কিলার কোবরা – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

কিলার কোবরা – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১১১

কিলার কোবরা – বইটির এক ঝলকঃ

ওটাকেও খুনের নেশায় পেয়েছে। কেইপ অনুসরণ করছে, কাজেই রানা সেটাকে ধীরভঙ্গিতে ঘোরাল, একটা বৃত্ত তৈরি করাল ষাঁড়কে দিয়ে।
গ্যালারি থেকে এক লোক উল্লাসে ফেটে পড়ল, “রিঙে আজ আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? দেখতে পাচ্ছি সত্যিকার একজন পুরুষকে!”
প্রথম খাঁচা থেকে বলা হলো, ‘এমন একজন বীরকে শিশুর সঙ্গে লড়তে দেয়া রীতিমত অপমানকর।’
খেলা জমে উঠল। কেইপটা এমনভাবে ধরছে রানা, ষাঁড়ের শিং সেটার নাগাল পেলে ওরও নাগাল পেয়ে যাবে। এরকম ভয়ঙ্কর ঝুঁকি অভিজ্ঞ ম্যাটাডররাও নিতে সাহস করে না, কিন্তু রানা মজা পাচ্ছে। মজা পাবার কারণ হলো, ষাঁড়টা ওর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যতবার কেইপটা ঝাঁকি খেলো, ততবারই শিং নামিয়ে ধেয়ে এল ওটা। একেবারে শেষ মুহূর্তে হয় কেইপ সরিয়ে, নয়তো নিজে লাফ দিয়ে সরে গিয়ে আত্মরক্ষা করছে রানা। গ্যালারিতে স্তব্ধ হয়ে গেছে সবাই। ষাঁড় ও রানা বিরতিহীন খেলাটা চালিয়েই যাচ্ছে। দু’জনেই ওরা ক্লান্তিহীন। সত্যি কি তাই? রানার মনে হলো, ষাঁড়ের গতি একটু যেন মন্থর হয়ে পড়েছে। চোখে কেমন উদভ্রান্ত দৃষ্টি। আবার যখন ছুটে এল, ছোট্ট লাফ দিয়ে শুধু স্থান বদল করল রানা, দূরত্ব বাড়াল না। ওর শরীর ধনুকের মত বাঁকা হয়ে গেল, তা না হলে একটা শিং গেঁথে না গেলেও ওর পেটে ঘষা খেত। ঝোঁক সামলাতে না পেরে আগের চেয়ে বেশি ফুটল ষাঁড়, ঘুরে ফিরে আসতেও বেশি সময় নিচ্ছে ।
রিঙের পাশ থেকে টেরেসার গলা ভেসে এল, ‘পুরস্কার নিয়ে যাও, আলবার্তো!”
শেষবার রানাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল ষাঁড়, ঘুরল, তারপর স্থির হয়ে দাঁড়াল; ফিরে আসার কোন লক্ষণ নেই। ঘোড়া ছুটিয়ে রিঙের মাঝখানে চলে এল একজন পিকাত্তর, বল্লম দিয়ে ভয় দেখিয়ে দ্বিতীয় বাঁচায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল ওটাকে ।
ক্লান্ত রানা দম ফেলারও সময় পেল না, প্রথম খাঁচা থেকে রিঙে বেরিয়ে এল পূর্ণবয়স্ক একটা ষাঁড় বেরিয়েই সরাসরি হামলা করল, যেন টেরেসার ভক্তরা ওটার কানে মন্ত্র পড়ে দিয়েছে।
1
‘এ অন্যায়!’ প্রতিবাদ করল টেরেসা। ‘ক্লান্ত একজন মানুষকে এভাবে বিপদে ফেলার কোন মানে হয় না।
তার এক ভক্ত চিৎকার করে জানাল, ‘এই দৈত্যটাকে সিনর সানসেজ হত্যা করুন, আমরা তাঁকে মাথায় তুলে নেব।”
