পারাপার – হুমায়ূন আহমেদ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ হুমায়ূন আহমেদ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৯৯
পারাপার – বইটির এক ঝলকঃ
ইয়াকুব আলি সাহেবের ম্যানেজার মইন খান আজ স্যুট পরেছেন। আজ তাঁকে আরো সুন্দর লাগছে। বয়স কম লাগছে। গলায় লাল রঙের টাই। লাল টাইায় ভদ্রলোককে খুব মানিয়েছে। যারা কোনোদিন টাই পরে না তারাও এই ভদ্রলোককে দেখলে টাইয়ের দরদাম করবে।
স্লামালিকুম মইন সাহেব।
ওয়ালাইকুম সালাম।
আপনি কোত্থেকে ? সেই যে গেলেন আর কোনো খোজখবর নেই— স্যার খোঁজ করেন, আমি কিছু বলতে পারি না। আপনার মেসের ঠিকানায় দুদিন লোক পাঠিয়েছি- আপনি তো ভাই মেসে থাকেন না। কোথায় থাকেন ?
ইয়াকুব সাহেবের শরীর কেমন ?
ব্লাড ক্যানসারের রোগী– তার আবার শরীর কেমন থাকবে? যতই দিন যাচ্ছে ততই খারাপ হচ্ছে। বাইরে থেকে রক্ত দেয়া হয় শরীরে। আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায়
চলুন দেখা করা যাক।
এখন দেখা করতে পারবেন না। স্যার এখন ঘুমোচ্ছেন। আমার ঘরে এসে বসুন, গল্প-গুজব করুন। ঘুম ভাঙলে স্যারের কাছে নিয়ে যাব।
আমি ম্যানেজার সাহেবের ঘরে ঢুকলাম। তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন, গোপন কথা কিছু বলবেন কি না কে জানে!
হিমু সাহেব।
জি।
দুপুরে খেয়েছেন ?
জি না, খাই নি। ঠিক করে রেখেছি দুপুরে আমি এক বান্ধবীর বাসায় খাব। ওর নাম রূপা। পুরানা পল্টনে থাকে।
স্যারের সঙ্গে দেখা না করে তো যেতে পারবেন না। এখানেই বরঞ্চ খাবার ব্যবস্থা করি। চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনিয়ে দেই।
জি না। রূপার ওখানে খাব ঠিক করে রেখেছি। ওখানেই যেতে হবে।
কিছুই খাবেন না ?
না। আপনি গোপন কথা আমাকে কী বলতে চান বলে ফেলুন। আমি
শুনছি।
গোপন কথা বলতে চাই আপনাকে কে বলল ?
দরজা বন্ধ করা দেখে মনে হলো।
ও আচ্ছা। না, গোপন কথা কিছু নেই, আপনি এমন কেউ না যার সঙ্গে গোপনে কথা বলতে হবে। তবে ইয়ে কিছু জরুরি কথা অবশ্যি আছে। বলুন ।
আপনি বড় ধরনের একটা সমস্যা সৃষ্টি করেছেন।
কী রকম ?
সিগারেট খাবেন ? সিগারেট দেব ?
দিন।
আমি সিগারেট ধরালাম। ম্যানেজার সাহেব সিগারেট খান না— অন্যকে বিলিয়ে বেড়ান ।
হিমু সাহেব! জি।
আপনি একটা বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করেছেন। স্যারের কত বিশাল প্রপার্টি আপনি জানেন না। আমি কিছুটা জানি, পুরোটা না। প্রপার্টির ওয়ারিশান হচ্ছে উনার মেয়ে। স্যারের শরীরের অবস্থা যা তাতে এই প্রপার্টির সুষ্ঠু লেখাপড়া এখনই হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু স্যার কিছুই করছেন না। আপনার জন্যেই করছেন না ।
আমার জন্যে করছেন না মানে ?
ওই যে স্যারের ধারণা হয়ে গেছে, নিষ্পাপ মানুষের রক্ত পেলে রোগ সারবে। এবং তাঁর বিশ্বাস হয়েছে আপনি একজন যোগাড় করে আনবেন— চেষ্টা করছি।
যত চেষ্টাই করুন লাভ কিছু হবে না। নিষ্পাপ মানুষের রক্তে ব্লাড ক্যানসার সারে এই জাতীয় গাঁজাখুরিতে আপনি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন না। নাকি করেন ? কিছুটা করি। মিরাকল বলে একটা শব্দ ডিকশনারিতে আছে।
আচ্ছা, আপনি তাহলে মিরাকলে বিশ্বাস করেন ?
