মুজাহিদদের জীবনকথা ১ম খণ্ড ও ২য় খণ্ড – ওবায়দুর রহমান – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ ওবায়দুর রহমান
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৬২
মুজাহিদদের জীবনকথা ১ম খণ্ড ও ২য় খণ্ড – বইটির এক ঝলকঃ
কথায়- “এরা শরীয়তকে চামড়া, অর্থাৎ বহিরাবরণ মনে করে বসে আছে, আর হাকীকতকে মনে করে নিয়েছে মূল ও আসল। প্রকৃত ব্যাপার কি, তা তারা আদৌ বুঝতে পারছে না।” তিনি শরীয়ত ও মারেফাতের যথার্থ সম্পর্ক সম্বন্ধে তাঁর বিখ্যাত ‘মাকতুবাত’-এ বলেন ঃ
“কাল কিয়ামতের দিন শরীয়ত সম্পর্কেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাসাউফ সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞাসা করা হবে না। জান্নাতে যাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া শরীয়তের বিধান পালনের উপর নির্ভরশীল। নবী-রাসূলগণ- যারা গোটা সৃষ্টিলোকের মাঝে সর্বোত্তম শরীয়ত অনুসরণ করারই দাওয়াত দিয়েছেন। পরকালীন নাযাতের জন্য শরীয়তই একমাত্র উপায় বলে ঘোষণা করেছেন। এ মহান মানবদের দুনিয়ায় আগমনের উদ্দেশ্যই হল শরীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা। সবচেয়ে নেকীর কাজ হল শরীয়তকে চালু করা এবং আদেশসমূহের মধ্যে একটি হুকুমকে হলেও জিন্দা করার চেষ্টা করা, বিশেষ করে এমন সময়, যখন ইসলামের নাম-নিশানা মুছে গেছে, কোটি কোটি টাকা আল্লাহর পথে খরচ করাও শরীয়তের মাসআলাকে চালু করার সমান সওয়াবের কাজ হতে পারে না।”
বাতিলপন্থীদের সৃষ্ট ‘শেরক’ ও ‘বেদআত’-এর পন্থা থেকে দ্বীনে হককে উদ্ধার করে সঠিক পন্থার উপর প্রতিষ্ঠিত করতে তাঁকে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছিল, একথাই বলা বাহুল্য। এ সময় হযরত শায়খ আহমদের মত শক্তিশালী ধর্মীয় নেতার আবির্ভাব না ঘটলে উপমহাদেশে ইসলামের কি অবস্থা দাঁড়াত, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। ইসলামের আলো নিভে যেত না সত্য। কারণ, আল্লাহ কোরআনে বলেছেন : “আল্লাহ তাঁর আলো পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন যদিও প্রত্যাখ্যানকারীরা তা অপছন্দ করে।” (৬১ ঃ ৮) তবুও উপমহাদেশে ইসলামের তৎকালীন বিপর্যয় যে প্রবল ঝঞ্ঝার আকার ধারণ করেছিল, তাকে সামাল দিতে হযরত শায়খ আহমদের মত ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব অপরিহার্য ছিল, একথা অনস্বীকার্য। তৎকালীন মুসলিম উম্মাহর বিচারে এবং সময়ের পরিমাণে সঠিকভাবে চিহ্নিত হয়ে তিনি মুজাদ্দিদরূপে বরিত হয়েছেন। হিজরী দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মুজাহিদ বা ‘মুজাদ্দিদ আলবে সানী রূপে তিনি সমধিক পরিচিত এবং উপমহাদেশ তার মাধ্যমে আলোকোজ্জ্বল ইসলাম জ্ঞান-ভাণ্ডার লাভ করে ধন্য হয়েছে।
