ইবনে বতুতার সফরনামা – মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৯১
ইবনে বতুতার সফরনামা – বইটির এক ঝলকঃ
ইয়েমেন ও ভারত যাবার উদ্দেশ্যে হজের পরেই আমি জেদ্দায় এলাম জাহাজ ধরবার জন্য কিন্তু কোন সঙ্গী পেলাম না বলে আমার সে উদ্দেশ্য ব্যর্থ হল। আমাকে চল্লিশ দিন কাটাতে হল জেদ্দায়। সেখানে তখন কসাইরগামী একখানা জাহাজ ছিল। জাহাজটির অবস্থা কি রকম দেখবার জন্য জাহাজে উঠে আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। খোদার ইচ্ছায় তা হয়েছিল, কারণ সে জাহাজটি যাত্রা করে গিয়ে সমুদ্রে ডুবে যায় এবং অতি অল্প লোকই প্রাণ রক্ষা করতে সমর্থ হয়। পরে আমি আয়বীব যাওয়ার জন্য জাহাজে উঠি কিন্তু জাহাজ গিয়ে পৌঁছে রাস দাওয়াইর নামক জাহাজ ভিড়াবার একটি জায়গায়। সেখান থেকে কয়েকজন বেজার সঙ্গে আমরা মরুভূমির পথে আয়বীব রওয়ানা হয়ে গেলাম। সেখান থেকে এডফু গিয়ে নীলনদের পথে কায়রো এলাম। কায়রোতে দিন কয়েক কাটিয়ে যাত্রা করলাম সিরিয়া। পথে যেতে দ্বিতীয় বারের জন্য গাজা, হেবরণ, জেরুজালেম, রামলা আকরে, ত্রিপলী এবং জাবালা হয়ে লাধিকিয়া দেখে এলাম ।
লাধিকিয়ায় ছোট একটি জাহাজ পেলাম। জাহাজটি Genoeseদের, তার মালিকের নাম মারতালমিন। সে জাহাজে তুর্কীদের দেশ বলে পরিচিত বেলাদ-আর রোম (আনাতোলিয়া) রওয়ানা হলাম। আগে এ দেশটি তুর্কীদেরই ছিল। পরে এদেশ অধিকার করে মুসলমানেরা কিন্তু তবু এখনও তুর্কমেন মুসলমানদের শাসনাধীনে এখানে অনেক খ্রীষ্টান বসবাস করে। আমাদের দশ রাত্রি সমুদ্রে কাটাতে হয়েছে। সে সময়ে খ্রীস্টানরা আমাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করেছে এবং ভাড়া বাবদ কিছুই গ্রহণ করেনি। দশম দিনে আমরা আলায়া পৌঁছি। আলায়া থেকেই এ প্রদেশের শুরু। এ দেশটি পৃথিবীর অন্যতম উত্তম দেশ। অন্যান্য দেশের ভাল যা-কিছু খোদা এখানে এনে একত্র করে দিয়েছেন। এখানকার লোকেরা সবচেয়ে শান্ত প্রকৃতির। পোষাকে পরিচ্ছদেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, খাদ্যের ব্যাপারে অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী। সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে এরা সব চেয়ে দয়ালু। এদেশের যেখানেই আমরা গেছি, মুসাফেরখানায় বা গৃহস্থ বাড়ীতে, সেখানেই নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এসে আমাদের কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেছে। এখানকার নারীরা নেকাব ব্যবহার করে না। যখন আমরা চলে এলাম তখন ঠিক আত্মীয়- পরিজনের মতই আমাদের বিদায় দিল, নারীদের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল। সপ্তাহে মাত্র একবার তারা রুটী তৈরি করে। যে দিন রুটী তৈরি হত লোকেরা সেদিন গরম রুটী আমাদের দিয়ে বলত, “বাড়ীর বিবিরা আপনাদের উপহার পাঠিয়েছেন এবং দোয়া করতে বলেছেন।” এখানকার সমস্ত বাসিন্দাই গোঁড়া সুন্নী মতাবলম্বী কিন্তু এরা ভাঙ যায় এবং তা অনিষ্টকর মনে করে না।
