ফুটন্ত গোলাপ – কাসেম বিন আবুবাকার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

ফুটন্ত গোলাপ – কাসেম বিন আবুবাকার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ কাসেম বিন আবুবাকার

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৩৭

ফুটন্ত গোলাপ – বইটির এক ঝলকঃ

বলল, ভূমি নাকি তোমার কর্তব্য করেছ। আমি যেন তোমাকে শুধু উপকারী বন্ধু বলে মনে করি। তার বেশি এগোলে আমাদের মত গরিবদের বিড়ম্বনা ও দুর্ভাগ্য ডেকে আনবে। আমি তার কথা শুনে মনে কিছু করিনি। বরং আমাকে সাবধান করে দেওয়ার জন্যে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসি।
সেলিম এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল। লাইলী থেমে যেতে বলল, আমি জীবনে মিথ্যা কথা বলিনি। আর কখনো যেন বলতে না হয়। রেহানা আমার বাগদত্তা নয়। যদি তা হত, তা হলে নিশ্চয় আমি জানতাম। তবে বেশ কিছুদিন আগে মা একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, ওকে আমার কেমন মনে হয় ? তার উত্তরে আমি বলেছিলাম, “সে ভালো মেয়ে। ভালোকে তো আর খারাপ বলতে পারি না। তবে মেয়েটার একটু অহংকার আছে। মেয়েদের অহংকার থাকা ভালো নয়।” ব্যাস, ওর সম্পর্কে সব কথা এখানে ইতি টেনেছিলাম। রেহানা আমার মামাতো বোন। মা যদি তার ভাইয়ের সঙ্গে কোনো কথা বলে থাকে, তবে সে সব কিছু জানি না। আমার যতদূর মনে হয়, মা তার ভাইয়ের কাছে আমাদের দু’জনের বিয়ের সম্বন্ধে যখন কিছু বলা কওয়া করছে তখন হয়তো রেহানা শুনেছে। আর সেই জন্য তোমাকে ঐরকম কথা বলেছে। তবে মা আমার মতের বিরুদ্ধে কিছু যে করবে না, সে বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত। তুমি কিছু মনে করো না। আমি তোমাকে কথা দিয়েছি বললে ভুল হবে, বরং যেখানে আমি আমার মানস প্রিয়াকে আবিস্কার করেছি, সেখানে দুনিয়াশুদ্ধ লোক আমার বিরুদ্ধে গেলেও আমি তাকে হারাতে পারব না। তার জন্য যদি সব কিছু ত্যাগ করতে হয় তাতেও পিছপা হব না। তুমি আমাকে সব কিছু বলে খুব ভালো করেছ। রেহানার কথা শোনার পরেও আমার প্রতি তোমার অকপট ব্যবহারে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস দেখে আমার মন আনন্দে ভরে গেছে। সবশেষে একটা কথা বলে রাখছি, যদি কখনো আমাকে কোনো মেয়ের সঙ্গে অশোভন ভাবভঙ্গীতে নিজের চোখেও দেখ, তবু আমার ভালবাসাকে তুমি অবিশ্বাস করো না। জানবে, এটা কোনো ছলনাময়ীর ষড়যন্ত্র। আশা করি, এরূপ ঘটনা ঘটবে না, তবু তোমাকে সাবধান করে রাখলাম।
লাইলী বলল, প্রেম মানেই কান্না। সেটা মানবিক হোক বা আধ্যাত্মিক হোক। কান্না আছে বলেই সুখের মূল্য আছে। মানুষ যদি দুঃখ না পেত, তা হলে সুখের মর্যাদা অনুভব করতে পারত না। তাইতো কবি বলেছেন-
“চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিত বেদন বুঝিতে কি পারে ? কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে,
কভু আশীবিষে দংশেনী যারে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, অভিজ্ঞতা ভিন্ন মানুষ সুখের আনন্দ, দুঃখের বেদনা, রোগের যন্ত্রণা, ভোগের মাধুর্য, ঐশ্বর্যের সুখ, দারিদ্রের যাতনা বুঝতে সক্ষম হয় না। আগুনে পুড়ে সোনা যেমন খাঁটি হয়, প্রকৃত মানুষ হতে হলে আমাদেরকেও তেমনি দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা অতিক্রম করে অগ্রসর হতে হবে। আমরা সুখের জন্য যত চেষ্টা করি না কেন, আল্লাহপাক আমাদের তকদ্বীরে যতটা সুখ ও দুঃখ রেখেছেন, কোনো কিছুর দ্বারা তা কমবেশি করতে পারব না। তাই তিনি কোরআনপাকের মধ্যে বলেছেন-“যারা প্রকৃত জ্ঞানী তারা দুঃখ কষ্টের সময় বিচলিত না হয়ে আল্লাহ পাকের উপর সন্তুষ্ট থেকে সবর করে।”
সেলিম বলল, সত্যি, তোমার জ্ঞানের গভীরতা দেখে আমি মাঝে মাঝে খুব আশ্চর্য হয়ে যাই। এত অল্প বয়সে তুমি কত জ্ঞান অর্জন করেছ। তোমার সঙ্গে যত বিষয়ে কথা বলি, সব বিষয়ে গভীর জ্ঞানের পরিচয় দাও। ভাই তোমার মত মেয়েকে প্রিয়তমা হিসাবে পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। জানি না, তোমার মত সৌভাগ্যবতীকে করে আমি স্ত্রীরূপে পাব ?
