ব্যর্থ মিশন – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৭১
ব্যর্থ মিশন – বইটির এক ঝলকঃ
পাচ্ছেন না তিনি। যেন একটা কবরস্থানে রয়েছেন।
খোলা একটা দরজার সামনে থামল ওরা। প্যাসেজের অস্পষ্ট আলোয় আনিস সিদ্দিকী দেখলেন সেলটা খালি। দরজার মুখ থেকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হলো তাঁকে। চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন তিনি, আহত শরীরে ব্যথা পেয়ে ককিয়ে উঠলেন। বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেল দরজা।
রাতটা যে কিভাবে কাটল বলতে পারবেন না আনিস সিদ্দিকী। জানালা দিয়ে ভোরের আলো ঢুকল সেলে। ছেঁড়া একটা কম্বলে শুয়ে থাকলেন তিনি, সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, সেই সঙ্গে জ্বরে কাঁপছেন। ঠাণ্ডা লাগছে তাঁর, কিন্তু কম্বলটা গায়ে জড়াতে পারছেন না। শুকিয়ে যাওয়া বমি আর প্রস্রাবের গন্ধ পাচ্ছেন ওটা থকে। বেলা বাড়তে থাকল, কিন্তু কেউ এল না। দুপুরের দিকে গার্ডদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে দরজায় ঘুমি মারলেন তিনি। শুনেও না শোনার ভান করা হলো। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।
বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙল কয়েকজন লোকের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে। পাশের সেলে রয়েছে ওরা। ভারি কিছু একটা পতনের শব্দ পেলেন তিনি। তারপর আহত পশুর মত একটা গোঙানি শুনতে পেলেন। গার্ডরা কর্কশ গলায় ধমক দিতে থেমে গেল:
সেটা ।
খানিক পর আবার শুরু হলো রোমহর্ষক আওয়াজটা। এরকম আওয়াজ আগে কখনও শোনেননি আনিস সিদ্দিকী। বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে পৌছুল, হাত দিয়ে কান দুটো চেপে ধরতে হলো তাঁকে । কোন মানুষের গলা থেকে এরকম আওয়াজ বেরুতে পারে বলে বিশ্বাস করা যায় না। শুনে মনে হবে একটা গরুকে জবাই করা হচ্ছে।
সন্ধের খানিক আগে দরজার নিচের ছোট্ট ফোকর দিয়ে টিনের প্লেটটা ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হলো । খাবারটুকু মুখের কাছে এনে আবার রেখে দিলেন তিনি। চব্বিশ ঘণ্টা পেটে কিছু পড়েনি, তবু ঐ জিনিস গলা দিয়ে নামবে না। ভাবলেন, কেউ না কেউ অবশ্যই তাঁকে উদ্ধার করতে আসবে। অ্যাকটিং হাই কমিশনার এত দেরি করছেন কেন?
বিছানায় শুয়ে ঘুমোবার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন অ্যাকটিং হাই কমিশনার ডেভিড হোপ। লণ্ডন থেকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে, ‘অপেক্ষা করো, কি করা যায় আমরা দেখছি।’
হিথরো এয়ারপোর্ট থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের চারশো ছয় নম্বর ফ্লাইটে চড়ল রবার্ট পিল, ব্রাসেলস-এ পৌছুতে এক ঘণ্টা লাগবে। টেলিফোনে রানার সঙ্গে আলাপ হয়েছে তার। কাজটার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে ও।
‘লুগাম্বা থেকে আরও একটা মেসেজ এসেছে,’ প্রধানমন্ত্রীকে বললেন মাইকেল ল্যাক্স । ‘মি. সিদ্দিকীর সঙ্গে অ্যাকটিং হাই কমিশনারকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। লুবিরি ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে।
‘সর্বনাশ! ওটা তো ওদের কসাইখানা! ‘বোগামুরা আরও একটা দাবি জানিয়েছেন।’ ‘আরও একটা মানে?’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঠোঁটে তিক্ত হাসি। তাঁর দাবিগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, এটা লিখিতভাবে-চান তিনি—বলছেন, লেখাটা নিয়ে আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হবে। ওটায় রানী অথবা প্রধানমন্ত্রীর সই থাকতে হবে।
‘হার ম্যাজেস্টির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে,’ বললেন প্রধানমন্ত্রী। ‘কিভাবে কি করা হবে তা তিনি জানতে আগ্রহী নন, শুধু দেখতে চান সুস্থ শরীরে আনিস সিদ্দিকী ব্রিটেনে ফিরে এসেছেন।’
‘আরও একটা ডেভেলপমেন্টের খবর আছে,’ বললেন ল্যাক্স। ‘ল্যাক্স, তুমি আমার ওপর নির্যাতন করছ!’
