রক্তাক্ত ভারত – নসীম হেজাযী – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ ফজলুদ্দীন শিবলী
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩৪৬
রক্তাক্ত ভারত – বইটির এক ঝলকঃ
সলীম আচমকা ওঠে বসে বসল- না, নানীজান। ঘোড়ার কোন কসুর নেই। ও ভড়কে গিয়েছিল।
রহমত আলী বললেন – আরে বেটা, তুমি মহিলাদের কথামত ঘোড়ায় না চড়তে পারলে গুটির গলায় রশি লাগিয়ে হালের গরু বানাও ।
ইতোমধ্যে রমজানের বিবি এসে বললেন– হায় খোদা! একি হোল। জালালের বাপ বলেছেন, ওর বায়ুর হাড় বিলকুল ভেঙ্গে গেছে।
একথা শোনা মাত্রই দাদীজান মাথায় হাত তুললেন। প্রতিবেশী অনেক মহিলাই ওদের মহলে গিজগিজ করছে।
ইসমাঈল ফাল্গু পালোয়ানকে নিয়ে এলেন। সাথে চৌধুরী রমজানও। তিনি বোঝাতে চেষ্টা করছেন, ওর বয়ুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। শহরের পঙ্গু হাসপাতালেই কেবল এর চিকিৎসা সম্ভব। সলীমের দাদীর কানে এসব কথা গরম সীসার মত মনে হচ্ছে। তিনি ওর প্রতি সর্বাপেক্ষা সহানুভুতিশীল।
ফাল্গু পালোয়ান সর্বপ্রথম ওর আহত স্থান টিপে, নাড়িয়ে চাড়িয়ে ব্যথার কোকড়াতে বাধ্য করলেন। সলীম দেয় চিৎকার। অতঃপর গরম তেল দেয়া হয় মালিশ করে। বাধা হয় তুলোর পট্টি।
চৌধুরী রহমত আলী বলেন — কি ফাল্গু। আশঙ্কার কিছু নেই তো?
ফাল্গু সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলল – না চৌধুরীজী। জোড়া মচকে গেছে। অল্প দিনেই ভালো হয়ে যাবে। সকাল নাগাদ আরেকবার আসব। কিছুদিন ওকে শয্যাশায়ী থাকতে হবে । নয়তো জোড়া আবার এদিক-ওদিক হয়ে যাবে ।
রাতের বেলা সলীম জানল, দাদী হুকুম করেছেন ওর ঘোড়াকে যেন দানা-পানি না দেয়া হয়। মা খানা নিয়ে এলে ও তেতে ওঠে। মুচকি হেসে তিনি কানে কানে বলেন—— আমি তোমার ঘোড়ার দানা-পানির ব্যবস্থাদি করে তবেই এসেছি।
সলীম বলল – আম্মী। দাদী বলেছেন, ঘোড়াকে হাবেলীর বাইরে বের হতে দেবেন না। সান্ত্বনার প্রতীক মা বলেন — – না, বেটা! তোমার বায়ু চাঙ্গা হয়ে গেলে দেখবে তার গোস্বা পানি হয়ে গেছে।
পীর বেলায়েত শাহের প্রভাব ওই এলাকায় ছিল রমরমা। নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব তার খান্দানের একচ্ছত্র অধিকার। এটা চলে আসছিল আবহমান কাল ধরেই। ফসল ক্ষেত, ফলদার বাগান ও বিনোদনের উদ্যান— কোনটার অভাব তাঁর। জনগণ তাঁর ভয়ে থাকত ত্রস্ত। ছিল পারিবারিক কবরস্থান। মর্মর পাথরে বাঁধানো তা। তাঁর প্রপিতামহের মাজার পাঁচ মাইল দূর থেকে দেখা যেত।