হুঁ করি । আপনি মনে করেন যে, একজন নিষ্পাপ মানুষ আপনি ধরে আনতে পারবেন এবং স্যার সুস্থ হয়ে উঠবেন ?
আমি গম্ভীর ভঙ্গিতে বললাম, নিষ্পাপ লোক পাওয়াই মুশকিল। তবে চেষ্টায় আছি। দেখি কী হয়।
হিমু সাহেব! আপনি কি বুঝতে পারছেন স্যারের এই বিশাল প্রপার্টির ওপর অনেক লোক নির্ভর করে আছে? সব প্রতিষ্ঠান যাতে ঠিকমতো চলতে পারে তার জন্যে বিলি ব্যবস্থা হওয়া দরকার ।
উনাকে বলে বিলি ব্যবস্থা করিয়ে রাখুন।
উনি তা করবেন না। এইজন্যেই আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ— আপনি স্যারকে বুঝিয়ে বলবেন।
কী বুঝিয়ে বলব ?
কিছু বুঝিয়ে বলতে হবে না। আপনি শুধু বলবেন যে, নিষ্পাপ মানুষ খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে আপনি অপারগ। এতে আপনার লাভ হবে।
কী লাভ হবে ?
মইন খান চুপ করে গেলেন। ভদ্রলোক আমার উপর যথেষ্ট বিরক্ত। একজন অবুঝ শিশুকে বোঝাতে গেলে আমরা যেমন বিরক্ত হই উনিও তেমনি হচ্ছেন। আমি গলার স্বর নামিয়ে বললাম, কী লাভ হবে বলুন ? টাকা-পয়সা পাব ? যদি চান পাবেন।
কত টাকা দেবেন ?
ম্যানেজার সাহেব হতাশ ভঙ্গি করে চুপ করলেন। মনে হচ্ছে তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন। আমি আবারো বললাম, কত টাকা দেবেন তা তো বললেন
না ।
কত টাকা টান আপনি ?
আপনারা কত টাকা দিতে পারেন সেটা জানা থাকলে বা সেটা সম্পর্কে আমার একটা ধারণা থাকলে চাইতে সুবিধা হতো। ধরুন, আপনারা মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন আমাকে এক কোটি টাকা দেবেন, আমি বোকার মতো চাইলাম এক হাজার টাকা…….
এক কোটি টাকা যে কত টাকা সে সম্পর্কে আপনার কি কোনো ধারণা আছে ? এক এর পেছনে কটা শূন্য বসালে এক কোটি টাকা হয় আপনি জানেন ?
রেগে যাচ্ছেন কেন ?
রাগছি না। আপনার বোকামি দেখে হাসছি। একজন অসুস্থ মানুষ মরতে বসেছে— আপনি তার এডভানটেজ নিচ্ছেন। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত। আমি কি কোনো এডভানটেজ নিচ্ছি ?
অবশ্যই। এখনো নেন নি, কিন্তু নেবেন। এক বেকুবকে ধরে নিয়ে এসে বলবেন— এই নিন আপনার পুণ্যবান মানুষ। তার শরীর থেকে দুভিন ব্যাগ রক্ত নেয়া হবে এবং সেই রক্ত আপনি নিশ্চয় বিনামূল্যে দেবেন না। নিশ্চয় দাম নেবেন। নেবেন না ?
হ্যাঁ, নেব।
কত নেবেন ?
