সে আসে ধীরে – হুমায়ূন আহমেদ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ হুমায়ূন আহমেদ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮৩
সে আসে ধীরে – বইটির এক ঝলকঃ
মাজেদা খালা দরজা খুলে কিছুক্ষণ অপলকে তাকিয়ে থাকলেন। ভাবটা এরকম যে আমাকে চিনতে পারছেন না। যেন আমি মানুষ না, অন্য গ্রহের কোনো প্রাণী। ফ্লাইং সসারে করে এসেছি। যান্ত্রিক গণ্ডগোলে ফ্লাইং সসার স্টার্ট নিচ্ছে না। আমি ফ্লাইং সসার লুকিয়ে রেখে এই বাড়িতে এসেছি খাদ্যের সন্ধানে। সপ্তাহখানিকের খাবার-দাবার নিয়ে উড়ে চলে যাব।
আমি বললাম, খালাজি সুপ্রভাত।
খালা বললেন, সুপ্রভাত মানে ? তুই কী চাস ? কী জন্যে এসেছিস ? চাঁদমুখ দেখাতে এসেছিস ? তোর চাঁদমুখ কে দেখতে চায় ?
আমি বললাম, রেগে আছ কেন খালা ?
রেগে থাকব না তো কী করব? তোকে কোলে করে নাচানাচি করব? আয়, কোলে আয়।
খালা সত্যি সত্যি দু’হাত বাড়ালেন। তার মানে খালার রাগ এখন তুঙ্গস্পর্শী। তুঙ্গস্পর্শী রাগের বড় সুবিধা হচ্ছে— এই রাগ ঝট করে নেমে যায়। রাগ নামানোর জন্যে তেমন কিছু করতে হয় না। আপনা আপনি নামে। সাধারণ পর্যায়ের রাগ নামতে সময় লাগে। রাগ নামানোর জন্যে কাঠ-খড়ও পোড়াতে হয়। আমি খালার রাগ নামার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হচ্ছে না । খালার মুখ দেখে মনে হচ্ছে রাগ নামি নামি করছে।
খালা বললেন, তুই নিজেকে কী ভাবিস ? খোলাসা করে বল তো শুনি ? এক সপ্তাহ হয়েছে আসমা এসেছে। রোজ তোর খোঁজ করছে। আমি দু’বেলা তোর কাছে লোক পাঠাচ্ছি আর তুই হাওয়া হয়ে গেলি ? কোথায় ছিলি ?
আমি মিনমিন করে বললাম, আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন এক মহিলার কাছে গিয়েছিলাম ।
কী সম্পন্ন মহিলা ?
আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন। সাইকিক । ইনি যে-কোনো মানুষের ভূতভবিষ্যৎ বর্তমান দেখতে পারেন। সময়ের কঠিন বন্ধন থেকে উনি মুক্ত। উনার নাম
তারাবিবি। ইংরেজিতে Star Lady
একটা থাপ্পড় যে তুই আমার কাছে খাবি!
থাপ্পড় দিতে চাইলে দাও। তবে তারাবিবির কাছে একবার তোমাকে নিয়ে যাব। উনি আবার গাছ-গাছড়ার ওষুধও দেন। কয়েকটা গাছের ছাল বাকল হামানদিস্তায় পিষে দেবেন। যাওয়ার পরে দেখবে ওজন কমতে শুরু করেছে।। দৈনিক এক কেজি করে যদি কমে তাহলে চারমাসের পর তুমি মোটামুটি একটা শেপে চলে আসবে। রিকশায় উঠতে পারবে। চাকার পাম্প চলে যাবে না। আমাকে নিয়ে তোর এত দুশ্চিন্তা এটা তো জানতাম না ?
আমি সোফায় বসলাম। খালার তুঙ্গস্পর্শী রাগ এখন সমতল ভূমিতে নেমেছে। তবে তিনি প্রাণপণে রাগ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তেমন লাভ হচ্ছে না। তারাবিবির বিষয়ে কৌতূহলে তাঁর চোখ চকচক করছে।
ডাকে।
মহিলার নাম কী বললি ?
তারাবিবি। The great star lady । তবে আশেপাশের সবাই তাকে মামা
মামা ডাকে মানে! একজন মহিলাকে মামা ডাকবে কেন ?
সিস্টেম এরকম দাঁড়িয়ে গেছে। উনি যে লেভেলে চলে গেছেন সেই লেভেলে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। উনার নিজের ছেলেমেয়েরাও উনাকে মামা ডাকে। তার স্বামী বেচারাও মামা ডাকে ।
আবার তুই আমার সঙ্গে ফাজলামি করছিস ?
বিশ্বাস কর খালা, কোনো ফাজলামি না ।
উনার কি সত্যি সত্যি ক্ষমতা আছে ?