লাইলী নিজের প্রশংসা শুনে লজ্জায় জড়সড় হয়ে বলল, তুমি আমাকে খুব বেশি ভালবাস, তাই এই রকম ভাবছ। আসলে আমি তোমার পায়ের ধুলোর যোগ্য কিনা আল্লাহপাককে মালুম ।
সেলিম ওর দু’টো হাত ধরে তন্ময় হয়ে মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, তুমি আমার হৃদয়ের স্পন্দন, চোখের জ্যোতি। নিজেকে এত ছোট করে আর কখনো আমার কাছে বলবে না। সব বিষয়ে তোমার মর্যাদা অনেক। আমার মত ছেলের সঙ্গে কি আল্লাহ তোমাকে জোড়া নির্ধারণ করেছেন ? আল্লাহ না করুন, যদি তোমাকে আমি না পাই, তা হলে সত্যি আমি বাঁচব না।
লাইলী কান্না জড়িত স্বরে বলল, প্লীজ, সেলিম, তুমি এবার থাম। তোমার ভালবাসার মূল্য কি ভাবে দেব, সে কথা ভেবে দিশেহারা হয়ে যাই। যদি তুমি আমাকে এভাবে বল, তা হলে আমি নিজেকে সামলাব কি করে ?
সেলিম রুমাল দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, চল ওঠা যাক, নচেৎ দেরি হলে তোমাকে বকুনী খেতে হবে।
লাইলী কিছু না বলে গাড়িতে উঠল।
সেলিম তাকে তাদের বাড়ির কাছে রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিয়ে ফেরার সময় ভাবল, কই লাইলী তো ভিখারিণী আসমার কথা জিজ্ঞেস করল না ? সত্যি লাইলী, তুমি অতি বুদ্ধিমতি ও ধৈর্যশীলা। তোমার জুড়ি দ্বিতীয় নেই, তুমি ধন্যা। তারপর বাড়িতে এসে মাকে আসমার সব কথা খুলে বলল।
সব শুনে সোহানা বেগম গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মেয়েটিকে নিয়ে তুই কী
করতে চাস ?
আমি মেয়েটাকে রুবীনার মত স্নেহ দিয়ে লেখাপড়া শিখিয়ে পাঁচজনের মত ভদ্রভাবে বাঁচাতে চাই। যদি সম্ভব হয়, আপ্রাণ চেষ্টা করব যাতে মনিরুল তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলে নেয়। অবশ্য তার আগে ওকে মনিরুলের উপযুক্ত করে গড়ে তুলবো।
ছেলের কথা শুনে সোহানা বেগম অবাক হয়ে বললেন, কী যা-তা পাগলের মত বকছিস, সে কি করে সম্ভব ?
সেলিম বলল, তুমি দোয়া কর মা, আমি অসম্ভবকে সম্ভব করে ছাড়ব। আমি যা ভালো বলে চিন্তা করি, তা করেই থাকি। তুমি মা হয়ে নিশ্চয় ছেলের এই বদগুণটা জান ?