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহঃ) তাঁর বিরচিত পুস্তকাবলীর মধ্যে নির্ভেজাল ইসলামী জ্ঞানের দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তাঁর রচিত ‘মাকতুবাত’, ‘মাবদা ও মাআদ এবং ‘মারিআফে লাদ্দুনিয়া’ অমূল্য গ্রন্থরূপে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। এই জ্ঞান-তাপস মনীষী ১০৩৪ হিজরী সনের ২৮শে সফর (৩০ নভেম্বর ১৬২৪ খৃঃ) রোজ বুধবার ইন্তেকাল করেন। নিজ জন্মস্থান সেরহিন্দে তাঁকে সমাহিত করা হয়। নবুওতের প্রাথমিক বছরগুলোতে সত্য ধর্মের আহ্বান কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই ধনসম্পদের সুখ ও বিলাসপূর্ণ জীবনের আয়েশ স্বেচ্ছায় ত্যাগ করে অতি অল্প যে কয়েকজন সম্মানিত সাহাবী আল্লাহর দ্বীনের কৃচ্ছতাপূর্ণ জীবন বেছে নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে হযরত মুস’আব ইবনে উমায়ের (রাঃ) ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছেন। তিনি ছিলেন মক্কার কোরাইশদের বনু আবদুদ্দার গোত্রের এক ধনবান পরিবারের আদরের লালিত সন্তান। তাঁর মত সুবেশী, সুদর্শন যুবক মক্কায় দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না। তাঁর সুশ্রী চেহারা মানুষকে মুগ্ধ করত। তাঁর ইসলামপূর্ণ জীবন সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি সর্বোত্তম মানের পোশাক পরতেন, যে রাস্তা দিয়ে তিনি হাঁটতেন তা সুবাসিত হয়ে যেত এবং তাঁর পায়ে জমিদার হাজরামী জুতা শোভা পেত। এসবের উপরে মহান আল্লাহ তাঁকে সুন্দর স্বভাব দান করেছিলেন। এহেন কান্তিময় বিলাসপূর্ণ জীবনের অধিকারী মানুষটি আল্লাহর রসুলের ডাক শুনামাত্রই সামাজিক সকল পদমর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা ত্যাগ করে তার মুষ্টিমেয় অনুসারীদের কাতারে সামিল হয়েছিলেন ।
পরিবারের সদস্যরা তাঁর ইসলাম গ্রহণের সংবাদ পেয়ে হাত-পা বেঁধে তাঁকে এক নির্জন কক্ষে বন্দী করে রাখল, কিন্তু শত অত্যাচারও তাঁকে সত্যপথ থেকে বিচ্যুত করতে পারল না। অবশেষে তাঁকে বাড়ী থেকে বহিষ্কার করে দেয়া হল । মক্কায় আনুষ্ঠানিক এবাদতে অংশ গ্রহণে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় নবুওয়তের পঞ্চম বছরে হযরত রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নির্দেশে আবিসিনিয়া হিজরতকারী সাহাবাদের সংগে হযরত মুসা’আব (রাঃ) আবিসিনিয়ায় গমন করেন এবং হযরত মহানবী (সাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের পূর্বেই প্রত্যাবর্তন করে। হযরত মহানবী (সাঃ) তাঁর সম্পর্কে খুব উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। আবিসিনিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর উপর নতুন করে অনুষ্ঠিত অত্যাচার-নির্যাতনে তাঁর সুশ্রী চেহারা নিঃশেষিত হয়ে যায়। তিনি এমন বৈরাগ্য অবলম্বন করেন এবং তাঁর অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, রেশমের পোশাকের পরিবর্তে তিনি একখানা কম্বলের অর্ধেক পরিধান করতেন এবং বাকী অর্ধেক গায়ে জড়াতেন ।
