সে কোন বনের হরিণ – কাসেম বিন আবুবাকার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাসেম বিন আবুবাকার
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১০৩
সে কোন বনের হরিণ – বইটির এক ঝলকঃ
হয় নি। কত নাম্বার রাজারবাগ যেন বলেছিল?
তুমি তো খুব ভুলো মেয়ে দেখছি। বললে আবার ভুলে যাবে। কাগজ কলম নাও, বলছি ।
একটু ধরুন বলে সায়মা কাগজ কলম এনে বলল, বলুন ।
……নাম্বার রায়ের বাজার ।
লিখে নিয়ে সায়মা বলল, এবার রাখি ফুফুআম্মা?
রাখ বলে রাইসা বেগম রিসিভার রেখে দিলেন। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে উম্মে কুলসুমকে আব্দুস সাত্তারের রুমের দিক থেকে দৌঁড়ে আসতে দেখে বললেন, দৌড়াচ্ছিস কেন? দাঁড়া বলে জিজ্ঞেস করলেন, তোরা কখন ফিরলি?
এই তো কিছুক্ষণ আগে ।
সায়মা নামে তোর এক বান্ধবী এক্ষুনি ফোন করেছিল। ফিরেছিস জানলে ডেকে দিতাম ।
উম্মে কুলসুম আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন ফোন করেছিল কিছু বলেছে? সায়মা যেসব কথা বলেছে, রাইসা বেগম বললেন ।
উম্মে কুলসুম তাড়াতাড়ি ছোট ভাইয়ার কাছে এসে সে কথা জানাল ।
আব্দুস সাত্তার ভেবেছিল, তাদের সম্পর্ক গভীর হওয়ার পর নিজেকে রূপার কাছে প্রকাশ করবে । আজ ফোন নাম্বার দেওয়ার সময় মনে হয়েছিল, আর বোধ হয় বেশি দিন আড়াল হয়ে থাকতে পারবে না। কিন্তু আজই ওরা জেনে যাবে ভাবে নি। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে উম্মে কুলসুম বলল, কী ভাবছ ছোট ভাইয়া? ভাবছি, ধরা যখন পড়েই গেলাম তখন আর লুকোচুরি করা ঠিক হবে না। হ্যাঁ, সেটাই ভালো । আচ্ছা ছোট ভাইয়া, রূপা আপা তোমাকে ভালবাসে কিনা বুঝতে পেরেছ?
পেরেছি, তবে কতটা ভালবাসে বুঝতে পারি নি। বলতো, রূপাকে তোর
কেমন মনে হয়?
শুধু ভালো নয়, খুব ভালো। ওঁর মতো মেয়ে দেখেছি বলে মনে হয় না। আব্বু আম্মু দেখলে পছন্দ করবেই।
আব্দুস সাত্তার ছোট একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, তা আমিও জানি। কিন্তু রূপার আব্বা কিছুতেই আমাকে পছন্দ করবেন না ।
হলে?
কেন?
