গুপ্তহত্যা – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৯৮
গুপ্তহত্যা – বইটির এক ঝলকঃ
বাইরে ডুব দিয়ে মাছগুলোর ডেথ চেম্বারে ঢোকার ছবি তোলা যাবে।’ ‘বাইরে থেকে!’ ভ্রূ কুঁচকে ভর্ৎসনার দৃষ্টিতে চাইল হার্স্ট রানার চোখের দিকে। বাইরে থেকে কেন? ভেতরে চলুন। আমি যাচ্ছি।’
হার্স্টের বক্তব্য ঠিকমত বুঝতে পারল না রানা। কি বলছে লোকটা ?
“জানের ভেতরে নামব আমরা,’ আর একটু পরিষ্কার করে বলল হার্স্ট। ‘টিউনা হচ্ছে সমুদ্রের দ্রুততম মাছ। এবং বিপজ্জনক। বড়শিতে এক-আধটা গেঁথেছি আমি আগে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন স্কিন-ডাইভার মারতে পারেনি একটাকেও। কারও কোন রেকর্ড নেই। সহজ কারণ—ওর কাছেই পৌঁছনো যায় না। এত তাড়াতাড়ি সাঁতার কাটে! এবার ব্যাটারা যাবে কোথায়? পালাবার উপায় নেই। পানির নিচে টানি ঘায়েল করে রেকর্ড সৃষ্টি করব আমি।’
ঠোঁট বাঁকা করে হাসল হার্স্ট। চোখ দুটো স্থির হয়ে রয়েছে রানার চোখে।
ইচ্ছে করলে এই ঘটনাটার ছবি তুলে আপনিও রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারেন। চলুন, যদি সাহস থাকে।’
হার্স্টের চোখে চ্যালেঞ্জ দেখতে পেল রানা।
এটা কি সেই শূটিঙের পরবর্তী ম্যাচ? আর এক বাউট খেলতে চায় হার্স্ট রানার সাথে?
নাকি ওর চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে লোকটা? রানার আসল পরিচয় বা উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সন্দেহের কোন কারণ ঘটেছে? কোন একটা লিকেজের সুযোগে ওর পরিচয় প্রকাশ হয়ে গেছে?
মাথা খারাপ তোমার, হেনরী!’ প্রথম কথা বলল ডক্টর জ্যাকোপো । ‘মারা পড়তে পারো তোমরা ওর মধ্যে! জালের ভেতর এতগুলো টিউনা সর্বনাশ! যা-তা কাণ্ড ঘটে যেতে পারে। তাছাড়া এক-আধটা হাঙরও ঢুকে পড়তে পারে গুগুলোর সাথে সাথে, সে খেয়াল আছে?’
‘হাঙর মারার অভ্যাস আছে আমার, তুমি জানো, ডাক্তার,’ গম্ভীর কণ্ঠে বলন হার্স্ট।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে মাথা নাড়ল জ্যাকোপো এপাশ ওপাশ।
‘মারা পড়বে! সিম্পলি মারা পড়বে!
