হিমুর আছে জল – হুমায়ূন আহমেদ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ হুমায়ূন আহমেদ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৭৮
হিমুর আছে জল – বইটির এক ঝলকঃ
এখন মধ্যরাত্রি। লঞ্চ মোহনায় দুলছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। যে-কোনো মুহূর্তে ঝড় শুরু হবে। ঝড়ের সময় লঞ্চকে কে সামলাবে বোঝা যাচ্ছে না। সারেং খালেকের জ্বর আরও বেড়েছে। মাথায় পানি ঢেলে এই জ্বর কমানো যাবে না। দমকল ডাকতে হবে
অল্প বাতাস ছেড়েছে, এতেই লঞ্চ এপাশ-ওপাশ করা শুরু করেছে।
ছোট জেনারেটর এতক্ষণ চলছিল। কিছুক্ষণ আগে জেনারেটর বন্ধ হয়েছে। পুরোপুরি বন্ধ হয় নি, মাঝে মাঝে চালু হচ্ছে। এখন ভরসা কয়েকটা হারিকেন। আজকালকার চায়নিজ মোবাইলে টর্চলাইটের মতো থাকে। মোবাইলধারীরা তাদের টর্চলাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে। এতে অন্ধকার কমে নি, বরং বেড়েছে।
সারেঙের মাথায় যে পানি ঢালছে তার নাম হাবলু মিয়া। বয়স পনের-ষোল । হাস্যমুখী। সম্ভবত তার জীবনের মটো হলো, ‘সর্ব অবস্থায় আনন্দে থাকতে হবে।’ আমি বললাম, লঞ্চের লোক বলতে কি তোমরা দু’জন ? আর কেউ নাই ? কী বলেন স্যার! দুইজনে কি এতবড় লঞ্চ চলে ? ইঞ্জিন মাস্টার আছে। খালাসি আছে। লঞ্চমালিকের ছোটপুলা কাদের সাব আছেন।
কাদের সাব কোথায় ?
সারেঙের কেবিনে আছেন। উনার কাছে খবর্দার যাবেন না । সমস্যা কী ?
উনি অসামাজিক কাজে ব্যস্ত। তার উপর মাল খেয়েছেন। স্যারের কেবিনে মেয়েছেলে আছে।
বলো কী ?
উনার সঙ্গে লাইসেন্স করা পিস্তল আছে। মিজাজও উগ্র। আমারে তাক কইরা একবার গুল্লি দিছিলেন। নিশা অবস্থায় ছিলেন বইল্যা গুল্লি লাগে নাই। নিশা’র মধ্যেও ‘উবগার’ আছে। পল্টু স্যার বললেন, ‘পড়তে খুবই ভালো লাগছে। তবে বইয়ের অনেকগুলো পাতা নেই। কেউ একজন ইভেন নাম্বার দিয়ে শুরু প্রতিটি পাতা কেটে রেখেছে । তাতে আমার অসুবিধা হচ্ছে না, বরং সুবিধা হচ্ছে।’ বাদল আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘কী সুবিধা, স্যার?
‘মিসিং পাতাগুলোতে কী আছে কল্পনা করে খুবই আনন্দ পাচ্ছি। আমি ঠিক করেছি, এরপর যে বই-ই পড়ব তার odd কিংবা even নাম্বারের পাতাগুলো কেটে রাখব।’
বাদল বলল, ‘স্যার, আপনিতো মহাপুরুষ পর্যায়ের মানুষ। দয়া করে একটা বাণী দিন।’
‘কী বাণী দেব?’
বাদল বলল, ‘আপনার মতো মানুষ যা বলবেন সেটাই বাণী। একটা গালি যদি দেন, সেটাও হবে বাণী। দয়া করে আমাকে একটা গালি দিন । ‘সত্যি গালি দেব?’
‘জি স্যার।’
‘এই মুহূর্তে তেমন কোনো গালি ‘জি আচ্ছা স্যার।’
MOM । একটু পরে দেই?”
বাদল আগ্রহ নিয়ে গালির
অপেক্ষা করছে। পল্টু স্যারকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। সম্ভবত লাগসই গালি পাচ্ছেন না। না পাওয়ারই কথা । বাংলা ভাষায় গালির সম্ভার তত উন্নত না। বেশির ভাগ গালিই পশুর সঙ্গে সম্পর্কিত—কুকুরের বাচ্চা, শূয়োরের বাচ্চা, গাধার বাচ্চা… নতুন ধরনের গালি কিছু হয়েছে, যেমন—তুই রাজাকার। আরো গালি থাকা দরকার । একটা জাতির সংস্কৃতির অনেক পরিচয়ের একটি হচ্ছে গালির সম্ভার। চীন দেশে গালির অভিধান পর্যন্ত আছে। আহারে কী সভ্যতা!