দৈত্য ছুটে আসছে দেখেও রানা এক চুল নড়ল না। দূর থেকে দর্শকরা সবাই দেখতে পেল ওর বুক ঘন ঘন ওঠা-নামা করছে। কাস্তে আকৃতির জোড়া শিং নত হলো, তারপরও রানার বুকে আঘাত করতে পারবে। কেইপ দিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে ও, ষাঁড় ওর অবস্থান পুরোপুরি ঠাহর করতে পারছে না। প্রায় ষোলোশো পাউন্ড ওজন, ছুটন্ত একটা ট্রেনই বলা যায়। বাহাদূরি দেখাবার লোভই রানাকে নড়তে দিল না। কেইপে টান দিল শিং, খানিকটা ছিঁড়েও গেল, তবে হাতছাড়া হলো না। এক কি আধ ইঞ্চি দূর দিয়ে ওকে পাশ কাটিয়েছে ষাঁড়, আলোড়িত বাতাসের ধাক্কা লাগল গাঁয়ে।
‘আলবার্তো। আমি বলছি, পালিয়ে এসো তুমি’ টেরেসা চিৎকার
করছে।
রানার সময় কোথায় যে তার কথায় কান দেবে! নতুন শুরু হওয়া এই ব্যালেতে একটা জ্যামিতিক ছন্দ তৈরি হলো, ফলে নেশাটা আরও বাড়ল ওর। প্রথম কয়েকবার সরলরেখা ধরে আক্রমণ করল ঘাতক পশু। এই প্যাটার্ন একঘেয়ে হয়ে উঠছে দেখে রানা চেষ্টা করল ওটাকে দিয়ে একটা বৃত্ত তৈরি করাতে।
কয়েকবার চেষ্টা করার পর প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর প্রতিষ্ঠিত হলো শুর নিয়ন্ত্রণ। ষাঁড়টা এখন বৃত্ত তৈরি করছে, সেই বৃত্তের একটা বিন্দু রানা। বিন্দুর অবস্থান ঠিক থাকছে, তবে বৃত্তটা ছোট হয়ে আসছে ক্রমশ, সেই সঙ্গে রানার পাশ কাটানো হয়ে উঠছে ধীরগতি ও সাবলীল। যত ধীর ও আঁটসাঁট, ততই ভাল হচ্ছে নাচটা। তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিপদের মাত্রাও।
জ্যামিতিক ছন্দটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠল রানা, ষাঁড়টাকে নিজের ইচ্ছামত চক্কর খাওয়াচ্ছে অনায়াস ভঙ্গিতে। টেরেসার ভক্তরা বুঝতে পারছে, সানসেজের ‘খুন’ হবার কোনই সম্ভাবনা নেই। রিঙের ভেতর এবার তারা আরেকটা পূর্ণবয়স্ক দৈত্যকে ছেড়ে দিল।
ইতিমধ্যে গ্যালারি ভরে উঠেছে দর্শকে। ষাঁড় দুটো পালা করে আক্রমণ চালাচ্ছে বলেই রক্ষে, প্রতিবার একটা করে ষাঁড়কে সামলাতে হচ্ছে রানার। তবে বিরতি ও বিশ্রাম না পাওয়ায় একটু পরই ওর দম ফুরিয়ে এল। ষাঁড় যখন টার্গেট লক্ষ্য করে ছুটে আসছে, রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে দর্শকরা, ষাঁড় বা ম্যাটাডরকে খুন হতে দেখার জন্যে ব্যাকুল। ম্যাটাডর কোন রকমে নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ হলো, দেখে তুমুল করতালিতে ফেটে পড়ল
তারা।
রিঙের কিনারা ধরে ঘোড়া ছোটাচ্ছে টেরেসা, সতর্ক চোখে নজর রাখছে রানার ওপর। মাঝে মধ্যে গ্যালারি ও প্রথম বাঁচার লোকজনের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হচ্ছে তার।
ওদের কথায় কান নেই রানার। খেলাটা এখন আর শুধু রোমাঞ্চকর নেশা নয়, কৌশল ও দক্ষতার সাহায্যে আত্মরক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহস, উপস্থিত বুদ্ধি, শারীরিক শক্তি কাজে লাগিয়ে এখনও রানা অক্ষত, এবং টিকে আছে; কিন্তু আর কতক্ষণ এই অসম যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে তা বলার উপায় নেই। খেলাটা এমন এক পর্যায়ে পড়াচ্ছে, শারীরিক সামর্থ্য নির্ধারণ করবে নিয়তি। ক্লান্তি হবে