জাপানী ফ্যানাটিক – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

জাপানী ফ্যানাটিক – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩২৮

জাপানী ফ্যানাটিক – বইটির এক ঝলকঃ

কোথাও। সরু একটা ফুটো দিয়ে ধীরে ধীরে পানি ঢুকলে এঞ্জিন কমপার্টমেন্ট ভরতে দু’ঘণ্টা লাগবে। কিন্তু যদি ফুটোটা বড় হয়, কামানের মত বিস্ফোরিত হবে পানি, ভেতরের দেয়াল এক পলকে চুরমার হয়ে যাবে। প্রশ্ন হলো, সরু ফুটোটা কি এরইমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কোন ইকুইপমেন্টের ক্ষতি করেছে? ফুটোটা কি এত বড় যে বন্ধ করা সম্ভব নয়? এল করে আরও একটু এগোল রানা। আওয়াজটা কাছাকাছি কোথাও থেকে আসছে। ভেতরে মিহি পানির কণা ভাসছে, কুয়াশার মত, ঝাপসা লাগছে সব কিছু। কুয়াশার ভেতর দিয়ে আরও একটু এগোল রানা। তারপর মাথায় একটা বুদ্ধি এল। পায়ের এক পাটি জুতো খুলে মুখের সামনে নাড়ল ও, একজন অন্ধ যেভাবে তার ছড়ি নাড়ে। এক মুহূর্ত পর প্রায় ছোঁ দিয়ে জুতোটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা হল। এতক্ষণে ফুটোটা দেখতে পেল ও। ওর সামনে, ডান দিকে, উজ্জ্বল একটা চকচকে ভাব।
সুচের মত সরু একটা ফুটো, কমপ্যাক্ট স্টীম টারবাইনের গায়ে। পিছিয়ে এসে স্পেয়ার পার্টস কেবিনেটটা খুলল রানা। ভেতর থেকে বের করল এক প্রস্থ হাই-প্রেশার রিপ্লেসমেন্ট পাইপ ও একটা ভারী স্লেজ-টাইপ হ্যামার।
ইতিমধ্যে মেঝেতে আধ মিটার পানি জমে গেছে। টেপ বা অন্য কিছু দিয়ে ফুটোটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। একটাই উপায় আছে, সেটা যদি ব্যর্থ হয়, নির্ঘাৎ ডুবে মরতে হবে ওদের। পাইপের একটা প্রান্ত ফুটোর ওপর ঠেকাল ও, অপর প্রান্তটা মোটা বাল্কহেড শীল্ডের ঢালু পায়ে চেপে ধরল। হাতুড়ি দিয়ে পাইপের নিচের দিকটায় যা মারল ও, ফুটো আর বান্ধহেড শীতের পায়ে শক্তভাবে আটকে গেল সেটা।
পানি ঢোকা বন্ধ হলো, তবে পুরোপুরি নয়। কোনমতেই এটাকে স্থানীয় সমাধান বলা যাবে না। ধীরে ধীরে বড় হবে ফুটোটা, ছিটকে পড়বে পাইপ। পানিতে বসে থাকল রানা। এক মিনিট পর ভাবল, ব্যাপারটা অদ্ভুত নয়? বরফের মত ঠাণ্ডা পানিতে বসে ঘামছি?