নবুওয়তের দ্বাদশ বছরে ইয়াসরিববাসীদের বার জনের দ্বিতীয় দলটির সংগে হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর ইতিহাস খ্যাত আকাবার প্রথম ‘বাইয়াত’ অনুষ্ঠিত হয়। হযরত মুস’আব ইবনে উমায়ের (রাঃ) সেই অনুষ্ঠানে হযরত নবীজীর সংগে উপস্থিত ছিলেন। ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ করে বার ব্যক্তি যখন ইয়াসরিবে ফিরে যান, রসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন হযরত মুস’আবকে ইসয়াসরিববাসীদেরকে কোরআন ও ইসলামের বিষয়ে শিক্ষা দানের জন্য তাদের সাথে প্রেরণ করেন। পবিত্র কোরআনে তাঁর অগাধ অধিকার ছিল এবং উঁচুমানের সাধারণ শিক্ষাও তাঁর ছিল।
প্রচারকার্যে হযরত মুস’আব বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, মিষ্টভাষী ও সুকৌশলী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর ধৈর্যশীল বিনয়-নম্র ব্যবহার তাঁর প্রচারকার্যে অনেক সহায়ক হয়েছিল। তাঁর প্রচার দক্ষতায় হযরত মহানবী (সাঃ) হিজরত করে ইয়াসরিবে পৌঁছার পূর্বেই বহুসংখ্যক পৌত্তলিক ইয়াসরিববাসী তাঁর হাতে ইসলামে দ্বীক্ষিত হন এবং সেখানকার সমাজ জীবনে ইসলামের জন্য তিনি একটা অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সমর্থ হন।
ইয়াসরিবে সর্বপ্রথম জুম্মার নামায অনুষ্ঠিত হয় হযরত মুস’আব (রাঃ)-এর ইমামতিতে। জুম্মার নামায ইতিপূর্বেই ফরয করা হলও মক্কায় তখনও সে আদেশ বাস্তবায়িত করা সম্ভব ছিল না। হযরত রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুমতিক্রমেই ইয়াসরিবের স্বচ্ছন্দ পরিবেশে সেখানে তিনি জুমার প্রচলন করেন। তাঁর প্রচার এবং ইমামতি কাজে তাঁর সহকারীরূপে এবং স্থলাভিসিক্তরূপে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) নামক একজন অন্ধ সাহাবীকেও তাঁর সংগে পাঠিয়েছিলেন। এরা দু’জনই ছিলেন আল্লাহর দ্বীনের জন্য মক্কা থেকে ইয়াসরিবের হিজরতকারী প্রথম মুহাজির।
এরূপ বর্ণনা পাওয়া যায় যে, মুসা ইবনে উকবা (রাঃ) হযরত মু’আবের পূর্বেই ইয়াসরিবে জুম্মার নামায প্রবর্তন করেছিলেন। অন্য এক রেওয়ায়েত মতে ইয়াসরিববাসী হযরত আস’আদ ইবনে যুরারা (রাঃ) প্রথম থেকেই এ নামাযের ইমামতি করতেন। এ দুটি দাবীই এ কারণে ভ্রান্ত মনে হয়ে যে, হযরত মুস’আব ইবনে উমায়ের (রাঃ) আকাবার প্রথম বাইয়াত গ্রহণকারী বার ব্যক্তির সংগে ইয়াসরিবে পৌঁছার পূর্বে সেখানে জুম্মার নামায প্রবর্তনের কোন প্রশ্নই ছিল না এবং তিনি বা হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত থাকতে অন্য কারোর ইমামতি করার প্রশ্নই ছিল না। প্রথমোক্ত দু’জন সাহাবীই হযরত মুসআবের হাতে ইসলামের দীক্ষালাভ করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন সবার মধ্যে শ্রেষ্ঠ আলেম। অন্যের ইমামতিতে তিনি মোক্তাদি হয়ে নামায পড়বেন, এরকম ভাবা যায় না। এমন হতে পারে যে, হযরত রসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক নিযুক্ত দুই ইমামের অনুপস্থিতে নৈমিত্তিকভাবে অন্য কেউ কখনও ইমামতি করেছেন, কিন্তু তা উল্লেখের মত নয় ।
