যে গল্পে অশ্র ঝরে – মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১১৩
যে গল্পে অশ্র ঝরে – বইটির এক ঝলকঃ
বাগদাদের এক প্রসিদ্ধ চোর। তার মূল নাম অনেকেই জানে না। ইবনে সাবাত নামেই সর্বত্র তার পরিচিতি। চুরির অপরাধে সে অনেক আগেই একটি হাত হারিয়েছে। কিন্তু তারপরেও চুরির অভ্যাস ছাড়তে পারেনি সে।
এক রাতের ঘটনা।
চুরির উদ্দেশ্যে বাগদাদের অলিতে-গলিতে আপন মনে হাটছিল ইবনে সাবাত। এভাবে হাটতে হাটতে অনেক রাত হয়ে গেল। কিন্তু চুরি করার মত পছন্দসই কোন ঘর সে খুঁজে পেল না। এতে তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। কিন্তু হঠাৎ একটি ঘরের দিকে চোখ পড়তেই তার হৃদয়-মন আনন্দে নেচে উঠল। ভাবল, নিশ্চয় এটা কোন অভিজাত গোত্রের নেতৃস্থানীয় লোকের বাসস্থান হবে। যদি কোন রকম উহা থেকে চুরির কাজটি সমাধা করে ফিরতে পারি তাহলে আজকের রাতে বেশ কামাই হবে। বিবি-বাচ্চা নিয়ে দুচার দিন আচ্ছা মত আমোদ-প্রমোদ করা যাবে । সাথে সাথে উন্নত মানের মুখরোচক খাবারও ভাগ্যে জুটবে ।
এসব চিন্তা করতে করতে এক সময় সে অতি সন্তর্পনে ঘরের বিশাল দরজায় হাত রাখল। অতঃপর সামান্য ধাক্কা দিয়ে বুঝল দরজা ভিতরে খোলা। ভিতরের দিক থেকে তা লাগানো হয়নি ।
সে মনে মনে বেশ খুশি হল। দরজা খোলা পেয়ে অত্যন্ত চুপিসারে ঘরে ঢুকে সে দেখল, একটি কক্ষে খেজুর পাতার একটি চাটাই বিছানো । তার এক পার্শ্বে চামড়ার একটি বালিশ। কোনায় রয়েছে দামী-দামী কাপড়ের একটি বিশাল স্তুপ। সে বুঝল, বাড়ীটি নিশ্চয়ই কোন বড় ব্যবসায়ীর হবে ।
মূল্যবান কাপড়-চোপড় দেখে প্রথমে সে খুশিতে আটখানা হলেও পরক্ষণেই একথা ভেবে চিন্তিত হলো যে, এগুলো সে নিবে কিভাবে? এগুলো বাধার জন্য রশি পাবে কোথায়?
হঠাৎ তার মনে হল, আরে, আমার গায়ের চাদর দিয়ে পেচিয়ে তো নিতে পারি। একথা মনে আসতেই সে গায়ের চাদর খানা খুলে চাটাইয়ের উপর বিছাল। এরপর কাপড়ের থানগুলো একটি একটি করে তার উপর রেখে গাট্টি বাধতে চেষ্টা করল। কিন্তু সফল হল না। কারণ এক হাত দিয়ে কি গাট্টি বাধা যায়? অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে আবারো বাধতে চেষ্টা করল। কিন্তু এবারও সে ব্যর্থ হল ।
এভাবে কয়েকবার চেষ্টা করার পর ভয়, উৎকণ্ঠা ও ক্লান্তিতে সে হাঁপাতে শুরু করল। মনে মনে আফসোস করে বলল, হায়! এত মূল্যবান জিনিষ পেয়েও শুধু বাধতে না পারার কারণে বুঝি নিতে পারব না। আহা, যদি আমার আরেকটি হাত থাকত।
হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজে সে উৎকর্ণ হল। সোজা হয়ে দাড়িয়ে দৌঁড় দেয়ার মনস্থ করল। কিন্তু ততক্ষণে একজন লোক বাতি হাতে তার সামনে এসে দাঁড়াল। এতে সে ঘাবড়ে গেলে লোকটি অভয় দিয়ে মুচকী হেসে বলল, আরে বন্ধু। এ কাজ তো একা করা যায় না। আমাকে সাথে নিলে অনেক সুবিধা হবে।
একথা বলে সে বাতিটিও নিভিয়ে দিল। তারপর চোরকে লক্ষ্য করে বলল, ভাই! তুমি দেখছি বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছ। একটু বিশ্রাম নাও তুমি । আমি খুঁজে দেখি কোন খাবার পাওয়া যায় কি না। এতে তোমার ক্লান্তি দূর হবে। এরপর আমরা দুজনে মিলে এ কাজ সমাধা করব। আর শোন-এ বাড়ীতে আমার জানামতে আর কেউ নেই। সুতরাং তোমার ভয় পাওয়ারও কোন কারণ নেই । এতটুকু বলে লোকটি চলে গেল ।
