আন্দামান বন্দির আত্মকাহিনী – আবুল কালাম – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

আন্দামান বন্দির আত্মকাহিনী – আবুল কালাম – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ আবুল কালাম

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৬১

 আন্দামান বন্দির আত্মকাহিনী – বইটির এক ঝলকঃ

এইভাবে মীর মজিব উদ্দিন সাহেবের সারাদিনের কারসাজি আমাদের এক মুহূর্তের উপদেশেই ব্যর্থ হয়ে যেত। তখন মীর সাহেব তার প্রভুদের বুঝিয়ে দিলেন, যদ্দিন মুহম্মাদ জাফর ও মওলানা ইয়াহহিয়া আলী এখানে আছে, তদ্দিন কাউকে সাক্ষীরূপে পাওয়া সম্ভব নয় । ফলে ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের ২২ শে ফেব্রুয়ারী তারিখে আমাদের দুইজন ও মিঞা আবদুল গাফফারকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে স্থানান্তরিত করা হলো । এবং মুহাম্মদ শফী, আবদুল করিম, এলাহী বখশ ও মুনসী আবদুল গফুর প্রমুখ আম্বালা জেলেই রয়ে গেলেন ।
চমৎকার! আমার এই জেল থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুহম্মদ শফী ও আবদুল করীম প্রমুখরা সরকারী সাক্ষী সেজে পাটনা অভিমুখে যাত্রা করলেন। এঁদেরই মিথ্যা সাক্ষে তদানীন্তন আউলিয়া শামসুল ইসলাম মওলানা আহমদুল্লাহ সাহেব ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের মে মাসে তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ডে দণ্ডিত অবস্থায় আমাদের আগেই জুন মাসে আন্দামানে উপনীত
হলেন ।
মোকদ্দমার নথিপত্র ও মুহম্মদ শফীকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রমাণাদি আলোচনা করলে পরিষ্কার বোঝা যাবে, কিরূপে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে মওলানা শফীকে ফাঁসিদণ্ডে দণ্ডিত ও তাঁর পঞ্চাশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল । অথচ মাত্র একটি বৎসর সাক্ষী বানাবার অজুহাতে তাঁকে মুক্তি দান করা হলো । অবশ্য এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল, যাতে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি তাঁকে প্রত্যর্পণ করতে না হয় । যদি সে নির্দোষই ছিল বা এক বৎসর পর মুক্তি পাওয়া প্রমাণিত হল, তাহলে ঘটা করে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাঁকে ফাঁসিদণ্ডে দণ্ডিত করার কি কারণ ছিল? আর সত্যই যদি সে গুরুতর অপরাধী ছিল, ও সেশন জজ সাহেবের রায়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণাদি নির্ভুল ছিল, তাহলে এক বছর পরেই তাঁকে মুক্তি দান করা হল কেন ?
১৮৭১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত ওহাবী গ্রেফতারীর যে সকল মোকদ্দমা চলছিল তন্মধ্যে আমীর খাঁ চামড়ার মার্চেন্ট, মওলানা তবারক আলী, পাবনার অধিবাসী মওলানা আসিরুদ্দীন (জানা যায়, ইনি কলকাতার অধিবাসী এবং পাবনায় গ্রেফতার হন) ও ইসলামপুর নিবাসী ইবরাহিম মণ্ডল সাহেবের মামলাও চলছিল। এই সমস্ত মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরী করা হত, অথবা সরকার পরে গোয়েন্দাদেরকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্যে আহ্বান করা হত। আমি স্বয়ং একজন সাক্ষীর মুখে শুনেছি, তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করলে তাদেরকে শাসানো হত যে, এই শর্তেই তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে । সাক্ষ্য না দিলে পূর্ব ওয়ারেন্টেই আবার গ্রেপ্তার করে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ও কালাপানি প্রেরণ করা হবে । আম্বালা লাহোর যাত্রার প্রাক্কালে আমার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা জেলখানার ভেতরে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিল। তখন রমযান মাস । আমি রোযা ছিলাম । জেলখানার বাইরে একটি কামরার মধ্যে অনেকক্ষণ আমাদের কথাবার্তা চলছিল। পরনে আমার গৈরিক বসন। কম্বলের জামা ও পায়ে লোহার বেড়ী দেখে আমার স্বজনেরা অবাক। অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে পড়ল। আমি তাদেরকে সান্ত্বনা দিলাম এবং ঈমান ও সবরের বিষয় বোঝালাম। দীর্ঘ সোয়া বৎসর পর আমার পুত্র সাদেককে সেদিন দেখলাম । সে এত বড় হয়ে গেছে, প্রথম তাকে চিনতেই পারিনি। তার সঙ্গে এই আমার শেষ সাক্ষাৎ। এই ধরাধামে দ্বিতীয়বার আর তার সঙ্গে মুলাকাত হয়নি ।
হ্যাঁ, ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারী তারিখে আমরা আম্বালা থেকে লাহোর জেল অভিমুখে রওনা হয়েছিলাম। গৈরিক বসন, কম্বল পরিহিত যোগীর বেশ, হাতে হাতকড়া, পায়ে বেড়ীর অলংকার। আমাদের সঙ্গে দুইটি গাড়ী থাকলেও পদব্রজেই চলছিলাম আমরা ত্রিশ চল্লিশ জন কয়েদি। কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাকে গাড়ীতে ওঠান হত । তা ছাড়া সকলেই ঝন ঝন ঝনঝন শব্দে লোহার মল বাজাতে বাজাতে ক্রমাগত হাঁটছি। যা হোক, সোয়া বৎসর পর কারা প্রাচীরের বাইরে, মুক্ত হাওয়ায় পরিভ্রমণ করতে পেরে, রাস্তায় যা ইচ্ছে তাই কিনে খাওয়ার সুযোগ পেয়ে, সর্বোপরি মওলানা ইয়াহহিয়া আলী সাহেবের নিরবচ্ছিন্ন সাহচর্য লাভের আনন্দে এই সফরের দিনগুলো সার্থক হয়ে উঠলো ।
মহারাজার বরযাত্রীদল ও আমরা
পথযাত্রার সময় ঘটনাক্রমে পাতিয়ালার মহারাজা হিন্দ সিংয়ের বরযাত্রী দল খুব ধুমধামের সঙ্গে আমাদের আগে আগে দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে যাচ্ছিল। ফেব্রুয়ারী শেষের গোলাপী শীত, তখন সূর্যোদয় হচ্ছিল। একদিকে উদীয়মান সূর্যের আলোকচ্ছটায় বরযাত্রীদের দেহাবরণের সোনাচান্দি ও মণিমুক্তার চাকচিক্য, অন্যদিকে আমাদের বেড়ীর ও হাতকড়ার কৃষ্ণচ্ছটা। একদিকে শাল, কিংখাব ও বনান্তের মনোহারিত্ব, অন্যদিকে আমাদের গৈরিক বসন ও কম্বলের সাদা কালোর প্রতিযোগীতা। ওদিকে হাতী ঘোড়ার হুংকার এদিকে বেড়ীর ঝংকার। মহারাজার বরযাত্রীদল ও আমরা কয়েদীরা যেন পাশাপাশি প্রতিযোগীতা করে চলছিলাম। সে প্রতিযোগীতা মান ও অপমানের, ছোটর সঙ্গে বড়র। তবু দীর্ঘদিন পরে কারাগারের অন্ধ কক্ষ থেকে আমাদের বাইরের আলোকে আসবার আনন্দ বরযাত্রীদের আনন্দের চাইতে কোন অংশে কম ছিল না । আমরা হরিণের মতো নাচতে নাচতে ছুটে ছুটে চলছিলাম । যাদের কাছে কিছু টাকা পয়সা ছিল তারা রাস্তায় ফলমূল কিনে খেয়ে ফুর্তি করতে করতে যাচ্ছিল। লুধিয়ানা, ফুলওয়ার, জলন্ধর, অমৃতসর একে একে পিছনে পড়ে যায় ৷ শেষে আমরা আমাদের শেষ মঞ্জিল লাহোরের শালিমার বাগের সম্মুখে পৌঁছলাম। সেখানে প্রত্যেকেই যার যা খুশী প্রাণভরে খেয়ে নিই। কারণ জেলখানায় প্রবেশ করলে নিয়মিত খোরাক ছাড়া অতিরিক্ত কিছু খেতে পাওয়া
অসম্ভব ।
