জুলকেলা – ফরাজি জুলফিকার হায়দার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

জুলকেলা – ফরাজি জুলফিকার হায়দার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ ফরাজি জুলফিকার হায়দার

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৪৪

জুলকেলা – বইটির এক ঝলকঃ

ভয় নাই, ভীতি নাই, কাহাকেও সঙ্গে নিবার প্রয়োজন নাই । তাহাকেই আল্লাহর নবী করিয়াছেন, দীন প্রচার তাঁহাকেই করিতে হইবে। অবহেলা করিলে চলিবে না। তাই দূত মুখে খবর পাইয়াই মহানবী কাবাপ্রাঙ্গণে কোরাইশদের সভায় যাইয়া উপস্থিত হইলেন ।
কোরাইশগণ আবার তাঁহাকে প্রলোভন দেখাইতে লাগিল । তোমার যদি ধন- সঞ্চয়ের বাসনা থাকে তবে এখনই আমরা তোমাকে আরবের সর্বপ্রধান ধন-কুব করিয়া দিতেছি, যদি সম্মান লাভের ইচ্ছা থাকে তাহাও খুলিয়া বল আমরা তোমাকে আমাদের প্রধান বলিয়া স্বীকার করিয়া লইতেছি। আর যদি রাজত্ব করিবার ইচ্ছা থাকিয়া থাকে, তবে তাহাও খুলিয়া বল আমরা তোমাকে সমগ্র আরবের একচ্ছত্র অধিপতি বলিয়া বরণ করিয়া লই। তবু তোমার প্রচার বন্ধ কর।
তাহাদের কথা শেষ হইলে মহানবী বলিলেন, ধন-দৌলত, মান-সম্মান, সিংহাসন এবং রাজ-মুকুট এ সকল তুচ্ছ পদার্থের আমার প্রয়োজন নেই । প্রকৃত কথা হল এই যে আল্লাহ সত্য ও জ্ঞানের আলো দিয়ে ইহ-পরকালের মুক্তির পথ দেখাবার জন্য আমাকে আপনাদের নিকট প্রেরণ করেছেন। তার বাণী আমার নিকট এসেছে। আপনারা যদি সে বাণীকে গ্রহণ করেন, তা হলে তদ্বারা আপনারাই ইহ- পরকালে সফলতা লাভ করবেন। আর যদি আপনারা উহা অস্বীকার করেন, তাহলে আমি ধৈর্যধারণ করব, আল্লাহর যা ইচ্ছে তাই হবে।
মহানবীর কথা শুনিয়া কোরাইশগণ রাগে গজগজ করিতে লাগিল । আৰু জেহেল বলিল, মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের সমস্ত কথাই আজ তোমাকে বলে দিয়েছি। অতএব সাবধান! নিশ্চিত রূপে স্মরণ রেখো আমরা আর তোমাকে এ অধর্মের কথাগুলো প্রচার করতে দেব না। দেহে প্রাণ থাকতে না। এতে হয় আমরা শেষ হব, না হয় তুমি। এই শেষ কথা ।
মহানবীর দৃঢ়তা এবং কোরাইশদের প্রতিজ্ঞার কথা আবূ জেহেল যথা সময়ে জুলকেলাকে জানাইয়া দিল। জুলকেলা এই ভাবিয়া আশ্বস্ত হইলেন যে কোরাইশ তাহাদের প্রতিজ্ঞা হরফে হরফে পালন করিবে।
কোরাইশগণ তাহাদের প্রতিজ্ঞা পালনে ব্রতী হইল। মহানবী এবং মুসলমানদের সঙ্গে তাহারা সর্বপ্রকার লেনদেন ওঠা-সবা, চলা-ফিরা এমন কি কথা বার্তা বলা পর্যন্ত বন্ধ করিয়া দিল, সামাজিক বর্জননীতি অবলম্বন করিল। মহানবী বাধ্য হইয়া মুসলমানদের লইয়া আবূ তালেবের শেব গিরি সংকটে চলিয়া গেলেন।