‘যেকোন সময়, যেকোন জায়গায় ঘটতে পারে মৃত্যু। মরণকে ভয় পাওয়া পুরুষ মানুষের সাজে না।’
কাপড় ছেড়ে পায়ে ফ্লিপার বেঁধে ফেলেছে হার্স্ট, অ্যাকুয়ালাটা হাতে তুলে নিয়েছে এখন। ‘পুরুষ’ শব্দটার উপর একটু জোর দিল সে। লালচে আভা দেখা দিল জ্যাকোপোর গালে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও কাপড় ছাড়তে শুরু করল রানা। পিছিয়ে যাওয়া চলে না। যা থাকে কপালে, এগোতেই হবে এখন। বলল, ‘আপনার কাছে যদি এটাকে বোকামি মনে না হয়, মিস্টার হার্স্ট, যদি জালের ভেতরেই নামতে চান, আমিও আছি আপনার সাথে।’ ‘মাথা খারাপ!’ বিড়বিড় করে বলল জ্যাকোপো দুটোরই মাথা খারাপ। মরুক ব্যাটারা, আমার কি? তবে দয়া করে আধমরা হয়ে ফিরে এসে আমার কাজ বাড়িয়ো না।’
আয়েন করে বসে পাইপ ধরাল ডাক্তার। যেন ছেলেমানুষী কাণ্ড দেখছে, এমনি হাসি হাসি মুখ করে দেখছে ওদের ফ্লিপার বাঁধা, অ্যাকুয়ালাঙ কাঁধে ঝুলানো, ভালভ্ অ্যাডজাস্ট করা।
হার্স্ট ডুব দেয়ার দশ সেকেন্ড পরে ডুব দিল রানা। কারণ কোটিপতির হাতে রয়েছে একটা গ্যাসচালিত হার্পন গান। রানা নিরস্ত্র। ওর হাতে রয়েছে আন্ডার ওয়াটার সিনে ক্যামেরা। ওয়াটারপ্রুফ কেসে পোরা, বাইরে থেকে সবকিছু কন্ট্রোলের ব্যবস্থা, ভিতরে পানি ঢুকবার উপায় নেই ।
সিনে ক্যামেরা দিয়ে হার্পুন ঠেকানো মুশকিল। মাছ ধরতে গিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যদি ভুল করে ক্যামেরাম্যান অতিথির হৃৎপিণ্ড ভেদ করে ফেলে হার্পনের তাঁর তাহলে খুব বেশি জবাবদিহি করতে হবে না হার্স্টকে। শিকারে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
নেমে যাচ্ছে ওরা। বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে রানা। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে, যে মুহূর্তে হার্পুন গানটা ওর দিকে ফিরবে, ওমনি উপর দিকে সাঁতার কাটতে শুরু করবে সে। পানির নিচে এই বন্দুকের এফেকটিভ রেঞ্জ সাত-আট ফুটের বেশি নয়। ঠিক এই দূরত্বই বজায় রেখেছে রানা দু’জনের মধ্যে। ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ওরা।
এগিয়ে যাচ্ছে ডেপ্ট চেম্বারের দিকে।
অস্পষ্ট একটা সোঁ সোঁ আওয়াজে চমকে উঠল রানা। পাইপের গায়ের ছোট্ট একটা ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বাতাস। পাইপটা যেখানে এসে মাউথপিসের সাথে মিশেছে, সেইখানে।
এইভাবেই? এই কৌশলেই ওকে শেষ করে দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে মাছের ফাঁদে? অ্যাকুয়ালাঙের মধ্যেই কায়দা করে রেখেছে কেউ?
বুড়ো আঙুলটা ঠেসে ধরল রানা ফুটোর উপর। বন্ধ হয়ে গেল লিকেজ। এখনি কি ভেসে উঠবে সে উপরে? আরও কোথাও লিক আছে কিনা দেখল সে ঘাড় কাত করে। না। আর কোথাও কোন লিক নেই। থাকলে বুদ্বুদ দেখা যেত।
পাইপের ভিতর পানি ঢুকছে না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিল রানা। বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে বলে ভিতরে ঢুকতে পারছে না পানি। কাজেই খুব একটা ভয়ের কিছুই নেই আপাতত। সর্টসের পকেট থেকে একটা সরু রশি বের করে একফুট আন্দাজ ছিঁড়ে ফেলল ও। তারপর সেটা দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলল ফুটো হয়ে যাওয়া জায়গাটা। টিপ টিপ করে এক এক ফোঁটা করে বেরোচ্ছে এখন বাতাস। বেরোক, ক্ষতি নেই তাতে। বাঁধনের ফলে আর বাড়তে পারবে না ফুটোটা ।
