আওয়ারা – শফিউদ্দিন সরদার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ শফিউদ্দিন সরদার
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৭৭
আওয়ারা – বইটির এক ঝলকঃ
এদিকে সুরতান সাহেব (শাহ সুলতান) ব্রাহ্মণকন্যা সুরমা রানীকে শাদি করে শ্বশুরের পয়সায় পৃথক অন্নে ও পৃথক বাসায় বেশ আরামেই কালাতিপাত করছিলেন । শাদির সময় সুরমা রানী মুসলমান হয়ে নাম দিলেন সুরমা বিবি । এতে করে ব্রাহ্মণ পিতা-মাতার সঙ্গে এক অন্নে থাকা তাঁর সম্ভব হলো না । মুসলমান স্বামী সুরতান সাহেবকে নিয়ে পৃথক বাড়িতে পার হলেন তিনি এবং পৃথক হাঁড়ি খুললেন ।
সুরমা বিবি তাঁর পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। পিতা-মাতার অভাবে পিতা- মাতার বাড়িঘর ও বিপুল বিষয়বিত্ত সব সুরমারই হবে হেতু, সুরমার পিতা-মাতা মেয়ে জামাইয়ের যাবতীয় খরচ তাঁদের অঢেল সম্পত্তি থেকে চালাতে লাগলেন । অর্থের কোন অভাব মেয়ে জামাইয়ের রইলো না বা জামাই সুরতান সাহেবকে উপার্জনের কোন ধান্দা করতে হলো না। শুয়ে বসে আরামেই দিন কাটতে লাগলো তাঁর ।
এছাড়া সংসারের কাজের জন্যে পৃথক কোন চাকর-বাকরও রাখতে হলো না মেয়ে জামাইকে । সুরমার বাপের সংসারে অনেক দাসদাসী। তারাই এসে করে দিতো মেয়ে জামাইয়ের সাংসারিক কাজকর্ম । খেটে দিতো ফাই-ফরমায়েশ । সেদিন কি এক কাজের জন্যে জামাই সুরতান সাহেবের বাজারে লোক পাঠানোর জরুরী দরকার পড়লো। অনেকক্ষণ যাবত তিনি শ্বশুরের চাকর-বাকরদের ডাকাডাকি করলেন । কিন্তু কেউ না আসায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন । অনেকক্ষণ পর হরিদাস এসে সামনে দাঁড়ালে সুরতান সাহেব শ্লেষভরে বললেন- এই যে জমিদার তনয়েরা! এতক্ষণ ছিলে কোথায়? এই দিনের বেলাতেও আরামে ঘুমোচ্ছিলে?
হরিদাস হোঁচট খেলো । সুরতান সাহেবের নিকট থেকে এমন সম্বোধন হরিদাস কখনো আশা করেনি । সে ক্ষুণ্ণকণ্ঠে বললো- কি যে বলেন কত্তা? দিনের বেলায় আরামে ঘুমানোর কপাল কি আমাদের?
: তাহলে কোথায় ছিলে তুমি হুজুর? কোন ভাংগা ঘর তুলছিলে? এদিকে তো একবারও এলে না ?
: তা কথা হলো… &
: না ঘুমালেও, বেশ শুয়ে বসে রাজার হালেই দিন কাটছে, না কি বলো? হরিদাসের মনেও রাগ হলো। সে এবার বেশ ঠেশ দিয়েই বললো- শুয়ে বসে তো দিন কাটছে আপনার কত্তা! শ্বশুরের পয়সা দুই হাতে উড়াচ্ছেন আর শুয়ে বসে থাকছেন । পরের বাড়িতে খাটতে তো হয় না!
হরিদাসের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে সুরতান সাহেব বললেন- হরিদাস!!
হরিদাস বললো- নিজে উপায় না করে, পরের পয়সায় বসে বসে খাওয়া সব মানুষের কপালে জুটে না কত্তা। সব মানুষ তাতে আনন্দও পায় না। রুচিতে বাধে ।
এবার সুরতান সাহেব সক্রোধে বললেন- তার অর্থ? কি বলতে চাও তুমি?
মাথা নিচু করে হরিদাস বললো- থাক কত্তা। কি জন্যে ডেকেছিলেন সেটা বলুন? সঙ্গে সঙ্গে আসতে পারিনি, অপরাধ ক্ষমা করবেন ।
সুরতান সাহেব গম্ভীর হয়ে গেলেন। গম্ভীরকণ্ঠে বললেন- যে জন্যে ডেকে ছিলাম, সেটার আর দরকার নেই । তুমি যাও…
: কত্তা !
: ঢের আক্কেল দিয়েছো হরিদাস । আর জ্বালাইও না । যাও… : তা মানে!