কনরো গাইওটে উঠে এল গোলা। ডিজিটাল ডেপথ রিডিং-এর দিকে তাকাল রানা। তিনশো বাইশ মিটার ওপরে সারফেস ।
“আপনার লোকদের কাউকে দেখতে পাচ্ছেন?’ জানতে চাইলেন পেনিংটন।
সোনার রাডার গ্লোবে হাত ছোঁয়াল রানা। ডিসপ্লেতে দশ বর্গ কিলোমিটার চূড়া সম্পূর্ণ খালি দেখা গেল। রানা আশা করেছিল, একটা রেসকিউ ভেহিকেল আসবে। কিন্তু আসেনি। ‘না।
‘ওপর থেকে ওরা আমাদের মিউজিক শুনতে পায়নি, এ স্রেফ বিশ্বাস করা যায় না।’
‘রেসকিউ অপারেশন শুরু করতে প্রস্তুতির জন্যে সময় লাগে, বিড়বিড় করল রানা। ও জানে, অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন ও ববি গুদের খোঁজে স্বর্গ-মর্ত্য তোলপাড় করে ফেলবেন। ওর প্ল্যানটা ওরা বুঝতে পারেনি, এটা মেনে নিতে মন চাইছে না। নিঃশব্দে চেয়ার ছাড়ল ও, এঞ্জিন কমপার্টমেন্টের দরজা তুলে ভেতরে তাকাল। ফুটোটা বড় হয়েছে, মেঝেতে পানি এখন এক মিটারের মত। আর চল্লিশ মিনিটের মধ্যে টারবাইন ডুবে যাবে। টারবাইন ডুবলে জেনারেটরও ডুববে। লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম কাজ না করলে ওরাও বাঁচবে না। ‘ওরা আসবে,’ বিড়বিড় করল রানা। আমি জানি, আসবে ওরা।
দশ মিনিট পেরিয়ে গেল। তারপর বিশ মিনিট। ভীতিকর একটা নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরল ওদেরকে।
“এখন কি হবে?’ জানতে চাইলেন পেনিংটন। ‘ওরা তো আসছে না।’
‘আমরা উদ্ধার পাব কি পাব না, নির্ভর করে ববির ওপর বলল রানা । “সে যদি ধরতে পারে আমি কি ভাবছি, তাহলে একটা সাবমারসিবল নিয়ে নিচে নামবে সে, ইকুইপমেন্ট থাকবে…
“কিন্তু আপনার বন্ধু ইতিমধ্যে আপনাকে একবার হতাশ করেছেন। ‘
“নিশ্চয়ই কোন বিপদে পড়ে আসতে পারেনি সে। নিজের চেয়ারে ফিরে এসে বসল রানা। লোলার আলো পড়েছে বাইরে, আলোয় আকৃষ্ট হয়ে এক কাঁক মাছ কাছাকাছি চলে এসেছে। সেদিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকাল ও। “কি ব্যাপার?”
“যেন মনে হলো একটা শব্দ শুনলাম!’
‘মনের ভুল,’ বললেন পেনিংটন। ধীরে ধীরে মরার চেয়ে হঠাৎ প্রাণ হারানোই ভাল বলে মনে করি, মি রানা। কেবিনটা পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে, আসুন, ঝামেলা সেরে ফেলি।’
হঠাৎ নিঃশব্দে হাসল রানা। চেয়ারে নড়ে বসল, তাকাল আপার ভিউইং উইন্ডোয়। লোলার পিছনে, সামান্য ওপরে ভাসছে নুমার একটা সাবমারসিবল। ভেতরে বসে রয়েছে ববি, বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে সে। বড়, গোল পোর্টে অ্যাডমিরাল জর্জ হ্যামিলটনকেও দেখা গেল।
রানাকে প্রচণ্ড শক্তিতে আলিঙ্গন করলেন ক্লোভার পেনিংটন, দম আটকে মারা যাবার অবস্থা হলো রানার। নিজেকে ছাড়াবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে ও পেনিংটন ওকে চুমো খেলেন। আপনি আমার আপন ভাই!
ছাড়া পেয়ে লম নিচ্ছে রানা, স্পীকারের ভেতর থেকে বেরিয়ে ববির গলা ভেসে এল, ‘আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?’
“কানে মধু বর্ষণ করছে হে!
