিনতে সুবিধে হয়। অবলা, বগা, হিটলার, চীনা, দেড় ব্যাটারি, বোয়াল, মহারাজা, এই রকম আরও অনেক। বিশ বাইশ বছরের একটা মেয়েকে দেখে আগেই মাথা ঘুরে গিয়েছিল ওর, প্রথমবার ইউরাটমে গিয়েই মেয়েটার পরিচয় জানতে পেরেছিল। উঁচু পদের একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের স্ত্রী। মেয়ে তো নয়, পরী। একে দিয়ে কাজ বাগাবার কোন ইচ্ছেই জাগেনি মনে, তবু কয়েকটা ব্যাপার লক্ষ্য না করেও পারেনি। স্বামীটির বয়স হবে পঞ্চাশ, কিন্তু দেখে মনে হয় ষাট, এই রকম একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে একেবারেই বেমানান। আজ বিকেলে স্বামীর সাথে আবার ওকে দেখতে পেয়ে, অনেকটা শখ করেই ওরও একটা নাম রেখে দিল – পদ্মিনী।
বয়স কম হলে কি হবে, এই বয়সে যা চেহারা হওয়া দরকার তার ঠিক আড়াই গুণ মোটা হয়ে গেছে অবলা। বেঢপ একটা বেলুন বললেই হয়, অথচ কাপড়-চোপড় আর মেকআপে সাংঘাতিক উগ্র। তাকে অনুসরণ করে কার পার্ক পর্যন্ত এল রানা। সাদা একটা ফিয়াট ফাইভ হানড্রেডে অনেক কষ্টে ঢুকল অবলা জীব। ভাড়া করা রেনোয়া চড়ে তার পিছু নিল রানা ।
পন্ট-অ্যাডোলফ পেরিয়ে এসে দক্ষিণ-পুর্বে পনেরো কিলোমিটার এগোল অবলা। গাড়ি চালায় খুব আস্তে-ধীরে মনডর্ফ-লেসবেইন্স নামে একটা অঞ্চলে এসে থামল ফিয়াট । কাঁকর বিছানো উঠান পেরিয়ে একতলা একটা বাড়ির তালা খুলে ভেতরে ঢুকল অবলা। এই অঞ্চলে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা আছে, কাজেই কাধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে বাড়িটার সামনে দিয়ে বার কয়েক যাওয়া-আসা করায় কেউ সন্দেহ করল না। একবার জানালা পথে দেখল, অথর্ব এক বুড়িকে খাওয়াতে বসেছে অবলা। মাঝরাতের আরও কিছু পর পর্যন্ত বেবি ফিয়াটকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। এরপর আর ওখানে সময় নষ্ট করল না সে।
নির্বাচনে ভুল হয়ে গেছে ওর। বুড়ি মায়ের সাথে বাস করছে অবলা। ধনীও নয় গরীবও নয়। বাড়িটা সম্ভবত মায়েরই। আর যাই হোক, অপরাধের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। রানার যদি রুচির কোন বালাই না থাকত, প্রেমের অভিনয় করে মেয়েটার দ্বারা স্বার্থ উদ্ধার হয়তো তেমন কোন সমস্যাই হত না। আর কোন উপায়ে অবলার কাছে ঘেঁষা সম্ভব নয়।