অবশ্যই আছে। ক্ষমতা না থাকলে নিজের স্বামী তাকে কোন দুঃখে মামা ডাকবে ? জগতের কোনো স্ত্রী কি সহ্য করবে— স্বামী তাকে সিরিয়াসলি মামা বলে ডাকছে? তুমি সহ্য করতে ? দৃশ্যটা কল্পনা কর, খালু সাহেব তোমাকে ‘ওগো’ না বলে গম্ভীর গলায় ‘মামা’ ডাকছেন।
‘ওগো’ সে আমাকে কখনো ডাকে না ।
কী ডাকে ?
কিছুই ডাকে না। হুঁ-হাঁ দিয়ে সারে। এখন তো ডাকাডাকি পুরোপুরি বন্ধ। গলা দিয়ে শব্দই বের হচ্ছে না।
গলা এখনো ঠিক হয় নি?
না ।
চিকিৎসা চলছে না ?
চলছে, তবে দেশী চিকিৎসার উপর থেকে আমার মন উঠে গেছে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? মাদ্রাজ ?
না জেনে কথা বলিস কেন তুই। মাদ্রাজে হয় চোখের চিকিৎসা। নেত্র হসপিটাল। আমি তোর খালুকে নিয়ে যাচ্ছি বোম্বেতে।
কথা না বলা রোগের চিকিৎসা কি বম্বেতে ভালো হয় ?
তুই চুপ করে থাক। তোর সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া যন্ত্রণার মতো। আমি বললাম, খালু সাহেব কথা বলতে পারছেন না— এটা তো তোমার জন্যে ভালোই হলো । উনার কথা শুনলেই তো তোমার রাগ উঠে যেত। এখন নিশ্চয়ই নিমেষে নিমেষে রাগ উঠছে না ?
খালা বললেন, খামাকা বকর বকর না করে তুই চুপ করবি ?
আচ্ছা চুপ করলাম ।
সকালে নাশতা খেয়েছিস ?
না ।
এগারোটা বাজে, এখনো নাশতা খাস নি? আলসার ফালসার বাঁধিয়ে একটা কাণ্ড না হওয়া পর্যন্ত ভালো লাগে না ? কী খাবি ?
গোশত পরোটা। ডাবল ডিমের ওমলেট, সবজি। সবশেষে সিজনাল ফ্রুটস ।
মাজেদা খালা ভয়ঙ্কর মুখ করে বললেন— তুই ভেবেছিস কী? আমার বাড়িটা ফাইভ স্টার হোটেল ? গড়গড় করে মেন্যু দিয়ে দিলি— টেবিলে নাশতা চলে এলো।
আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললাম, তাহলে এক কাজ কর— গত রাতের ফ্রিজে রেখে দেয়া ঠাণ্ডা কড়কড়া ভাত দাও। বাসি তরকারির ঝোল-টোল থাকলে দাও। বাসি তরকারি মাখা কড়কড়া ভাত। খেতে খারাপ হবে না।
খালা কঠিন গলায় বললেন, চুপ করে বসে থাক। আমি নাশতা নিয়ে আসছি। একটু সময় লাগবে। খবরের কাগজ পড়। কিংবা তোর খালুর সামনে বসে থাক । সে কথা বলতে পারে না। কিন্তু অন্যরা কথা বললে খুশি হয় । মাঝে মাঝে টুকটাক জবাব দেয়।
কীভাবে জবাব দেন ? ইশারায় ?
না । ঘরে একটা বোর্ড লাগিয়েছি। চক আছে। বোর্ডে চক দিয়ে লেখে। আমার কথা শুনলে খুশি হবেন বলে তো মনে হয় না। আমার ছায়া দেখলেই উনি রেগে যান।
ভদ্রভাবে কথা বলবি। চেটাং চেটাং করবি না। তাহলে রাগবে না। উনার কথা বলা বন্ধ হলো কীভাবে ?