পীর বেলায়েত শাহ চার চারবার ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ফেল করেছেন। এতদসত্ত্বেও বাবার অকাল মৃত্যুতে গদ্দীনশীন পীর হতে যাননি। কাজেই জ্ঞান চর্চার সমুদ্রে আরো ক’বছর ডুবে থাকলেন। এবার মুরীদদের পুলসিরাত পার করার যিম্মাদারী তাঁর কছে। তিনি পূর্ণোদ্যমে পীরগিরি চালাতে লাগলেন। আদম সন্তানদের আসমানী ও পার্থিব গযব থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি তাবিজ দিতেন। অবসরের তিক্ত মুহূর্তগুলোকে দিলকাশ করতে দাবার ছকে ঘুটি চালতেন ভাংয়ের পেয়ালায়ও মাঝেমধ্যে লাগাতেন দু’এক চুমুক। ঘটকালিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বিয়ে দিতেন, কাজী সাজতেন । আবার তালাকের বেলায়ও থাকতেন সর্বেসর্বা। এক কথায় নামীদামী এক অলরাউন্ডার।
তার কাছে ছিল গোটাআটেক ঘোড়া। পাঁচ-ছ’টা খচ্চর। পনের-বিশটা কুত্তা। বছরে একবার রাজকীয় বেশে দূরে কোথাও যেতেন। ত্রিশ-চল্লিশ জন পদব্রজী ও সওয়ার থাকত আশেপাশে যারা একান্তই তার চেলা-চামুণ্ডা। মুরীদের ভিড়ে এতই ঠাসা থাকত যে, এক এক জনপদের মুরীদদের যিয়াফতে লেগে যেত দিনের পর দিন। ওই বার্ষিক কাফেলার প্রথম দলটি এক এক জনপদে গিয়ে ঘোষণা করত- আজ পীরবাবা তোমাদের এখানে তশরীফ ফরমাবেন।
পীর বাবার খাদ্য-খোরাকের খরচ তেমন একটা কুলসুমের মেজবানী না হলেও যে মুরীদদের অঞ্চলে ঠাঁই নিতেন, তাদের দেউলিয়া বানিয়ে ছাড়তেন। তাদের লকলকিয়ে ওঠা গম ক্ষেত পীর বাবার ঘোড়ার মুখে নজরানাস্বরূপ যেত। আর বাগ-বাগিচার ফল চেলাদের রাক্ষুসে উদরের ইন্ধন হত। বিদায় বেলায় তিনি নজরানা উসুল করতেন। চেলারা মুরীদদের বাড়তি পোষাক ও ক্রোকারিজ তুলে আনত ।
পীর সাহেব অপর কোন জনপদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে এ মুরীদরা টিলায় উঠে আসমানের দিকে তাকিয়ে বলত — খোদা! টর্নেডো আসে আসুক। ঝড়-বাদলেও ভয় নেই । ভূমিকম্প হলেও ক্ষতি নেই; কিন্তু এ পীর যেন আবার না আসে।
বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার বিদ্যা-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকজনকে পীর বেলায়েত সাহেব ব্যাপারটি ভাবিয়ে তুলছিল। এ ভাবাভাবির কারণ, পীর সাহেব জনৈকা যুবতীকে মাস্তানদের থেকে রক্ষা করে খোদ নিজেই তার তক্ষক সেজে বসেন। এতদসত্ত্বেও জনপদের বিশাল একটা সমর্থক তার অন্ধভক্ত। ডাং ও তাড়ি পানকারীরা তাকে নেতা বলেই মনে করত। এলাকায় এদের ব্যাপারে একটা জনশ্রুতি ছিল যে, পীরের যবানে খোদা তা’আলা এমন অলৌকিক শক্তি দিয়েছেন যে, যাকে তিনি বদদোয়া করবেন তার গৰাদিপশু মারা যাবে। মহিলারা হয়ে পড়বে বিধবা। বাচ্চারা আক্রান্ত হবে নানা মহামারীতে। এছাড়া লোকেরা বেলায়েত সাহেবকে জ্বিন-ভূত ও ডাইনীদের সাথে কথা বলতে দেখেছে। বিরল প্রজাতির এ পীর সাধারণত খোদার সৃষ্টিকূলে দেখা যায় না । মানুষ তার কথার নাচে। একটা জিন ফলমূল দিয়ে যায়। আরেক জনে বিছায় বিছানা । একজনে ম্যাসেজ করে শরীর ।