ঘাতক। ষাঁড় যদি ওর চেয়ে বেশিক্ষণ ফি থাকতে পারে, রানার পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেজন্যেই রানা দৌড়াদৌড়ি করছে না। তিনটে প্রাণী মিলে একটা ছক তৈরি করল ওরা। প্রথম ষাড় পূর্ব থেকে পশ্চিমে, তারপর পশ্চিম থেকে পুবে ছুটে আসছে। ওটার আসা-যাওয়ার সরল পথটার মাঝখানে স্থির থাকছে রানা দ্বিতীয় ষাঁড় দক্ষিণ থেকে উত্তরে, তারপর উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটে আসছে; এই পথেরও মাঝখানে স্থির একটা বিন্দু রানা। প্রথম ধাড় রানাকে পাশ কাটালে দ্বিতীয় ষাঁড় আর দেরি করছে না, নিজের পথ ধরে বেপরোয়া গতিতে ধেয়ে আসছে। কোনটাই সময়ক্ষেপণ করতে রাজি নয়।
ক্লান্ত হলেও, ধাড় দুটোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে রানা, ছকটা তৈরি করে টিকিয়ে রাখতে পারাই তার প্রমাণ। এভাবে কতক্ষণ চালানো যাবে তা হয়তো অনিশ্চিত, তবে টেরেসার ভক্তরা এ সব দেখে স্বভাবতই হতাশ হয়ে পড়েছে। টেরেসার প্রবল আপত্তি কানেই তুলল না, न রসিকতায় মেতে উঠল তারা প্রথম খাঁচা খুলে আরেকটা দানবকে ঢুকিয়ে দিল রিঙের ভেতর।
আগের ষাঁড় দুটো থমকে দাঁড়াল, কারণ নতুনটা মাটি কাঁপিয়ে ছুটে আসছে। উত্তর-পূর্ব কোণ থেকে এল ওটা, শিঙে কেইপ আটকে নিয়ে রানাকে পাশ কাটাল, মট করে ভেঙে গেল কেইপের মাথার দিকে পরানো কাঠের সুরু দত্ত, তবে ছেঁড়া কেইপ রানার হাতেই রয়ে গেল। গতির ঝোঁক সামলে নিয়ে ঘুরল ওটা, আবার ছুটে আসছে। লাল কাপড়টা দু’হাতে মেলে ধরল রানা, প্রতিদ্বন্দ্বীকে ক্লান্ত করার জন্যে বারবার ঝাঁকাচ্ছে ওটা আহ্বান জানাচ্ছে বিরতিহীন হামলা করার, যতক্ষণ না ওর শার্ট শত্রুর রক্তে দশ- বারো জায়গায় রাঙা হলো। মানুষ ও পশু পরস্পরকে নিয়ে এমনই মেতে আছে, শুধু যেন ওরাই বাস্তব, বাকি সবাই এতই তুচ্ছ যে অস্তিত্বহীনই যায়। খেলাটা নতুন ধাড় কেড়ে নিয়েছে, বাকি দুটোর তা পছন্দ হলো না দুটোর একটা তেড়ে এল। দুটো দু’দিক থেকে আসছে, মাঝখানে রানা অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।
‘আলবার্তো, পালাও!’ নারীকন্ঠের চিৎকার, টেরেসার গলা; প্রায় হাহাকারের মত শোনাল, ভেসে এল যেন অনেকদূর থেকে।
চোখের কোণ দিয়ে একজন পিকাস্তরকে দেখতে পেল রানা, বল্লম হাতে ওর কাছাকাছি দিয়ে ছুটে যাচ্ছে, উদ্দেশ্য তৃতীয় ষাঁড়টাকে লড়াই থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। থমকে দাঁড়িয়ে আছে তৃতীয় গাড়, দিক বদলে পিকাডরকে ধাওয়া করল দ্বিতীয়টা, প্রথমটা আগের মতই রানাকে লক্ষ্য করে ছুটে আসছে। দ্বিতীয় ষাঁড় অশ্বারোহী পিকাডরকে অনুসরণ করছে, রানার সামনে দিয়ে ছুটে যাবে তারা। হঠাৎ নড়ে উঠল ও শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। পিকাত্তরের হাতে বাগিয়ে ধরা বল্লম, ছোঁ দিয়ে সেটা কেড়ে নিল, দু’হাতে খাড়া করে ধরে শুয়ে পড়ল