অনিঃশেষ আলো ১ম খণ্ড – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৫৬
অনিঃশেষ আলো ১ম খণ্ড – বইটির এক ঝলকঃ
হাদীদ পোটলা থেকে কিছু খাবার বের করে উঠে এগিয়ে গিয়ে রোমান সিপাইকে দিল। সিপাই ওখানেই বসে অস্থির মনে ও অধৈর্যের সঙ্গে গপাগপ খেতে শুরু করল।
‘এখানে বসে থেকো না’- শারিনা বলল- ‘এখান থেকে চলে যাও । অন্য কোথাও গিয়ে খাও
শারিনার ভঙ্গিতে ও স্বরে রাজকুমারীর ভাব। হাদীদ তাকে বলল, এমন কঠোর ভাষায় ও অবজ্ঞার সুরে কথা বলো না। বেচারাকে খাবারটা ধীরে-সুস্থে খেতে দাও । হাদীদের কথায় ভরসা পেয়ে রোমান সিপাই ওখানেই বসে খেতে থাকল, যেন সে কিছুই শোনেনি ।
রাতের সুনসান নীরবতার মধ্যে একটা ঘোড়ার পায়ের শব্দ ভেসে আসতে লাগল । শব্দটা কাছে থেকেই আসছে। অমনি হাদীদের ডান হাতটা তরবারির হাতলে পৌঁছে গেল। জোসনার আলোয় রাতটা এখন ফকফক করছে। ঘোড়ার পদশব্দ যেদিক থেকে আসছিল, ওদিকে দুটা টিলার মাথা পরস্পর মিলে আছে। কিন্তু মধ্যখান দিয়ে রাস্তা আছে । এক রোমান সিপাই উক্ত স্থানে আত্মপ্রকাশ করল। সে একটি ঘোড়ার লাগাম ধরে আছে আর আরেক ব্যক্তি ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার। যে-রোমান সৈনিক শারিনার দেওয়া খাবার খাচ্ছিল, সে তাদের দেখে উঠে দাঁড়িয়ে গেল এবং অশ্বারোহীর দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল। লোকটা এসেছিল হেলেদুলে পড়িমরি অবস্থায়, যেন সত্যিই অনাহারে মরে যাচ্ছে। কিন্তু এখন যখন উঠে অশ্বারোহীর পানে এগিয়ে যেতে শুরু করল, তখন তার চলনে তেজও আছে, উদ্দীপনাও আছে । হাদীদ তরবারি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু একপাও সম্মুখে এগোল না । শারিনাও উঠে দাঁড়িয়ে আছে।
দুই রোমান সিপাই মিলে অশ্বারোহী লোকটাকে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামিয়ে ধরাধরি করে সেই জায়গাটাতে নিয়ে এল, যেখানে হাদীদ ও শারিনা শোওয়ার জন্য কম্বল বিছিয়েছিল। তারা লোকটাকে একটা কম্বলের উপর বসিয়ে দিল।
‘আমি নিশ্চয় স্বপ্ন দেখছি না শারিনা!’- অশ্বারোহী লোকটা বলল- ‘আমি যা-কিছু দেখছি, সত্য ও বাস্তবই দেখছি। অবাক্ হচ্ছি এজন্য যে, আমাদের সাক্ষাতটা কোথায় এসে হলো! তোমরা আমাকে দেখনি- আমি তোমাদের দেখে ফেলেছি।’ ‘হ্যাঁ কেলাশ।’- শারিনা বলল- ‘তুমি যতটা অবাক্ হয়েছ, তারও চেয়ে বেশি বিস্মিত হওয়া দরকার ছিল। আমি এমন কোনো আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ে পোষণই করিনি যে, তুমি রাস্তায় আমাকে পেয়ে যাব… । তুমি আহত নাকি?