সোহানা বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, বেশ চেষ্টা করে দেখ কতদুর কি করতে পারিস।
সেলিম বলল, তুমি যদি এ ব্যাপারে সাহায্য কর, তা হলে ইনশাআল্লাহ আমি কামিয়াব হতে পারল।
সোহানা বেগম ছেলেকে যেন আজ নূতনরূপে দেখেছেন। এতদিন যেরূপে দেখেছেন সেটা ধীরে ধীরে তার কাছ থেকে যেন দূরে সরে যাচ্ছে। এই ভাবধারায় ওঁর মুখ দিয়েও হঠাৎ বেরিয়ে গেল, আল্লাহ তোর মনের মকসুদ পুরণ করুক।
সেই থেকে ভিখারিণী আসমা ওদের বাড়িতে রুবীনার বোনের মর্যাদা নিয়ে রয়ে গেল। সেলিম প্রাইভেট মাষ্টার রেখে তার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। আসমা সেলিমকে বড় ভাই এবং সোহানা বেগমকে খালা আম্মা বলে ডাকে।
সেদিন রাত্রে ঘুমোবার সময় সোহানা বেগমের রূবীনার জন্মদিন উৎসবে লাইলীর গজল, ও হাদিসের কথা মনে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে আরিফের স্মৃতি মনের পর্দায় ভেসে উঠল। আজ পাঁচ ছয় বছর হল আরিফ ঘর ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় কিভাবে আছে ? কি করছে ? নানা চিন্তায় ডুবে গেলেন। সে যাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো চিঠি-পত্রও দেয়নি। সোহানা বেগমের দুই চোখ মাতৃস্নেহে পানিতে ভরে উঠল। ভাবলেন, সে তো ধর্মের জ্ঞান অর্জন করতে পেছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হেফাজতে রেখেছেন। আরিফের কথা ভাবতে গিয়ে নিজের অতীত জীবনের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ল। সে যখন মৌলবী সাহেবের কাছে আরবি পড়ত তখন তার মুখে শুনেছিল, যে বান্দা আল্লাহর এলেম অর্জনের জন্য ঘর থেকে বের হয়, তিনি তার হেফাজত করেন। তার মা খুব ধার্মিক মহিলা ছিলেন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি এসে খাপ খাওয়াতে তার অনেক কষ্ট হয়েছে। স্বামী ছিলেন বিলেত ফেরৎ ব্যারিষ্টার। তাদের চাল-চলন ছিল সাহেবী ধরনের। স্বামীর মনস্তুষ্টির জন্য তাকে নিজের ও ইসলামের নীতির বাইরে অনেক কাজ করতে হয়েছে। স্বামীর বাড়িতে ইসলামের নামগন্ধ ছিল না। এত কিছু সত্ত্বেও তিনি যথাসম্ভব নামায রোযা করতেন। আর প্রতিদিন ক্বোরআন পড়তেন ? তার স্বামী নিষেধ করতেন। বলতেন, ঐ সব করে কি লাভ ? মৃত্যুর পরে কি হবে না হবে, সে কি কেউ কোনোদিন দেখেছে ? পরে স্ত্রীর রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে খুব ভালবেসেছিলেন। তাই তার মনে কষ্ট হবে বলে ধর্মের ব্যাপারে স্ত্রীকে আর কিছু বলতেন না। সেই মায়ের একমাত্র সন্তান সোহানা বেগম। মা তাকে নিজের মত করে গড়তে চাইলে এত দিন পর আবার স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়। বাবা চাইলেন মেয়েকে নিজের মত যুগপযোগী করার জন্য শিক্ষায়-দিক্ষায় চাল-চলনে আপটুডেট করে গড়তে। শেষে বাবার জীদ বজায় রইল। মেম সাহেব মাষ্টার রেখে ইংলিশ শিখিয়ে ইংলিশ স্কুলে ভর্তি করেন। তবে প্রথম অবস্থায় মা মৌলবী রেখে কিছু আরবি পড়িয়েছিলেন। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর সে সব বন্ধ হয়ে যায়। তবুও মা অবসর সময় গোপনে মেয়েকে ধর্মের অনেক কথা শোনাতেন। অনেক দিন আগের কথা হলেও আজও সোহানা বেগমের বেশ স্পষ্ট মনে আছে। যখন তার বয়স পনের বছর তখন তার মা মাত্র কয়েকদিনের জ্বরে মারা গেলেন। তারপর বাবা আর বিয়ে করেননি। মেয়েকে আল্ট্রামডার্ণ করে মানুষ করেছিলেন। মায়ের কাছে যা কিছু ধর্মের কথা শিখেছিল সব ভুলে গেল। আজ সে সব কথা ভেবে সোহানা বেগম চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। লাইলীর কথাগুলো ঠিক যেন তার মায়ের মুখে ধর্মের কথা শুনলেন। তার মাও তাকে মাঝে মাঝে এ রকম করে বোঝাতেন। লাইলীকে দেখলে মায়ের কথা মনে পড়ে। তার মনে হয় তার মাও যেন এ রকম দেখতে ছিল। লাইলীর প্রতি কি এক অজানা আকর্ষণ অনুভব করলেন। ভাবলেন, লাইলী যদি সেলিমের বৌ হয়ে আসে, তা হলে বেশ ভালো হয় ? আবার ভাবলেন, সেলিম যে সমাজে মানুষ হয়েছে, সে কি লাইলীকে মেনে নিতে পারবে ? কিন্তু সেলিম মাকে ফাঁকি দিতে পারেনি। লাইলী দু’দিন এখানে এসেছে। তার সঙ্গে সেলিমের ব্যবহার অন্যান্য বান্ধবীদের থেকে আলাদা। তৎক্ষণাৎ রেহানার কথা মনে পড়ল। রেহানাকে লাইলীর চেয়ে এই সমাজে যেন বেশি মানায়। দেখা যাক, সেলিম কাকে পছন্দ করে। তার অমতে কিছু করতে পারব না। কারণ সেলিম তার বাবার মত একগুয়েমী স্বভাব পেয়েছে। নিজে যা ভালো মনে করবে তা করেই ছাড়ে। রেহানার বাবাকে বুঝেয়ে বললেই হবে। রুবীনাটা তার মত হয়েছে। তাকে নিয়েই চিন্তা। সে খুব উগ্র আর উচ্ছৃঙ্খল। ভাইপো মনিরের সঙ্গে তার বিয়ে দেবে বলে ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন তার দুশ্চরিত্রের কথা জেনে সোহানা বেগমের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ভাবলেন, মনির কি আসমাকে গ্রহণ করবে ? হঠাৎ কিসের শব্দ শুনে সোহানা বেগমের চিন্তা ছিন্ন হয়ে গেল। শব্দটা যেন কবীনার ঘরের জানালার দিকে হল। বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে রুবীনার ঘরের দিকে গেলেন। ভেন্টিলেটার থেকে আলো দেখতে পেয়ে বুঝলেন সে জেগে আছে। এতরাত্রে সে কি করছে দেখার জন্য জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলেন, রুবীনা বাগানের দিকের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলছে। এতরাত্রে বাইরের একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখে সন্দেহ হল। দরজার কড়া নেড়ে রুবীনা বলে ডাকলেন ।
রুবীনা মায়ের গলা পেয়ে ছেলেটাকে বিদায় দিয়ে দরজা খুলে বলল, মা তুমি এখনও ঘুমোওনি ?
সোহানা বেগম গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কার সঙ্গে এতরাত্রে কথা বলছিলে ? ছেলেটা কে ? তার সঙ্গে এখন তোমার কী দরকার ?
রুবীনা ধরা পড়ে ভয়ে ও লজ্জায় একেবারে বোবা হয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কি উত্তর দেবে খুঁজে পেল না।
সোহানা বেগম গর্জে উঠলেন, কথা বলছ না কেন ? দিন দিন বড় হচ্ছ, না ছোট হচ্ছ ? এবার তোমার ভালো মন্দ জ্ঞান হওয়া উচিৎ। এতরাত্রে যে ছেলে গোপনে তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, সে যে খারাপ তাতে কোনো সন্দেহ নেই । যাও ঘুমিয়ে পড়। আর যেন কোনোদিন এরকম দুঃসাহস তোমার না হয়। তোমার বয় ফ্রেণ্ড আছে, ভালো কথা। তাই বলে তার সঙ্গে এরকম করা মোটেই ভালো নয়। তারপর তাকে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়তে বলে নিজের ঘরে ফিরে এলেন।
সেলিমের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। একদিন মাকে বলল, আমি ফার্স্টক্লাস পেলে বিলেতে পড়তে যাব।
সোহানা বেগম ছেলের মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বললেন, তুমি এখন বড় হয়েছ, যা ভালো বুঝবে করবে। তবে আমার মতে এবার তোমার ব্যবসা-
পত্র দেখা উচিত। আমার বয়স হয়েছে। আমি একা কতদিন চালাব ? তুমি যদি তোমার নিজের জিনিষ না দেখ, তা হলে অন্য লোক আর কতদিন দেখবে। বিলেতে না গিয়ে ব্যবসা-বানিজ্যে মন দাও। আজ পাঁচ বছর হয়ে গেল আরিফের কোনো খোঁজ খবর নেই। তার চিন্তায় আমি জারে জার হয়ে আছি। তার উপর তুমি যদি বিদেশে পড়তে চলে যাও, তা হলে আমি বাঁচাবো কাকে নিয়ে ? শেষের দিকে তাঁর
গলা ধরে এল।
