দুরভিসন্ধি – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

দুরভিসন্ধি – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮৯

দুরভিসন্ধি – বইটির এক ঝলকঃ

‘হ্যাঁ, উচিত,’ ভেবেচিন্তে কথা বলছে রানা। কিন্তু হয়তো উল্টোটাই করতে বলা হবে আমাকে। কে বলবে, জিজ্ঞেস কোরো না। তবে সেরকম কোনও নির্দেশ না এলে লন্ডন হয়ে দেশে ফিরে যাব।’
‘লন্ডন হয়ে?’ হঠাৎ ব্যাকুল দেখাল মেপলকে। ‘তা হলে আমাদেরকেও নিয়ে চলো, প্লীজ! আমাকে আর আমার বান্ধবী সিলভিয়াকে। রানা, এই বন্দী জীবন থেকে মুক্তি চাই আমরা।’
কিন্তু এখন নয়, মেপল, ‘এ-বিষয়ে আমি পরে তোমাকে জানাব। বেলায়েভ এখন কোথায়?’
‘একটা পার্টিতে গেছে। চিলির এক মন্ত্রীর বউকে নাকি তার খুব ভাল লেগে গেছে, চেষ্টা করে দেখবে পটানো যায় কিনা। এরকম লম্পট লোক আগে তুমি দেখোনি।’
‘ঠিক আছে, পরে কথা হবে,’ বলল রানা। ‘এখন তুমি যাও।’
“যাব? মানে, আমাকে তুমি তাড়িয়ে দিচ্ছ?’ মেপলকে আহত দেখাল। ‘কিন্তু আমি তো তোমার সেবা করতে এসেছি! ভেবেছি রাতটা এখানেই কাটাব… ‘
‘আমি কৃতজ্ঞ, মেপল । অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু এখন আমার বিশ্রাম ও ঘুম ছাড়া আর কিছু দরকার নেই। প্লীজ; বলৈ মেপলকে এ জার দিকে হাঁটিয়ে আনল রানা।
পায়ের পাতায় ভর দিয়ে উঁচু হলো মেপল, রানার ঠোটে একটা চুমো খেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আমি কি তোমার কাছে খুব সস্তা হয়ে গেলাম?’
‘না, মেপল,’ বলল রানা। ‘তা যে তুমি নও সেটা আগেই প্রমাণ করেছ।’ “বিছানায় শুয়ে তোমার কষ্ট আমিও অনুভব করব,’ বলে স্যুইট থেকে বেরিয়ে গেল মেপল। দরজায় তালা লাগাতে এবার রানার ভুল হলো না ।
পরদিন সকালে শাওয়ার সেরে দাড়ি কামাল রানা, কাপড়চোপড় পরে স্যুইটে বসেই ব্রেকফাস্ট সারল। একটু পর বেজে উঠল ফোনটা রিসিভার তুলল ও, সোহেলকে গালাগালি করার জন্যে তৈরি হয়ে আছে। ‘হ্যালো?’
‘আমি পাবলো, স্যার,’ অপরপ্রান্ত থেকে স্প্যানিশ ভাষায় বলল কেউ প্লেন নিয়ে অপেক্ষা করছি আমি, দয়া করে আমাদের মিলিটারি বেসে চলে আসুন।’ পাসওয়ার্ড মনে পড়ে গেল রানার। ‘আকাশে এত চিল, প্লেন অ্যাক্সিডেন্ট করবে না তো?’