‘এটা আমাদের অনুকূলে যেতে পারে।’
‘কি রকম?’
‘আমার অফিসে স্যার পল ওয়েনডেল ফোন করেছিলেন।’ “চিনলাম না । কে তিনি?’
‘বোগামুরার ফোর্থ কিং’স আফ্রিকান রাইফেলস-এর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন ভদ্রলোক,’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন।
“ছিলেন… অতীত। কি চান তিনি?’
‘আমাদের এই সঙ্কটে যে-কোন রকম সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। কাগজে খবরটা পড়ে যেচে পড়ে যোগাযোগ করেছেন।
‘উৎসাহ বোধ করছি,’ বললেন প্রধানমন্ত্রী। ‘তোমার কোন সাজেশন আছে?’ “চিঠিটা লিখিয়ে, সই করিয়ে, স্যার ওয়েনডেলকে দিয়ে পাঠালে কেমন হয়?’ ‘দাবি মেনে নেয়ার মত আচরণ হবে সেটা।’
হবে না, যদি আমরা চিঠিতে শুধু লিখি যে সরকার ও রাজপ্রাসাদের তরফ থেকে আবেদন করা হচ্ছে আনিস সিদ্দিকীকে যেন মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া হয়। চিঠিটা ডেলিভারি দেয়ার সময় স্যার ওয়েনডেলও ব্যক্তিগত ভাবে সুপারিশ করবেন। জেনারেলের খুব প্রভাব আছে বোগামুরার ওপর। বোগামুরা গুরুজনের মত শ্রদ্ধা ও মান্য করেন তাঁকে। ‘
‘শুনে আমার চোখে পানি বেরিয়ে আসছে,’ প্রধানমন্ত্রী বললেন। ‘তবে এতে কাজ হতে পারে বলে মনে হয়। স্যার ওয়েনডেল কি লুগাম্বায় যেতে রাজি আছেন?’ ‘যে-কোন সাহায্য করতে তিনি রাজি।’
‘ঠিক আছে, আবার আমি হার ম্যাজেস্টির সঙ্গে কথা বলব।’ এক সেকেন্ড পর প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন, ‘তোমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটার কতদূর কি করলে?’
‘ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি,’ জানালেন মাইকেল ল্যাক্স। ‘খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারব কাজটা ওরা নেবে কিনা ।
সকাল এগারোটা, আমস্টারডাম শহর কুয়াশা আর রোদে মাখামাখি হয়ে আছে। ডাম স্কয়ারে ভিড়ের মধ্যে তরুণী ও কিশোরী মেয়েরা বেপরোয়া গতিতে সাইকেল চালিয়ে লোকজনকে আতঙ্কিত করে তুললেও কেউ কিছু বলছে না। নেদারল্যান্ডে মেয়েরা খুব সম্মানের পাত্রী হিসেবে বিবেচিত, পুরুষদের মত সম অধিকার ভোগ করছে তারাও, এমনকি তাদের অনেক ছোটখাট ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা হয়। ওঅরমোয়েস স্ট্রীট পেরিয়ে এসে খালের পথ ধরল হাসান জামিল, তাড়াতাড়ি নিজের রেস্তোরায় পৌছুতে চায় । ব্রাসেলস থেকে তার পুরানো বন্ধু মাসুদ রানার আসার কথা আজ ।
“খালের পাড়ে সারি সারি গাছ, নিচে পাকা মেঝে, খানিক পরপর পাথরের বেঞ্চ ফেলা আছে। পানিতে অসংখ্য বোট। প্রচুর লোক বোটে উঠছে বা নামছে। কোথাও কোন হুড়োহুড়ি বা চিৎকার চেঁচামেচি নেই। স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পানি। গাছের নিচে পাকা ফুটপাথে বা রাস্তায় এক কণা আবর্জনাও চোখে পড়বে না । লোকজন খুব বিনয়ী ও ভদ্র, ছেলে-বুড়ো সবাই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। এই খালের পাড়ে অনেক রাত পর্যন্ত প্রেমিক-প্রেমিকারা বসে থাকে, কখনও দেখা যায় পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আছে, বা চুমো খাচ্ছে, কারও কিছু বলার অধিকার নেই। নেদারল্যান্ডের আইনে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