: আহ! তুমি যাও দেখি…!
অগত্যা চলে গেল হরিদাস। হরিদাসের বক্তব্য, তার ইংগিত সুরতান সাহেবের আত্মসম্মানে জব্বোর আঘাত করলো। টলতে টলতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন তিনি ।
অসময়ে স্বামীকে শুয়ে থাকতে দেখে সুরমা বিবি এসে শংকিতকণ্ঠে বললেন – কি গো, অসময়ে শুয়ে আছেন যে? কোন অসুখ-বিসুখ করলো নাকি?
সুরতান সাহেব সংক্ষেপে জবাব দিলেন- না, কোন অসুখ-বিসুখ করেনি।
: তাহলে অসময়ে শুয়ে আছেন কেন ?
: এমনি
: এমনি মানে? আমার উপর তাহলে বুঝি রাগ হয়েছে জনাবের?
: রাগ! তোমার উপর রাগ হবে কেন?
: তা না হলে শুয়ে থাকার কারণটা তো বলছেন না! সারারাত একটানা ঘুমালেন, এখন তো ঘুম ধরার কথা নয়?
: না, ঘুম ধরেনি ।
: তাজ্জব! ঘুমও ধরেনি? তাহলে ঘটনা কি বলুন না গো? : ঘটনা মানে, আমি ভাবছি…!
: ভাবছেন? কি ভাবছেন?
: জোয়ান মানুষ আমি। কোন আয় উপায় না করে এভাবে শ্বশুরের পয়সায় বেঁচে থাকা কোন পুরুষোচিত কাজ নয় ।
বুঝতে পারলেন না সুরমা বিবি। বললেন- কি বললেন? শ্বশুরের পয়সায় বেঁচে থাকা না, কি?
সুরতান সাহেব বললেন- হ্যাঁ, তাই বৈ কি? আয় উপায়ের কোন ধান্দা না করে এভাবে বসে বসে শ্বশুরের পয়সা খাওয়াটা সকলের রুচিতেই বাধার কথা । : সে কি, সে কি! এ আপনি কি বলছেন?
: দেখলাম একজন কামিন মজুরের রুচিতেও এটা বাধে। বাধে না শুধু আমার রুচিতে ।
: তার মানে?
: অবশ্যই আমার উপার্জন করা উচিত ।
: হায় আল্লাহ! একি সর্বনেশে কথা! আমার বাপের সমস্ত পয়সার আমরাই মালিক । আমরা ছাড়া এত পয়সা খাওয়ার কেউ নেই । আমার পিতা-মাতার অভাবে সমস্ত পয়সা আমরাই পাবো । আপনি উপার্জন করবেন মানে ?
: তাঁদের অভাবে লক্ষ-কোটি পেলেও, এক্ষণে তাঁদের পয়সায় জীবন ধারণ কাপুরুষের লক্ষণ!
: দোহাই আপনার! এমন অহেতুক চিন্তা-ভাবনা করবেন না ।
: কেন করবো না? এক্ষণে তো একটা কপর্দকও হাতে নেই আমার। তাঁদের তোলা পয়সা খাচ্ছি । তাঁদের পয়সা হাত পেতে নিয়ে আরামে দিন কাটাচ্ছি । না না, এ হতে পারে না । কখনো না । আমি উপার্জনে নামবো । মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হলেও নিজের উপার্জনের পয়সা দিয়ে সংসার চালাবো ।
: আপনার পায়ে পড়ি । আমার মাথার দিব্যি । এমন কথা বলবেন না ।
: সুরমা!
: আমার বাপের পয়সা মানেই আমার পয়সা। আমার এত পয়সা থাকতে আপনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করবেন, সেই পয়সায় সংসার চালাবেন, এরপরও বেঁচে থাকা চলে আমার ?
: চলে না?
: না, কখনো চলে না।
: সুরমা!
: আমি ভেবে পাচ্ছিনে, আজ হঠাৎ এমন চিন্তা আপনার মনে এলো কি করে?
: আজ নওকর, মানে খেটে খাওয়া মানুষ হরিদাস আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো বলে ।
: হরিদাস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, কী রকম?
: পরের পয়সায় বসে বসে খাওয়া হরিদাসও পছন্দ করে না। ফাঁকে ফুরসুতে একটু আধটু বাঁশি বাজাতো ঠিকই, কিন্তু সে খেটে খায়। এসব কথা সে মুখের উপর শুনিয়ে দিলো ।
: পরের পয়সা কি রকম? এটা আপনার শ্বশুরের পয়সা ।
: বাপের পয়সা হলেও কোন কাজকর্ম না করে সেরেফ শুয়ে বসে খাওয়া ঠিক নয়- এটা সে তার কথাতেই বুঝিয়ে দিলো ।
ক্রোধে জ্বলে উঠলো সুরমা বিবি। বললেন- কি! এত বড় স্পর্ধা ঐ হরিদাসের! আমি ওকে খুন করবো!