সে অনেক কথা । পরে শুনিস।
উম্মে কুলসুম একটু অবাক হয়ে বলল, তুমি রূপা আপার আব্বাকে চেন তা
হ্যাঁ চিনি ।
পরে নয়, এখনই বল, আমি শুনব।
রূপার আব্বার নাম রোকন উদ্দিন। রোকন উদ্দিনের আব্বা সালাউদ্দিনের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তোর শ্বশুরবাড়ির পাশের গ্রামে বাড়ি । সালাউদ্দিনের বাস্তুভিটে ছাড়া সামান্য ফসলী জমি ও একটা আম, কাঁঠাল ও সুপারির বাগান ছিল। রোকন উদ্দিনই তাঁর একমাত্র সন্তান। তার উপর খুব ভালো ছাত্র। তাই ছেলেকে লেখাপড়া করাবার জন্য উনি ফসলী জমি ও বাগান দাদাজীর কাছে দশ বছরের জন্য সাফকগুলা দিয়ে সেই টাকায় ছেলেকে লেখাপড়া করান । সে সব আর ছাড়িয়ে নিতে পারেন নি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দাদাজী তাকে ডাকিয়ে এনে বললেন, তুমি তো টাকা ফেরত দিয়ে জমি ও বাগান ফিরিয়ে নিতে পারলে না, দলিল মোতাবেক ওগুলো এখন আমার। তখন উনি করুণ মুখে বললেন, তাতো বটেই। এখন থেকে আপনি ভোগ দখল করবেন, আমি আপত্তি করব কেন? হাইস্কুলে ভর্তির দিন থেকে রোকন উদ্দিনের সঙ্গে আব্বুর গভীর বন্ধুত্ব। দু’জনেই তখন ইন্টার পড়তেন। যখন দাদাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে ঐসব কথা বলছিলেন তখন আব্বুও সেখানে ছিলেন। তিনি জানতেন, ঐ জমির ফসল ও বাগানের আয়ে ওঁদের সংসার চলে। ওগুলো দাদাজী ভোগ দখল করলে ওঁদের সংসার কিভাবে চলবে ভেবে শিউরে উঠলেন। আব্বু সে কথা দাদাজীকে বলে বললেন, “আপনি আরো কয়েক বছর ওঁকে সময় দিন। ওঁর ছেলে লেখাপড়া শেষ করে যখন রোজগার করবে তখন টাকা শোধ করে দেবেন। অথবা দলিলটা এখনই ফেরত দিয়ে বলুন, তোমাকে টাকাটা কর্জে হাসানা দিয়েছিলাম। যখন সামর্থ হবে তখন শোধ করে দিও। আর যদি কোনো দিন সামর্থ না হয়, তা হলে শোধ করতে হবে না। আপনার সম্পত্তি আপনারই থাকবে। কর্জে হাসানা কি জিনিস, আপনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, তাই বললাম। এতে যদি আমার বেয়াদবী বা অন্যায় হয়ে থাকে মাফ করে দিন।
আব্বুর কথা শুনে দাদাজীর চোখে পানি এসে গেল। চোখ মুছে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে চুমো খেয়ে বললেন, “আল্লাহ তোকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে সামিল করুক।” তারপর সালাউদ্দিনকে দলিটা ফেরত দিয়ে বললেন, তোমার ছেলের বন্ধুর কথা তো শুনলে, ওকে দোয়া করো। আর যে টাকা তোমাকে দিয়েছি, তা কর্জে হাসানা দিয়েছি আজ থেকে মনে করবে।
সালাউদ্দিন যেন হাতে স্বর্গ পেলেন। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়ে আনন্দে তার চোখে পানি এসে গেল। তবু খুব অপমান বোধ করে মাথা নিচের দিকে করে রইলেন ।
দাদাজী তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন, তুমি যখন জমি ও বাগান সাফ কওলা দিয়ে টাকা নিতে এসেছিলে তখন কর্জে হাসানার মর্তবার কথা জানা থাকা সত্ত্বেও শয়তান সম্পত্তির লোভ মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এখন আব্দুল হামিদের কথা শুনে আল্লাহ আমার জ্ঞান ফিরিয়ে দিয়েছেন। সে জন্যে তাঁর পাক দরবারে শুকরিয়া জানাচ্ছি। কুরআন পাকে আছে, “মুমিনগণ একে অপরের ভাই” তুমি আমার মুমীন ভাই । অভাব বা বিপদের সুযোগ নিয়ে এক ভাই অন্য ভাইয়ের সম্পত্তি গ্রাস করা কোনো মুমীনের কাজ নয়। বরং অভাব বা বিপদের সময় তাকে সাহায্য করাই প্রত্যেক মুমীনের কর্তব্য। আর ভাইয়ের সাহায্য নেওয়া কোনো অপমানের কাজ নয় ।