এবার ইবনে সাবাত ভাবতে লাগল, লোকটি আবার এ বাড়ীর মালিক নয়তো? সে আমার সাথে কোন চালাকী করছে না তো? এমনও তো হতে পারে যে, সে আমাকে বসিয়ে লোক ডাকতে গেছে। কিংবা আমাকে মারার জন্য হাতিয়ার তালাশ করতে গেছে। সুতরাং আমার এখান থেকে এক্ষুনিই কেটে পড়া উচিত।
এতটুকু চিন্তা করে সে এক কদম এগুতেই লোকটি এক পেয়ালা দুধ হাতে সেখানে এসে উপস্থিত হল। সে পেয়ালাটি চোরের হাতে দিয়ে বলল, নাও ভাই! এই দুধটুকু পান করে নাও। এতে তোমার ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। লোকটির কথা শুনে চোরের মনে স্বস্তি ফিরে এল। সে তার হাত থেকে পেয়ালাটি নিয়ে এক চুমুকে সবটুকু দুধ সাবাড় করে ফেলল । তারপর ভাবতে লাগল, হয়ত সেও আমার মত একজন চোর। আমি আগে মালপত্র গুছিয়ে ফেলেছি বিধায় সে এতে ভাগ বসানোর জন্যই আমাকে এতটা আদর আপ্যায়ন করছে।
একথা মনে আসতেই সে লোকটিকে লক্ষ্য করে বলল, মনে হয় তুমি আমি একই পথের যাত্রী। একই বিদ্যায় উভয়ে পারদর্শী। তবে শুনে রেখ, আজকে তোমার কোন আশাই পূর্ণ করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। সুতরাং তুমি যদি মালে ভাগ বসানোর আশায় বসে থাক তবে সে আশা আশাই থেকে যাবে। পূরণ হবে না কখনো। অবশ্য ভবিষ্যতে যদি তুমি আমার সাথে কাজ কর তবে যা মাল পাব তা ফিফটি ফিফটি করে ভাগ করে নেব, আজকে কিন্তু ভাগ নেয়ার অপেক্ষায় থেকো না। কারণ আজকে এখানে আমি আগে এসেছি এবং কাজও প্রায় সেরে ফেলেছি।
লোকটি তার একথা শুনে বলল, ঠিক আছে আগামীতেই আমি আপনার সাথে কাজ করব। আজ আপনি যা ভাল মনে করেন তাই হবে। এখন জলদি কাজ সারা প্রয়োজন। দেরী করলে ধরা পড়ার আশংকা আছে। একথা বলে লোকটি নিজেই দুটি গাট্টি বাধল। তন্মধ্যে একটি ছোট একটি বড়। সে ছোট গাট্টিটি চোরের মাথায় উঠিয়ে দিয়ে নিজে বড় গাট্টিটি মাথায় নিল। অতঃপর বাড়ী থেকে চুপিসারে বের হয়ে তারা উভয়েই একদিকে রওয়ানা করল।
অপরিচিত লোকটি বোঝা বহনে অভ্যস্থ ছিল না। তাছাড়া তার বোঝাটি অপর বোঝার তুলনায় বেশ বড়ও বটে। ফলে বাধ্য হয়েই তাকে আস্তে আস্তে চলতে হচ্ছিল।
লোকটির এই মন্থর গতিতে চলা ইবনে সাবাতের মোটেও সহ্য হচ্ছিল না। সে কয়েকবার তাকে তাড়াতাড়ি হাটার জন্য ধমক দিল। ধমক খেয়ে লোকটি একটু দ্রুত হাটার চেষ্টা করল। কিন্তু সামান্য পথ অগ্রসর হওয়ার পরই তার গতি পূর্বের ন্যায় স্লো হয়ে গেল। এতে ইবনে সাবাত রাগতঃ স্বপ্নে বকতে বকতে তাকে জোড়ে একটি ধাক্কা মেরে বলল, লোভী কোথাকার! চুরি করতে এসেছিস্ অথচ বোঝা বহন করতে পারিস না। নিতে না পারলে এত বড় গাট্টি বাধলে কেন ?
লোকটি এতই ক্লান্ত হয়ে গিয়ে ছিলো যে, সে কোন জবাব দিতেও সক্ষম ছিলো না। তারপরেও সে চুপচাপ আরেকটু জোরে হাটার আপ্রাণ চেষ্টা করল।
কিছুদুর অগ্রসর হওয়ার পর পথে একটি পুল পড়ল। পুলের উভয় পার্শ্ব ছিল অনেকটা ঢালু। ক্লান্ত শ্রান্ত লোকটি পুলে উঠার সময় দূর্বলতার কারণে বিশাল বোঝা নিয়ে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারল না। ফলে বোঝাটি মাথা থেকে নীচে পড়ে গেল। বোঝাকে রক্ষা করতে গিয়ে সে নিজেই বোঝার উপর আছড়ে পড়ল। এতে ইবনে সাবাত ক্রোধে লাল হয়ে তার গায়ে একটি প্রচন্ড লাথি বসিয়ে দিল। বলল, বর্বর কোথাকার! পারবে না তো এত বড় বোঝা বানিয়েছ কেন?