সাপের মতো ফুঁসতে লাগলেন সুরমা বিবি। সুরতান সাহেব বললেন- তাহলে আমাকেও এ গৃহ ত্যাগ করতে হবে। কারণ, হরিদাস কোন অন্যায্য কথা বলেনি । ঠিক কথাটাই বলেছে ।
ঘাবড়ে গেলেন সুরমা বিবি । রাগ বন্ধ করে ভীতকণ্ঠে বললেন- জনাব !
: ওর উপর রাগ দেখালে, আমার পথ দেখতেই হবে আমাকে। কোন বিকল্প নেই ৷
: ঠিক আছে, রাগ দেখাবো না। আপনিও এ গৃহ ত্যাগ করার কথা বারেক বলবেন না, বলুন?
সুরতান সাহেব জবাব দেয়ার আগেই বাড়ির কাজের ঝি এসে ডাক দিয়ে বললো ওমা, সে কি গো! পাক শাক শেষ করে সেই কখন ঘাটে গিয়েছি আমি, তবু আপনারা ঘর থেকে বেরোন নি? কখন ডুৰ্খাপ্ দেবেন আর কখন খেতে আসবেন? এদিকে যে ভাত তরকারী সব ঠাণ্ঠা হয়ে গেল!
সুরমা বিবি চমকে উঠে বললেন- এ্যাঁ! তাই নাকি? সত্যিই তো অনেক দেরী হয়ে গেছে! —বলেই সুরতান সাহেবকে বললেন- উঠুন জনাব, উঠুন। গোসলের পানি দেয়া আছে, শিগগির উঠে গোসলখানায় যান । উঠুন, উঠুন ।
সুরমা বিবির উপর্যুপরি তাকিদে সুরতান সাহেব উঠে গোসলখানায় ঢুকলেন । পরের দিন সকালে সুরমা বিবিকে কিছু না জানিয়ে উপার্জনের সন্ধানে পথে নামলেন সুরতান সাহেব। পথে ডালি কোদাল কাঁধে একদল মজুরের সাথে তাঁর দেখা। কিঞ্চিৎ ইতস্তত করে তিনি তাদেরকেই বললেন- এই যে দাদারা! আমাকে একটা পথ বলে দিতে পারেন?
মজুর দলের সর্দার সুরতান সাহেবকে দেখেই বলে উঠলো- আরে কে? লাল টুকটুকে কার্তিক ঠাকুর, কে আপনি? ও পাড়ার মুসলমান হওয়া সুরমা রানীর বর নাকি?
সুরতান সাহেব বললেন- জি দাদা, তাই!
: আচ্ছা! তা কিসের পথ খুঁজছেন?
: আয়-উপার্জনের পথ দাদা । কিভাবে উপার্জন করতে পারি, তা কি বলে দিতে
পারেন ?
তাঁর মতো লোক এমন প্রশ্ন করায় মজুর দলের সর্দার কিছুটা রসিকতা করেই বললো- উপার্জনের পথ? হ্যাঁ পারি। উপার্জনের সহজ পথ হলো চুরি । মোটা উপার্জন করার পথ ডাকাতি । চুরি-ডাকাতি করতে পারলে ভাল উপার্জন করা যায়।
সুরতান সাহেব শরম পেয়ে বললেন- ছিঃ ছিঃ! কি যে বলেন দাদা? চুরি-ডাকাতি কি উপার্জনের কোন সৎপথ? সৎপথে কিভাবে আয় উপার্জন করতে পারি, পারলে সে কথাটা বলুন দাদা ।
: সৎপথে আয় উপায়ের একটা মাত্র পথ ছাড়া আর কোন পথ আমাদের জানা নেই ।
: কি পথ দাদা?
: আমরা যেভাবে উপার্জন করি, সেই পথ । মানে মজুর খাটা ।
: মজুর খাটা? ওভি আচ্ছা! তা কোথায় মজুর খাটবো, সে সন্ধান কি দিতে পারেন?
: পারি । কিন্তু আপনি মজুর খাটবেন? আপনার মানহানি হবে না?
কিসের মানহানি দাদা? সৎপথে যে উপায় করে তার মান কমে না; বরং বাড়ে ।
: সাব্বাস! তাহলে চলে আসুন আমাদের সাথে । আমরা যেখানে কাজ করছি, সেখানে লেগে যান কাজে ।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!