অতিরঞ্চিত করিয়া আবু জেহেল জুলকেলাকে জানাইল, আমরা মুহাম্মদের (সাঃ) সর্বপ্রকার প্রচারকার্য বন্ধ করিয়া দিয়াছি। সে প্রাণ ভয়ে একটি দুর্গে স্বশিষ্যে আশ্রয় লইয়াছে। আমরা বেতনভোগী লোকদ্বারা দুর্গের চারিপার্শে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করিয়াছি যাহাতে সে এবং তাহার অনুসারীরা বাহিরে আসিতে না পারে। বাহির হইতে সর্বপ্রকার সরবরাহ বন্ধ করিয়া দিয়াছি।
খবর শুনিয়া জুলকেলা যারপর নাই আনন্দিত হইলেন, যাক! আপদ চুকিয়াছে। কিছুদিন পরেই কাহতানীয়ায় খবর পৌঁছিল যে মক্কার সেই মুহাম্মদ ( সাঃ ) তাঁহার ধর্ম প্রচার করিবার জন্য তায়েফ গিয়াছেন, জুলকোর দুশ্চিন্তা বাড়িয়া গেল । তিনি ভাবিয়া পাইলেন না, মুহাম্মদ (সাঃ) এত সহজেই বন্দীদশা হইতে মুক্তি পাইলেন কেমনে। সে তায়েফ পর্যন্ত আসিয়া পৌছিয়াছে। সীমান্তবর্তী শহর তায়েফ । আমার রাজ্যে ঢুকিয়া পড়িতে আর কতক্ষণ ।
জুলকেলা কালবিলম্ব না করিয়া তাহার প্রধান সেনাপতি হারিছকে কয়েকজন দুর্ধর্ষ সৈনিকসহ তায়েফের সমাজপতি উরওয়া ইবনে মাসউদ, আব্দে য়ালিন, মাসউদ এবং হাবিবের নিকট প্রেরণ করিয়া জানাইলেন, শুনিলাম মক্কার নবী নামধারী মুহাম্মদ (সাঃ) নাকি আপনাদের শহরে আসিয়া উৎপাত শুরু করিয়াছে। তাহাকে বন্দী করিয়া আমার প্রেরিত লোকদের হাতে সমর্পণ করিবেন আমি তাহার উপযুক্ত বিচার করিব ।
তায়েফ সমাজপতিগণ বড়ই আফসোস করিয়া জুলকেলাকে জানাইল, খুবই পরিতাপের বিষয় যে আপনার প্রেরিত লোক তায়েফ আসিবার দুই দিন পূর্বেই সেই নবী নামধারী লোকটি মক্কায় চলিয়া গিয়াছে । আমরা ততটুকু চিন্তা করিতে পারি নাই । তাহা না হইলে তাহাকে বন্দী করা মোটেই কঠিন কর্ম ছিল না। তবে আপনি শুনিয়া আনন্দিত হইবেন যে আমরা তাহাকে এমনিতে ছাড়ি নাই। ইট পাটকেল, পাথর-লুণ্ঠ মারিয়া আধমরা করিয়া সমস্ত শরীর লহু-লাল হইয়া তায়েফের মাটি সিক্ত হইয়াছে। সে যে শিক্ষা পাইয়া গিয়াছে তাহাতে আর কোন দিন সে তায়েফের নাম মুখে আনিবে না ।
মহানবীকে বন্দী করা গেল না, ইহা শুনিয়া জুলকেলা যতটুকু মনক্ষুণ্ণ হইলেন, তাহার চাইতেও বেশি খুশি হইলেন মহানবীর নির্যাতনের কথা শুনিয়া। জুলকেলা ভাবিলেন মক্কা কেন্দ্রীক মুহাম্মদ (সাঃ) যখন তাহার প্রচার চালাইবার জন্য বর্হিমুখো হইয়াছে, তবে বলা যায় না যে কোন সময় সে আমার রাজ্যেও ঢুকিয়া পড়িতে পারে ।
তাই হুঁশিয়ার জুলকেলা তাহার সীমান্তবর্তী এলাকায় কড়া পাহারার ব্যবস্থা করিলেন যেন মহানবী তাহার রাজ্যে ঢুকিতে না পারে ।

