অনিঃশেষ আলো ৪র্থ খণ্ড – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৪০
অনিঃশেষ আলো ৪র্থ খণ্ড – বইটির এক ঝলকঃ
শরীরগুলো পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে জানি; কিন্তু আত্মাগুলো আছে সতেজ ও সজীব ।
একটু পর-পর তিনি এই একই কথা বলতে থাকলেন আর বাহিনী তাঁর সামনে দিয়ে যেতে থাকল। সবাই তাকে অতিক্রম করে চলে গেলে এবার তিনি ঘোড়া হাঁকালেন । ঘোড়া ছুটে গিয়ে আগের মতো বাহিনীর সম্মুখে চলে গেল ।
রোমান বাহিনী আগে থেকেই বিন্যাসে প্রস্তুত ছিল। মুসলিম বাহিনীটি চোখে পড়ামাত্র কমান্ডার ঘোড়া হাঁকাল এবং ইউনিটগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
“ওই দেখো তোমাদের শত্রুরা আসছে’- রোমান কমান্ডার গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল- “ওদের সংখ্যাটা দেখো। আরবের এই বদ্দুরা ক্লান্তিতে একেবারে অবশ হয়ে গেছে । প্রতিজ্ঞা নাও, কেটে ওদের টুকরো-টুকরো করে ফেলবে । যারা রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে গেছে, নিজেদের ওদের সহযাত্রী বানিয়ো না। অনাগত প্রজন্মের জন্য একটি সম্মানজনক ইতিহাস তৈরি করো।’
কমান্ডারের এই তেজোদীপ্ত বক্তব্যে তার বাহিনীর সৈনিকদের মাঝে পরম উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়ে গেল। প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়তে তারা ব্যাকুল হয়ে পড়ল ।
মুসলিম বাহিনী যখন কাছাকাছি এসে পড়ল, তখন রোমান বাহিনী সেনাপতিরা আপন-আপন ইউনিটগুলোকে আলাদা করে নিল এবং বাহিনী একটা যন্ত্রের মতো এগুতে এগুতে যুদ্ধের বিন্যাসে দাঁড়িয়ে গেল। যুদ্ধের নিয়ম ছিল, উভয় পক্ষ কাছাকাছি এসে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর আক্রমণ চালাবে; তারপর লড়াই চলতে থাকবে। কিন্তু এখানে সেই রীতির ব্যত্যয় ঘটল । মুসলিম বাহিনী সবে যুদ্ধের বিন্যাসে এল। এখনও তারা খানিক দূরে। এমন সময় রোমান বাহিনী ঘোড়াগুলো হাঁকিয়ে দিল এবং তির তরবারি-বর্শা উঁচিয়ে ছুটে গিয়ে জোরদার আক্রমণ করে বসল। তারা ছিল ঘোড়া ও মানুষের সুতীব্র একটা ঝড় যে, মনে হচ্ছিল, সামনে গাছপালা যা পাবে সবই গোড়াসুদ্ধ উপড়ে ফেলবে। ঘোড়ার পায়ের তলে মাটি থরথর করে কাঁপছে। ওপরে আসমান, নিচে জমিন দুয়েরই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে, এই হামলা আল্লাহর সৈনিকরা সামাল দিতে পারবে তো!