সমুদ্রোপকূলেই আলেয়া একটি বড় শহর। এ শহরের অধিবাসীরা তুর্কমেন। কায়রো, আলেকজেন্দ্রিয়া, সিররা থেকে সওদাগরেরা এ শহরে যাতায়াত করে। এ জেলায় যথেষ্ট কাঠ পাওয়া যায়। এখান থেকে আলেকজান্দ্রিয়া ও ডামিয়েটায় কাঠ চালান হয়ে যায়। সেখান থেকে বহন করে নেওয়া হয় মিসরের অন্যান্য শহরে। এখানে সুলতান আলাউদ্দিনের দ্বারা নির্মিত ইট প্রসিদ্ধ দূর্গ আছে। শহরের কাজী ঘোড়ায় চড়ে আমাকে আলেয়ার সুলতান ইউসুফ বেকের সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে গেলেন। সুলতানের পিতার নাম ছিল কারামান। এখানকার লোকদের ভাষায় বেক অর্থ রাজা। তিনি শহর থেকে দশ মাইল দূরে বাস করেন। আমরা গিয়ে দেখলাম, তিনি সমুদ্র পারে একটি টিলার উপর বসে আছেন, নীচে বসে আছেন আমীর ও উজিরগণ। সুলতানের ডাইনে ও বামে রয়েছে সৈনিকরা। তিনি তাঁর চুলে কাল রং দিয়েছেন। আমি তাঁকে অভিবাদন করলাম এবং আমার আগমনের কারণ সম্বন্ধে তিনি যে সব প্রশ্ন করলেন তার জবাব দিলাম। আমি চলে আসার পর তিনি আমাকে কিছু অর্থ উপহার পাঠিয়েছিলেন।
আলেয়া থেকে আমরা এলাম অতি সুদৃশ্য শহর আন্তালিয়া (আদালিয়া)৩। শহরটি আয়তনে বিশাল। কিন্তু তা হলেও এমন আকর্ষণীয় শহর অন্যত্র দেখা যায় না। শহরের লোকসংখ্যা যথেষ্ট হলেও উত্তমরূপে সজ্জিত। এখানে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল বা মহরা রয়েছে। শহরের খৃষ্টান অধিবাসীরা প্রাচীরবেষ্টিত মিনা (বন্দর) নামক একটি মহল্লায় বাস করে। রাত্রে এবং শুক্রবার নামাজের ৪ সময় প্রাচীরের প্রবেশদ্বার ভেতর থেকে বন্ধ করে রাখা হয়। এ শহরের আদি বাসিন্দা গ্রীকরাও পৃথক একটি মহল্লায় বাস করে, ইহুদীরা অপর একটিতে। সুলতান ও তাঁর বিভিন্ন কর্মচারীরাও পৃথক একটি মহল্লায় বাস করেন। প্রত্যেক মহল্লাই প্রাচীরবেষ্টিত। বাকি মুসলমান অধিবাসীরা শহরের কেন্দ্রস্থলে বাস করে। সমস্ত শহর ও উল্লিখিত মহল্লাগুলির চতুর্দিক বেষ্টন করে আরও একটি বৃহৎ প্রাচীর আছে। এখানকার ফলের বাগানগুলিতে উৎকৃষ্ট শ্রেণীর এক প্রকার খুবানী বা অ্যাপ্রিকট পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকদের কাছে তা কামালউদ্দীন নামে পরিচিত। এ ফলের শাষের ভেতরে মিষ্ট বাদাম পাওয়া যায়। শুষ্ক খুবানী এখান থেকে মিশরে চালান হয়ে যায়। মিশরে এ ফলের যথেষ্ট কদর।
আমরা এখানকার কলেজের মসজিদে ছিলাম। কলেজের তখনকার অধ্যক্ষের নাম ছিল শেখ শিহাবউদ্দীন আল হামাৰী। আনাতোলিয়ার প্রতি জেলায়, শহরে ও গ্রামে যে সব তুর্কমেন আছে, তাদের ভেতর সর্বত্রই আখিয়া (Akhiya) বা ‘খুব ভ্রাতৃত্ব’ (Young Brotherhood) নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সভ্য দেখা যায়। মেহমানদের আদর আপ্যায়ন করতে সদাই ব্যগ্র, এদের মত এমন সম্প্রদায় আর কোথাও দেখা যায় না। মেহমানদের কাছে এরা যথাসম্ভব খাবার হাজির করে, অন্যের অভাব দূর করে, অন্যায় অত্যাচার দমন করে এবং পুলিসের অত্যাচারী চরদের বা তাদের সঙ্গে যে সব দুষ্কৃতকারী