‘দেরি করার জন্যে দুঃখিত, রানা। প্রথম সাবটা সারফেসে ওঠার পর ডুবে গেছে। এটার ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছিল, মেরামত করতে দেরি হয়ে গেল।
‘তোমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। গুড টু সী ইউ, অ্যাডমিরাল।
‘তোমার স্ট্যাটাস জানাও, নির্দেশ দিলেন অ্যাডমিরাল।
*একটা ফুটো তৈরি হয়েছে, আর কয়েক মিনিটের মধ্যে পাওয়ার সোর্স বন্ধ করে দেবে। বাকি সব ঠিক আছে। “
‘তাহলে আর কোন কথা নয়, আমরা কাজ শুরু করছি।’
অ্যাটাক সাবমেরিন সাউন্ডার থেকে অক্সিজেন কাটিং ইকুইপমেন্ট নিয়ে এসেছে ববি, সাবমারসিবলের যান্ত্রিক বাহুতে জোড়া লাগানো হয়েছে সেটা সেই কাটিং ইকুইপমেন্টের সাহায্যে লোলার সমস্ত মাউন্ট, ড্রাইভ শ্যাফট ইত্যাদি কেটে আলাদা করা হবে, উদ্দেশ্য মেইন ফ্রেম ও ট্র্যাক মেকানিজম থেকে কন্ট্রোল হাউজিং বিচ্ছিন্ন করা।
পঁয়ত্রিশ মিনিট পর লোলার শুধু কন্ট্রোল হাউজিংটা হুক দিয়ে আটকে পানির ওপর তোলা হল। অ্যাটাক সাবমেরিনের টাওয়ারে উঠে এল রানা, পানি থেকে টেনে তুলল পেনিংটনকে। বুক ভরে তাজা বাতাস নিলেন অদ্রলোক। রানার দিকে তাকালেন তিনি, কৃত্রিম আতঙ্কে পিছিয়ে গেল রানা। প্লীজ, আর না, স্রেফ মারা যাব।’
বেঁচে থাকার অপার আনন্দে পাগলের মত হেসে উঠলেন পেনিংটন।
নয়
৬ অক্টোবর, ১৯৯১। টোকিও, জাপান।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সুইসাইড স্কোয়াড-এর জাপানী পাইলটরা প্লেনে ওঠার আগের মুহূর্তে পরস্পরকে বিদায় জানাবার সময় বলত, ‘আবার দেখা হবে ইয়াসুকুনিতে।’
ইয়াসুকুনি হলো পবিত্র তীর্থ মন্দির। সেই ১৮৬৮ সাল থেকে সম্রাটের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে যারা মারা গেছে তাদের পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় মন্দিরটা। একটা ঢালের মাথায় বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে তীর্থভূমি, টোকিওর মাঝখানে। ঢালটার নাম কুড়ান ছিল। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানের জন্যে মূল হলটা তৈরি করা হয়েছে শিন্টো স্থাপত্য রীতি অনুসারে। ওখানে কোন রকম ফার্নিচার রাখা হয়নি।
প্রাচীন ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা শিন্টো আসলে জাপানীদের একটা সাংস্কৃতিক ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি, খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শিন্টো আজ বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত, দল-উপদলের সংখ্যা-সীমা নেই। অবশেষে শিন্টো বলতে মানুষ বোঝে, বিভিন্ন দেবতা বা ঈশ্বরের মাধ্যমে ঐশ্বরিক ক্ষমতা অর্জনের উপায় বিশেষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেখা গেল, শিন্টো হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় পূজাপদ্ধতি বা রাষ্ট্রীয় ধর্মবিশ্বাস ও নৈতিক দর্শন প্রচলিত অন্যান্য ধর্মের সাথে কোন মিলই নেই। আমেরিকানদের দখলে থাকার সময় শিন্টো তীর্থভূমি ও মন্দিরগুলো সরকারী সমর্থন হারায়, তবে পরে গুগুলোকে জাতীয় জাদুঘর, ধনভাণ্ডার ও পবিত্র সাংস্কৃতিক স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়। সমস্ত শিন্টো মন্দিরের ভেতরে, মূল উপাসনালয়ে, প্রধান পুরোহিত ছাড়া আর কারও প্রবেশ নিষেধ। প্রতিটি উপাসনালয়ের ভেতরে একটা বস্তু থাকে, ঐশ্বরিক আত্মা বা ক্ষমতার প্রতীক বলে মনে করা হয় সেটাকে, যা কিনা মহা-পৰিত্র হিসেবে মর্যাদা পায় ইয়াসুকুনিতে মহা-পবিত্র ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রতীক চিহ্ন হলো একটা আয়না।
