হিমুর বাবার কথামালা – হুমায়ূন আহমেদ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ হুমায়ূন আহমেদ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৪৭
হিমুর বাবার কথামালা – বইটির এক ঝলকঃ
মহাপুরুষ অনুসন্ধানের এই ব্যাকুলতার পেছনে জেনেটিক কারণ
আছে বলে আমার ধারণা। মানুষ এক সময় বনে জঙ্গলে বাস করত । মহাবিপদের জীবন চর্যা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে বিভক্ত সেইসব মানব সম্প্রদায়ের জন্যে প্রয়োজন ছিল বিচক্ষণ, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান এবং সাহসী নেতা। যারা তাদেরকে বিপদ থেকে বাঁচার পরামর্শ দেবে এবং তারা টিকে থাকবে। জেনেটিক কারণে অতীতের সেই স্মৃতি আমরা নিয়ে এসেছি। এখনো আমাদের নেতা দরকার, আওয়ামী লীগ, বিএনপি দরকার। নেতা ছাড়া আমরা অসহায় ।
মহাপুরুষরা, নেতার চেয়েও বড়। নেতারা নিজের স্বার্থ খুব ভালমত দেখেন। মহাপুরুষরা তা দেখেন না। কিংবা হয়তো দেখেন আমরা যারা সাধারণ পাবলিক তারা তা বুঝতে পারি না।
খ্রিস্টান ধর্মে সেইন্ট ঘোষণা করার একটি প্রক্রিয়া আছে। Saint অর্থ মহাসাধক, মহাপুরুষ। আমাদের পরিচিত মাদার তেরেসাকে তাঁর মৃত্যুর পর Saint ঘোষণা করা হয়েছে। পাঠক কি জানেন শেষ বয়সে মাদার তেরেসার গভীর ঈশ্বর বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল ? তিনি অসহায় বোধ করছিলেন। সেই সময় তিনি পোপ বেনেডিক্টকে বেশ কিছু চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠির বিষয়বস্তু ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দেহ। তিনি চিঠিগুলি নষ্ট করে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। সেপ্টেম্বর ৭ তারিখ ২০০৭-এ তাঁর কিছু চিঠি প্রকাশিত হয়। একটিতে তিনি লিখেছেন— I
“Where is my faith? Even deep down there is nothing but emptiness. If there be a God-please forgive me.” অন্য আরেকটি চিঠিতে লিখলেন–
“I feel just that terrible pain of loss, of God not want- ing me, of god not being god, of God not really existing.” একজন স্বীকৃত মহাপুরুষে (না-কি মহামানবী?)-র যদি এই
সমস্যা থাকে তাহলে সাধারণ আমজনতা যাবে কোথায় ?
জটিল তথ্য আলোচনা থাকুক। আসুন আমরা আবার প্রসেস অফ এলিমিনেশন টেকনিকে বের করি মহাপুরুষ কেমন হবেন । ‘একজন মহাপুরুষ কি আপনার বাড়িতে বসে হিদল শুটকি দিয়ে ভাত খাবেন ‘
‘না।’
‘তিনি কি ঈদের হাসির নাটক দেখার জন্যে আগ্রহ নিয়ে টিভির সামনে বসে থাকবেন ?
‘না।’
‘তিনি এক সেট সস্তা গ্লাস রঙিন কাগজে মুড়ে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবেন ?’
‘না।’
‘তিনি কি যথাসময়ে একটি তরুণী বিয়ে করবেন এবং বাসর রাতের কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন ?”
‘না।’
তাহলে কি এই দাঁড়াচ্ছে না যে মহাপুরুষ আমাদের মত কেউ না। সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু। সেই ‘ভিন্ন’টা কি তাও পরিষ্কার না। যে বস্তুর অস্তিত্বই নেই সেই বস্তু সম্পর্কে ধারণা করাও তো অসম্ভব।
আমরা যখন ভূতের বা রাক্ষসের ছবি আঁকি সেই ভূতটা দেখতে হয় মানুষের কাছাকাছি কিংবা আমাদের দেখা পশুর কাছাকাছি..
তার শিং থাকতে পারে (আমরা অনেক শিংওয়ালা পশু দেখেছি)। গা ভর্তি কাটা থাকতে পারে (সজারু)। ভয়ঙ্কর দাঁত থাকতে পারে (বাঘ, সিংহ) কল্পনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু আঁকা মুরালিয়েলিস্টিক চিত্রকর সালভাদর দালির পক্ষেও সম্ভব হয় নি। হিমুকে মহাপুরুষ বানানো এই কারণেই আমার জন্যে সহজ
একটা কাজ হয়েছে। কারণ একটাই মহাপুরুষের কোনো ধারণা আমাদের নেই। হিমু নিতান্তই ঘরোয়া এক ছেলে। যে শুঁটকির সঙ্গে বেগুনের তরকারি দিয়ে আগ্রহের সঙ্গে পেট ভর্তি করে ভাত খাবে। ভাত খাবার পর তর্জনিতে চুন লাগিয়ে পান খাবে। পানের পিক ফেলবে।
সম্প্রতি হিমুকে নিয়ে ছোট্ট একটা ঝামেলায় পড়েছি। ঝামেলাটা তৈরি করেছেন আমার মা। তাঁর বয়স প্রায় আশি । কিডনি অকেজো। ওষুধপত্র দিয়ে কোনো রকমে সচল রাখা হয়েছে। হার্টের অবস্থাও দুর্বল। বাই পাস করানো হয়েছে। প্রায়ই ফুসফুসে পানি আসে। হাসপাতালে পাঠিয়ে ঠিক করে আনা হয়।
এক সকালে তাঁকে নিয়ে নাশতা খাচ্ছি। তিনি হঠাৎ বললেন, হিমুকে ভাল মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দে।
আমি নাশতা খাওয়া বন্ধ করে বললাম, হিমুকে বিয়ে দিয়ে দিতে বলছেন ?