আজ ইয়াওমুল আছনাম বা একটি প্রতিমা দিবস। জুলকেলা সাড়ম্বরে সিংহাসনে সমাসীন। রোবাইয়াও স্বামী পাশে বসিয়া। লোকজন দলে দলে আসিয়া প্রথামত গড়প্রণাম করিয়া সাধ্যমত নজরানা দিয়া সম্রাট-সম্রাজ্ঞীকে মাল্যভূষিত করিতেছে। স্তূপীকৃত হইয়া উঠিল নজরানার দ্রব্যাদি। মন্দিরেও চলিয়াছে জুশেরা জুলকেলার বেদিমূলে গড়প্রণাম, মাল্যদান ।
পূজা সাঙ্গ করিয়া প্রচুর ভুরিভোজনে তৃপ্ত হইয়া জনসাধারণ সম্রাটের গুণ কীর্তনে পঞ্চমুখ হইল। শুধু রাজধানীতেই নয় সাড়ম্বরে দিবসটি পালিত হইল রাজ্যের সর্বত্র। বিকালে রাজধানীতে শুরু হইল শারীরিক কসরতের মহড়া, মল্ল-যুদ্ধ, কাব্যপ্রতিযোগিতা, ঘোড় দৌড়, বাণ-বর্শা নিক্ষেপ। বিজয়ীদেরকে জুলকেলা নিজ হাতে করিলেন আশাতীত পুরস্কার প্রদান ।
সন্ধ্যার পর শুরু হইল গান-বাজনা আর নৃত্যানুষ্ঠান। চন্দ্রিমাতে বিধৌত হইতেছে কাহতানীয়ার মরু তেপান্তর, স্নাত হইতেছে জাবালে কোরার কৃষ্ণ গাত্র। চন্দ্রালোক পিয়াসী কাহতানীয়ার নর-নারীর উষ্ণে শোনিতে নাচিয়া উঠিল আদিম নিশা । বালক-বালিকারা আনন্দে শুরু করিল হই-হুল্লোড় লাফালাফি । নৃত্য তালে মাতিয়া উঠিয়াছে নর্তকীরা খোলা মঞ্চে জুলকেলা উপবিষ্ট সাথে রোবাইয়া । যথা মর্যাদানুযায়ী পরিষদবর্গ সমাসীন। সাফীয়া করিতেছে পানীয় পরিবেশন।
জুলকেলা রোবাইয়া এবং জুশেরা ঠাকুরের স্মৃতি গাহিয়া আজকের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হইল। তারপর শুরু হইল অশ্লীল প্রেমসংগীত। মুহুমুহু করতালি এবং হুল্লোড়ে প্রকম্পিত হইতে লাগিল কাহতানীয়ার আকাশ-বাতাস। খান খান হইতে লাগিল রাত্রির নীরবতা।
হঠাৎ কি হইল । প্রাণভয়ে ভীত নরনারী ছেলে-মেয়ে যে যে দিকে পারিল ছুটিয়া পালাইতে ব্যস্ত হইয়া পড়িল। কিসের গান, কিসের নাচ, সকলের মুখেই একই চিৎকার ।
কাদ শাককাল কামার! কাদ শাক্কাল কামার! চন্দ্র দ্বি-খণ্ডিত হইয়া গিয়াছে! চন্দ্ৰ দ্বি-খণ্ডিত হইয়া গিয়াছে। চিৎকার শুনিয়া জুলকেলা এবং অন্যান্য সকলে আকাশ পানে দৃষ্টি করিয়া দেখিলেন নীলাকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দ্বি-খণ্ডিত হইয়া রহিয়াছে । তাই দেখিয়া প্রাণ ভয়ে ভীত জনতা এক অজানা আতংকে চিৎকার করিতে করিতে যে যে দিকে পথ পাইতেছে সে সেই দিকেই ছুটিয়া পালাইতেছে। আকাশের চাঁদ দ্বি- খণ্ডিত হয় এমন অভাবনীয় কাণ্ড কে কবে দেখিয়াছে? তাই, জনতার ভয় পাওয়াটা বিচিত্র কিছু নয় ।
চন্দ্রের দ্বি-খণ্ডন অবস্থাটা কে প্রথম দেখিয়াছিল তাহা জানা গেল না বটে। কিন্তু চাঁদ দ্বি-খণ্ডিত, এমন অভূতপূর্বকাণ্ড দেখিয়া জুলকেলা এবং অন্যান্যরাও প্রথমে ভরকাইয়া গেল । মহাপ্রলয় কি এখনই শুরু হইবে?