হাসান জামিল আফগান যুবক, চারদিকের এ-সব দৃশ্য দেখে সে তার নিজের দেশের কথা ভাবছে। সে একজন মুক্তিযোদ্ধা, স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। দেশ হানাদারমুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মৌলবাদী দলগুলো পরস্পরের সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধে এমন মেতে উঠল যে গোটা দেশে নতুন করে আগুন লেগে গেল । সেই আগুনে পুড়ে দেশের সাধারণ মানুষ সর্বস্ব খুইয়েছে, হারিয়েছে বাক-স্বাধীনতা, বন্ধ হয়ে গেছে মুক্তবুদ্ধির চর্চা। যাদের কাছ থেকে নির্দেশ ও প্রেরণা পেয়ে যুদ্ধ করল জামিল, যুদ্ধের শেষে দেখা গেল সবাই তারা গোঁড়া ফ্যানাটিক ও ক্ষমতার মোহে অন্ধ, দেশটাকে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। মেয়েদেরকে ঘরের ভেতর বন্দী করে রাখার কথা বলে তারা, কথায় কথায় ফতোয়া জারি করে অমানবিক শাস্তি দেয় মেয়েেেদর। জামিল তার বড় বোনকে নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে বাঁচল। একই সঙ্গে বি. এ. পাস করেছিল ওরা, তবে নেদারল্যান্ডে এসে ওরা কোন চাকরি পাবার চেষ্টা করেনি। ভাই-বোন মিলে ছোটখাট একটা রেস্তোরাঁ চালু করে ওরা । সেটাই এখন ভাল ব্যবসা করছে।
কিন্তু ব্যবসা করলে কি হবে, জামিলের রক্তের ভেতর রয়েছে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চকর নেশা । আমস্টারডামে আসার পর বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে সে। ব্রাজিলের রেন ফরেস্টে গেছে গুপ্তধনের সন্ধানে, আফ্রিকার জঙ্গলে সিংহ ও হাতি শিকার করেছে । আফ্রিকাতে শিকার করতে গিয়েই মাসুদ রানার সঙ্গে তার পরিচয়।
ওর চেহারা দেখেই রানা ওকে চিনে ফেলে। ওকে চেনে শুনে হাঁ হয়ে গিয়েছিল জামিল। তারপর জানতে পারে, যে-সব আফগান যোদ্ধা দেশ ছেড়ে বিদেশে বসবাস করছে তাদের একটা তালিকা আছে রানা এজেন্সির কমপিউটরে, ফটো সহ; আর মাসুদ রানা হলো এজেন্সির ডিরেক্টর।
`রানাই ওর সামনে নতুন একটা আদর্শ তুলে ধরে। যুদ্ধের প্রতি ওর বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে, এ-কথা শুনে হাসিমুখে প্রতিবাদ জানায় রানা। তারপর বলতে শুরু করে। সারা দুনিয়ায় জুলুম অত্যাচারের কোন শেষ নেই, মানুষ হিসেবে জন্মে সে-সব দেখেও হাত- পা গুটিয়ে বসে থাকা স্বার্থপরতা, কাপুরুষতা। বিশেষ করে যুদ্ধের ট্রেনিং নেয়া আছে যার, দীর্ঘ কয়েক বছর যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা আছে, তার তো অবশ্যই ন্যায় ও মঙ্গলের পক্ষে লড়াই করার জন্যে তৈরি থাকা দরকার।
জামিল প্রশ্ন তোলে, ‘কোন্টা ন্যায় যুদ্ধ বুঝব কিভাবে? একটানা পাঁচ বছর যুদ্ধ করার পর আবিষ্কার করলাম, অর্জিত সুফল মৌলবাদীরা ধ্বংস করে দিচ্ছে। যুদ্ধ করে তাহলে লাভ কি?’