আরও তিনটি দিন নিষ্ফল গেল। হিটলার, বোয়াল আর মহারাজা, এদের কোন দুর্বলতা পাওয়া গেল না। কিন্তু সবদিক থেকে আদর্শ মনে হলো বগাকে ।
লোকটা যে শুধু পাটখড়ির মত রোগা তাই নয়, তার গলাটা ঠিক বগের মতই সরু আর লম্বা। অফিস ছুটির পর বাড়ি না ফিরে শহরের প্রায় শেষ মাথায় পৌছে একটা নাইট ক্লাবে ঢুকল সে। এলাকাটার তেমন সুনাম নেই। কারণ, হোমোসেকওয়ালদের কয়েকটা ক্লাব রয়েছে এদিকে। নাইট ক্লাবে ঢুকে একটা কেবিন রিজার্ভ করল বগা। খোলা জায়গায় একটা টেবিল দখল করে বসল রানা, যাতে বগার কেবিনের ওপর নজর রাখা যায়। বগা অর্ডার দিল না, অথচ ওয়েটার শ্যাম্পেনের বোতল আর দুটো গ্লাস দিয়ে এল টেবিলে। তারমানে, কারও জন্যে অপেক্ষা করছে বগা । রোজ যদি নাও হয়, প্রায়ই এখানে আসে সে।
দু’ঘণ্টা পেরিয়ে গেল কারও আসার নাম নেই। বিরক্তি বোধ করল রানা, কিন্তু সেই সাথে জেদও চাপল। এর শেষ না দেখে ছাড়বে না ও। বগার সামনে শ্যাম্পেনের বোতল আর গ্লাস যেমন দিয়ে গেছে ওয়েটার তেমনি আছে, ছোঁয়গুনি সে। শুধু একের পর এক সিগারেট টেনে চলেছে ।
ঠাণ্ডা কিছু নেই, কাজেই বাধ্য হয়ে শ্যাম্পেনের অর্ডার দিতে হলো রানাকে । আরও দু’ঘণ্টা পর সবুরের মেওয়া ফলল। প্রথমে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো ওর। যখন বুঝল, না, মেয়েটা আর কেউ নয়, সত্যিই পদ্মিনী, তখন সেই প্রচলিত আপ্ত বাক্যটা আওড়াল মনে মনে—এই দুনিয়ায় আশ্চর্য বলে কিছু নেই ।
ইতোমধ্যে স্টেজে দল বদল হয়েছে। একটা লোক গিটার বাজাচ্ছিল, তার জায়গায় এল একটা মেয়ে আর একটা ছেলে, নেচে-কুদে অশ্লীল জার্মান লোকগীতি গাইতে শুরু করল তারা। রস আহরণে খুব একটা সুবিধে করতে পারল না রানা, কিন্তু আর সব খদ্দেররা গান শুনে এমন হাসিই হাসল যে বাকি থাকল শুধু মূর্ছা যেতে। এরপর শুরু হলো নাচ। নাচের নামে এমনই বিচ্ছিরি ব্যাপার চলল. এর কথা রানা মনে রাখতেও রাজি নয়।
পদ্মিনী কেবিনে ঢোকার পর থেকে সেই যে তার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে ফিসফিস শুরু করেছে বগা, মাথা তোলার আর নামটি নেই। চেয়ার ছেড়ে সোজা, তাদের কেবিনে গিয়ে ঢুকল রানা। বলল, ‘হ্যালো, সেদিন তোমাকেই না আমি ইউরাটম অফিসে দেখলাম?’