নাশতার টেবিলে বসেছে। আমি একটা ডিম পোচ করে সামনে রেখেছি। ডিম পোচটার দিকে তাকিয়ে বলল- আচ্ছা ডিম… বাকিটা বলতে পারল না। কথা গলায় আটকে গেল।
আমি খালু সাহেবকে দেখতে গেলাম ।
খালু সাহেবের বয়স মনে হচ্ছে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। খাটের উপর জবুথবু বৃদ্ধ টাইপ একজন বসে আছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, উনার চেহারা আগে যেমন ছিল এখনো তেমনি আছে। আধাপাকা চুল। চিমশে ধরনের মুখ। কপালের চামড়ায় নতুন কোনো ভাঁজ পড়ে নি। তাহলে লোকটাকে হঠাৎ এতটা বুড়ো লাগছে কেন ? আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম, খালু সাহেব, ভালো আছেন ? তিনি বৃদ্ধদের শুকনা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন।
কিছু কিছু মানুষকে রাগিয়ে দিতে ভালো লাগে। খালু সাহেব সেই কিছু কিছুদের একজন। তাঁকে রাগিয়ে দেবার জন্যেই আমি তাঁর দিকে দু’পা এগিয়ে গেলাম । আমার লক্ষ্য তাঁর পাশে খাটে গিয়ে বসা । তিনি সে সুযোগ দিলেন না। মাছি তাড়াবার মতো ভঙ্গি করে আমাকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলেন। আমি যেহেতু মাছি না, সরে গেলাম না। বরং খুঁটি গেড়ে বসার মতো করে তাঁর পাশে বসলাম। তিনি ভেতরে ভেতরে কিড়মিড় করে উঠলেন। আমি মধুর গলায় বললাম, খালু সাহেব, আমি শুনেছি আপনার সাউন্ড বক্স অফ হয়ে গেছে। খুবই দুঃসংবাদ। আপনি সর্বশেষ যে কথা খালার সঙ্গে বলেছিলেন সেটা নিয়ে গবেষণার মতো করছি। আপনি বলেছিলেন, আচ্ছা ডিম…। সেনটেন্স শেষ করেন নি। বাকিটা কী ?
খালু সাহেব ঘোঁৎ করে উঠলেন। সেই ঘোঁৎ ভয়াবহ। সাউন্ড বক্স অফ হয়ে গেলেও ঘোঁৎ-ঘাঁৎ শব্দ ঠিকই হচ্ছে। আমি বললাম, শেষ বাক্যটা কী— ‘আচ্ছা ডিম পোচ কেন দিলে ? অমলেট চেয়েছিলাম।’ না-কি অন্য কিছু ?
খালু সাহেব এখন আমার দিকে অপলকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর চোখে আগুন খেলা করছে। আমি বললাম, আপনি মোটেই দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে আমার পরিচিত একজন আধ্যাত্মিক মহিলার কাছে নিয়ে যাব। তিনি সব ঠিক করে দেবেন। ইনশাল্লাহ আপনি আবার ফুল ভলিউমে কথা বলতে
পারবেন ।
তিনি আবার হাত ইশারা করে আমাকে উঠে যেতে বললেন। আমি ইশারা না বোঝার ভান করে কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম।
মহিলার নাম তারাবিবি, তবে সবাই তাকে মামা ডাকে। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো মামা মামা বলে পায়ে পড়ে যেতে হবে। মুখ দিয়ে শব্দ বের হবে না। তারপরও তারাবিবি বুঝে নেবেন। অত্যন্ত ক্ষমতাধর মহিলা।
খালু সাহেব ঘোঁ খোঁ জাতীয় শব্দ করলেন। আমি এই বিকট শব্দে সামান্য বিচলিত হলাম । সাউন্ড বক্স যে এতটা খারাপ হয়েছে তা বোঝা যায় নি। আমি বললাম, একটা দিন-তারিখ ঠিক করে আমাকে জানান, আমি আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে রাখব। আপনার সমস্যা কী তা আগে থেকে জানিয়ে রাখলে সময় কম লাগবে ।
খালু সাহেব তড়াক করে খাট থেকে নেমে অতি দ্রুত জানালার দিকে এগিয়ে গেলেন । যেভাবে এগুলেন তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তিনি জানালা দিয়ে লাফিয়ে দোতলা থেকে নেমে পড়তে চাইছেন। বাস্তবে দেখা গেল, জানালার পাশে লেখার বোর্ড ঝুলানো। বোর্ডের উপর ডাক্টার আছে। লাল-নীল মার্কার আছে। তিনি বড় বড় করে লিখলেন—
GET OUT
আমি বললাম, খালু সাহেব আপনি রাগ করছেন কেন ? আপনি অসুস্থ মানুষ হঠাৎ রেগে গেলে আরো খারাপ হতে পারে।
খালু সাহেব আবার লিখলেন—
I am saying for the last time
Get Out
আমি বললাম, ঠিক আছে এখন চলে যাচ্ছি কিন্তু যে-কোনো একদিন এসে আপনাকে তারা মামার কাছে নিয়ে যাব। উনি খুবই পাওয়ারফুল স্পিরিচুয়েল লেডি সাউন্ড বক্স ঠিক করা উনার কাছে কোনো ব্যাপারই না।
খালু সাহেব এবার লাল কালি দিয়ে বড় বড় করে লিখলেন—
SHUT UP
আমি ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। আর থাকা ঠিক হবে না। খালু সাহেব যে-কোনো মুহূর্তে ডাস্টার ছুড়ে মারতে পারেন। ডাক্টারটা তিনি একবার ডান
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!