সিপাহসালার আমর ইবনুল আস (রাযি.) রোমানদের এই আক্রমণ আসতে দেখে তাঁর ইউনিটগুলোকে আরও বেশি ডানে-বাঁয়ে ছড়িয়ে দিলেন। একটু পর-পর সিপাহসালারের এটা-ওটা আদেশ বা নির্দেশনা দিতে হবে এমন কোনো আবশ্যকতা নেই । এত বিশাল একটা শত্রুবাহিনীর মোকাবেলা কীভাবে করতে হবে সেই কৌশল মুজাহিদদের জানা আছে। এইমাত্র যে-লড়াইটা শুরু হলো, তার মোকাবেলা মুজাহিদরা কীভাবে করবেন সেই নির্দেশনা প্রধান সেনাপতি তাঁর সালারদের পথেই দিয়ে এসেছেন।
রোমান বাহিনী যখন বাঁধভাঙা স্রোতের মতো কিংবা গাছভাঙা ঝড়ের মতো আসতে লাগল, তখন মনে হয়েছিল, যেন এই কয়েক হাজার ঘোড়া মুজাহিদদের এই ক্ষুদ্র বাহিনীটিকে নিমেষের মধ্যে পিষে ফেলবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, দৃশ্যটা দেখার পর সিপাহসালার আমর ইবনুল আস (রাযি.)-এর অধরোষ্ঠ চাপা হাসির রেখা ফুটে উঠেছিল। তিনি তাঁর সালারদের দিকে- যাঁরা তাঁর থেকে দূরে- দূরে ছিলেন- তাকিয়ে হাত তুলে কী যেন ইঙ্গিত করলেন। সঙ্গে-সঙ্গে পার্শ্ববাহিনীগুলো আরও ছড়িয়ে পড়ল আর মধ্যখানে যে ইউনিটটি ছিল, সেটি রোমানদের মোকাবেলায় সামনের দিকে এগিয়ে গেল। রোমানরা চিৎকার করতে- করতে ধেয়ে আসছিল। মুসলিম বাহিনীর মধ্য থেকে শুধু একটি আল্লাহ্ আকবার ধ্বনি উঠল, যার উত্তরে গোটা বাহিনী এত জোরে তাকবির দিল যে, আকাশটাও বুঝি কেঁপে উঠেছিল। এটি ছিল তাঁদের শাহাদাত লাভের পূর্বমুহূর্তের জোশদীপ্ত অভিব্যক্তি ।
মুসলিম বাহিনীর যে-ইউনিটটি শত্রুর মোকাবেলার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল, তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল। সংখ্যায় তারা এতই অল্প ছিল যে, এই বিশাল শত্রুবাহিনীর মাঝে তাদের হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের ধরনধারণ এমন যে, তারা লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছে আবার ধীরে ধীরে পেছনেও সরে আসছে। ওদিকে ডান ও বাম পার্শ্বগুলোর দায়িত্বে নিয়োজিত মুজাহিদগণ তাঁদের সালারদের আদেশ অনুযায়ী ডানে-বামে ছড়িয়ে গেলেন। তাঁরা মুখোমুখি না লড়ে রোমানদের ওপর পার্শ্ব থেকে আক্রমণের সুযোগ খুঁজছেন ।
আমর ইবনুল আস (রাখি) দুটা ইউনিট পেছনে রিজার্ভ আটকে রেখেছেন। তাঁদের তিনি বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে কাজে লাগাবেন। তার অর্থ হলো, আমর ইবনুল আস এই বিপুলসংখ্যক শত্রুসেনার মোকাবেলায়ও মাথাটাকে উপস্থিত এবং মনটাকে ঠাণ্ডা রেখে চিন্তা করছিলেন। তাঁর হাবভাবে ভীতির কোনো লক্ষণই চোখে পড়ছিল না।