বেশ কিছুটা দূরে থেমে দাঁড়িয়ে জলদি এগোবার জন্যে ইঙ্গিত করছে হার্স্ট। আবার এগোল রানা। কাঁধ থেকে খুলে ক্যামেরাটা হাতে নিল। যদি হার্টুন চালাবার উপক্রম করে তাহলে আগে অন্তত এক সেকেন্ড ছবি তুলে নেবে সে, তারপর ভাগবে জান-প্রাণ নিয়ে।
একদল ফ্লাইং ফিশ বিদ্যুৎবেগে ছুটে আসছে এইদিকে। ‘আতঙ্কিত ভঙ্গিতে ডানা ঝাপটাচ্ছে ওগুলো। নিশ্চয়ই ওদের পিছু পিছু ধাওয়া করে আসছে টিউনা। সামনে দুই সাঁতারুকে দেখে আরও ভয় পেল উড়ো মাছগুলো। বাঁকা হয়ে উঠে যাচ্ছে ওরা এখন উপরে। এত জোরে ডানা ঝাপটাচ্ছে যে জোরে ফ্যান ঘুরলে যেমন দেখায় তেমনি দেখাচ্ছে ওদের পাখাগুলো। সাঁ করে চলে গেল ওরা উপরে, কয়েক সেকেন্ড পরই বৃষ্টির ফোঁটার মত অনেকগুলো আলোর বিন্দু দেখা গেল মাথার উপর। পানি ছেড়ে শূন্যে উঠে গেল উড়ো-মাছগুলো।
এবার এল এক ঝাঁক ম্যাকারেল। উজ্জ্বল নীল আর রূপালী রঙের ঝিলিক খেলে গেল রানার চারপাশে। সাগরের তলায় পৌঁছে গেল রানা হার্স্টের দশ ফুট পিছনে। একটা বড়সড় মসৃণ পাথরের ওপাশে কুঁজো হয়ে হার্পুন হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে হার্স্ট। চেয়ে রয়েছে উপর দিকে। ওর দিকে এক নজর চেয়েই বুঝতে পারল রানা, ওর অস্তিত্ব লুপ্ত হয়ে গেছে এখন হার্স্টের মন থেকে। শিকার খুঁজছে শিকারী। স্পষ্ট উপলব্ধি করল রানা, এই মুহূর্তে অন্তত শিকারীর লক্ষ্য সে নয়। কয়েক ফুট ফিল্ম এক্সপোজ করল সে হার্স্টের উপর
এইবার এল টিউনার দল।
স্তম্ভিত বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল রানা কয়েক সেকেন্ডের জন্যে। প্রকাণ্ড যেমন দেখতে তেমনি রাজকীয় চলার ভঙ্গি, তেমনি তার শক্তির বিচ্ছুরণ। দুই কথায়, সুন্দর এবং দুর্বার। বিশাল দুই চোখ চেয়ে রয়েছে নির্নিমেষে। আবেগবর্জিত, পলকহীন দৃষ্টি। ধীর স্থির সাবলীল ভঙ্গিতে এগিয়ে এল ওরা, ঝুলন্ত জালে বাধা পেল, জানের কিনার ধরে চলল সার বেঁধে। মাঝে মাঝে নাক ঠেকিয়ে দেখছে এখনও বাধাটা আছে কিনা। শত সহস্র বছর ধরে এইভাবেই চলেছে ওরা প্রবৃত্তির তাড়নায়। আরও শত সহস্র বছর চলবে এইভাবেই ।
আরও কাছে চলে এল প্রকাণ্ড মাছগুলো। ঝকঝকে রূপালী গা। কয়েক গজ দূরে সড়সড় করে উপরে উঠে গেল একটা জাল। ভিতরে চলে এসেছে টিউনা, বেরিয়ে যাওয়ার আর উপায় নেই ।
ছবি তুলতে শুরু করল রানা। ধীরে ধীরে ক্যামেরাসহ চিৎ হয়ে গেল সে। মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে প্রকাণ্ড মাছগুলো। উপরে উজ্জ্বল রোদের আলো থাকায় সিলুয়েটে আসবে ছবিটা। দারুণ নাটকীয় ছবি হবে, বুঝতে পারল ও ছবি তুলবার সময়ই ।
হঠাৎ ভিউ ফাইন্ডারে দেখতে পেল সে হার্স্টকে। বিশাল আকৃতিগুলোর পাশে ক্ষুদ্র, দুর্বল মনে হলো ওকে রানার। চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে করল ওকে। বলতে ইচ্ছে করল, ফিরে আসুন, আপনার ক্ষমতায় কুলোবে না। এদের সাথে লাগতে যাবেন না অনর্থক।