‘হ্যাঁ শারিনা।’- লোকটা উত্তর দিল- ‘দুটা পা-ই মারাত্মকভাবে আহত। সম্ভবত একটা পায়ের হাড়ও ভেঙে থাকবে । তুমি এখানে কীভাবে এলে? এই লোকটা কে? ‘তুমি বিশ্বাস করবে না’- শারিনা বলল- ‘যদি বলি, আমি তোমার সন্ধানে বের হয়েছি এবং তোমাকে খুঁজে বের করতে হন্যে হয়ে ঘুরে ফিরছি, তা হলে আমার কথাটা তুমি বিশ্বাস করবে না।’
‘আমি বিশ্বাস করব না’- লোকটা বলল- ‘তোমার সঙ্গে যদি তিন-চারজন, এমনকি এক-দুজনও সৈনিক থাকত, তা হলে নাহয় তোমার কথাটা আমি মেনে নিতাম । কিন্তু তোমার এই সঙ্গী রোমান নয়। একে আরবি বলে অনুমিত হচ্ছে। আর একে তোমার রক্ষী বলে মনে হচ্ছে না। আমি তোমার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারব না । আমি তো দাঁড়াতেই পারছি না। তুমি যদি সত্য বল, তা হলে আমি তোমার পথ আগলাব না । আমার মাঝে সাহস আছে। ভালো হবে, তুমি সত্য কথা বলো।’ এই আহত লোকটা সুদর্শন ও যুবক। রোমান ফৌজে অফিসার পদে অধিষ্ঠিত ছিল এবং রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত। নাম কেলাশ। একটা গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিল। অত্যন্ত সাহসী ও জানবাজ সৈনিক। তার গেরিলা অভিযানের সুখ্যাতি হেরাল-এর বাহিনীতে অনেক প্রসিদ্ধ। শিকারের উপর ব্যাঘ্রের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ত এবং শিকার কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই কাজ সমাধা করে উধাও হয়ে যেত।
এই সুদর্শন গেরিলা যুবককে শারিনার শৈশব থেকেই ভালো লাগত। একে সে নিজের আদর্শ বানিয়ে নিয়েছিল। ছেলেটা রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত বিধায় তার সঙ্গে মিলিত হতে শারিনার কোনোই সমস্যা হতো না ।
শারিনা যখন যৌবনে পদার্পণ করল, তখন শৈশবের এই ভালো লাগা অন্তরঙ্গ ভালবাসায় বদলে গেল। সচরাচর যুবক-যুবতীদের মাঝে যেমন ভালাবাসা তৈরি হয়, কেলাশ একে তেমনই একটা ভালবাসা মনে করত। কিন্তু শারিনার এই আবেগতাড়িত আচরণ তার সহজাত প্রবৃত্তির হাদীদকে ধারণা দিয়েছিল, সামরিক চেতনা তার স্বভাবের একটা প্রধান অংশ। অনুগামী ছিল। সে আপন স্বভাবের যে- চিত্র সে হাদীদের সম্মুখে অঙ্কন করেছিল, তেমনই একটা ছবি কেলাশেরও সামনে এঁকেছিল । কিন্তু কেলাশের বুঝ ভিন্ন। সে একে আবেগতাড়িত প্রেম ছাড়া আর কিছু বুঝতে রাজী নয়। শারিনাকে স্ত্রী হিসেবে পেতে তার উদগ্র বাসনার কথা প্রকাশ করল। শারিনা তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিল, যেদিন তুমি কোনো মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করে ফিরে আসতে পারবে, সেদিন আমি তোমাকে বিয়ে করব। কেলাশের বীরত্ব ও দুঃসাহসিকতার কথা শারিনা ভালো করেই জানত। এটি তার সেই গুণ, যে কিনা তাকে কেলাশে ভালবাসার জালে আটক করেছিল। কিন্তু এই প্রেম কেলাশেরউপর উলটো