রানার জবাব ছিল, যে-কোন অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করবে তুমি, অন্যায়টার প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাবে, পরে কি হবে সে-কথা ভেবে নিজের দক্ষতায় মরচে পড়তে দিয়ো না । দুনিয়ার বহু রণক্ষেত্রে ন্যায় ও মঙ্গলের পক্ষ নিয়ে লড়াই করছে মানুষ, চাইলেই তুমি তাদেরকে সাহায্য করতে পারো।
জামিল বলেছিল, সেরকম কোন যুদ্ধে রানা যদি যায়, তাকেও যেন ডেকে নেয় ও ।
পরবর্তী দু’বছরে রানার ডাক পেয়ে দুটো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে জামিল। একটা আলজিরিয়ায়, সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে; আরেকটা লেবাননে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে। এখন নিজেকে জামিল মানবতাবাদী ও সৎ একজন যোদ্ধা বলে দাবি করতে পারে, জীবনটাকে উৎসর্গ করেছে ন্যায় ও মঙ্গলের পক্ষে। তবে কোন্ যুদ্ধটা ন্যায় ও সঙ্গত, সে-সম্পর্কে এখনও তার সংশয় ঘোচেনি। সেজন্যেই সংজ্ঞা নিরূপণের দায়িত্বটা সব সময় রানার ওপর ছেড়ে দেয় ও। রানা যদি বলে ওখানে জুলুম হচ্ছে, চলো রুখে দাঁড়াই, দ্বিধা না করে তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়বে জামিল। জামিল শুধু একা নয়, ওর কয়েকজন বন্ধুও এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ, রানার ডাক পাবার জন্যে তারাও এক পায়ে খাড়া হয়ে থাকে।
রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট এড়িয়ে গেল জামিল। ওদিকের সরু সরু পাথর বসানো গলিতে যে-কোন ধরনের যৌন চাহিদা পূরণ করা যায়। বড় বড় জানালার সামনে আর্মচেয়ারে বসে আছে মেয়েরা, জানালার মাথার ওপর বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে খদ্দেরের সব ইচ্ছেই মেটানো হবে। ফ্রী সোসাইটির এটা হলো আরেক দিক, জামিলের সুস্থবুদ্ধি ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না। কেউ ওকে মানা করেনি, রুচিতে বাধে বলে ভুলেও ওদিকে পা বাড়ায় না কখনও। এই গলিগুলোর কিছু মেয়েকে তবু চেনে ও, ওঁদের রেস্তোরাঁয় মাঝে-মধ্যে খেতে যায়। জামিল অবাক হয়ে দেখে, এ-দেশেও বহু দেহ- পসারিনী কত আরামে আছে । এখানে একজন শ্রমিক যেমন গাড়ি-বাড়ির মালিক হতে পারে, সেরকম একজন পতিতাও তার শরীর বেচে আধুনিক সমস্ত বিলাসিতা ভোগ করতে পারে। দেহ বেচলে কি হবে, অত্যন্ত ভদ্র আর মার্জিত তাদের আচরণ। দু’একজনের সঙ্গে কথা বলে দেখেছে জামিল, প্রায় সবাই তারা শিক্ষিত ।
রাস্তার মোড়ে একটা থিয়েটার, খুবই উঁচু মানের নাটক দেখানো হয় এখানে। ওদিকেও জামিল বড় একটা যায় না, কারণ, শুনেছে থিয়েটারের সামনে হোমোসেক্সুয়ালরা আড্ডা মারে ।
রাস্তার উল্টোদিকে চলে এসে একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়ল জামিল, ওদের রেস্তোরাঁটা শেষ মাথায়, গলির মুখ থেকে দেখা যায়। রেস্তোরাঁর নাম রেখেছে ওরা ‘কাবুল’।
চারজন কর্মচারী ওদের। সবাই তারা উপমহাদেশের লোক। ওর বড় বোন, নার্গিস, প্রতিদিন আধ বেলা কাউন্টারে বসে, বাকি সময় স্বামী-সন্তানদের পিছনে ব্যয় করতে হয় তাকে ৷
রেস্তোরাঁয় ঢুকে বিশ-পঁচিশজন খদ্দের দেখল জামিল। কারও দিকে তাকাল না, সোজা কোণের একটা টেবিলের দিকে এগোল।
‘কেমন আছ, জামিল?’ জিজ্ঞেস করল রানা। হাতটা বাড়িয়ে দিল ও ।
রানার হাতটা ধরে আফগানী কায়দায় চুমো খেলো জামিল। ‘আমি ভাল, দোস্ত । তুমি কেমন আছ? আমি কি তোমাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি?’