যোগদান করে, তাদের হত্যা করে। যুবভাই বা স্থানীয় লোকদের ভাষায় আখি নির্বাচিত হয় সমব্যবসায়ী সকলের ভোটে, অবিবাহিত লোকদের দ্বারা অথবা কঠোর সংযমী ধর্মপরায়ণ কোন ব্যক্তির দ্বারা। নির্বাচিত যুবভাই স্ব-সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব করে। এই প্রতিষ্ঠান ‘ফতুয়া’ (বা Order of youth) নামেও পরিচিত। নেতা একটি মুসাফেরখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাতে কম্বল, বাতি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষ এনে দেন। প্রতিষ্ঠানের সভ্যরা সারাদিন নিজ-নিজ জীবিকার জন্য উপার্জন করে, দিনের শেষে বিকালে বা উপার্জন করে সবই এনে দেয় নেতার কাছে। এভাবে যে অর্থ সঞ্চিত হয় তা দিয়ে ফল, খাদ্য এবং মুসাফেরখানার অন্যান্য দরকারী জিনিষ ক্রয় করা হয়। সেদিন যদি কোন মুসাফের শহরে আসে তবে তাকে মুসাফেরখানায় রেখে ঐ দিনের সংগৃহিত খাদ্য দেওয়া হয়। এভাবে যতদিন খুশী সে সেখানে থাকতে পারে। যদি কোনদিন কোন মুসাফের না আসে তবে নিজেরা একত্র হয়ে সে সব খাবার খায় এবং খাওয়ার পরে নৃত্য-গীত-বাদ্যের দ্বারা আমোদ প্রমোদ করে। পরের দিন আবার যে যার কাজে চলে যায় এবং শেষ বেলায় উপার্জিত অর্থ এনে নেতার কাছে যথারীতি জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানের সভ্যদের বলা হয় ফিতায়ানা (Fityan) (Youth)। নেতাকে বলা হয় ‘আখি’ও আগেই তা বলেছি।
আমাদের আন্তালিয়ায় পৌঁছবার পরের দিন এমনি একটি যুবক শেখ শিহাবউদ্দিনের কাছে এসে তুর্কী ভাষায় কথাবার্তা বল্লেন। আমি তখন তার কথা বুঝতে পারিনি। লোকটির পরিধানে ছিল পুরাতন কাপড়, মাথায়ও একটি টুপি ছিল। শেখ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এ লোকটি কি বলছে বুঝতে পারলে?”
আমি বল্লাম, “না, কিছুই বুঝতে পারলাম না।”
শেখ তখন বললেন, “তোমাকে এবং তোমার দলের আর সবাইকে তার ওখানে খাওয়ার দাওয়াত করতে এসেছে।”
আমি মনে মনে বিস্মিত হলাম কিন্তু মুখে বল্লাম, “বেশ তো।”
লোকটি চলে গেলে শেখকে বললাম, “লোকটি গরীব। আমাদের খাওয়াতে গেলে তার কষ্ট হবে। লোকটির উপর আমাদের বোঝা চাপাতে চাই না।”
শেখ হেসে বললেন, “সে যুব ভ্রাতৃত্বের একজন শেখ। মূচির কাজ করে কিন্তু খুব দয়ালু । তার দলে রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়ে লিপ্ত প্রায় দু’শ লোক। তারা একে নেতা নির্বাচিত করে একটি মুসাফেরখানা তৈরী করেছে। সেখানে মুসাফেরদের খাওয়ানো হয়। সারা দিনে এরা যা উপায় করে রাত্রে তাই খরচ করে।”
আমার মাগরেবের নামাজ পড়া হয়েছে এমন সময় আবার সেই লোকটি এসে হাজির। সে এসে আমাদের মুসাফেরখানায় নিয়ে গেল। আমরা অতি চমৎকার একটি অট্টালিকায় এসে হাজির হলাম। ঘরের মেঝে তুর্কী কার্পেটে মোড়া, অসংখ্য বাতি জ্বলছে ইরাকী কাচের ঝাড় লণ্ঠনের । কিছু সংখ্যক যুবক সার বেঁধে হল কামরায় দাঁড়িয়ে আছে। পরণে তাদের লম্বা কোর্তা, পায়ে জুতা, কোমরবন্ধের সঙ্গে ঝুলছে প্রায় দু’হাত করে