‘অ্যাক্সিডেন্ট করলে প্লেন হয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু আমরা প্যারাসুট নিয়ে নিরাপদেই নামতে পারব, স্যার।
‘আসছি,’ বলে রিসিভার রেখে দিল রানা। তারপর ইন্টারকমে রিসেপশনকে বর্ণল, ওর একটা ট্যাক্সি দরকার।
মিলিটারি বেসটা সান্টিয়াগোর বাইরে, পৌঁছাতে বিশ মিনিট লাগল। রাস্তার প্রতিটি মোড়ে সৈনিকরা অস্ত্র নিয়ে কড়া পাহারা দিচ্ছে। ওর জন্যে চিলিয়ান এয়ারফোর্স-এর একটা শূটিং স্টার অপেক্ষা করছে দেখে অবাক হলো রানা। তবে পাসওয়ার্ডে কোনও খুঁত না থাকায়, পাবলোর হাড় থেকে প্রেশার সুট আর হেলমেট নিয়ে জেটের পিছনে উঠে বসল ।
‘আমার ধারণা ছিল একটা চার্টার করা প্লেন অপেক্ষা করবে,’ ইন্টারকমে পাইলট পাবলোকে বলল রানা ।
‘গুজব ছড়িয়েছে, কাল রাতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এক বিদেশী অতিথিকে অপমান করা হয়েছে। এভাবে রওনা হওয়ায় কেউ আপনাকে লক্ষ করবে না। ইন্টারকম অফ করে আমাকে এখন টাওয়ারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
পাইলটের সঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ারের আলাপ মন দিয়ে শুনল রানা। প্যাসিফিক কোস্টে রুটিন টহলে যাচ্ছে শুটিং স্টার। রানা ধারণা করল, উপকূল ধরে খানিক দূর গিয়ে কোথাও ল্যান্ড করবে জেট, সেখানে কনট্যাক্ট-এর সঙ্গে ওর দেখা হবে। টাওয়ারের শেষ দিকের কথাগুলো এঞ্জিনের আওয়াজে চাপা পড়ে গেল।
দশ হাজার ফুট ওপরে উঠে এল জেট। নীচে তাকিয়ে রানা দেখল সরাসরি শহরের ওপর দিয়ে যাচ্ছে ওরা। ইন্টারকমে পাইলট বলল, ‘এই মুহূর্তে আমরা সান্টিয়াগো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিস্ট্রিক্ট-এর ওপর রয়েছি, স্যার। নাইট্রেট আর ফার্টিলাইজার, এই দুটোর সবচেয়ে বড় সাপ্লাইয়ার আমরা।’
জানালা দিয়ে শহরের অভিজাত এলাকাটাও চিনতে পারল রানা !
‘রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ।সিডেন্ট প্রাসাদে হয় বটে, বলুল পাবলো, ‘কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওখানে বস বমি করেন না। উনি বলেন, গরীব একটা দেশের প্রেসিডেন্ট অত বড় প্রাসাদে কেন থাকবে? প্রভিডেনসিয়া ডিস্ট্রিক্ট-এ ছোট একটা ভাড়া করা বাড়িতে থাকেন তিনি, ফলে খরচ অনেক কমে গেছে।’ হাত তুলে তিনতলা একটা বাড়ি দেখাল সে। বাড়িটার ছাদ ও লন থেকে সশস্ত্র গার্ডরা মুখ তুলে জেটের দিকে তাকিয়ে আছে।
উপকূলে এসে জেটের গতি বেড়ে গেল। ওদের নীচে ফিশিং বোটগুলো ঢেউয়ের দোলায় দুলছে। তারপর হঠাৎ ইউ টার্ন নিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণের পথ ধরল জেট ।
‘ব্যাপারটা কী?’ জানতে চাইল রানা’। ‘কনট্যাক্ট-এর সঙ্গে দেখা করার জন্যে আমার তো উত্তরেই যাবার কথা।’
‘কিন্তু, স্যার, আমার ওপর অন্য রকম নির্দেশ আছে।’
নির্দেশ? প্যানেলে তাকিয়ে ফুয়েল গজ চেক করল রানা ফুল। যাক, ওকে উড়ন্ত কফিনে রেখে পাইলট ইজেক্ট করতে পারবে না। ‘অন্য রকম নির্দেশ কার কাছ থেকে পেলে তুমি, পাবলো?’