সেলিম মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ঠিক আছে, তোমার মনে আমি দুঃখ দেব না। তুমি যা বলবে তাই করব। আরিফের জন্য আমারও মনটা মাঝে মাঝে খারাপ হয়ে যায়। আজ যদি সে ঘরে থাকত, তা হলে দুই ভাই মিলে সব কিছু দেখাশোনা করতাম। তুমি দেখ মা, আরিফ একদিন না একদিন মানুষের মত মানুষ হয়ে ঠিক ফিরে আসবে।
এরপর থেকে সেলিম নিয়মিত অফিসে বাবার সীটে গিয়ে বসতে লাগল। তার কাজে ও ব্যবহারে অফিসের সবাই খুব সন্তুষ্ট। সে অফিসের ও মিলের সব ধরণের অফিসার ও শ্রমিকদের সঙ্গে খুব সহজভাবে মেলামেশা করে। তাদের অভাব অভিযোগ শুনে এবং যতটা সম্ভব সেগুলোর সমাধান করে। সব বিষয়ে সেলিমের কর্মদক্ষতা দেখে সকলে খুব খুশি।
একদিন সেলিম অফিসে কাজ করছে। এমন সময় লেবার অফিসার এসে একজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে অনুপস্থিতির কমপ্লেন দিয়ে তাকে ছাঁটাই করার কথা বললেন ।
সেলিম তাকে ব্যাপারটা খুলে বলতে বলল।
লেবার অফিসার বললেন, হারুন নামে এই শ্রমিকটা প্রতি মাসে দশ-বার দিন কামাই করে। তাকে বহুবার ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে। সে প্রতিবারই নানান অজুহাত দেখায়। তাকে এত বেশি ফেসিলিটি দিলে অন্যান্য শ্রমিকরাও সে সুযোগ নিতে চাইবে।
সেলিম বলল, আপনি এখন যান, আমি পরে আপনাকে জানাব। লেবার অফিসার চলে যাওয়ার পর সেলিম বেয়ারাকে ডেকে বলল, তুমি হারুনকে ডেকে নিয়ে এস।
কিছুক্ষণ পর একজন আধাবয়সী লোক এসে সেলিমের টেবিলের সামনে দাঁড়াল। সেলিম ফাইল দেখতে দেখতে তার দিকে না চেয়ে বলল, আপনি বসুন । লোকটা থতমত খেয়ে বলল, হুজুর !
আপনি বসুন, আমি আমার হাতের কাজটা সেরে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। লোকটা ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে রইল
সেলিম ফাইলের কাজটা শেষ করে সেটা যথাস্থানে রেখে লোকটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, আপনি দাঁড়িয়ে কেন, বসুন।
লোকটা ঘামতে ঘামতে একটা চেয়ারে জড়সড় হয়ে বসল ।
আপনার নাম হারুন, আপনি প্রতিমাসে দশবার দিন করে কামাই করেন, একথা কি সত্যি ?
সাহেবকে তার মত একজন সামান্য শ্রমিকের সঙ্গে আপনি করে কথা বলতে শুনে হারুন অবাক হয়ে মাথা নিচু করে বলল, হুজুর যদি আমার সব কথা শোনেন, তা হলে সব বুঝতে পারবেন।
আপনি অত হুজ্বর হুজুর করছেন কেন ? আপনার সব কথা শুনব, তার আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
জ্বি, আমার নাম হারুন। আমি প্রতিমাসে দশবার দিন নয়, চার পাঁচ দিন কামাই করি।
কামাই দিনের বেতন কি কেটে নেওয়া হয় ?
জ্বি. কিন্তু যতদিন কামাই করি, তার ডবল দিনের বেতন কেটে নেয়।
কেন আপনি প্রতি মাসে কামাই করেন ?
হুজুর, আমার মা বাপ, আমাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করবেন না।
আবার হুজুর হুজুর করছেন, যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন।
আমার বাড়ি হাতিয়া। সেখানে আমার বুড়ো মা অসুস্থ। আমার স্ত্রী তাকে দেখাশোনা করে। আমাদের কোনো সন্তান নেই। আর এমন কোনো আত্মীয় নেই, ে মায়ের ঔষুধপত্র ডাক্তারের কাছ থেকে এনে দেবে। তাই প্রতি মাসে বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ বুড়ো মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে আসতে হয়। মাহফিলে মৌলবীদের মুখে শুনেছি, উপযুক্ত ছেলে থাকতে যদি মা-বাপ কষ্ট পায়, তা হলে আল্লাহ তাকে মাফ করেন না। আমি আল্লাহ আদেশ পালন করার জন্য কাজ কামাই করে প্রতিমাসে মায়ের সেবা করতে যাই। এখন আপনি যদি চাকুরি থেকে বরখাস্ত করেন; তা হলে আমার মায়ের চিকিৎসা করা খুবই অসুবিধে হবে। সামান্য যেটুকু জমি আছে, তাতে

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.