হিজরত পরবর্তী সময়ের মাথায় মুহম্মদ ইবনে কা’ব আল-কুরাজীর হযরত আলী ইবনে আবু তালিবে (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে- “একদিন আমরা যখন হযরত রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সংগে মসজিদে উপবিষ্ট ছিলাম, তখন তালি-লাগানো তাঁর একমাত্র পরিধান বস্ত্র কম্বল পরিহিত হয়ে মুস’আব ইবনে উমায়ের সেখানে উপস্থিত হন। রসূলুল্লাহ (সাঃ) -তাঁর এ পোশাক দেখে তাঁর অতীত জাঁকজমক ও স্বচ্ছলতার কথা স্মরণ করে অশ্রুবর্ষণ করলেন। (তিরমিযী)
হযরত মুস’আব (রাঃ) বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। সেই যুদ্ধে তাঁর ভ্রাতা কোরাইশদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে মুসলিম বাহিনীর হাতে কোরাইশদের ৭০ জন যুদ্ধবন্দীর অন্যতম হয়ে মদীনায় আনীত হলে হযরত মুস’আব তাকে কঠোর ভাষায় তিরষ্কার করেছিলেন। তাঁর মাতা অত্যন্ত কমনীয় চরিত্রের অধিকারীণীরূপে পরিচিতা ছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও মাতার প্রতি তিনি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন। এ থেকে অনুমান করা যায়, তাঁর পরিবারের কাছ থেকে তিনি কি পরিমাণ যন্ত্রণা পেয়েছিলেন এবং কত গভীর প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন আসাদ বংশীয় হান্না বিনতে জাহশ, কিন্তু তার ভূমিকার বিষয়ে কিছু জানা যায় না ।
ওহুদের যুদ্ধে হযরত মুসআবের ভূমিকা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে । মুসলিম তীরন্দাজদের কর্তব্যে অবহেলার ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়ের পরে কোরাইশ বাহিনীর তীব্র আক্রমণের কালে হযরত রসূলে খোদা আবদুদ্দারের অতীত প্রভাব-প্রতিপত্তির বিবেচনায় মুসলিম বাহিনীর পতাকার দায়িত্ব দিলেন হযরত মুস’আব ইবনে উমায়েরের হাতে। পতাকার মর্যাদা রক্ষার জন্য মুস’আবকে প্রথম থেকেই আক্রমণের উপর আক্রমণ সহ্য করতে হয় এবং শত্রুবাহিনীর তীর ও তরবারীর আঘাতে তাঁর আপাদমস্তক একেবারে জর্জরিত হয়ে যায়। তাঁর এ অবস্থার মধ্যে ইবনে কামিয়া নামক এক দুর্ধর্ষ কোরাইশ বীর এগিয়ে এসে তাঁর ডান বাহুর উপর এক প্রচণ্ড আঘাত হানে। আঘাতে বাহুখানা কেটে পড়ে যাওয়ার সংগে সংগে তিনি বাম হস্তে পতাকা ধারণ করেন। কিন্তু অবিলম্বে ইবনে কামিয়ার দ্বিতীয় আঘাতে বাম বাহুখানাও কেটে পড়ে গেল। পরক্ষণেই শত্রুপক্ষের একটা তীর এসে বক্ষ ভেদ করে চলে গেল। হযরত মুস’আব মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অমনি শহীদের জীবনলাভ করলেন ।
হযরত মুসআবের শাহাদতবরণে যুদ্ধের গতি সহসা স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং এ অবস্থাটা প্রায় অরক্ষিত হযরত রসূলুল্লাহর জীবন রক্ষার সহায়ক হয়েছিল একটা গুজবের ভেতর দিয়ে। হযরত রসূলে খোদার বাহ্যিক চেহারার সাথে মুসআবের চেহারার কিছু সাদৃশ্য ছিল। অন্ততঃ ইবনে কামিয়া সে রকমই দেখেছিল। এ বাহ্যিক সাদৃশ্যে বিভ্রান্ত হয়ে মহা-উল্লাসে সে চিৎকার করে ছুটল— “ইন্না মুহাম্মাদান ক্বাদ কুতেলা”- মুহাম্মদ নিহত হয়েছেন। তারপরের বিবরণ দিতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়। ভ্রান্ত সংবাদটার নিরসনের পূর্বেই মুসলিম বাহিনীর মধ্যে বিশৃংখলা দেখা দেয়। মাত্র অল্প কয়েকজন নবীপ্রাণ সাহাবী মহানবী (সাঃ)-কে ঘিরে রেখেছিলেন। সেই অবস্থায় দুরাত্মা ইবনে কামিয়ার তরবারীর আঘাতে তাঁর শিরস্ত্রাণের দু’টি কড়া তাঁর পবিত্র মস্তকে ও কপালে বিদ্ধ হয়ে যায়, শত্রুর নিক্ষিপ্ত একটি প্রস্তরের আঘাতে তাঁর একটি মোবারক দাঁত (বর্ণনান্তরে ৪টি) শহীদ হয় এবং তিনি শত্রুর একটি গর্তের মধ্যে পড়ে যান। তীরন্দাজদের অবহেলায় সংঘঠিত বিপর্যয়ের আগেই মুসলিম সৈন্যদের প্রবল আক্রমণে কোরাইশ বাহিনীর অধিকাংশই পরাজয় মেনে চলে গিয়েছিল এবং অনেক ক্ষতির ভেতর দিয়ে বিজয় হয়েছিল মুসলিম বাহিনীরই। প্রিয়নবী (সাঃ)-কে গর্ত থেকে উঠানোর পরে তাঁর যথাযথ শুশ্রূষা করা হয় এবং তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এ যুদ্ধে হযরত মুস’আব ইবনে উমায়ের (রাঃ) এবং প্রিন্স নবীজীর প্রিয় পিতৃব্য হযরত হামযা (রাঃ)সহ মোট ৭০ জন মুসলিম সৈন্য শহীদ হয়েছিল।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর প্রাণপ্রিয় সাহাবী মুস’আব (রাঃ)-কে হারিয়ে যারপরনাই দুঃখ পেয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দান শান্ত হওয়ার পর শহীদদের লাশসমূহ যখন সংগ্রহ করা হয়, হযরত নবীজী তখন মুসআবের লাশের পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে যান এবং পাক কোরআনের এ আয়াতটি আবৃত্তি করেন :
“বিশ্বাসীদিগের মধ্যে অনেকে আল্লাহর সংগে কৃত তাহাদিগের অংগীকার পূর্ণ করিয়াছে, উহাদিগের কেহ কেহ শাহাদতবরণ করিয়াছে এবং কেহ কেহ প্ৰতীক্ষায় রহিয়াছে। উহারা তাহাদিগের ইচ্ছায় কোন পরিবর্তন করে নাই।” (৩৩:২৩ )
এরপর প্রিয়নবী (সাঃ) শোকার্তচিত্তে বললেন : “মক্কায় আমি তোমার মত সুদর্শন এবং সুন্দর পোশাক পরিধানকারী আর কাউকে দেখিনি। কিন্তু আজ দেখছি যে, তোমার চুল অবিন্যস্ত ও মাটিতে লেপ্টে রয়েছে এবং তোমার শরীরের উপর একটি মাত্র কম্বল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, কেয়ামতের দিন তোমরা আল্লাহর সান্নিধ্যে উপস্থিত হবে।
শহীদগণকে তাদের রক্তরঞ্জিত বস্ত্রে বিনা গোসলে ও বিনা জানাযায় দু’তিন জন করে এক কবরে সমাহিত করা হয়। হযরত মুস’আব ইবনে উমায়ের (রাঃ)-কে কবরস্থ করার জন্য প্রস্তুত করতে যেয়ে দেখা গেল যে, তাঁর পরিধেয় কম্বলখানা দৈর্ঘ্যে এত খোটো যে, তদ্বারা তাঁর মস্তক আবৃত করলে তার পা-দুখানা অনাবৃত হয়ে যায় এবং পা-দু’খানা আবৃত করলে মস্তক অনাবৃত হয়ে পড়ে। তখন হযরত রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- “তাঁর মস্তক আবৃত করো এবং এজখের ঘাস দ্বারা তার পা আবৃত করো।” (বোখারী ও মুসলিম)। এককালের সর্বোত্তম পোশাকধারী সুন্দর সুন্দরতম মানুষটি এভাবেই দ্বীনহীন বস্ত্রে এ নশ্বর দুনিয়া ত্যাগ করলেন।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!