ব্রোঞ্জের তৈরি বিশাল তোরণ পেরিয়ে যুদ্ধে নিহত বীরদের সমাধি- মন্দিরে কোন বিদেশী ঢুকতে পারে না। বীর যোদ্ধারা যেখানেই মারা গিয়ে থাকুক, মনে করা হয় তাদের সবার আত্মা এই মন্দিরে অবস্থান করছে। সংখ্যায় তারা আড়াই লাখের কম নয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইয়াসুকুনি স্রেফ সামরিক স্মৃতিমন্দির থাকল না। রক্ষণশীল ডানপন্থী রাজনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের গোপন মীটিং বসতে শুরু করল এখানে। এখনও তাঁরা স্বপ্ন দেখেন, গুণে-মানে শ্রেষ্ঠ জাপানী কালচার পৃথিবীর বুকে বিশাল এক সামাজের জন্ম দিতে পারে, যে সাম্রাজ্যে শুধু জাপানীরাই কর্তৃত্ব করবে। প্রতি বছর একবার অন্তত জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্য ও পার্টি নেতাদের নিয়ে ইয়াসুকুনিতে আসেন, ১৯৪৫ সালে জাপানের পরাজয় বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে। তাঁর এই আগমন টিভি ও রেডিওতে ফলাও করে প্রচার করা হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত তীব্র প্রতিবাদ জানায়, তাদের সাথে যোগ দেয় বামপন্থী ও মধ্যপন্থী রাজনীতির সমর্থকরা, শিন্টো-বিরোধী ধর্মীয় দল উপদল এবং প্রতিবেশী দেশগুলো, যুদ্ধের সময় জাপানীদের দ্বারা যারা নির্যাতিত হয়েছে।
সমালোচনা এড়াতে উগ্র মৌলবাদী ও ডানপন্থী রাজনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তারা ইয়াসুকুনিতে আসেন রাতের অন্ধকারে, সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে। ভূত বা চোরের মত আসা-যাওয়া করেন তাঁরা, যদিও কেউই তাঁরা সমাজের সাধারণ মানুষ নন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন জাপানের শিল্পপতি, ব্যাংকার, ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতা ও সরকারী কর্মকর্তা। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হলো জেনজো ইয়ামানা।
ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে, ব্রোঞ্জ তোরণ পেরিয়ে ইয়াসুকুনি উপাসনালয়ের দিকে ধীর পায়ে হাঁটছে জেনজো ইয়ামাদা। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই, চারদিকে অন্ধকার, শুধু টোকিওর উজ্জ্বল আলো মেঘে প্রতিফলিত হয়ে স্নান আভা ছুড়িয়ে রেখেছে কুড়ান হিলের ওপর। অবশ্য অন্ধকারেও ইয়াসুকুনির পথ চিনতে জেনজো ইয়ামাদার কোন অসুবিধে হয় না, পবিত্র মন্দিরের প্রতিটি ইঞ্চি তার চেনা। বড় একটা গাছের নিচে দাঁড়াল সে, উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বিশাল উঠানের চারদিকে চোখ বুলাল। কোথাও কিছু নড়ছে না।