লম্বা একটি করে ছুরি। তাদের মাথায় সাদা উলের টুপি, টুপির চুড়ায় বাঁধা এক হাত লম্বা দু’ আঙ্গুল চওড়া এক টুকরা কাপড়। যখন তারা বসল তখন সবাই টুপি খুলে নিজের সামনে রেখে দিল। তারপর আরেকটি করে কারুকার্যময় রেশমের বা ঐ জাতীয় টুপি মাথায় দিল। তাদের হলটির মধ্যস্থলে মুসাফেরদের জন্য রক্ষিত একটি দেবী। আমরা গিয়ে আসন গ্রহণ করার পর ফল মিষ্টি ইত্যাদি খাওয়া হ’ল এবং তার পরে শুরু হ’ল নৃত্য গীত। আমরা তাদের মুক্ত হস্তের দয়া দাক্ষিণ্য দেখে মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়ে গেলাম। আমরা রাত্রির শেষ দিকে বিদায় নিয়ে এলাম। আমরা যখন এ শহরে গিয়েছি তখন ইউনুস বেকের পুত্র খিদর বেক ছিলেন সুলতান। তিনি তখন অসুস্থ। তবু আমরা তার সঙ্গে দেখা করেছি তাঁর রুগ্ন শয্যায়। তিনি অত্যন্ত সহৃদয়তার সঙ্গে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেন এবং বিদায় নেওয়ার সময় কিছু অর্থ আমাদের উপহার
দিলেন।
সেখান থেকে আমলা এলাম বরদুল (Buldur) জায়গাটি ছোট কিন্তু অনেক ফলের বাগান এবং নদী নালা আছে আর আছে পাহাড়ের উপর একটি দূর্গ। আমরা সেখানে বাস করলাম ইমামের (peacher) মেহমান হয়ে। সেখানকার যুব ভ্রাতৃত্ব একটি সভা ডাকল এবং তাদের সঙ্গে থাকতে আমাদের অনুরোধ জানাল। কিন্তু আমাদের মেজবান ইমাম তাতে রাজী হলেন না। কাজেই যুব ভ্রাতৃত্ব তাদের এক সভ্যের একটি বাগানে ভোজের আয়োজন করে আমাদের সেখানে নিয়ে গেল। তারা যে রকম আনন্দের সঙ্গে আমাদের অভ্যর্থনা করল তা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল যদিও আমরা কেউ পরস্পরের ভাষা বুঝতে পারিনি এবং বুঝিয়ে দেবারও কেউ সেখানে ছিল না। আমরা সেখানে একদিন তাদের সঙ্গে কাটিয়ে বিদায় নিয়ে এলাম।
বারদুর থেকে আমরা এলাম সাবারতা ( Isarta), সেখানে থেকে আকরিদুর (Egirdir)। আকরিদুর জনবহুল একটি বড় শহর। এখানে মিঠা পানির একটি হ্রদ আছে। এ হ্রদ থেকে নৌকায় দু’দিনে আকশর ও বাকশর এবং অন্যান্য শহর ও গ্রামে ৬ যাওয়া যায়। আকারদুরের সুলতান এ দেশের একজন খ্যাতনামা শাসনকর্তা। তিনি একজন সৎ প্রকৃতির লোক। প্রতিদিন তিনি শহরের প্রধান মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন। আমাদের সেখানে থাকাকালে তাঁর একটি পুত্র মারা যায়। তার দাফনে পরে সুলতান এবং ছাত্রেরা তিনদিন অবধি খালি পায়ে কবরস্থানে যান। দ্বিতীয় দিন আমি তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। আমাকে হেঁটে যেতে দেখে তিনি একটি ঘোড়া পাঠিয়ে দেন। মাদ্রাসায় পৌঁছে আমি সেই ঘোড়াটি ফেরত পাঠিয়ে দেই। কিন্তু তিনি সে ঘোড়া পুনরায় ফেরত পাঠিয়ে বলেন, “আমি উপহার হিসাবে ঘোড়াটি আপনাকে দিয়েছি, ধার হিসাবে নয়।” তিনি আমাকে জামা কাপড় ও কিছু অর্থও উপহার দেন। অতঃপর আমরা কুল্ হিসার (Laka Fortress) শহরে পৌঁছলাম। নল খাগড়াপূর্ণ জলায় সম্পূর্ণভাবে বেষ্টিত কুল্ হিসার একটি ছোট শহর। নল খাগড়া ও পানির উপরে তৈরী একটি সেতু এ শহরের