মুজাহিদগণ রোমানদের পার্শ্বগুলোতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু রোমানরা তাঁদের সেই সুযোগ দিচ্ছে না। তারাও সেই অনুপাতে ছড়িয়ে যাচ্ছে । এদিকে মুখোমুখি সংঘাতে লিপ্ত ইউনিটটি পেছনে সরে আসছে আর সেই অনুসারে রোমানরাও সামনের দিকে এগিয়ে আসছে যে, মুসলমানরা আমাদের আক্রমণ সামাল দিতে না পেরে পিছপা হয়ে যাচ্ছে। সিপাহসালার রোমানদের বিন্যাসকে তছনছ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রোমানদের সংখ্যা এত বেশি যে, সংখ্যার শিলে তারা মুসলমানদের পিষে ফেলতে চাচ্ছে। তাদের আশাও ছিল, এই কৌশলে তারা সফল হয়ে যাবে, আজকালকার সামরিক পরিভাষায় যাকে ‘বুভুজ’ বলা হয় ।
এটি ছিল একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। কিন্তু মুজাহিদগণ ঘোরতর এই লড়াইটাও লড়ছিলেন, আবার নিজেদের রক্ষা করারও চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সালারদের জানা ছিল সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে। বাহ্যত রোমানরা মুজাহিদদের ওপর জয়ী হয়ে গিয়েছিল এবং তারা মুজাহিদদের কোনো কৌশলকেই সফল হতে দিচ্ছিল না। তারা বুঝে গিয়েছিল, মুসলমানরা তাদের পার্শ্বগুলোতে আসবার চেষ্টা চালাচ্ছে। রোমানদের এই বাহিনীতে অন্যান্য জায়গা থেকে পালিয়ে আসা অনেক সৈন্যও ছিল। কিন্তু একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ করা গেল যে, এযুদ্ধে তাদের জোশ-জযবায়ও যেন নতুন এক সজীবতা তৈরি হয়ে গেছে। তারা সত্যিকার অর্থেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছে, ইসলামের সৈনিকদের তারা এ রণাঙ্গনেই নিঃশেষ করে ছাড়বে ৷
পরিস্থিতিটা মুজাহিদদের জন্য যারপরনাই বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াল। হযরত ওছমান ইবনে আফফান (রাযি.)-এর আশঙ্কা সত্যে পরিণত হতে লাগল যে, আমর ইবনুল আস গোটা বাহিনীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবেন। এবার চোখে পড়তে লাগল, আমর ইবনুল আস (রাযি.) বাহিনীটিকে সত্যিকার অর্থেই যমের মুখে তুলে দিয়েছেন । তবে তাঁর মুখের দিকে তাকালে পরিষ্কার অনুমিত হচ্ছে, তিনি চিন্তিত বটে; তবে বিচলিত নন। চেহারায় তাঁর স্বস্তির আভা আর মেজাজটা এতই ফুরফুরে যে, রিজার্ভ ইউনিটগুলোকে তিনি পেছনেই থাকতে দিলেন । এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত কমান্ডার রিজার্ভ ইউনিটগুলোকেও যুদ্ধের আগুনে নিক্ষেপ করে থাকেন।
আমর ইবনুল আস (রাযি.) ঘোড়া হাঁকালেন এবং একটা উপযুক্ত জায়গায় গিয়ে ঘোড়াটা থামিয়ে দিয়ে বাম বাহু ওপরে তুললেন এবং হাত দ্বারা কী যেন ইঙ্গিত করলেন। সঙ্গে-সঙ্গে ইঙ্গিতটা যেদিকে করেছিলেন, ওদিক থেকে অনেকগুলো ঘোড়ার ছুটে চলার হাঙ্গামা শোনা গেল। কিন্তু এদিকে রণাঙ্গনের হট্টগোল এত তীব্র ছিল যে, আওয়াজে বোঝা সম্ভব হলো না, ওগুলো কাদের ঘোড়া ।