পবিত্র রক্তের অনেক দাম মইন সাহেব।
কত সেই দাম সেটাও শুনে রাখি।
আরেকটা সিগারেট দিন। চা খাওয়ান, তারপর বলব। আর শুনুন ভাই, আপনি এত রাগ করছেন কেন ? সম্পত্তি ভাগাভাগি হোক বা না হোক আপনার তো কিছু যায় আসে না। আপনি যেই ম্যানেজার আছেন সেই ম্যানেজারই থাকবেন। এমন তো না যে, আপনি ইয়াকুব আলি সাহেবের মেয়েকে বিয়ে করছেন। সম্পত্তি ভাগাভাগি করলে আপনার লাভ আছে।
চুপ করুন ।
আচ্ছা চুপ করলাম ।
মাইন খান গম্ভীরমুখে বের হয়ে গেলেন। আমার জন্যে চা আনতে গেলেন, এ রকম মনে হলো না । আমি চেয়ারে পা তুলে আরাম করে বসলাম। মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ একা একা বসে থাকতে হবে। ম্যানেজার সাহেব এখন আর আমাকে সঙ্গ দেবেন না। আশ্চর্য, ম্যানেজার সাহেব নিজেই ট্রে হাতে ঢুকলেন।
নিন হিমু সাহেব, আপনার চা। খালি পেটে খাবেন না— মাখন মাখানো ক্রেকার আছে। ক্রেকার নিন।
থ্যাংকস।
এখন বলুন, পবিত্র রক্তের দাম কত ঠিক করে রেখেছেন ?
অনেক দাম ।
বুঝতে পারছি অনেক দাম। সেই অনেকটা কত ?
আমি শান্ত গলায় বললাম, সেটা পবিত্র রক্ত শরীরে নেবার আগে ইয়াকুব
আলি সাহেবকে বলা হবে ।
আগে বলবেন না ?
উঁহুঁ। তবে পবিত্র রক্ত যখন পাওয়া যাবে তখন তাঁর সঙ্গে টার্মস এন্ড কন্ডিশান নিয়ে আলাপ করব।
আপনি শুধু ধুরন্ধর না— মহাধুরন্ধর।
আমি হাসলাম। ম্যানেজার সাহেব বললেন, চা খাওয়া হয়েছে ? জি।
তাহলে যান, স্যারের সঙ্গে দেখা করুন। স্যারের ঘুম ভেঙেছে। আরেকটা কথা, স্যারের পাশে স্যারের মেয়ে বসে আছে, কাজেই কথাবার্তা খুব সাবধানে বলবেন। এমন কিছুই বলবেন না যাতে ম্যাডাম আপসেট হন।
উনাকে কি এখন ম্যাডাম ডাকেন, আগের বার আপা বলছিলেন।
হ্যাঁ ডাকি । দয়া করে আপনিও ডাকবেন।
উনার নাম কী ?
উনার নাম জানার আপনার দরকার নেই ।
ইয়াকুব আলি সাহেব লম্বা হয়ে শুয়ে আছেন। তাঁকে একটা সরলরেখার মতো দেখাচ্ছে। এই ক’দিনে শরীর মনে হয় আরো খারাপ করেছে। সব মানুষের ভেতর এক ধরনের জ্যোতি থাকে সেই জ্যোতি এখন আর তাঁর মধ্যে নেই। তাঁর মাথার কাছে যে মেয়েটি বসে আছে তার সঙ্গে আমার আগেও দেখা হয়েছে। তবে আজ তাকে চেনা যাচ্ছে না। ওইদিন দেখেছিলাম খণ্ডিতরূপে, আজ পূর্ণরূপে দেখছি। মাথায় টাওয়েল বাঁধা নেই। তার মাথাভর্তি চুল ঢেউয়ের মতো নেমে এসেছে। পানির রঙ কালো হলে কেমন দেখাত তা মেয়েটির চুল দেখলে কিছুটা অনুমান করা যায়। আমি গভীর বিস্ময় নিয়ে তার চুলের দিকে তাকিয়ে আছি। ইয়াকুব সাহেব বললেন, বোসো হিমু।
আমি বসলাম কিন্তু মেয়েটির চুল থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারলাম না। ইয়াকুব সাহেব বললেন, কাউকে পেয়েছ ?
জি পেয়েছি। বেশ কটা নাম পাওয়া গেছে। এখন স্ক্রুটিনি পর্যায়ে আছে। এদের ভেতর থেকে স্ক্রুটিনি করে একজন সিলেক্ট করব।
গুড।
আপনি আরো কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরুন। ধৈর্য ধরেই আছি।
আপনার স্ত্রীকে কি স্বপ্নে আরো দেখেছেন ? গতকালই দেখলাম। রাত তিনটার দিকে । কী বললেন ?
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!