বগা যেন আগুনের ছ্যাঁকা খেয়ে লাফিয়ে উঠল। ‘কে?’ রানা পরিচিত কেউ নয় দেখে খানিকটা যেন ধাতস্থ হলো সে। ‘কই কি জানি…’
অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে পদ্মিনী, যেন চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না । হাসিমুখে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল রানা। ক্লড রেলিক,’ রেফারকে এই নামটাই বলেছিল ও। আমি একজন সাংবাদিক।
‘হাউ ডু ইউ ডু’ বিড়বিড় করে উঠল বগা। বেচারার অন্তরাত্মা পর্যন্ত কেঁপে গেছে, কিন্তু নিজের নাম প্রকাশ না করার উপস্থিত বুদ্ধিটুকু হারায়নি। হাউ ডু ইউ ডু-এর পর মুখটা বন্ধ করে ফেলল ।
‘তাড়া আছে,’ বলল রানা। ‘চলি। আবার দেখা হওয়ায় ভাল লাগল।’
‘ঠিক আছে, গুডবাই।’
ক্লাব থেকে বেরিয়ে এল রানা। এখনকার মত যতটা দরকার তার সবটুকু করেছে ও। বগা জানে, তার গোপন ব্যাপার ফাঁস হয়ে গেছে। এবং ভয় পেয়েছে সে।
হোটেলের দিকে হাঁটা ধরল রানা। অপরাধী অপরাধী লাগছে নিজেকে। কিন্তু কি করবে সে! কোন দিক থেকেই তো কোন ওপেনিং পাওয়া যাচ্ছে না। অগ্রগতি নিল ।
হোমোদের ক্লাবগুলো ছাড়িয়ে খানিকদূর এসেছে, এই সময় ফেউ লাগল পিছনে। প্রফেশন্যাল নয়, হলে নিজেকে গোপন রাখার চেষ্টা করত। পনেরো থেকে বিশ কদম পিছনে থাকল, চামড়ার শক্ত জুতো পেডমেন্টের ওপর খট খট আওয়াজ করছে। রানা ভান করল, ব্যাপারটা যেন টেরই পায়নি ও। রাস্তা পেরোবার সময় সুযোগ করে দেখে নিল ফেউটাকে— লম্বা-চওড়া এক যুবক, লম্বা চুল, বাদামী রঙের লেদার জ্যাকেট পরে আছে।
এক মিনিট পর ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে রানার সামনে দাঁড়াল আরেকজন। দাঁড়িয়ে পড়ল রানা, ডাবল, ব্যাপারটা কি হতে পারে? এরই মধ্যে বৈরী এজেন্টদের চোখে পড়ে গেছে সে, এ ভাবাই যায় না। কেউ অনুসরণ করতে পাঠিয়ে থাকলে এদের মত অ্যামেচারদের পাঠাবে না।
রাস্তার আলো লেগে ঝিক্ করে উঠল ছুরির ফলা। পিছন থেকে এগিয়ে আসছে প্রথম যুবক। সামনেরটা বলল, ‘কোন রকম ট্যা-ফোঁ নয়। মনে করো, আমরা তোমার প্রেমিক। মানিব্যাগটা বের করো।’
গভীর স্বস্তি বোধ করল রানা। এরা ছিনতাই করতে চায়।
‘মারধর কোরো না,’ বলল রানা। ‘টাকা-পয়সা যা আছে সব নিয়ে যাও।’ পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল ও।
‘খুলতে হবে না, এদিকে দাও!’
এদের সাথে এমন কিছু করতে চায় না রানা যাতে কোন খবর তৈরি হয়। টাকা কোন সমস্যা নয়, কিন্তু কাগজপত্র আর ক্রেডিট কার্ড হাতছাড়া করতে রাজি নয় ও। কড়কড়ে নোটগুলো বের করে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “কাগজপত্রগুলো আমার দরকার। টাকা নিয়ে যাও, ব্যাপারটা আমি রিপোর্ট করব না।’
সামনের ছেলেটা ছো দিয়ে নিয়ে গেল টাকা। পিছন থেকে তার সঙ্গী বলল, ‘ক্রেডিট কার্ডও চাই আমাদের-জলদি!’