মা বললেন, হ্যাঁ। বেচারা কতদিন একা একা ঘুরবে ? আমার নিজেরও বয়স হয়েছে। হিমুর বিয়ে খেয়ে যাই ।
পাঠক কি সমস্যাটা বুঝতে পারছেন ? হিমু রিয়েলিটির অংশ হয়ে যাচ্ছে। একদিন হয়তো আমি নিজেই হলুদ রঙের একটা কার্ড পাব। হিমুর বিয়ের কার্ড। বিডিআর এর দরবার হলে আয়োজন করে বিয়ে। কে জানে আমার মা হিমু পত্নীর জন্যে হলুদ সিল্কের শাড়ি নিয়ে বিয়ে খেতে চলে যেতেও পারেন।
থাকুক হিমু প্রসঙ্গ। তার বাবা-মা’র কাছে ফিরে যাই। হিমুর মা’র তেমন কোনো উল্লেখ কোনো বইতেই নেই ।
ভদ্রমহিলা রূপবতী ছিলেন। (আমার উপন্যাসের সব নারী চরিত্রই রূপবতী। মেয়েদের রূপ দেয়ার ব্যাপারে আমার কোনো কার্পণ্য নেই।) এই মহিলা হিমুর জন্মের পর পরই মারা যান। তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। তাঁর স্বামী কিছু কলকাঠি নেড়েছেন।
হিমুর বাবা একা হিমুকে মানুষ করতে চেয়েছেন। নিজের পরিকল্পনায় পুত্রকে বড় করতে চেয়েছেন। মা বেঁচে থাকলে এটা কখনো সম্ভব হতো না। কাজেই হত্যাকাণ্ড ।
হিমুর বাবাকে আমরা কি ভয়ঙ্কর ক্রিমিনাল বলব ? না-কি একজন হিমু তৈরির জন্যে তার অপরাধ ক্ষমা করব ?
বিচারের দায়িত্ব পাঠকদের। হিমুর বাবার কথামালা সংকলিত করা হলো। হিমুর প্রতি তাঁর উপদেশের সংকলন। এই উপদেশ সার্বজনীন নয়। শুধু হিমুর প্রতিই প্রযোজ্য। আমার বাবা তাঁর খাতায় আমার জন্যে যেসব উপদেশ লিখে রেখে গেছেন তার মধ্যে একটার শিরোনাম হচ্ছে— নির্লিপ্ততা। তিনি লিখেছেন :
নির্লিপ্ততা
পৃথিবীর সকল মহাপুরুষ এবং মহাজ্ঞানীরা এই জগৎকে মায়া বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। আমি আমার ক্ষুদ্র চিন্তা ও ক্ষুদ্র বিবেচনায় দেখিয়াছি আসলেই মায়া। স্বামী ও স্ত্রীর প্রেম যেমন মায়া বই কিছুই নয়, ভ্রাতা ও ভগ্নির স্নেহ-সম্পর্কও তাই। যে- কারণে স্বার্থে আঘাত লাগিবামাত্র স্বামী-স্ত্রীর প্রেম বা ভ্রাতা-ভগ্নির ভালোবাসা কপূরের মতো উড়িয়া যায়। কাজেই তোমাকে পৃথিবীর সর্ব বিষয়ে পুরোপুরি নির্লিপ্ত হইতে হইবে। কোনোকিছুর প্রতিই তুমি যেমন আগ্রহ বোধ করিবে না আবার অনাগ্রহও বোধ করিবে না। মানুষ মায়ার দাস। সেই দাসত্ব-শৃঙ্খল তোমাকে ভাঙিতে হইবে। মানুষের অসাধ্য কিছুই নাই। চেষ্টা করিলে তুমি তা পারিবে। তোমার ভিতরে সেই ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা বিকাশের চেষ্টা আমি তোমায় শৈশবেই করিয়াছি। একই সঙ্গে তোমাকে আদর এবং অনাদর করা হইয়াছে। মাতার প্রবল ভালোবাসা হইতেও তুমি বঞ্চিত হইয়াছ। এই সমস্তই একটি বড় পরীক্ষার অংশ। এই পরীক্ষায় সফলকাম হইতে পারিলে প্রমাণ হইবে যে, ইচ্ছা করিলে মহাপুরুষদের এই পৃথিবীতে তৈরি করা
যায়।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!