বিকেল প্রায় তিনটের সময় আমরা লাহোরে সেন্ট্রাল জেলের সম্মুখে পৌঁছে গেলাম । আমাদের সবাইকে সারিবদ্ধভাবে জেলের দরওয়াজায় বসিয়ে দেওয়া হল । প্রথমত একজন কাশ্মিরী হিন্দু দারোগা এসে আমাদের মোকদ্দমায় আসামীদের বিশেষভাবে লক্ষ্য করে ও আন্তরিক দুঃখ জানায় । এরপর জেল সুপার ডাঃ গ্রে আবির্ভূত হলেন। সর্বপ্রথম তিনি আমাদের পরিদর্শন করলেন, তারপর রোষভরে হুকুম দিলেন- এদের প্রত্যেকের পায়ে আড়াআড়িভাবে একটি করে লোহার ডান্ডা লাগিয়ে দাও । আদেশ দেওয়া মাত্র লৌহদণ্ড নিয়ে কামার এসে হাজির এবং আমাদের পদযুগলের বেড়ীর সাথে এক একটি একফুট লম্বা সেগুলো স্থাপন করল ।
নিছক আক্রোশবশে শুধু আমাদের উপরই এই হুকুম প্রয়োগ করা হলো । সমগ্র জেলখানার ভেতরে আর একটি কয়েদীর পায়েও এই ডান্ডা দেখিনি । এর ফলে উঠাবসা ও চলাফেরা ভয়ানক কঠিন হয়ে পড়ল। রাত্রে পা মেলে শুতে পারা যেত না। জেলখানার মাঝখানে একটি কামরা ও তার চারপাশের প্রাঙ্গণসহ আটটি ব্যারাক । কয়েদীদের কায়িক পরিশ্রমের জন্য একটি কারখানাও ছিল। সাহেব প্রবর আমাদের মোকদ্দমার আসামীদের প্রত্যেককে পৃথক পৃথক ব্যারাকে আবদ্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিলেন যেন আমরা পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ করতে না পারি । বন্ধু বিচ্ছেদের ব্যথা লৌহদণ্ডের দুর্ভোগ থেকেও গুরুতর ছিল । সর্বাপেক্ষা কঠিন জায়গা এক নম্বর ব্যারাকে আমার স্থান নির্দেশ করা হলো। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিকেল ছটার সময় আদেশ এসে পৌঁছল যে, আম্বালা জেল থেকে আগত সমুদয় কয়েদীকে যেন পৃথকভাবে রাখা হয়। কারণ এরা সংক্রামক ব্যাধিগ্রস্ত কারাগার থেকে এসেছে। এদের রোগ যেন এই জেলের অন্য কয়েদীদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে । এই নির্দেশক্রমে আমি যেখানে ছিলাম সেই এক নম্বর ব্যারাকে সকলের স্থান করা হলো। সকলে আবার মিলিত হতে পেরে অত্যন্ত খুশী হলাম ।
জেলখানার এই নম্বরটি একজন মুসলমান জমাদারের চার্জে থাকায় আমাদেরকে বিশেষ কোন মেহনতের কাজ করতে হয়নি। উপরন্তু সুপার আমাকে সপ্তাহখানেক পরে এই ব্যারাকের মুনশী নিয়োগ করলেন। কিন্তু পায়ের ডান্ডা যেমন ছিল তেমনি রইল। এর ফলে প্রত্যহ ভোরে পরিদর্শনের সময় সুপার সাহেবের সঙ্গে আমাকে হরিণের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হত।
ছন্দলের উদারতা
একদিন রোববারে আমি আমার বিছানায় বসে আছি। সহসা জেল সুপার আমাদের নম্বরে এসে উপস্থিত হলেন এবং এখানকার কয়েদীদের তল্লাশী করবার হুকুম দিলেন। আমার বিছানার তলা থেকে কিছু লবণ বের হল । এইরূপ অপরাধে জেলখানায় বেত্রাঘাত করা হয়। আমি বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়লাম, কি জবাব দেব? এমন সময় ছন্দল নামক একজন মুসলমান কয়েদী, যে আমার সঙ্গেই আম্বালা থেকে এসেছিল ও আমার খেদমত করত, হুজুর, এই বিছানা ও লবণ আমার, ওর নয় ।
উনি বললেন- তা কেমন করে হয়?
বলে উঠল-
ছন্দল জবাব দিল, আপনি আসবার আগে আমরা দুইজনে একটু বাইরে গিয়েছিলাম। এ সময় হুজুর এসে পড়ায় আমরা দৌড়ে এসে হাজির হই। কাজেই ইনি আমার বিছানায় আর আমি উনার বিছানায় বসে পড়েছি।
এই শুনে সুপার সাহেব হেসে ফেললেন এবং আমাদের দুইজনকেই নম্বরের বাইরে বেত্রাঘাত করার জায়গায় নিয়ে গেলেন। এইরূপ অপরাধে অন্যান্য কয়েদীর বেত দেওয়া শুরু হল। পরিশেষে তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে ছন্দলকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কথা কি সত্য ?