প্রথম ষাঁড়ের ছুটে আসা পথের ওপর। পৌঁছাল, টপকে গেল ওকে, হৃৎপিণ্ডে ঢোকা বল্লম ওর হাতছাড়া হয়ে গেছে। উল্লাসে ফেটে পড়ল গ্যালারি। কিন্তু তারপরই শুরু হলো আবার সেই দু’মুখো আক্রমণ। এবার ছকটা বদলে গেল। পালা করে নয়, একযোগে ছুটে আসছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ষাঁড়। দুম শেষ, রানার পক্ষে এখন আর দুটোকে সামলানো সম্ভব নয়। পজিশন ঠিক রাখতে পারছে না, আত্মরক্ষার জন্যে পিছিয়ে না এসে উপায় নেই। ষাঁড়গুলো যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে, ধীরে ধীরে ওকে কোণঠাসা করে ফেলছে। খাঁচার রঙে পিঠ ঠেকিয়ে হাঁপাচ্ছে রানা, দুটোর যে-কোন একটা ছুটে এসে পেটে শিং ঢোকালেই হয়, ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে।
একটা ষাঁড় পাহারা দিচ্ছে, ও যাতে পালাতে না পারে। আরেকটা খাঁচার গা ঘেঁষে ছুটে আসছে ওকে লক্ষ্য করে। এখন স্থির দাঁড়িয়ে থাকা মানে আত্মহত্যা করা, কাজেই ফাঁকা জায়গার সন্ধানে ছুটল রানা, পাহারাদারকে পাশ কাটিয়ে। ছেঁড়া কেইপটা কিভাবে যেন জড়িয়ে গেল পায়ে, দড়াম করে আছাড় খেলো ও ।
ঠিক সময়মতই দাঁড়াতে পারল রানা, হামলা এড়াবার জন্যে কেইপটা মেলে ধরল একপাশে। ষাড় ওটাকে ছিঁড়ে দু টুকরো করল। এরপর প্রহরী ছুটে এল, শিঙে আটকে নিল ওর শার্ট। ক্ষুরের পোচ যেমন নিখুঁত হয়, শিঙে উগা ঠিক সেভাবে চিরে দিল শার্টটাকে। মাথা নিচু করে ছিল, ফলে শিঙের কিনারা ঘষা খেলো রানার হাঁটুতে। ছিটকে তিন হাত দূরে পড়ল ও। বুঝতে পারছে, মৃত্যু এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ষাঁড় দুটোও তা জানে।
ক্লান্ত শরীরটা অলসভঙ্গিতে সিধে করল রানা, চোখে সর্ষে ফুল দেখছে, এই সময় দুই শিঙের মাঝখানে ওকে আটকে নিল একটা ষাঁড়। ওটার কাঁধ ও পিঠের ওপর ডিগবাজি খেলো রানা, মাটিতে পড়ার পর নেশাগ্রস্ত মাতালের মত মাথা ঝাঁকাচ্ছে। দ্বিতীয় ষাঁড় ঝোঁক সামলাতে না পেরে বেশ খানিকটা ছুটে গেল, প্রথমটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করছে ওকে।
“আলবার্তো।’
চোখের কোণ দিয়ে রানা দেখল, টেরেসার সাদা আরব স্ট্যালিয়ন একপাশ দিয়ে ছুটে আসছে। সেদিকে তাকিয়ে ইতস্তত করছে দ্বিতীয় ষাঁড় । কিন্তু তা মাত্র মুহূর্তের জন্যে। হঠাৎ প্রলয়ংকরী একটা ঝড়ো তাণ্ডবে পরিণত হলো হিংস্র পশুর আচরণ। রানার একটা হাত টেরেসার ঊরু খামচে ধরল, তারপর লাফ দিয়ে উঠে বসল তার পিছনে। উঠে যখন বসছে, ষাঁড়টার শিং ওর বুটে সামান্য একটু ঘষা খেলো মাত্র। টেরেসার বল্লম আগেই ওর হাতে চলে এসেছে, এই সুযোগে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ষাঁড়টার গলায় গেঁথে দিল যত দূর ঢোকে। গলায় বল্লম নিয়ে পড়ে গেল ওটা, ঘোড়া ছুটিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে এল টেরেসা।