হঠাৎ পেছন থেকে রোমানদের ওপর একটা প্রলয় ভেঙে পড়ল । রোমান সৈন্যদের পিঠে তরবারি ও বর্শা বিদ্ধ হতে লাগল। ওরা কারা এল পেছন ফিরে দেখার আগেই তারা ঘোড়ার পিঠ থেকে ধপাস ধপাস করে পড়ে যেতে ও মরে যেতে লাগল। নিজেদেরই ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয়ে সৈন্যরা একের-পর-এক যমালয়ে পৌঁছে যেতে শুরু করল । রোমান বাহিনীতে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে গেল । সহসা তাদের আক্রমণ ও তার তীব্রতা কমে গেল এবং তারা পেছনে সরে যেতে লাগল । সিপাহসালার আমর ইবনুল আস (রাযি.)-এর ইঙ্গিতে যিনি বাহিনীটি নিয়ে এসে অকস্মাৎ হামলে পড়েছিলেন, তিনি হলেন সালার যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাযি.)। দেড় হাজার মুজাহিদ দ্বারা রোমানদের পেছন থেকে তিনি আক্রমণটা করেছিলেন। মুসলিম বাহিনীটি যখন এই রণাঙ্গনের দিকে আসছিল, তখন পথে যুবাইর ইবনুল আওয়াম গোয়েন্দা মুজাহিদকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ওখানে ভূমির প্রকৃতি কীরূপ । যখন তিনি জানতে পারলেন, এক পার্শ্বে গিয়ে ভূমি নিচের দিকে চালু হয়ে গেছে, তখনই তাঁর মাথায় বুদ্ধিটা এসেছিল এবং সিপাহসালারকে বলেছিলেন, আমি একটি চাল খেলতে চাই; আপনি আমাকে অনুমতি দিন।
রণাঙ্গন থেকে অনেকখানি পথ দূরে থাকতেই তিনি হাজারদুয়েক মুজাহিদকে সাথে নিয়ে নিলেন এবং দূর পথে চক্কর কেটে সেই জায়গাটায় চলে এলেন, যেখানে ভূমি বেশ নিচের দিকে চলে গেছে। ওখানে তিনি তাঁর মুজাহিদদের লুকিয়ে রাখলেন। এই বাহিনীর সব কজন সৈন্য অশ্বারোহী ছিলেন।
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাযি.) কোথাও একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধের দৃশ্য অবলোকন করছিলেন। যখন তিনি দেখলেন, রোমান বাহিনী মুসলিম বাহিনীর ওপর জয়যুক্ত হতে যাচ্ছে এবং মুজাহিদদের কোনো কৌশলই সফল হতে দিচ্ছে না, তখন তাঁর বাহিনীকে আক্রমণের আদেশ দিলেন। এদিকে সিপাহসালারও হামলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এই বাহিনীটি সালার যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাযি.)-এর নেতৃত্বে কিছুদূরে গিয়ে নিম্নভূমি থেকে বেরিয়ে এল এবং রোমান বাহিনী পেছনে গিয়ে ছড়িয়ে গেল। যুদ্ধের ডামাডোলের কারণে রোমানরা এই ব্যাপারটা টেরই পেল না ।
এটি হযরত খালিদ ইবনুল অলীদ (রাযি.)-এর কৌশল ছিল, যেটি তিনি দু- তিনবার প্রয়োগ করেছিলেন এবং বিপুলসংখ্যক শত্রুসেনাকে হত্যা করেছিলেন। ইতিহাস বলছে, আমর ইবনুল আস (রাযি.) খালিদ ইবনুল অলীদ (রাযি.)-এর কৌশলই প্রয়োগ করতেন এবং তাঁকে নিজের ওস্তাদ বলে স্বীকার করতেন। সাথি-বন্ধুদের আসরে যখন নিজের রণকৌশল নিয়ে কথা বলতেন, তখন তিনি খালিদ ইবনুল অলীদ ও আবু উবাইদা (রাযি.)-এর বরাত দিতেন ।
সমরকৌশলে রোমান সেনাপতিরাও কম কিছু ছিল না। বলা যায়, তারাও মুসলমানদের সমানে সমান ছিল। স্বয়ং সম্রাট হেরাল ছিলেন একজন রণকুশলী। তার সেনাপতি আতরাবুন এই বিদ্যায় বিশেষ দক্ষতার অধিকারী বলে স্বীকৃত ছিল। অন্যান্য জাতিরা তাকে ‘আতঙ্ক’ জ্ঞান করত। কিন্তু সেই হেরাল শামের মতো বিশাল রাজ্যটি মুজাহিদীনে ইসলামের পায়ে রেখে পলায়ন করেছিলেন। তার বিখ্যাত সেনাপতি আতরাবুন মুসলমানদের হাতে প্রাণ হারাল । তার কারণ ছিল, মুসলমান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ-নিষেধ মেনে লড়াই করতেন আর হেরাল নিজের ব্যক্তিসত্তাকেই সবকিছু মনে করতেন । ইসলামের সৈনিকদের আল্লাহ ঈমানের শক্তি দ্বারা বলীয়ান করেছিলেন, যার দ্বারা রোমানরা প্রভাবিত ছিল ।