দেখিতে দেখিতে দ্বি-খণ্ডিত চাঁদ আবার একত্রে মিলিয়া গেল। কি আশ্চর্য। হয়ত অনেকেই ব্যাপারটা লক্ষ্যই করে নাই । যাহারা এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে নাই, তাহারা কি ইহা বিশ্বাস করিবে? নিজ চোখে না দেখিলে জুলকেলাও ইহা বিশ্বাস করিতেন না বলিয়া মত প্রকাশ করিলেন। যাহা হউক, জুলকেলা তৎক্ষাণাৎ তাহার রাজ জ্যোতিষকে চন্দ্র দ্বি-খণ্ডিত হওয়ার কারণ এবং ফলাফল গুণিয়া বাহির করিবার নির্দেশ দিয়া অন্তপুরে গমন করিলেন।
পরের দিন যথারীতি দরবার বসিলে জুলকেলা জ্যোতিষকে চন্দ্র দ্বি-খণ্ডিত হওয়ার কারণ এবং ফলাফল ব্যক্ত করিবার নির্দেশ দিলেন। জ্যোতিষী বলিল, জনাবে আলা! মক্কা শহরে যে লোকটি নিজেকে আল্লাহর নবী বলে দাবি করেছেন তিনি মক্কাবাসীর এক প্রশ্নের জবাবে তাঁর নবুয়তের প্রমাণ স্বরূপ গতরাত্রে অঙ্গুলির ইশারায় চন্দ্র দ্বি-খণ্ডিত করে দেখিয়েছেন। ফলাফলে পাওয়া গেল দ্বি-খণ্ডিত চন্দ্র পুনরায় একত্রে মিলে গেছে। গণনায় এর বেশি ফলাফল পাওয়া গেল না।
জ্যোতিষীর কথা শুনিয়া জুলকেলার মনে নানা প্রকার জিজ্ঞাসা ঘুরপাক খাইতে লাগিল । লোকটি যদি আল্লাহর নবী নাই-ই হইবে তবে পৃথিবীতে বসিয়া আকাশের চন্দ্র দ্বি-খণ্ডিত করিল কেমন করিয়া। আর যদি নবী-ই হইবে তবে তায়েফবাসী তাহাকে হটাইয়া নগর হইতে বাহির করিয়া দিল, অথচ তাহাদের উপর আল্লাহর গজব 1 আসিল না কেন?
অনেক চিন্তা ভাবনা করিয়া জুলকেলা সঠিক তথ্য এবং বিস্তারিত বিবরণ জানিবার জন্য তাহার একজন সভাষদকে মক্কায় আবূ জেহেলের কাছে পাঠাইয়া দিলেন। সভাষদটি মক্কায় পৌঁছিয়া সরাসরি আবূ জেহেলের সঙ্গে দেখা করিল এবং চন্দ্ৰ দ্বি-খণ্ডিত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিল।
আবূ জেহেল সভাষদকে বুঝাইয়া বলিল, মুহাম্মদ (সাঃ) একজন মস্ত বড় জাদুকর। জাদুর প্রভাবেই সে চন্দ্র দ্বি-খণ্ডিত করেছে। শুধু তাই নয়, তার জাদু মন্ত্রের এমনি প্রভাব যে খুব সহজেই তা শ্রবণকারীর সুঅনুভূতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায়। যার ফলে শ্রবণকারী তৎক্ষণাৎ মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ধর্মমত গ্রহণ করে ফেলে এবং দেব দেবীর নিন্দা করতে থাকে। আপনি যদি মুহাম্মদের (সাঃ) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তবে আপনাকেও সে মন্ত্রতাড়িত করে ফেলবে।
আবূ জেহেলের কথা শুনিয়া সভাষদটি খুবই ভয় পাইয়া গেল এবং সেই দিনই সে মক্কা ত্যাগ করিল। কাহাতানীয়ায় পৌঁছিয়া সে আবূ জেহেলের কথাগুলি জুলকেলাকে শুনাইল ।
সভাষদের মুখে এতটুকু শুনিয়া জুলকেলা সন্তুষ্ট হইতে পারিলেন না । আরও বিস্তারিত তথ্য জানা দরকার। এই মানসে জুলকেলা তাহার সভাকবি তোফায়েল ইবনে আমেরকে মক্কায় প্রেরণ করিলেন। ইনি ছিলেন জুলকেলার শ্বশুর গোত্র বনি আজদ কবিলার দাউছ গোত্রের লোক। কবি হিসাবে সারা আরবে ছিল তাহার খ্যাতি ।