লোকটি জবাবে বিনয়ের সাথে বলল, ভাই! আমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি। এজন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। একথা বলে অসহায়ের মত হাঁপাতে হাঁপাতে অনেক কষ্ট করে পুনরায় বোঝাটি মাথায় উঠিয়ে আবার চলতে শুরু করল।
অসম্ভব ক্লান্ত হয়ে পড়ায় লোকটির দেহ কাঁপছিল। সোজা হয়ে হাটতে পারছিল না সে। তারপরেও ইবনে সাবাতের অশ্লীল বকুনী ও মারধরের ভয়ে সে দেহের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে দাঁত কামড়িয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিল। এভাবে চলতে চলতে এক সময় তারা শহর অতিক্রম করে একটি বিরান জঙ্গলে এসে পৌঁছল।
জঙ্গলের মাঝামাঝি গিয়ে ইবনে সাবাত দাঁত কটমট করে ব্যাঙ্গ স্বরে বলল, থাম্ বেটা! আর যেতে হবে না তোর। সারাটা পথ তুই আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছিস। বয়সে দেখা যায় তুই আমার অনেক বড় হবি। নইলে তোর আজ রক্ষে ছিল না। যা হোক তুই তোর পথ ধর। কোথায় যাবি যা। তোর আর এখানে কোন কাজ নেই ।
লোকটি ভীষণ কাঁপছিল। শীতের রাত্রি হওয়ায় পথ চলার সময় শীত ততটা অনুভব না হলেও এখন প্রচন্ড শীতে তার দাতগুলো ঠক্ ঠক্ করছিল। ইবনে সাবাতের কথা শুনে সে একটু এগিয়ে গিয়ে তার সাথে বিদায়ী মোসাফাহা করল এবং অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলল, ভাই! আপনার কাজে আমার যথেষ্ট ত্রুটি হয়ে গেছে। ফলে আপনার সীমাহীন কষ্ট হয়েছে। আপনি দয়া করে আমায় মাফ করে দিন। বলে লোকটি আপন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল।
ইবনে সাবাত ছিল অত্যন্ত লোভী। লোকটিকে ভাগ দিতে তার মন চাইছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও অপরিচিত লোকটির কথায় সে বেশ প্রভাবিত হল । ভাবল এতো দেখছি আশ্চর্য রকমের চোর। এমন ভাল চোর তো জীবনেও দেখিনি আমি। সে এতো কষ্ট করল, অথচ কিছু না নিয়েই চলে যাচ্ছে। সে আমার নিকট কিছুই চাইল না। কথাগুলো চিন্তা করতেই ইবনে সাবাতের মানবতাবোধ কিছুটা জাগ্রত হল ।
ইবনে সাবাত লোকটিকে পুনারায় ডাকল। বলল, আরে! তুমি কি
তোমার ভাগ নেবে না?
লোকটি বলল, ভাই! আমাকে কোন অংশ দিতে হবে না। অংশের কোন প্রয়োজনও নেই আমার। আপনি আমার মেহমান ছিলেন। সাধ্যমত আমি আপনার খেদমত করার চেষ্টা করেছি মাত্র। তবে বাস্তব সত্য হল, আমি আপনার তেমন কোন খেদমত করতে পারিনি। আশা করি এজন্য আপনি আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ইবনে সাবাত হতভম্ব হয়ে লোকটির মুখপানে তাকিয়ে রইল। তার মুখ থেকে কোন কথা সরল না। ভাবছিল সে।
কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর সে বলল, তাহলে কি তুমিই ওই বাড়ীর মালিক? তুমিই কি সেখানকার প্রধান কর্তা?
লোকটি বলল, জ্বী ভাই, ওটা আমারই গরীবালয়। এখন তো আপনি চিনতে পারলেন। আপনার দাওয়াত রইল। আশা করি যখনই সুযোগ হবে তখনই আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে আসবেন। আমি যথাসাধ্য আপনার খেদমত করার চেষ্টা করব। একথা বলে লোকটি সালাম দিয়ে চলে গেল ।
লোকটির গমন পথের দিকে ইবনে সাবাত অপলক নেত্রে তাকিয়ে রইল। কথা বলার ভাষাও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে। চিন্তা সাগরের অতল গহবরে হারিয়ে গেল সে। হঠাৎ অনেকটা আনমেই অস্ফুট স্বরে বলতে লাগল-
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!