সালাউদ্দিন আপ্লুত কণ্ঠে বললেন, আপনি আল্লাহর খাঁটি বান্দা। দোয়া করুন, “আল্লাহ যেন টাকাটা পরিশোধ করার তওফিক দেন।”
তারপর থেকে এম.এ. পাশ করা পর্যন্ত আব্বু, বন্ধু রোকন উদ্দিনকে টাকা দিয়ে অনেক সাহায্য করেছেন। এম.এ. পাশ করার পর আব্বু কলেজে শিক্ষকতা করতে ঢুকলেন; আর রোকন উদ্দিন ঢাকায় এসে ভাগ্যগুণে একটা বড় চাকরিতে ঢুকলেন। চার পাঁচ বছরের মধ্যে দাদাজীর টাকা পরিশোধ করে দেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতে উনি স্বপরিবারে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। ভারতে যাওয়ার সময় আব্বুকেও যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আব্বু যান নি। বরং পাক হানাদারদের সাহায্য করেছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কিছু করেন নি। এমন কি যদি উনি জানতে পারতেন, অমুক দিন অমুক গ্রামে পাক সৈন্যরা হামলা করবে। সঙ্গে সঙ্গে সেই গ্রামে লোক পাঠিয়ে গ্রাম ছেড়ে
লোকজনদের চলে যেতে বলেছেন ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রোকন উদ্দিন যখন দেশে ফিরলেন তখন আমাদের ও আশপাশের গ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা আব্বুকে রাজাকার বলে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। রোকন উদ্দিন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। তাঁরই হস্তক্ষেপের ফলে আব্বু বেঁচে গেলেন। কিন্তু সবাই রাজাকার বলত। সে সময় আব্বু অনেকদিন বাড়ির বাইরে কোথাও যেতেন না। শুধু কলেজে যেতেন, আর লোকজনের দ্বারা চাষ-বাসের কাজ করাতেন। একদিন রোকন উদ্দিন আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আব্বু আগেই জেনেছিলেন, ওঁর জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা তাকে কিছু বলে নি। তার দু’হাত ধরে আব্বু ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং নাস্তাপানি খাওয়াবার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু উনি একগ্লাস পানিও খান নি । দাদাজী মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার ছ’মাস আগে ইন্তেকাল করেন। দাদি বেঁচে ছিলেন। তিনি রোকন উদ্দিনকে বললেন, তোমাকে আমি আব্দুল হামিদের মতো দেখি । ওকে মাফ করে দিয়ে কিছু খাও। নচেৎ আমি দুঃখ পাব।
রোকন উদ্দিন সাহেব বললেন, আমিও আপনাকে মায়ের মতো জানি। আপনার কথায় ওকে মাফ করে দিলাম। তবে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাজাকারের বাড়িতে কিছুতেই খেতে পারব না। সেজন্য আপনার কাছে মাফ চাইছি। তারপর ফিরে আসার সময় বাইরে এসে আব্বুকে বলেছিলেন, তুমি জীবনে আর কখনও আমাকে বন্ধু ভাববে না । আমাদের বাড়িতে যেন তোমার পা না পড়ে।
সেদিন ওঁর কথায় আব্বু ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। সে সময় আমার বয়স পাঁচ আর তোর দুই কি আড়াই বছর হবে। বড় হয়ে যখন কলেজে পড়ি তখন একদিন আম্মুর মুখে এসব শুনেছিলাম। এখন তুই-ই বল, সেই রোকন উদ্দিন সাহেব কি আমাকে জামাই করবেন?
উম্মে কুলসুম একটু রেগে উঠে বলল, তুমি জেনেশুনে কেন তার মেয়ের প্রেমে পড়লে?