এই কম্পার্টমেন্টে দশ বারোটা টিউনার সাথে ঢুকে পড়েছে একটা দশ ফুটি সোর্ডফিশ। পাগলের মত এদিক-ওদিক বেরোবার রাস্তা খুঁজছে ওটা। শিরশির করে উঠল রানার মেরুদণ্ডের ভিতর। যেকোন মুহূর্তে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে পারে ওকে মাছটা তীক্ষ্ণ, লম্বা ঠোঁট দিয়ে। ভয়ঙ্কর মাছটাকে হার্স্টের দিকে ফিরতে দেখেই আঁৎকে উঠল রানা, খরচের খাতায় লিখে ফেলল হার্স্টের নাম। কিন্তু না। মাছটা হয়তো মনে করল ওরই মত ফাঁদে আটকা পড়েছে শিকারীটাও, অন্যদিকে এগোল ওটা বেরোবার পথ খুঁজতে।
আপাতত বাঁচা গেলেও বিপদ কিন্তু রয়েই গেল, বুঝতে পারল রানা। সরাসরি আক্রমণের ভয় কম। আক্রমণ যদি করে বসেও ঠোঁট দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করবার অভ্যাস নেই ওদের। ওটাকে ডাণ্ডা হিসেবে ব্যবহার করে ওরা, বাড়ি দিয়ে কাহিল করে ফেলে অপেক্ষাকৃত ছোট মাছকে, তারপর গিলে খায়। কিন্তু বেরোবার পথ না পেয়ে যদি ভড়কে যায় ব্যাটা, তাহলেই সর্বনাশ। চোখ কান বুজে তিরিশ মাইল বেগে ছুটতে আরম্ভ করবে ওটা এইটুকু জায়গার মধ্যে যে সামনে পড়বে সে-ই খতম ।
এগারো ফুট লম্বা একটা টিউনাকে বেছে নিয়েছে হার্স্ট। এগিয়ে যাচ্ছে দৈত্যটার দিকে। গ্রাহ্যের মধ্যেই আনল না মাছটা হার্স্টকে। পাত্তা দেয়ার • কথাও নয়। ওর পাশে হার্স্টকে লাগছে পুঁচকে এক বাঁদরের মত। ক্যামেরার বোতাম টিপে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রানা। হার্পনটা তাক করছে হার্স্ট এখন।
‘ফট’ করে গ্যাস-গানের অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পেল রানা। পরমুহূর্তে নারকীয় কাণ্ড শুরু হয়ে গেল পানির নিচে।
ঠিক মাথা সই করে মেরেছিল হার্স্ট, কিন্তু জায়গা মত না পড়ায় হাড়ে লেগে ফসকে গিয়ে বিল ওটা কাঁধের শক্তিশালী পেশীতে।
ব্যথা কাকে বলে জানা ছিল না মাছটার। জীবনে চোট খায়নি কোন দিন। তীরটা বিধে যেতেই মাথা খারাপ হয়ে গেল এটার যন্ত্রণা কাকে বলে বুঝে গেছে সে এখন, এবং খুবই অপছন্দ হয়েছে ব্যাপারটা ওর।
প্রকাণ্ড লেজে তিনটে প্রচণ্ড ঝাপটা দিল মাছটা, ছুটল সামনের দিকে। সড়সড় করে হার্পনের সুতো ছাড়ছে হার্স্ট, মাঝে মাঝে টেনে ধরে থামাবার চেষ্টা করেছে দৈত্যটাকে ।
কিসের কি! হ্যাঁচকা টানে নিজেই চলেছে সে মাছটার পিছু পিছু।
ব্যাপারটা মারাত্মক হয়ে দাঁড়াতে পারে, টের পেল রানা। ক্যামেরা চালু রেখেই পা বাড়াল সে সামনের দিকে- প্রয়োজন হলে সাহায্য করবে।
এতক্ষণ এত একাগ্র মনোযোগের সাথে শিকার দেখছিল আর ছবি তুলছিল। রানা, যে নিজের পারিপার্শিকতার দিকে লক্ষ দেয়া সম্ভব হয়নি ওর পক্ষে। এক পা বাড়িয়েই থেমে গেল সে।
নড়াতে পারছে না দ্বিতীয় পা-টা ।
পায়ের কব্জির কাছে কি যেন জড়িয়ে ধরে আছে শক্ত করে।
ঝট করে পিছন ফিরে নিচের দিকে চাইল রানা। মস্ত বড় একটা পাথরের নিচ থেকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রয়েছে ওর দিকে একজোড়া চোখ। চোখের পাশ থেকে একটা রবারের শুঁড় বেরিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আছে ওর পায়ের
কজি ।
অক্টোপাস!