“চিন্তা করবেন না, সিনর রানা। আপনার সম্পর্কে আমি জানি, কাজেই একটা ককপিটের ভেতর কোনও চালাকি করার ঝুঁকি আমি নিচ্ছি না। আমরা দক্ষিণে যাচ্ছি বিসিআই-এর নির্দেশে। একমাত্র এয়ারফোর্সের রাডারই আমাদেরকে দেখতে পাবে, এবং দেখেও কিছু বলবে না, কারণ তারা আমাদেরকে সাহায্য করছে। তবে কেন আপনাকে ওখানে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে তা আমি জানি না, জানতে চাইও না।’
পাবলোর কথা বিশ্বাস করল রানা। দীর্ঘ উপকূল রেখা যেন শেষ হতে চাইছে না। তারপর এক সময় নীচে নামতে শুরু করল জেট। চিলির একেবারে সর্বদক্ষিণে চলে এসেছে ওরা। জায়গাটার নাম টিয়েররা ডেল ফুয়েগো । পুনটা আরেনা এয়ারফোর্স বেসে ল্যান্ড করল ওরা। জেট থেকে বেরুতে প্রেশার সুট ভেদ করে কামড় বসাল হিম বাতাস।
পোলার ক্যাপ থেকে ধেয়ে আসা বাতাস এত ঠাণ্ডা, রানার ভয় হলো শরীরের অনাবৃত অংশ না জমে বরফ হয়ে যায়। কয়েকজন আর্মি অফিসার এগিয়ে এলেন। একজন ভেড়ার একটা চামড়া চাপালেন ওর কাঁধে। তারপর একটা জীপে তোলা হলো ওকে । কাছেই আর্মি হেডকোয়ার্টার, পৌঁছাতে বেশিক্ষণ লাগল না।
‘ডিভিশন ডেল সুড-এ স্বাগতম, মি. মাসুদ রানা।’ অফিসাররা ওকে একটা অফিসে পৌঁছে দেয়ার পর অভ্যর্থনা জানালেন একজন জেনারেল। ভদ্রলোকের ঠোঁটে হিটলারি গোঁফ, পুরোদস্তুর ইউনিফর্ম পরে আছেন। কামরায় পেটমোটা একটা স্টোভ জ্বলছে, কফির সঙ্গে ব্র্যান্ডি মিলিয়ে খেতে দেয়া হলো ওকে। সঙ্গে সঙ্গে গরম হয়ে উঠল শরীর।
‘আমার বোধহয় ঠিক এখানে আসার কথা ছিল না,’ বলল রানা। হ্যান্ডশেক করার পর আবার চেয়ারে বসে পড়েছেন জেনারেল, ওর কোটে টোকা দিয়ে ধুলোও ঝাড়েননি, কাটিঙের প্রশংসাও করেননি। এ ভদ্রলোক তা হলে ওর কনট্যাক্ট নন!
‘সত্যি কথা বলতে কী, আমারও এখানে আসার কথা ছিল না,’ জেনারেল জবাব দিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই অভিশপ্ত নরকে আমাদের কিছু অফিসারের থাকা দরকার। পরিচয় দিচ্ছি না, সেজন্যে ক্ষমা করবেন। আমার মনে হয় নাম জানাজানির মধ্যে না যাওয়াই সবদিক থেকে ভাল। এখানে আপনার আসার কথা নয়, এলে আপনাকে আমাদের গ্রেফতার করতে হবে। কাজেই কাগজে-কলমে থাকবে আপনি এখানে আসেননি।’
‘তবু আপনাকেই ব্যাখ্যা করতে হবে এখানে আমি কী করছি,’ বলল রানা। ‘সম্ভবত বুনো একটা হাঁসকে ধাওয়া করছেন, ক্ষীণ হেসে বললেন জেনারেল । “শুনেছি, ঘোড়ায় আপনি খুব পারদর্শী?’
‘না চড়েছি,’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল রানা, ‘মাঝেমধ্যে।’
‘আমাকে ধারণা দেয়া হয়েছে, চিলিতে আপনি বিশেষ একটা অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছেন,’ বললেন জেনারেল। ধরে নিন, সেই অ্যাসাইনমেন্টেরই একটা রোমাঞ্চকর কাজে বেরুতে হবে আপনাকে। আপনাকে সঙ্গে নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করব আমরা। আসুন, মি রানা, প্লীজ।’
রানা প্রতিবাদ করতে গিয়েও করল না। সোহেল বা বিসিআই ওকে দিয়ে কী করতে চাইছে, সে-সম্পর্কে ওর কোনও ধারণা নেই। তবে আশা করতে দোষ নেই যে ধীরে ধীরে রহস্যের জট খুলবে।
নিজের অফিস থেকে রানাকে নিয়ে রেডিওরূমে চলে এলেন জেনারেল। ঘরভর্তি অফিসার, এই মুহূর্তে তাঁদের মনোযোগ রিসিভার থেকে বেরিয়ে আসা রিপোর্টে। যাচ্ছে বোকা ডেল ডিয়াবলোর দিকে… সংখ্যায় খুব বেশি হলে
পনেরো কি বিশজন হয়ে”.