আব্দুস সাত্তার বলল, কেন পড়েছি বলছি শোন, প্রায় তিন বছর আগে গ্রীন সুপার মার্কেটে একদিন রূপাকে দেখে মুগ্ধ হই। তখন থেকে ওর কথা এক মুহূর্তও ভুলতে পারি নি। এর ছ’মাস পর পাবলিক লাইব্রেরীতে দেখি। সেদিন ওর সঙ্গে আমার এক ক্লাসমেটের বোন ছিল। পরে ঐ ক্লাসমেটের বোনের কাছ থেকে ওর বায়োডাটা জেনে মন খুব খারাপ হয়ে যায়। ওকে পাওয়া দুরাশা ভেবে মন থেকে ওর স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারলাম না। এভাবে আরো ছ’মাস কেটে গেল। একদিন রাতে ওর কথা মনে পড়তে কিছুতেই ঘুম আসছিল না। হঠাৎ মাথায় একটা চিন্তা খেলে গেল, কোনো রকমে যদি রূপার মন জয় করতে পারি, তা হলে বিয়ের মাধ্যমে হয়তো আব্বুর সঙ্গে ওর আব্বার সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে, তা আবার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। পরের দিন ঐ ক্লাসমেটের বোনের মাধ্যমে রূপাদের ফোন নাম্বার জেনে আজ দেড় বছর ওর সঙ্গে ফোনে আলাপ করছি। আলাপ করে ওর মন জয় করতে পেরেছি বলে মনে হয়। কিন্তু কতটা পেরেছি তা জানি না ।
কিন্তু উনি যখন তোমার আসল পরিচয় জানতে পারবেন তখন তো তোমাকে ঘৃণা করবেন ।
তা করতে পারে, আবার নাও পারে। আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত শত্রুর ছেলে মেয়ের মধ্যে অনেক প্রেমের ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে যেমন শত্রুতা আরো বেড়েছে, তেমনি শত্রুতার অবসানও হয়েছে।
তোমার ক্ষেত্রে যদি প্রথমটা হয়?
তা হতে পারে। তবে চেষ্টা করতে দোষ কি? তকদিরে থাকলে সাকসেসফুল হতে পারি। আব্বুর কাছ থেকে বাধা এলেও আম্মুকে দিয়ে তাকে ম্যানেজ করতে পারব। কিন্তু রূপার আব্বা পাহাড়ের মতো বাধা হয়ে দাঁড়াবেন ।
ওটাতো গার্জেনদের ব্যাপার; রূপা আপা যদি তোমাকে ঘৃণা করে, তা হলে কী
করবে ভেবেছ?
আব্দুস সাত্তার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, ভাবি নি যে, তা নয় । তাই তো তাকে পরিচয় ও দেখা না দিয়ে প্রেমের বীজ বপন করেছি এবং চারাও যে গজিয়েছে তাও বুঝতে পেরেছি। কিন্তু সেই চারা এতদিনে কত বড় হয়েছে, তা না জানা পর্যন্ত দেখা দিলেও আসল পরিচয় দেব না ভেবেছি।
একটা মহৎ উদ্দেশ্যের কথা বললে বলে বাধা দিলাম না। নচেৎ শুধু রূপের মোহে যদি তুমি তাকে ভালবাসতে, তা হলে নিশ্চয় কঠিন বাধা দিতাম। কারণ আমার ধারণা, রূপা আপা তোমাকে যতই ভালবাসুক না কেন, তিনি যখন জানবেন, তুমি রাজাকারের ছেলে এবং সেই কারণে তার ও আমাদের আব্বুর সঙ্গে শত্রুতা তখন তোমাকে ঘৃণা করবেই। তাই তোমার জন্য আমার খুব ভয় হয় । বড় ভাইয়াকে আল্লাহ দুনিয়া থেকে তুলে নিয়েছেন। এখন তুমিই আমাদের একমাত্র ভাই, রূপা আপার কারণে তোমার কিছু হলে আম্মু, আব্বু, আমরা কেউ-ই সহ্য করতে পারব না। আমি মনে করি, সে রকম পরিস্থিতি আসার আগেই রূপা আপাকে তোমার পরিচয় দেওয়া উচিত।
আব্দুস সাত্তার বলল, ঠিক আছে, তুই এখন যা। ভেবে দেখি কী করা যায় ।