ক্রিয়া করতে শুরু করল। কেলাশ যুদ্ধের প্রতি নিঃস্পৃহ হয়ে উঠল এবং কোনো-না-কোনো অজুহাতে রণাঙ্গন থেকে পেছনে থাকার চেষ্টা শুরু করে দিল । কেলাশের এই আচরণ শারিনার কাছে ভালো লাগল না। শারিনা বলত, আমিও তোমার মতো যুদ্ধ করব। তুমি আমাকে রণাঙ্গনে নিয়ে চলো। আমি শত্রুর মোকাবেলায় বুক টান করে দাঁড়াব এবং পুরুষদের মতো লড়াই করব। কিন্তু শারিনার এই মানসিকতা কেলাশে ভালো লাগত না। সে বলত, তুমি হলে একটি সুগন্ধময় ফুল । তোমাকে আমি ফুলেরই আকারে দেখতে চাই, শুকতে চাই । আমার মনের ঐকান্তিক বাসনা হলো, আমি যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে আসব আর তুমি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে।
কেলাশের এই আচরণ শারিনার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করল। তার যে-ছবিটা সে নিজের মনের মাঝে অঙ্কন করে রেখেছিল, কেলাশ তাকে কুৎসিত ও কলঙ্কিত করে ফেলল। শারিনা তাকে একথা বলেনি যে, আমি যে-কেলাশকে ভালবাসতাম, সেই কেলাশ একটা কল্পনা ছিল মাত্র। আর শারিনা কল্পনাপুজারি মেয়ে হতে চায় না । তারপর খালিদ ইবনে অলীদ, আবু উবায়দা, শুরাহবিল ইবনে হাসানা ও অন্যান্য মুসলমি সালারদের নেতৃত্বে ইসলামের মুজাহিদগণ যখন রোমের বিরুদ্ধে ঝড়ের বেগে ধেয়ে এলেন, তখন কেলাশের প্রতি আদেশ জারি হলো, তুমি তোমার গেরিলা বাহিনী নিয়ে এগিয়ে যাও এবং মুসলমানদের ছাউনির উপর ঝটিকা আক্রমণ চালাও ।
এই যুদ্ধ দীর্ঘতা লাভ করছিল এবং প্রতিটি অঙ্গনে মুসলমানরা জয়ী হচ্ছিল আর রোমানরা পেছনে সরে যাচ্ছিল। শারিনার চিন্তা-চেতনায় সেই বিপ্লব আসতে শুরু করল, যার বিবরণ হাদীদকে প্রদান করেছিল। কেলাশ তার হৃদয় থেকে নেমে গেল।
এখন কেলাশ জনবসতি থেকে দূরে এই এই বনে শারিনার পথে এসে পড়ল । এমন অবস্থায় এল যে, তার দুটা পা-ই গুরুতর আহত, জখমের উপর ব্যাণ্ডেজ বাঁধা এবং হাঁটতে-চলতে অক্ষম। তার আশা ছিল, শারিনার হৃদয়ে তার ভালবাসা আগের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি না পেলেও কমেনি অবশ্যই। কিন্তু শারিনাকে সে এই বনে একজন মুসলমানের সঙ্গে দেখে বিচলিত হয়ে উঠল এবং হৃদয়ের গভীর তলদেশ থেকে উঠে আসা ক্ষোভ ও ভর্ৎসনায় মুখটা তার লাল হয়ে গেল।
‘আমাকে বেশি সময় বিস্ময় ও অস্থিরতার মধ্যে ফেলে রেখো না শারিনা।’- কেলাশ বলল— ‘বলো, এই লোকটা কে আর এর সঙ্গে তুমি কোথায় যাচ্ছ? এমন যদি হতো যে, লোকটা তোমাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে, তা হলে আমাদের দেখে তুমি খুশি হতে এবং দেখামাত্র আমাদের কাছে ছুটে গিয়ে আমাদের আশ্রয় কামনা করতে।’