তোফায়েল মক্কায় পৌঁছিয়া কোরাইশ দলপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া তাহার আগমনের কারণ খুলিয়া বলিলেন ।
কোরাইশগণ তাহাকে সম্মানের সহিত অভ্যর্থনা জানাইল। আবূ জেহেল তাহাকে সাবধান করিয়া বলিল, মুহাম্মদ (সাঃ) অতি ভয়ংকর লোক। এমন জাদুকর আর হয় না । তাহার কথা শোনামাত্রই মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে, সে জাদুর প্রভাবেই চাঁদ দ্বি-খণ্ডিত করেছিল। এ লোকটি তার জাদুমন্ত্রের দ্বারাই আমাদের মধ্যে বিভেদ তোফায়েল আর কোরাইশদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করিয়া অতি সঙ্গোপনে মক্কা ত্যাগ করিলেন ।
আবূ রাফের পরিণতির কথা তোফায়েলের স্মরণ আছে। তাই সতর্ক হইলেন । তিনি কাহতানীয়া পৌছিয়া জুলকেলাকে বলিলেন, মক্কার কোরাইশ সর্দারগণ বললেন, মুহাম্মদ (সাঃ) নাকি জাদুমন্ত্রের জোরেই চন্দ্র দ্বি-খণ্ডিত করেছেন। এমন জবাবে জুলকেলা সন্তুষ্ট হইতে পারিলেন না। তিনি বলিলেন, তুমি কি মুহাম্মদের (সাঃ) সঙ্গে দেখা করনি?
– তোফায়েল বলিলেন, হ্যাঁ, দেখা করেছি কথাও বলেছি, কিন্তু তাকে জাদুকর বলে মনে হল না । হলে বুঝতে পারতাম । জুলকেলার বিস্ময়। তবে চাঁদ দ্বি-খণ্ডিত হল কেমন করে?
তোফায়েল পাশ কাটাইয়া বলিলেন, সেই তো কথা জনাবে আলা! তা কেমন
করে হল!
জুলকেলা ডান হাতের তালুতে মাথা রাখিয়া ঈষৎ ঝুঁকিয়া তোফায়েলের কথাগুলি ভাবিতেছেন। মনে হইল তোফায়েলের কথাগুলি কেমন যেন পাশ কাটানোর উত্তর। তোফায়েলের প্রতি তাহার সন্দেহ হইল। না! তোফায়েলকে ছাড়া যায় না। তাহাকে বন্দী করিতে হইবে। তিনি মাথা তুলিয়া চাহিয়া দেখেন, কক্ষ শূন্য। তোফায়েল কখন যেন চলিয়া গিয়াছে। তোফায়েলকে বন্দী করিবার জন্য জুলকেলা তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তোফায়েলকে আর কাহতানীয়ায় খুঁজিয়া পাওয়া গেল না ।
তোফায়েল সেই দিনই কাহতানীয়া ছাড়িয়া স্বদেশে চলিয়া গেলেন । ইতিহাস পাঠক মাত্রই অবগত আছেন যে, তোফায়েল প্রথমেই পিতাকে বুঝাইয়া ইসলামে দিক্ষিত করিলেন। কিন্তু বাকিয়া বসিলেন তাহারই সহধর্মিনী । তিনি বলিলেন, ইসলাম গ্রহণ করলে আমার এ শিশুটির কি উপায় হবে? জুশেরা ঠাকুর এবং জুলকেলা ঠাকুরের অভিশম্পাতে শিশুটি অকালে প্রাণ হারাবে যে।
তোফায়েল স্ত্রীকে অনেক বুঝাইলেন যে পাথরের মূর্তির কোন ক্ষমতাই নাই । শেষ পর্যন্ত তিনিও ইসলাম গ্রহণ করিলেন।
তোফায়েলের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং প্রচারণার ফলে অল্প দিনের মধ্যেই দাউছ গোত্রের প্রায় সকলেই (কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে দুইশত জন) ইসলাম গ্রহণ করিয়া ধন্য হইলেন। )
দাউছ গোত্রের মন্দির হইতে তোফায়েল জুলকেলা এবং জুশেরা ঠাকুরসহ অন্যান্য বিগ্রহগুলি ভাঙ্গিয়া চুড়িয়া সরাইয়া ফেলিলেন। এই ব্যাপারে এমন সতর্কতা এবং গোপনীয়তা রক্ষা করা হইল যে প্রথমবস্থায় জুলকেলা ইহা জানিতেই পারিলেন না ।

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top