কেউ লক্ষ করছে না, বুঝতে পেরে স্বস্তিবোধ করল ইয়ামাদা। আরও খানিক এগোল সে, একটা পাথুরে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে রীতি অনুসারে হাত ধুলো, তারপর কাঠের হাতা দিয়ে পানি তুলে মুখে পুরল, কুলকুল শব্দ করে মুখের ভেতরটাও ধুলো। মন্দিরের ভেতর ঢুকে থামল না সে, করিডর ধরে হনহন করে এগোল। প্রধান পুরোহিত অপেক্ষা করছেন তার জন্যে। উপাসনালয়ে পৌঁছে পুরোহিতের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করল সে। দু জনের মধ্যে কোন বাক্যবিনিময় হলো না, মাথা নত করে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র উচ্চারণ করল জেনজো ইয়মাদা, রেনকোটের পকেট থেকে টিস্যু পেপারে মোড়া এক তাড়া নোট বের করে পুরোহিতের হাতে ধরিয়ে নিল। প্যাকেটটা বেদির ওপর রাখলেন পুরোহিত।
মন্দিরের ভেতর ঢং ঢং করে ঘন্টা বেজে উঠল, জেনজো ইয়ামাদার নির্দিষ্ট ঈশ্বরকে আহ্বান করা হচ্ছে। এরপর দু’জোড়া হাত এক হলো। ইয়ামাদা নিজের আত্মশুদ্ধির জন্যে, পুরোহিত ইয়ামাদার সাফল্যের জন্যে প্রার্থনা করলেন।
প্রার্থনা শেষে পুরোহিতের সাথে এক মিনিট আলাপ করল ইয়ামাদা নিচুস্বরে। টিস্যু পেপারটা পুরোহিতের হাত থেকে নিয়ে পকেটে তরল, তারপর বেরিয়ে এল মন্দির থেকে।
গত তিনদিনের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেল জেনজো ইয়ামানা। প্রার্থনা শেষ হতেই নতুন শক্তি ও অনুপ্রেরণা লাভ করেছে সে। তার ঈশ্বর তাকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দান করেছেন, অন্তরে জ্বেলে দিয়েছেন আশার আলো । জেনজো ইয়ামানার গোটা জীবনটাই একটা ধর্মযুদ্ধে নিবেদিত। দুটো যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ছে সে। পশ্চিমা বিষাক্ত প্রভাব থেকে জাপানী সংস্কৃতিকে মুক্ত করতে হবে। এবং, জাপান যে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে, সেটাকে গোটা দুনিয়ার বুকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে হবে। জেনজো ইয়ামাদা বিশ্বাস করে, এই যুদ্ধে তাকে সাহায্য করছে ঐশ্বরিক একটা ক্ষমতা।
ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে এখন যদি কেউ দেখে ফেলে জোনজো ইয়ামাদাকে, কোন গুরুত্ব দেবে বলে মনে হয় না। পরনে শ্রমিকদের ওভারঅল, রঙচটা সস্তাদরের রেনকোট, মাথায় কোন হ্যাট নেই, দেখে মনে হবে নিতান্তই সাধারণ একজন লোক । খুবই লম্বা তার চুল, খুলির পিছনে ইচ্ছে করলে একটা খোঁপা বাঁধা যায়। ঊনপঞ্চাশ বছর বয়েস, তবে কালো চুলের জন্যে আরও অনেক কম বয়েসী বলে মনে হয় তাকে। জাপানীদের তুলনায় একটু বেশি লম্বা সে, একশো সত্তর সেন্টিমিটার।
শুধু তার চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায়, এ লোক সাধারণ কেউ নয়। নীল চোখ জোড়ায় অদ্ভুত এক সম্মোহনী শক্তি, যেন একবার তাকালেই বশ্যতা স্বীকার না করে উপায় নেই। চিরকালই রোগা-পাতলা সে, তবে পনেরো বছর বয়েস থেকে ওয়েট লিফটিং চর্চা করছে। অমানুষিক পরিশ্রম ও দৃঢ় প্রত্যয়ে সে তার শরীরটাকে পরিণত করেছে পেশীসর্বস্ব একটা কঠিন পাথুরে মূর্তিতে।
মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানাবার পর জেনজোর দেহরক্ষী তথা শোফার তোরণের গেটটা বন্ধ করে নিল। সাতো বোনামি, ইয়ামাদার পুরানো বন্ধু ও

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.