‘এ আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না কেলাশ।- শারিনা অত্যন্ত দৃঢ় কণ্ঠে বলল- ‘আমি একে নিয়ে যাচ্ছি এবং তোমাদের জগত থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে যাচ্ছি। আমাকে তুমি ভুলে যাও । আমাদের পথ আলাদা হয়ে গেছে। ‘প্রাসাদের মেয়েরা তোমাকে পাগল বলত- কেলাশ হতাশ কণ্ঠে বলল- ‘এখন বুঝছি, ওরা ঠিকই বলত। তোমাকে এখানে দেখে আমার বিশ্বাস হয়নি, তুমি একজন মুসলমানের সঙ্গে পলায়ন করছ। রাজপরিবারের মান গৌরব তুমি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছ।’
‘তোমাদের রাজপরিবারের মর্যাদা কিছু অবশিষ্ট আছে নাকি?’- মধ্যখান থেকে হাদীদ মুখে মুচকি হাসির ভাব ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করল এবং কেলাশকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বলল- ‘যারা অন্যের মর্যাদা নিয়ে তামাশা করে, তাদের পরিণতি এমনই হয়, যেখানে তোমার রাজপরিবার পৌঁছে গেছে।
‘তোমাদের রাজা-বাদশাহদের স্ত্রীদের গণনা করো’- শারিনা মুখ খুলল- ‘তাদের রক্ষিতা গণিকাদের হিসাব করো। তুমি গুনে শেষ করতে পারবে না। রাজপরিবারের লোকেরা যেখানেই একটা রূপসী নারী দেখে, অমনি আদেশ জারি করে, ওকে মহলে পৌঁছিয়ে দাও আর সঙ্গে সঙ্গে সেই আদেশ পালিত হয়ে যায়। তারা পিতামাতা ও ভাই-বোনদের থেকে অল্পবয়সী মেয়েদের ছিনিয়ে নিয়ে আসে। কোনো অঞ্চল বিজিত হলে সৈনিকরা ওখানকার মেয়েদের উপর পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার মাকে একটা কাফেলা থেকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং তখনকার সম্রাট ফোকাসের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজার কর্তব্য এই হওয়া দরকার ছিল যে, তিনি সেই পিতামাতাদের ফরিয়াদ শুনবেন, যাদের কন্যারা অপহৃতা হচ্ছে এবং দস্যুদের হাতে অপহৃতা মেয়েদের খুঁজে বের করতে আদেশ জারি করবেন। কিন্তু এখানকার রাজ-বাদশাহরা দস্যুদের চেয়েও খারাপ । এগুলোই সেই কারণ, যেগুলো আমার হৃদয়ে রাজপরিবারের প্রতি ঘৃণা তৈরি করেছে ।’ ‘কেলাশ ভাই!’- হাদীদ বলল- ‘আজ তোমাদের একটা মেয়ে যাচ্ছে আর তুমি বলছ, এতে রাজপরিবারের মান চলে গেছে। এই মেয়েটাকে আমি জোর করে নিয়ে যাচ্ছি না। এ আমার বা অন্য কারও রক্ষিতা হবে না। একে কারও বিনোদনের সামগ্রীও বানানো হবে না। আমি যদি একে বিবাহ করতে ইচ্ছা করি, তা হলে সেনাপতির অনুমোদন ছাড়া করতে পারব না। এমনও হবে না যে, সেনাপতির মেয়েটাকে ভালো লেগে গেল আর তিনি একে দখল করে ফেলবেন। আমাদের কাছে এ ঠিক অতটুকু মর্যাদা পাবে, যতটুকু মর্যাদা পায় আমাদের খলীফা ও সালারদের স্ত্রী-কন্যারা। সম্মান-মর্যাদা যদি দেখতে চাও, তা হলে আমার সঙ্গে চলো । ওখানে তোমার চিকিৎসা হবে। আর যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ করে নাও, তা হলে তোমার সামরিক যোগ্যতা অনুপাতে তোমাকে পদ দেওয়া হবে ।’