যখন বেলায়েত শাহের আলালী তবিয়তে জোশ মারে তখন তিনি জনৈক জ্বিনকে হুকুম করেন— অমুকের গলারুদ্ধ করে এসো। সে কোন ধরনের চিন্তা না করেই হুকুম পালন করে। তাঁর এ গাঁজাখোরী তেলেসমাতি অশিক্ষার আবর্তে নিমজ্জিত জনপদেই জমজমাট। পুরুষদের চেয়ে নারীরাই তাঁর ভক্ত বেশী। বেলায়েত সাহেবের কাছে ভাবী – কবজের জন্য নারীদের আনাগোনা বেশী। আর এটা স্বদেশের নারীদেরই দরকার অধিক। অসুস্থ বাচ্চাদের ঝাড়ফুঁক ও প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁর দরবারের জুড়ি নেই।
সলীমদের জনপদের বেশ কিছু লোক ওই পীরের মুরীদ। চৌধুরী রমজান আলী এই পীরের জন্য উৎসর্গপ্রাণ। তার এ ভক্তি এমনিই হয়নি। তিনি জ্বিন ভূত ও প্রেতাত্মাদের ভয় করতেন। এ ভয় দূর করার জন্য পীর বাবা তাকে তাবীয দেন। তাছাড়া পুলিশ দেখলেও তার হা-পিত্যেশ উঠত। তার ঘর থেকে পুলিশ দূরে রাখার জন্যও ভাবী দেয়া হয়। গলায় এ দু’ভাবি বেঁধে তিনি চলতেন। চৌধুরী সাহেবের পীড়াপীড়িতে পীরবাবা একবার এ জনপদে এলেন। অবশ্য কসম খেয়ে বলে গেলেন – আর কোনদিনও এখানে আসবেন না। কেননা সে সময় সলীমের বাবা চৌধুরী আলী আর ছুটিতে বাড়ী এসেছিলেন। বেলায়েত শাহ জানতেন না, জনপদে আলী আকবরের সাথে তার সাক্ষাত্ ঘটবে। জানলে আসতেন না। আলী আকবর বিরল প্রজাতির এ. পীরকে শিক্ষা জীবন থেকে পালায় হাড়ে হাড়ে চিনতেন। তিনি একে দেখেই বললেন – আরে বেলায়েত যে! আমার তো ধারণা তুমি এখনও স্কুলে পড়। বল, এ বছর কতটা বিয়ে করেছ?
বাল্যসাথীর মুখ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে এই প্রথম বিষোদগার। আলী আকবর এরপর স্কুলের নানা কথা বলেন। লোকেরা হাসতে থাকে। মুরীদরা তা দেখে রাগে অগ্নিশর্মা। রমজান আলীর জড়সড় ডাব দেখে ইসমাঈল বললেন – যারা পীর সাহেবকে ফলমূল ও মিঠাই খাইয়ে মোটা-তাগড়া করেছে তারা এবার তাদের ঘোড়ার কোমর বাঁকানোর চিন্তা করুক। খোদার ফজলে উনি এখনও জোয়ান কিন্তু খোদার দরবারে পৌঁছতে পৌঁছতে ওজন বোধ করি আরো দেড় দু’মণ বাড়বে। ভয় লাগে, উনি কি করে পুলসিরাত পার হবেন। তার বোঝা ওঠাতে তো বিশাল ক’টি মাল গাড়ীর দরকার হবে।
বেলায়েত শাহের দিমাগে ডাং-এর আছর না থাকলে হয়ত জালালী তবিয়তে জোশ মেরে উঠত। চৌধুরী রমজান কিন্তু ধৈর্যের পিরামিড। তিনি বললেন- ইসমাঈল। তহশীলদার না হয় পীরের বাল্যসাথী ও পরশ্রীকাতর, কিন্তু তোমার মুখে এসব কথা মানায় না। বুযুর্গদের মুখ থেকে বদদোয়া বেরোলে কবুল হতে দেরী হয় না।
ইতোমধ্যে চৌধুরী রহমত আলী রমজানের আঙ্গিনায় প্রবেশ করলেন। বললেন– ইসমাইল। তুমি বড্ড বে-শরম। যার তার শানে ঠাট্টা-তামাশা শুরু করে দাও।
আলী আকবর বললেন— আব্বা হুজুর। ইসমাইল তো খারাপ কিছু বলছে না।” পীরজী সত্যিই বিশাল মোটা। তাঁকে মেদ কমাতে হবে।