স্যারের ড্রাইভার এসে দরজা দিয়ে মুখ বের করে চোখ টিপল। চোখ টেপায় এর সীমাহীন পারদর্শিতা। চোখ টিপ দিয়ে বুঝিয়ে দিল—বিরাট সমস্যা ।
আমি কাছে গিয়ে বললাম, ‘কী সমস্যা?’
ড্রাইভার হাঁসের মতো ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, ‘কিসলু ভাই আসছে। একা আসে নাই, দলেবলে আসছে।’
‘কিসলু ভাইটা কে?’
নিশার উপকারের কথা ভেবেই হয়তো হাবলু মিয়া মনের আনন্দে হলুদ দাঁত বের করে হাসল। তার কাছ থেকে লঞ্চে অসামাজিক কাজের নানান গল্প শুনে ডেকে ফিরছি, হঠাৎ একটা কেবিনের জানালা খুলে গেল। আতঙ্কিত এক তরুণীর
পলা শোনা গেল ।
এক্সকিউজ মি! আপনি কি এই লঞ্চের কেউ ?
আমি বললাম, হ্যাঁ। ম্যাডাম কী লাগবে বলুন? চা খাবেন? চা এনে দিব ? চা আমার সঙ্গে আছে। চা লাগবে না। আপনি এক মিনিটের জন্যে কেবিনে আসবেন ? আমি প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছি !
সাঁতার জানেন না ?
সাঁতার কেন জানতে হবে ? লঞ্চ কি ডুবে যাবে নাকি ?
হ্যাঁ ডুববে। তবে সাঁতার জেনেও লাভ নেই। তারপরেও পাপপুর-গুপপর করে কিছুক্ষণ ভেসে থাকা ।
প্লিজ আপনি কেবিনে এসে কিছুক্ষণ বসুন ।
আপনি একা ?
জি আমি একা। আমি আমার মামার বাড়ি বরগুনা যাচ্ছি। সবাই বলছিল বাই রোডে যেতে। আমি ইচ্ছা করে লঞ্চে যাচ্ছি। অনেকেই আমার সঙ্গে আসতে চেয়েছিল। আমি কাউকে আনি নি। আমার আত্মীয়স্বজনরা সারাক্ষণ বকবক করে। ওদের বকবকানি শুনতে ভালো লাগে না ।
ওদের না এনে ভালো করেছেন। দলবল নিয়ে মারা যাওয়ার কোনো মানে হয় না। কবি রবীন্দ্রনাথ এইজন্যেই বলেছেন, একলা মরো, একলা মরোরে । উনি একা মরতে বলেছেন?
উনি একলা চলতে বলেছেন। মৃত্যুও তো অনির্দিষ্টের দিকে চলা ।
লঞ্চ কি সত্যি ডুববে ?
ঝড় উঠলেই ডুববে। ঝড় এখনো ওঠে নি। ঝড় উঠলেই দেখবেন লঞ্চ ডানদিকে কাত হয়ে ভুস করে ডুবে যাবে। আপনার সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা আছে ? ভিডিও ক্যামেরা থাকলে লঞ্চ ডোবার প্রক্রিয়াটা ভিডিও করে রাখতে পারেন। ভিডিও করার সময় বাঁ দিকে থাকবেন। খেয়াল রাখবেন লঞ্চ ডুববে ডানদিকে । ডানদিকে কাত হবে কেন ?
কারণ লঞ্চের লোকজন ডানদিকে মালামাল বোঝাই করেছে।
প্লিজ ভেতরে এসে কিছুক্ষণ বসুন। প্লিজ। আমার কাছে চার্জ লাইট আছে। চার্জলাইট জ্বালাচ্ছি। থিসিসের বিষয় কী ?
থিসিসের বিষয় বললে কি বুঝবেন ?
বোঝার কথা না, তারপরেও বলুন। হিগস কণা। কখনো নাম শুনেছেন ?
হিগস হচ্ছে ঈশ্বরের কণা, এই কথা শুনেছি। তবে নামকরণ ভুল। সব কণাই ঈশ্বরের কণা। আপনার নাকে সামান্য সর্দির ইশারা দেখতে পাচ্ছি । সর্দি কণাও ঈশ্বরের কণা ।
তৃষ্ণা নাক মুছতে মুছতে বলল, আপনি কি সত্যি লঞ্চের বয় ?
তৃষ্ণার কথা শেষ হওয়ার আগেই লঞ্চ প্রবলভাবে দুলে উঠল। ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেল। মনে হয় বড় কোনো ঘূর্ণনে পড়েছে। তৃষ্ণা বলল, কী সর্বনাশ। হচ্ছেটা কি ?