‘তোমার ভাগ্য ভালো যে, আমি আহত’- কেলাশ বলল- ‘অন্যথায় আমি তোমাকে এখানেই থামিয়ে দিতাম। যতটুকু বলেছ, তারপর আর একটাও কথা বলবার সুযোগ আমি তোমাকে দিতাম না । হাদীদের মুখের হাসিটা আরও উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠল। সে আর কোনো কথা বলল না। কেলাশের সঙ্গে আরও দুজন সিপাই আছে। তারা তার পেছনে বসে আছে। সম্ভবত তারা কেলাশের আদেশের অপেক্ষা করছে। কেলাশ এক তো বাহিনীর একজন অফিসার; তা ছাড়া রাজপরিবারের সদস্য। এসব কারণে সিপাইরা তার কথার মধ্যে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না ।
পেছনে একস্থানে যখন শারিনা ও হাদীস একটা নিচু টিলার আড়ালে তিন অশ্বারোহীকে দেখেছিল, তখন তারাও এদের দেখে ফেলেছিল। কিন্তু শারিনা-হাদীদ মনে করেছিল, ওরা তাদের দেখেনি। তখনই কেলাশের সন্দেহ হয়েছিল, মেয়েটা শারিনা বলে মনে হচ্ছে। না-ও যদি হয়, তার আকার-গঠন শারিনার মতো এবং একটা রূপসী মেয়ে বটে। মেয়েটার সঙ্গে একজনমাত্র পুরুষ আর কেলাশের সাথে আছে দুজন সৈনিক । ফলে মেয়েটাকে ধরে নিতে সে ঘোড়ার মুখ এদিকে ঘুরিয়ে দিল ।
হাদীদ ও শারিনা লম্বা একটা টিলার আড়ালে আড়ালে সামনের দিকে এগিয়ে চলছিল এবং কেলাশের অশ্বারোহী সিপাইদ্বয় তাদের অনুসন্ধান করে ফিরছিল। কেলাশ তাদের ঘোড়ার পিঠ থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল, তোমরা পায়ে হেঁটে এবং বিড়ালের মতো পা টিপে টিপে অনুসন্ধান চালাও ।
নির্দেশনা বুঝিয়ে দিয়ে কেলাশ নিজে একস্থানে বসে রইল। হাদীদ ও শারিনা কূপ দেখে এবং জায়গাটা ভালো লাগায় এখানে থেমে গেল ।
চাঁদের আলো নিভে গিয়ে এখন রাত অন্ধকার হয়ে গেছে। এ-সময়ে এসে সৈনিকদ্বয় হাদীদ ও শারিনার সন্ধান পেয়ে গেল। তারা একসঙ্গে এসেছিল। একজন বলল, আমি স্যারকে সংবাদটা জানিয়ে আসি । বলেই সে ওখান থেকে দৌড় দিল । শারিনা ও হাদীদ যে-ধাবমান পদশব্দ শুনেছিল, সেটি এই আওয়াজই ছিল আর ওদিকে তাকিয়ে এক সিপাইকে দণ্ডায়মান দেখতে পেল। শারিনা তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি কি দৌড়ে এসেছিলে? কিন্তু উত্তরে সে প্রতারণার আশ্রয় নিল যে, ক্ষুধার্ত ভিখিরী সাজল এবং খাবার ভিক্ষা করতে লাগল । শারিনা তার উপর কিছুটা ক্ষোভ ঝেড়েছিল বটে; কিন্তু মানবতার কথা চিন্তা করে কিছু খাবার দিল। এর মধ্যে তার সঙ্গী কেলাশের কাছে পৌঁছে গেল এবং তারা ঘোড়ায় চড়ে এখানে এসে পড়ল। কেলাশ যখন শারিনাকে কাছ থেকে দেখল, তখন তার বিস্ময়ের অবধি রইল না যে, মেয়েটা আসলে শারিনা-ই ছিল। তার বিশ্বাস হতে চাচ্ছিল না, রাজপরিবারের একটা মেয়ে অচেনা একজন পুরুষের সঙ্গে এই বিজন অরণ্যে এভাবে অবস্থান নিয়ে আছে!
কেলাশ শারিনার সঙ্গে আরও অনেক কথা বলল। কিন্তু তার বক্তব্য মেয়েটার উপর কোনোই ক্রিয়া করল না। সে মুসলমানদের খুব গালাগাল ও বদনাম করল এবং
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!