রহমত আলীর এ তথাকথিত পীরের প্রতি তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। অবশ্য বুযুর্গদের প্রতি তিনি সর্বদাই শ্রদ্ধাশীল। তাই তিনি চাইতেন না পীর চাই সে যত নচ্ছারই হোক না কেন তাঁর খান্দানের ছেলেদের বদদোয়া করুক। ছেলেদের ধমকি দিয়ে বের করে দিলেন। পীরজীকে বললেন — শাহ সাহেব। রাগ করবেন না। আমার মন্তরে আপনার মত বুযুর্গদের প্রতি ভক্তি আছে। শাহ সাহেব গোস্বা প্রকাশ করলেন না। অবশ্য মনে স্থিরপ্রতিজ্ঞ হলেন— এমন জনপদের ছায়া ভুলেও আর কোনদিন মাড়াবেন না। কিছুদিনের মধ্যে রহমত আলীর দু’টি হালের বলদ চুরি হয়ে গেল। রমজান বললেন, এটা পীরের বদদোয়ার পরিণাম । ঠিক এর দিনদুয়েক পর বলদ দু’টি পাওয়া গেল। রমজান আলী জনপদে প্রচার করলেন, পীর সাহেব রহমত আলীর ছেলেদের মাফ করে দিয়েছেন।
বেলায়েত শাহের নিয়ম ছিল, একবার এক জনপদে এলে দ্বিতীয়বার ওখানে আসতেন না। কিন্তু ক’বছরের মধ্যে এমন এক বিরল ঘটনা ঘটল — যদ্দরুন তাঁকে তশরীফ নিতেই হল। যেদিন সলীম ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ল এর ঠিক দিনতিনেক পর জনপদবাসী এক নয়া পরিস্থিতির সম্মুখীন হল। চৌধুরী রমজান জীবনের এক নাযুক মুহূর্তে পতিত হলেন। অন্য সময় জনপদবাসী তার পেরেশানিতে হাসত।
কিন্তু এবার তারা চিন্তায় কপালে ভাঁজ ফেলল। ঘটনাটি হল, চৌধুরী রমজান তার কিছু গম কুঠির ছাদে রোদে দিয়েছিলেন। তাই কুঠি সংলগ্ন হচ্ছে, লছমন সিং-এর কুঠি । লছমন সিং-এর বাউন্ডারী সংলগ্ন সর্ষে ক্ষেত। সর্ষে ক্ষেত বর্ষা মওসুমে একটু দেবে যেত। সর্যের ওপর বসে লছমন সিং নানা কাজ-কর্ম করত। বর্ষা মওসুমে ক্ষেতে পানি ওঠলে তিনি গবাদিপশুর ঘাস লাগাতেন। গ্রীষ্মকালের গরমে চৌধুরী রমজান তার ওখানটায় এসে গপ্-শপ্ মারতেন। গ্রামের কারো খাঁটি সর্যে দরকার হলে তারা ওখান থেকে সংগ্রহ করতেন। তাই তিনি কখনও ভুলেও রমজান আলীর চেয়ে সর্ষের স্তুপ কম উঁচু করতেন না ।
যেদিন রমজান আলীর কুঠিতে গম ওঠানো হয় ওদিন থেকেই লছমন সিং বকরীর গলে দড়ি লাগান। কিন্তু তার মহিষগুলো দড়ি ছিঁড়ে ফেলে; কিন্তু খোদার কিলান, মহিষগুলো ওই সমস্তূপের ওপর ভর করে রমজানের কুঠির ছাদে ওঠে।
চৌধুরী কুঠিতে বসে রুটি চিবাচ্ছিলেন। আচমকা তার কানে ‘খড় বড়’ আওয়াজ আসে। ছাদের মাটি খুলে পড়ে। হঠাৎ ছাদ থেকে দু’টি লোমশ কালো পা বেরিয়ে আসে। পা দু’টি মহিষের।
মিরা-বিবি বিস্ময়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। বাইরে জালাল ও ওর বোন চিল্লিয়ে আকাশ মাথায় তোলে – মা। মা ! লছমন সিং-এর মহিষ কুঠিতে চড়েছে।
রমজান আলী যিনি কোন ভয়াবহ পরিস্থিতির কল্পনা করছিলেন কাঁপতে কাঁপতে বাইরে এলেন। মুহূর্তেই কাঠের সিঁড়ি টপকে ওপরে ওঠলেন। লছমনের মহিষের গলা ছাদে আটকে গেলে। সামনের দু’পা ছাদ ফুটো হয়ে ঢুকে গেছে। পেছনের দু’পা তখনও সর্ষেরস্তূপে। অসহায় বিস্ময়ের এ দৃশ্য ছাদের নাযুকতার সাক্ষ্য বহন করছিল।