আমি বললাম, তেমন কিছু হচ্ছে না, লঞ্চ ঘুরছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সব কিছুই ঘুরে। সূর্য ঘুরে, পৃথিবী ঘুরে, ইলেকট্রন ঘুরে, লঞ্চ কেন ঘুরবে না ? তৃষ্ণা! শাড়িতে আপনাকে খুবই সুন্দর লাগছে, তবে আপনি শাড়ি পাল্টে শার্ট-প্যান্ট পরে নিন ।
কেন ?
লঞ্চ ডুবলে শাড়ি পরে সাঁতার কাটা মুশকিল।
এইসব আপনি কী বলছেন ? সত্যি কি লঞ্চ ডুববে ?
ডুববে। আমি একটা লাইফ বেল্ট জোগাড় করে নিয়ে আসি। লাইফ বেল্ট নিয়ে কেবিনে ঘাপটি মেরে বসে থাকবেন। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর লাইফ বেল্ট নিয়ে বের হবেন। এর মধ্যে খাওয়াদাওয়া করে নিন ।
Oh God! Oh God!
Oh God, Oh God করবেন না। বরং ও আল্লাহ ও আল্লাহ্ করুন। আল্লাহপাক নানান ধরনের ভাষা দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন ভাষায় তাঁকে ডাকা পছন্দ করেন।
আপনি অবশ্যই লঞ্চের বয় বেয়ারা কেউ না। প্লিজ আপনার পরিচয় দিন। কঠিন সমস্যায় ফেললেন।
কঠিন সমস্যা হবে কেন ?
জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই মানুষ তার পরিচয় খুঁজে বেড়াচ্ছে, এখনো পরিচয় পায় নি। যেদিন সে তার পরিচয় পাবে সেদিনই সর্বজ্ঞানের সমাপ্তি। আপনি চলে যাচ্ছেন নাকি ?
হ্যাঁ।
প্লিজ আরেকটা সমস্যার সমাধান করে দিয়ে যান। আমার পাশের কেবিনে এক হাসবেন্ড-ওয়াইফ উঠেছেন। হাসবেন্ডের অনেক বয়স। স্ত্রী কমবয়েসী। ওয়া কেবিনে উঠেই দরজা বন্ধ করেছেন। আর দরজা খুলছেন না। মাঝে মাঝে ঐ কেবিনে একটা মুরগি ডেকে উঠে, তখন মহিলা ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন। আমি কয়েকবার ডাকাডাকি করেছি, কেউ সাড়া দিচ্ছে না ।
মুরগি ডাকার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। রহস্যভেদের ব্যবস্থা করছি। আমি একটা চক্কর দিয়ে আসি তারপর দরজা ভেঙে এদের বের করার ব্যবস্থা করব । দরজা ভাঙতে হবে কেন ?
দরজা না ভাঙলে এরা বের হবে না। এরা মোটেই স্বামী-স্ত্রী না। অসামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্যে কেবিন ভাড়া করেছে। সারা রাত আমোদ-ফুর্তি করতে করতে যাবে। ভোরবেলা পৌঁছবে বরিশাল। এরা দু’জন কেবিন থেকে নামবে না । সারা দিন কেবিনে থাকবে। খাওয়াদাওয়া করবে। রাতে ঢাকা ফিরবে। লঞ্চের সঙ্গে এই বন্দোবস্ত।
আপনি জেনে বলছেন, নাকি অনুমানে বলছেন ?
জেনেই বলছি। সারেঙের অ্যাসিসটেন্ট হাবলু মিয়ার সঙ্গে আমার কিঞ্চিৎ ভাব হয়েছে। সে-ই বলেছে। তিন নম্বর কেবিনের এক প্রফেসর সাহেবও এই চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছিলেন। তার ছাত্রী সঙ্গে যাবে। শেষ মুহূর্তে ছাত্রী আসে নি । প্রফেসর সাহেব মুখ ভোতা করে বসে আছেন। তার ভাড়ার টাকা পুরোটাই জলে গেছে । টাকা শুধু যে জলে গেছে তা না, তিনি নিজেও জলে যাবেন এই উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কালের চিৎকার পত্রিকার চলমান লঞ্চ সাংবাদিক হিসেবে কোথায় কী ঘটছে দেখা দরকার। আমি ভ্রমণে বের হলাম। তৃষ্ণা মেয়েটি ভয় পেতে থাকুক। ভয় ভাঙানোর জন্য যথাসময়ে তার কাছে যাওয়া যাবে। তৃষ্ণা ছাড়া লঞ্চের আর কাউকে ভীত দেখলাম না। সবাই স্বাভাবিক আচরণ করছে। লঞ্চ মোহনায় ঘুরপাক খাচ্ছে—এটা যেন কোনো ব্যাপার না ।
এখন কালের চিৎকার প্রতিবেদকের প্রতিবেদন ।
আনসার বাহিনী
আনসার বাহিনীর চার সদস্যের তিনজন টাকা নিয়ে পলাতক। একজন পাবলিকের কাছে ধরা খেয়েছে। তাকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। শোনা
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!