একমাত্র প্রবেশ পথ। পথটি এত সরু যে একেবারে একটি মাত্র ঘোড়সওয়ার সে পথে যেতে পারে। একটি হ্রদের মধ্যে একটি পাহাড়। সেই পাহাড়ের উপরে রয়েছে দুর্ভেদ্য এ শহরটি। এখানকার সুলতান আকরিদুরের সুলতানের ভাই। আমরা যখন এখানে পৌঁছি তিনি তখন অনুপস্থিত ছিলেন। আমরা সেখানে কয়েকদিন কাটাবার পর তিনি এলেন। তিনি আমাদের খাদ্য ও ঘোড়া সরবরাহ করে অত্যন্ত সহৃদয়তার পরিচয় দেন। জারমিয়ান (Kermian) নামে পরিচিত একদল দস্যু সেখানে আছে। কুতাহিয়া নামে একটি শহরও তাদের দখলে আছে। এজন্য সুলতান আমাদের সঙ্গে একদল অশ্বারোহী দেন লাধিক (Denizli) পর্যন্ত আমাদের এগিয়ে দেবার জন্য । সাতটি বড় মসজিদবিশিষ্ট লাধিক একটি প্রসিদ্ধ শহর। চারপাশে সোনালী জরির কাজ করা এ ধরণের অতুলনীয় সূতী কাপড় তৈরী হয় লাধিক শহরে। উত্তম বুনট ও উৎকৃষ্ট শ্রেণীর সূতার তৈরী বলে সে কাপড় খুব টেক্সই হয়। কারিগরদের মধ্যে অধিকাংশই গ্রীক্ নারী, কারণ, এখানে বহু সংখ্যক গ্রীকের বাস। তারা সুলতানের প্রজা এবং তাঁকে জিজিয়া কর দেয়। গ্রীকদের একটি বিশেষ চিহ্ন হল তাদের মাথার লম্বা চুড়াবিশিষ্ট সাদা বা লাল টুপি । এখানকার গ্রীক নারীরা মাথায় ব্যবহার করে বড় পাগড়ী। শহরে প্রবেশ করেই আমরা একটি বাজারের মধ্য দিয়া যেতে ছিলাম, কয়েকজন দোকানদার তাড়াতাড়ি তাদের দোকান ছেড়ে এসে আমাদের ঘোড়ার লাগাম ধরল। এ ব্যাপারে অন্যান্য দোকানদাররা আপত্তি উত্থাপন করল। তারপরে এমন বাদানুবাদ চলতে আরম্ভ করল যে কয়েকজন ছুরি বের করে ফেলল। আমরা অবশ্য তাদের বক্তব্য কিছুই বুঝতে পারিনি কিন্তু মনে ভয় হল যে, এরাই বোধ হয় সেই ডাকাত এবং এটাই তাদের শহর। অবশেষে খোদা আমাদের এমন একজন লোক সেখানে এনে হাজির করলেন যিনি আরবী জানতেন। তিনি আমাদের বুঝিয়ে বললেন, বিবদমান লোকগুলি দু’টি যুব ভ্রাতৃত্বের সভ্য। দু’দলই আমাদের মেহমান হিসাবে পেতে চাইছে। তাদের এ ব্যাপার দেখে আমরা অবাক হয়ে গেলাম। পরে স্থির হল, তারা লটারী করবে এবং যারা তাতে জিত্বে তাদের সঙ্গেই প্রথমে আমরা গিয়ে বাস করব। তদনুসারে কাজ হলে প্রথমে আমরা ভ্রাতা সিনানের সঙ্গে গেলাম। তিনি আমাদের গোসলখানায় নিয়ে গেলেন এবং নিজে আমার দেখাশুনা করলেন। অবশেষে আমাদের জন্য তারা মিষ্টি ও বহু রকম ফল এনে একটি ভোজের আয়োজন করেন। ভোজনের পর কোরান পাঠ হয় এবং তারপর তারা সুর করে দরুদ পড়ে ও নৃত্য করে। পরের দিন আমরা সুলতানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। তিনি আনাতোলিয়ার একজন প্রসিদ্ধ সুলতান। সেখান থেকে ফিরে এলে আমাদের সঙ্গে দেখা হয় অপর মুসাফেরখানার ভ্রাতা তুমানের সঙ্গে। তিনি আমাদের আরও বেশী সমাদর করেন এবং গোসলখানা থেকে বের হয়ে আসবার পর আমাদের উপর গোলাপ পানি সিঞ্চন করেন।
রাস্তার বিপদের ভয়ে আমরা লাধিকে কিছুদিন কাটাই। পরে একটি কাফেলার সংবাদ পেয়ে আমরা একদিন এবং পরবর্তী রাত্রের কিছু অংশ তাদের সঙ্গে গিয়ে তাবাস্
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!