দু’জনের মধ্যে সামনের ছেলেটা দুর্বল। ‘আমাকে যেতে দাও,’ বলে তাকে পাশ কাটিয়ে, পেভমেন্টের কিনারা ধরে এগোল রানা
জুতোর খটাখট আওয়াজ হলো পিছনে, রানার ঘাড়ের কাছে চলে এল লম্বা- চওড়া। আর কোন উপায় নেই দেখে ঝট্ করে ঘুরল রানা। লাথি মারার জন্যে পা তুলেছে যুবক, সেটা দু’হাতে ধরে একই সাথে মোচড় আর টান দিয়ে তার ভারসাম্য নষ্ট করে দিল। অসহ্য ব্যথায় চিৎকার করে পড়ে গেল যুবক।
ছুরি বাগিয়ে ধরে অপেক্ষা করছিল সঙ্গী, রানার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। নাচের ভঙ্গিতে পিছিয়ে এসে ছেলেটার হাঁটুর নিচে লম্বা হাড়ের ওপর একটা লাথি মারল রানা। কোন বিরতি না দিয়ে চট্ করে পাটা নামিয়ে অপর পায়ে সেই একই জায়গায় লাথি কষাল আরও জোরে। হাঁটু ভেঙে হুড়মুড়িয়ে পড়ল ছেলেটা বন্ধুর গায়ের ওপর, হাত থেকে ছিটকে দশহাত দূরে চলে গেল ছুরিটা ।
টাকাগুলো উদ্ধার করে আলোছায়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছেলেদুটোর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল রানা। ভাবল, কেন আমাকে দিয়ে করালে কাজটা? একেবারে কম বয়স, টেনেটুনে ষোলো কি সতেরো হবে, অনুমান করল ও। মনটা খারাপ হয়ে গেল। হিংস্র, তাতে কোন সন্দেহ নেই, লোকের দুর্বলতাকে পুঁজি করে কিছু কামাই করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই সাথে মনে পড়ল রানার, সে-ও তো ওই একই কাজ করবে বলে ভাবছে।
নির্জন রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করল রানা। এই রাতের কথা ভুলে থাকতে পারলে ভাল হয়। ঠিক করল, কাল সকালে শহর ছেড়ে যাবে ও। আসলে মিছেই সময় নষ্ট করছে, এখানে বিশেষ সুবিধে হবে না
পরিচিত কারও সাথে দেখা হয়ে যাবার ভয়ে কাজ ছাড়া হোটেলের কামরা থেকে বেরোয়নি রানা এ-কয়দিন। জানালার সামনে বসে অথবা টিভি দেখে প্রচুর সময় কাটিয়েছে ও। ইচ্ছে হলেও রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়ায়নি, হোটেলের বারে বসেনি, এমনকি হোটেলের রেস্তোরাঁয় খেতেও যায়নি সব সময় রুম সার্ভিস ব্যবহার করেছে। কিন্তু সাবধান হবারও একটা সীমা আছে, চাইলেই তো আর সে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে না। দুর্ভাগ্য বা দুর্ঘটনাই বলতে হবে, লুক্সেমবার্গ রেলওয়ে স্টেশনের উল্টোদিকে আলফা হোটেলের লবিতে, পরিচিত একজনের সাথে দেখা হয়ে গেল ওর
হোটেল ছেড়ে চলে যাবে, ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে বিল দিচ্ছে। কত টাকা হয়েছে দেখে নিয়ে কুড রেলিকের নামে ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিল ও। আমেরিকান এক্সপ্রেসের স্লিপে সই করার জন্যে অপেক্ষা করছে, এই সময় পিছন থেকে একটা বিস্মিত কণ্ঠস্বর ভেসে এল ‘আরে, রানা না?’ প্রশ্নটা ইংরেজীতে।
এই রকম বিপজ্জনক মুহূর্তে কি করতে হয় সে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে রানাকে নিয়নটা খুব সাধারণ, লোকটা যে-ই হোক, তাকে তুমি চেনো না। তার চোখে চোখ রেখে তোমাকে বলতে হবে, আপনি ভুল করেছেন, আপনাকে আমি চিনি না ।
সেই ট্রেনিং কাজে লাগাবার সময় এসেছে। প্রথমে ডেস্ক ক্লার্কের দিকে তাকাল ও। খাতায় ক্লড রেলিক নামের পাশে পেইড লিখে নামটা কাটতে ব্যস্ত সে, তার মধ্যে কোন রকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেল না। হয় সে বোঝেনি, কিংবা
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!