সালার যুবাইর ইবনুল আওয়াম যখন পেছন থেকে রোমান বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালালেন, তখন টিকতে না পেরে রোমানরা পেছনমুখী হলো এবং প্রাণ হারাতে লাগল। ঠিক তখন সিপাহসালার আমর ইবনুল আস তাঁর রিজার্ভ ইউনিটগুলোকে আক্রমণের আদেশ দিয়ে দিলেন। এবার রোমানরা সংখ্যায় দ্বিগুণ হলেও মুজাহিদদের আয়ত্তে চলে এল এবং সম্মুখ ও পেছন উভয় দিক থেকে সমানে এমন আক্রমণের শিকার হয়ে পড়ল যে, তারা দিশেহারা হয়ে গেল। কোনো কৌশল প্রয়োগ করা তো দূরের কথা, অস্ত্র চালানোই তাদের পক্ষে দুষ্কর হয়ে পড়ল। সেইসঙ্গে মুজাহিদরা তাদের ওপর উভয় পার্শ্ব থেকেও আক্রমণ করে বসলেন ।
এবার তারা পালানোর পথ খুঁজতে লাগল । তাদের প্রত্যয়-প্রতিশ্রুতি ভেঙে গেল । তাদের কমান্ডার পতাকাটা একজায়গায় মাটিতে ফেলে দিয়ে সবার অগোচরে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল ।
পালিয়ে রোমানরা যাবেইবা কোথায়? ওখানে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কোনো কেল্লা ছিল না যে, ওখানে গিয়ে আশ্রয় নেবে। তারপরও যারা পালাবার সুযোগ পেল, পালিয়ে গেল। মুজাহিদদের একটা দুর্বলতা হলো, সংখ্যায় তারা খুবই কম। তাঁদের এই দুর্বলতা থেকে রোমানরা বেশ সুবিধা নিল। কিছু রোমান পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো। তাদের রোখ কারিউনের দিকে, এই রণাঙ্গন থেকে যার অবস্থান খুব একটা কাছে নয় ।
কারিউনে সেনাপতি থিওডোর নতুন প্রত্যয় ও তরতাজা উচ্ছ্বাস নিয়ে সেই বাহিনীটির প্রশিক্ষণে মহাব্যস্ত, যাকে তিনি এই দুর্গে জড়ো করেছিলেন । আগেই বলেছি, তিনি এখন নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করছেন এবং অধীন সেনাপতিরা তার প্রতি আনুগত্যের সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিয়েছে। আতরাবুনের পর সেনাপতি থিওডোরই এখন যোগ্য সেনাপতি। তার পরে আছে সেনাপতি জর্জ । সবাইকে উপেক্ষা করে নিজেই সর্বময় কর্তার আসনে অধিষ্ঠিত হবেন সেই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আছে থিওডোরের।
থিওডোর তার সেনাপতিদের বলে রেখেছেন, যে-ইউনিটগুলো কারিউন থেকে দূর-দূরান্তে মুসলিম বাহিনীর পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে, তারা যে যেখানে আছে, সেখানেই যেন থাকে। তাদের কাজ হলো, মুসলমানদের পথ আটকে রাখা আর তাদের দুর্বল করে তোলা। একদিন বাহিনীকে তিনি নিজেই
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!