চৌধুরী কিছু সময়ের মধ্যে গোটা জনপদের লোকজনকে হাবলীতে জমায়েত করলেন। বালক ও যুবকরা খিলখিলিয়ে হেসে পড়ে। কিন্তু বড়দের অন্য এটি ভাবনার বিষয়। মহিষকে এ অসম পরিস্থিতি থেকে রেহাই দেয়া হল। পরবর্তীতে একটি গুঞ্জন-ই শোনা গেল যে, আদম (আঃ)-এর জন্ম থেকে নিয়ে অদ্যাবধি মহিষের ছাদে ওঠার কথা শোনা যায়নি; কিন্তু আজ এমনটা কেন হল ? দেখা যায়,
গ্রামের ঠুনকো জ্যোতিষীই পারে এর জবাব দিতে। সে বলল – আজ মঙ্গলবার । মহিষ চড়েছে রমজানের ছাদে। মালিক লছমন। নক্ষত্রের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য করলে , বিপদ পুরো জনগোষ্ঠীর ওপর না এলেও এ দু’ঘরের ওপর অতি অবশ্যই আসবে। রমজান ও লহমনের দু’বউ সর্বপ্রথম এ কথায় আস্থা আনলেন। লছমনের বউ বললেন— মহিষটি কাউকে দান করে দেয়া হোক। কিন্তু রমজানের বউ বললেন— শীঘ্র বেলায়েত শাহ্’র কাছে যান ।
রাতের বেলা জালালের পেটে ট্রাবল শুরু হোল। লছমনের ছাদে দু’টি কুকুর ডাকল। শেষ প্রহরে রমজান আলী ত্রিশ টাকা ও লছমন মহিষটি নিয়ে বেলায়েত শাহর উদ্দেশ্যে চললেন। পথিমধ্যে মহিষটা ত্রিশ টাকায় বিক্রী করে ফেললেন। দরবারে এসে রমজান ২০ টাকা নজরানা দিলেন। লছমনও এর চেয়ে বেশী দিতে নারাজ। সুতরাং তিনিও ২০ টাকা দিয়ে বাদবাকী দশ টাকা মদের জন্য রাখলেন।
উভয়েই হাত বেধে স্ব-স্ব মুসিবতের কাহিনী শোনান। বেলায়েত শাহ্ তখন ভাং-এর নেশায় ঢুলুঢুলু। বললেন — ভাই। আমার সংকল্প ছিল। ওই জনপদে আর যাব না। তোমরা যখন এসেই পড়েছ তখন না যেয়ে উপায় কি।
যিনি তোমার ছাদে মহিষ উঠিয়েছেন তিনি যেনতেন জ্বিন নন। ভালো কাজই করেছ গুটি বিক্রি করে। তখন ৩টি যে বাড়ী যাবে তাদের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। গোধূলি লগ্ন।
চৌধুরী রমজান ও লছমন সিং বেলায়েত শাহকে নিয়ে জনপদে আসছেন। আফজাল ঘোড়ার পিঠে সওয়ার। বেলায়েত শাহ্ ঘোড়া থামিয়ে তাকে দেখতে থাকেন। সাথে চার চেলা। তারাও ঘোড়ার লাগাম কমল।
বেলায়েত শাহ্ রমজানকে জিজ্ঞাসা করল কে ওই ঘোড়ার মালিক?
ঃ আফজাল চৌধুরী, রহমত আলীর পুত্র।
ঃ কত দিয়ে কেনা হয়েছে ওটা?
ঃ পীরজী! এটা গৃহপালিত। নিখাদ আরবী বংশোদ্ভূত। দেখবেন এখনই লাফিয়ে
খাল পার হবে।
যেখান থেকে আফজাল লাফ দেয় ওটা ছিল বেশ প্রশস্ত। ঘোড়ার লাফ দেখে বেলায়েত শাহ বললেন- কি চৌধুরী। উনি ঘোড়া বেচবেন কি-না?
ঃ পীরজী। আপনার খরিদ করার ইচ্ছা হলে উনি আরেকটা সওদা করতে পারেন। ওটির আরেকটা বোন আছে। খুবই দ্রুতগামী। ওটি পোষ মানেনি এখনও। তহশীলদারের ছেলের ওটি।
কিন্তু পীর বাবা তালগাছের মত পাধারী হলেও দাম্ভিক ঘোড়ার প্রতি অকৃত্রিম। তিনি বললেন— ঘোড়া আমার কাছেও কম নেই। তুমি ওই ঘোড়া খরিদ করার কোশেশ করো।
চৌধুরী রমজান অগ্রসর হয়ে বললেন – আফজাল। আফজাল। এদিকে এসো ভাই। কিন্তু আফজালের কানে ওই আওয়াজ পৌঁছায় না। এক দৌড়ে ঘোড়া নিয়ে ক্ষেতের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায় সে।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!