ছন্দল বললো, হ্যাঁ হুজুর! ঐ বিছানা ও লবণ আমার, বাকী আপনার ইচ্ছা । এই জবাবে তিনি আমাদের উভয়কেই রেহাই দিলেন। কিন্তু ছন্দলকে বললেন, তুমি মৌলবীকে বাঁচাতে চাও। আমি তোমাকে মাফ করলাম বটে, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য হুঁশিয়ার থেক ।
১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসের শেষভাগে কয়েদীদের এক বিরাট চালান মুলতান পাঠাবার আয়োজন হয়ে গেল। প্রতি দুইজন করে কয়েদীকে একটি করে হাতকড়ি লাগানো এই আয়োজনেরই একটি অঙ্গ । আমার সঙ্গীটি আমাকে এতটুকু খাতির করল, আমার বাঁ হাতের সঙ্গে ওর ডানহাত বাঁধতে দিল । আমাদের মামলার আমি, মওলানা ইয়াহহিয়া আলী ও মিয়া আবদুল গাফফার শুধু এই তিন জন মুলতান রওনা হলাম ।
মওলানা আবদুর রহিম সাহেবকে আমাদের সঙ্গে আম্বালা থেকে পাঠান হয়নি। হয়ত উদ্দেশ্য ছিল, তাঁকে সেখানেই আটক রাখা। আগেই বলেছি, আমাদের আপীল না-মঞ্জুর হবার পর দুইটি কারসাজি শুরু হয়েছিল। তার একটি আগেই বর্ণনা করেছি। দ্বিতীয়টি হল, মুজাহিদ বাহিনীকে ভারতে ফিরে আসার জন্য প্ররোচিত করা । এদেশে তাদেরকে জায়গীর প্রভৃতি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে এবং তাদের কয়েদীদেরও ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এই দ্বিতীয় কারসাজি সফল হয়নি। কারণ ঐ সকল রিক্ত ও সংসারত্যাগীর দল, যারা বৃটিশ সাম্রাজ্যকে দারুল হরব মনে করে, মহাবনের পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা কেমন করে পার্থিব সম্পদের লোভে বা আমাদের মুক্তিলাভের আশায় সংরক্ষিত ও নিরাপদ স্থান ত্যাগ করে আবার দারুল হরবেই ফিরে আসতে পারে? এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেলে আমাদের দুই বৎসর পর মওলানা আবদুর রহীম সাহেবকে আন্দামানে প্রেরণ করা হল ।
লাহোর থেকে বিদায়
লাহোর থেকে বিদায় হবার সময় আমাদের একহাতে বিছানাপত্র অন্যহাতে হাতকড়া আর সিপাইরা তাড়া দিচ্ছিল জলদি কর জলদি কর, গাড়ি এসে পড়ল । এইভাবে জেলখানা থেকে অতিকষ্টে ইষ্টিশনে এসে পৌঁছলাম। আমাদের গাড়ীতে উঠিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেয়া হল। লাহোর থেকে মুলতান পর্যন্ত কোথাও দরওয়াজা খোলা হয়নি। জীবজন্তু ও মালপত্রের মতো আমাদেরকে এমনিভাবে বোঝাই করে নিয়ে গেল । অনুমান রাত আটটার সময় মুলতান পৌঁছি এবং ওখানেও ঘাড়ের উপর বিছানা চাপিয়ে অন্ধকারে টানতে টানতে আমাদের জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হল এবং সেই ভুখা অবস্থাতেই পশুবৎ জেলে খোঁয়ারে নিয়ে আবদ্ধ করল । আমি আর মওলানা ইয়াহহিয়া আলী সাহেব এই জেলে রইলাম, কিন্তু শহর কোন দিকে, বাজার কোথায়, চোখেও দেখতে পেলাম না । দুইদিন পর আবার মুলতান থেকে পাঁচ ক্রোশ দূরে সিন্ধুনদের তীরে নিয়ে আমাদেরকে একটি গান বোটে চড়িয়ে দিল এবং তাতে সারিবদ্ধভাবে বসাল । এর পর পূর্বের বেড়ী হাতকড়ি ও ডান্ডার সঙ্গে নতুন করে লোহার আর একটি শিকল বেড়ীর মাঝখানে পরিয়ে দেয়া হল । এর ফলে কেউই নিজ নিজ

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top