সাত
জান উড়ে গেল রানার।
একটা শুঁড়ের আয়তন দেখেই বুঝে গেছে সে, পাকা খচ্চরের হাতে পড়েছে সে এবার। আরও জোরে চেপে বসেছে ওটা কব্জির উপর! খসখসে স্পর্শে শিউরে উঠল শরীরটা।
ঝপ করে বসে পড়ে একহাতে টেনে ওটাকে পা থেকে ছাড়াবার চেষ্টা করল রানা, ক্যামেরাটা কাঁধে ঝুলিয়ে দুহাতে চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না ।
‘ভয়ের কিছুই নেই,’ নিজেকে নিজেই সাহস দিল রানা। কিন্তু এসব কথায় চিড়ে ভিজল না । পায়ের কব্জিতে জোরে একটা টান পড়তেই হৎপিণ্ডটা লাফিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম করল পিঞ্জর ছেড়ে। বহু কষ্টে নিজেকে স্থির রাখল সে। পাথরের নিচে ঠিক কিভাবে বসে আছে জন্তুটা বোঝার চেষ্টা করল। ওটাকে একবার টেনে বের করে আনতে পারলে আর কোন ভয় ছিল “না। কিন্তু কিছুতেই বেরোতে চাইবে না ব্যাটা ফাঁক গলে, জানা আছে রানার। ওখানেই গ্যাট হয়ে বসে থেকে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করবে ও এখন।
ডান পা-টা পাথরের গায়ে বাধিয়ে প্রাণপণ শক্তিতে ঠেলা দিল রানা। শরীরটা বাঁকা হয়ে গেল পিছন দিকে, দাঁতমুখ খিঁচিয়ে টানল সে কয়েক সেকেন্ড। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠল মুখোশের ভিতর ওর কপালে। কিন্তু একচুল নড়ল না অক্টোপাস।
অক্টোপাসের চোদ্দগুষ্টি, বিশেষ করে বাপ-মা তুলে গাল দিয়ে ওটাকে কিছুটা দুর্বল করে নিয়ে আবার হ্যাঁচকা টান দিল রানা। চট করে আরেকটা শুঁড় বেরিয়ে এসে পেঁচিয়ে ধরল রানার হাঁটু। বেতমিজ, বেঈমান, হারামখোর–এবার সরাসরি ওকেই গাল শুরু করল রানা-লুকিয়ে থাক ঘরের ভেতরে বসে বাহাদুরি! বেরিয়ে এসো না, চাঁদ, দেখি কতবড় সাহস? উল্লুকের মত তাকিয়ে রয়েছিস কেন? ইস্টুপিড কোথাকার, আয় না বেরিয়ে দেখি?
হার্স্ট ব্যাটাই বা গেল কোথায়? ও ফিরে এলে হার্পনের এক খোঁচায় খতম করে দেয়া যেত হারামি জানোয়ারটাকে। আশপাশে চেয়ে কাছে পিঠে কোথাও দেখতে পেল না রানা হার্স্টকে। নিরুপায় সে এখন।
হঠাৎ ওর মনে হলো, জুডোর কৌশল প্রয়োগ করে দেখলে কেমন হয়? এ ব্যাটা নিশ্চয়ই জুডো জানে না। এর উপর চেষ্টা করে দেখলে মন্দ হয় না
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!