আব্দুস সাত্তারের ফুফুর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর সায়মা চিন্তা করল, এখন আপুকে বললে কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। তার চেয়ে কাল সকালে তাকে নিয়ে ওদের বাসায় গিয়ে চাক্ষুস প্রমাণ দেখাবে।
সন্ধ্যের পর থেকে সায়মার মাথা ব্যথা করছিল। তাই দশটায় খাওয়ার পর একটা প্যারাসিটামল খেয়ে শুয়ে পড়ল। রূপা আজ বান্ধবী আসমার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। তার রুমের টেবিলে নসিম হেযাজীর “কায়সার ও কিসরা” নামে একটা বেশ বড় বই দেখে কয়েক পাতা উল্টে বুঝতে পারল, ঐতিহাসিক উপন্যাস । এই ধরণের বই পড়তে তার খুব ভালো লাগে । ফেরার সময় আসমার কাছ থেকে বইটা এনেছিল। সন্ধ্যে থেকে প্রায় অর্ধেক পড়ে ফেলেছে। খেয়ে এসে সায়মাকে ঘুমাতে দেখে কিছু বলল না । আগেই তার মাথা ব্যথার কথা শুনেছে। টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে বইটা নিয়ে বসল।
ইসলামকে দুনিয়া থেকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য খৃষ্টান, ইয়াহুদী ও নজুসীদের রাজ্য জয়ের লোভ, যুদ্ধের হানাহানি ও তিন চার জোড়া নায়ক-নায়িকা নিয়ে সুখ-শান্তি, দুঃখ-বেদনা ও বিরহ-মিলনের অদ্ভুত কাহিনী। একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত পড়া ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা কারো হবে না ।
রূপা পড়ার মধ্যে ডুবে গিয়ে সময়ের জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। ফোন বেজে উঠতে চমকে উঠে ঘড়ি দেখল, সাড়ে বারটা। সঙ্গে সঙ্গে হার্টবিট বেড়ে গেল। সামলাবার জন্য কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করল। তারপর রিসিভার তুলে সালাম দিল।
সালামের উত্তর দিয়ে আব্দুস সাত্তার খুব নরম সুরে বলল, সেদিন আর কখনও বিরক্ত করব না বলা সত্ত্বেও করলাম। সেজন্য ক্ষমা চাইছি।
রূপা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
বুঝতে পারছি, আপনি আমার উপর খুব রেগে আছেন; কিন্তু কী করব বলুন, আপনার সঙ্গে কথা না বললে আজও সারা রাত জেগে কাটাতে হত । গত সাত আট দিন একফোটা ঘুমাতে পারি নি। প্লীজ, কথা বলুন ।
আপনি যে ফ্রড নন, প্রমাণ করতে পারবেন? ইনশাআল্লাহ পারব। কী প্রমাণ চান বলুন।
কাল আপনার মুখোমুখি হতে চাই ।
আব্দুস সাত্তার বুঝতে পারল, সায়মা ঘটনাটা তাকে এখনও বলে নি। বলল,
বেশ তো কোথায় কখন হতে চান বলুন ।
সকাল আটটায় টি.এস.সির মোড়ে থাকবেন, আমি আসব ।
ঠিক আছে, থাকব ।
আপনাকে চিনব কী করে?
আপনাকে চিনতে হবে না, আমিই এগিয়ে এসে কথা বলব। এবার একটা
কথা বলব, কিছু মাইন্ড করবেন না বলুন?
মাইন্ড করার মতো কথা বললে, মাইন্ড করাই তো স্বাভাবিক।
না, মানে বলছিলাম কী, আপনি একা আসবেন ।
ও এই কথা? আপনি না বললেও আমি একাই আসতাম ।
এখনও জেগে ছিলেন মনে হচ্ছে?
হ্যাঁ, একটা বই পড়ছিলাম ।
কী বই?
নসিম হেযাজীর ‘কায়সার ও কিসরা।
আমি নসিম হেযাজীর সব বই পড়েছি। ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়তে আমার খুব ভালো লাগে । আপনি কী ওঁর সব বই পড়েছেন?
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!