মাথা নাড়ল রানা। ‘মিনিট দশেক। নার্গিস বলল তুমি ডাক্তারের কাছে গেছ । কি ব্যাপার, জামিল?’ ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলাল। ‘তুমি কি অসুস্থ?’
“আরে না!’ লাজুক হাসি ফুটল জামিলের মুখে। ‘অপারেশনে যেতে হবে শুনলে শরীরটা একবার চেক করিয়ে নেয়া আমার অভ্যাস। ‘
‘ভাল অভ্যাস । তারমানে আমার ফোন পেয়ে তুমি একেবারে তৈরি হয়েই আছ?’ একটা চেয়ার টেনে বসল জামিল, উত্তেজনায় চকচক করছে ওর চোখ দুটো। *কোথায় যাচ্ছি আমরা, রানা?’
‘ইস্ট আফ্রিকা, লুগাম্বায়,’ বলল রানা। তবে যাবার ব্যাপারটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’
‘লুগাম্বায়…লুগাম্বায় …কিন্তু ওখানে তো কোন যুদ্ধ হচ্ছে বলে শুনিনি। কাগজে দেখি খ্রিস্টানরা স্থানীয় মুসলমানদের ওপর খুব অত্যাচার করছে। মেরে নাকি একদম সাফ করে ফেলছে—।’
‘হ্যাঁ,’ বলল রানা। ‘তবে আমাদের কাজের সঙ্গে ওই মারামারির তেমন কোন সম্পর্ক নেই । আমরা যাচ্ছি এক বিজ্ঞানীকে বের করে আনার জন্যে ।
‘ও, হ্যাঁ, ও আল্লাহ – বিজ্ঞানী ভদ্রলোক, আনিস সিদ্দিকী!’
‘জানো তাহলে?’
‘কাগজে তো পড়েইছি, আজ সকালে রেডিওতেও শুনলাম। কার মাথাব্যথা, রানা?’
ব্রাসেলসে এসে প্রস্তাবটা রানাকে দেয়ার সময় কোন কথাই গোপন করেনি রবার্ট পিল, রানাও কিছু গোপন না করে সব কথা জানাল জামিলকে। সবশেষে বলল, ‘কাজটা যেভাবে পাচ্ছি, একটু সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। তবে এ-ও ঠিক যে ব্রিটিশ সরকার নেপথ্যে থাকতে চাইতেই পারে। ব্যাপারটা ফাঁস হয়ে গেলে সাঙ্ঘাতিক ঝামেলায় পড়তে হবে ওদেরকে।’
তুমি তাহলে কাজটা নেয়ার পক্ষে?
‘পক্ষে একাধিক কারণে, জামিল,’ বলল রানা। ‘তোমাকে সব কথা আমার জানানো দরকার, তাহলে সিদ্ধান্ত নেয়া তোমার জন্যে সহজ হবে। প্রথম কারণ, আনিস সিদ্দিকী পুরো না হলেও হাফ বাঙালী। ব্রিটিশ বাপ, বাংলাদেশী মা। তাঁর জন্মও বাংলাদেশে। নিরীহ ভদ্র মানুষ, শুধু একটা বই লেখার অপরাধে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। সব শুনে আমার বস্ সম্মতি দিয়েছেন।’ ‘আর কি কারণ?’
“কাজটায় টাকা আছে প্রচুর,’ বলল রানা। ‘প্রস্তাবে বলা হয়েছে মাথাপিছু পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড । খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ। আমি বলে দিয়েছি, খরচ ধরতে হবে দশ
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!