রানা যেখানে ঝুলে ছিল, ঘোড়ার সাদা পিঠ সেখানে লাল হয়ে গেছে। নিরাপদ দূরত্বে সরে এসেই ঘোড়া থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামল টেরেসা। ‘ফার্নান্দেজ, নতুন একটা কেইপ আর তলোয়ার দাও আমাকে।’ ঘোড়ার পিঠ থেকে ঠিক নামছে না, গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে রানা; গলায় জোর আনার চেষ্টা করে বলল, ‘না, টেরেসা, তুমি না ওগুলো আমাকে WIG…
ছুটে এসে ওকে ধরে ফেলল টেরেসা, মাটিতে বসে কোলে তুলে নিল মাথাটা, মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ‘তুমি যা দেখালে স্পেনের প্রফেশন্যাল ম্যাটাডররাও তা দেখাতে সাহস করবে না। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তুমি জিতেছ, আলবার্তো-আই লাভ ইউ।’ রানাকে চুমো খেয়ে ঘাড় ফেরাল সে, চোখের দৃষ্টি খুঁজে নিল পাবলোকে। ‘জলদি, পাবলো ডাক্তারকে খবর দাও। আলবার্তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
রিঙের মাঝখানে গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিঃসঙ্গ ষাঁড়। তার সঙ্গী গলায় বল্লম নিয়ে কিছুক্ষণ ছটফট করার পর স্থির হয়ে গেছে। ডাক্তারকে খবর দিতে হলো না, তিনি গ্যালারিতেই ছিলেন। রানাকে তাঁর হাতে ছেড়ে দিয়ে সিধে হলো টেরেসা, নতুন কেইপ আর তলোয়ার নিয়ে রিঙের
মাঝখানে চলে আসছে।
রানা জ্ঞান হারায়নি, ক্লান্তিতে চোখ বুজে পড়েছিল। উঠে বসে তাকাতেই দেখতে পেল রিঙের মাঝখানে টেরেসা আর ষাঁড় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
ষাঁড়টা রানার মতই ক্লান্ত। শিং দুটো নিচু করে রেখেছে, ছুটে আসা আগের মত ক্ষিপ্র নয়। খাপ থেকে তলোয়ার বের করল টেরেসা। তিন ফুট লম্বা ফলা, ডগার দিকটা নিচের দিকে বাঁকা। মাথা ঝাঁকিয়ে চোখ থেকে সোনালি চুল সরাল সে, তলোয়ার তাক করল দুই শিঙের মাঝখানে। ‘টোরো, এদিকে আয়,’ হুকুম করল সে।
ষাঁড় এল। শিং দুটো অনুগত ভঙ্গিতে অনুসরণ করল কেইপটাকে, টেরেসা সেটাকে মাটিতে ঘষা খাইয়ে সরিয়ে নিচ্ছে। তার ডান হাত, যে হাতে তলোয়ার, ছুটে আসা ষাঁড়ের মাথার ওপর উঠে গেল। পিকাত্তরের তৈরি করা ক্ষতটা খুঁজে নিল তলোয়ার, ক্ষতের ভেতর ধারাল ফলাটা ঢুকাতে সাহায্য করল ষাঁড়েরই প্রচণ্ড গতি, একেবারে সেই হাতল পর্যন্ত। তলোয়ারও ঢুকল, টেরেসাও পাক খেয়ে সরে এল।
স্থির হয়ে গেছে ষাঁড়। বিপুল বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে উঠল চোখ দুটো। আক্রমণ করার শক্তি ফুরিয়ে গেছে। ওটার রক্তাক্ত কাঁধে তলোয়ারের হাতলটাকে এখন আর চেনা যাচ্ছে না, দেখে মনে হচ্ছে কয়েকটা বুদ্বুদের সমষ্টি। তারপর পাক খেতে শুরু করল আহত প্রতিদ্বন্দ্বী, পাগুলো পরস্পরের কাছ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। তিন-চারটে পাক খাওয়ার পর দড়াম করে আছাড়ে পড়ল মাটিতে।

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top