“চিলি চারটে মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট-এ ভাগ করা, প্রতিটিতে কমপক্ষে একটা করে ডিভিশন আছে,’ রানাকে জানালেন জেনারেল। ‘ডিভিশনগুলোয় লোকবল কম, কারণ সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে সরকার পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না। আরও একটা কারণ, স্যাবটাজের আশঙ্কা থাকায় তামার খনিগুলো পাহারা দেয়ার জন্যে প্রচুর সৈনিক পাঠাতে হয়েছে। এখানে আসার পর আমরা ভেবেছিলাম, ঠাণ্ডায় হি-হি করা ছাড়া আমাদের কোনও কাজ নেই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সারপ্রাইজ দেয়ার মত একটা কিছু ঘটতেও পারে।’
রেডিওর রিপোর্ট থেমে থেমে আসছে। ওদের গতি কমে গেছে… সম্ভৱত নিজেদের ক্যাম্পের কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা….
‘কী ধরনের সারপ্রাইজ?’ জিজ্ঞেস ধরল রানা।
‘চলুন, দেখতে পাবেন।’
কিনারায় ফার মোড়া একজোড়া ক্যামপেইন কোর্ট নিয়ে এল একজন এডিসি। ওগুলো পরে ব্যারাক গ্রাউন্ডে বেরিয়ে এল ওরা জলপাই রঙের একটা হেলিকপ্টার দাঁড়িয়ে আছে, বাতাসে অলসভঙ্গিতে ঘুরছে রোটরগুলো। ওরা উঠে বসতেই যান্ত্রিক ফড়িং উঠে এল আকাশে।
টিয়েররা ডেল ফুয়োগো বিশাল এক পাথুরে মালভূমি, ভেড়া চরানো ছাড়া আর তেমন কোনও কাজে আসে না। কুয়াশা এখানে মাটি থেকে খাড়া স্তম্ভের মত উঠে এসেছে আকাশে, স্তম্ভগুলোকে চিরে ছুটে চলল হেলিকপ্টার। নীচে গম্ভীরদর্শন পাহাড়চূড়া দেখা গেল, ভেড়াগুলো এঞ্জিনের আওয়াজ পেয়ে ছুটোছুটি করছে গোটা উপত্যকায় ।
‘সরকার বিরোধী আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিগুলো একজোট হয়ে একটা বাহিনী তৈরি করেছে,’ চিৎকার করে বললেন জেনারেল ‘লা পাইটাস, মানে হলো ল্যাটিন দরদী। শহরগুলোর কাছাকাছি খামার মালিকদের বন্দী করে পণ আদায়ে ব্যস্ত ছিল ওরা, এদিকটায় আগে কখনও আসেনি। পাথর আর ভেড়া ছাড়া কী আছে যে আসবে? কাজেই যখন এল, আমরা কড়া নজর রাখলাম। ভাবলাম আমি হেডকোয়ার্টার থেকে গোলাবারুদ চুরি করবে, কিংবা বোমা মেরে দু’একটা প্লেন উড়িয়ে দেবে। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা গায়েব হয়ে গেল।
নীচে কোথাও প্রাণের চিহ্নমাত্র নেই ।
‘তারপর খবর পেলাম আমেরিকান নৌ-বাহিনীর একটা ফ্রেইটার জাহাজ আমাদের জলসীমার বাইরে নোঙর ফেলেছে। দূর থেকে ওটার ওপর নজর রাখা হলো। রিপোর্ট এল, ফ্রেইটার থেকে একটা বোট পাঠানো হয়েছে তীরে। এদিকে তীর বলতে খাড়া পাহাড়, সৈকত নেই বললেই চলে।
পাহাড়চূড়া টপকে এসে একটা উপত্যকায় নামল কস্টার। ওরা বেরিয়ে আসতেই মাউনটেড সোলজারদের একটা ট্রুপকে দেখা গেল, এতক্ষণ এক সারি বোল্ডারের আড়ালে লুকিয়ে ছিল, প্রতোকের স্যাডলের সঙ্গে যার যার সাবমেশিন গান স্ট্র্যাপ দিয়ে আটকানো। ওদের ঘোড়ার নাক থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। ট্রুপ লীডার একজন ক্যাপ্টেন, ঘোড়া থেকে নেমে স্যালুট করল সে, তারপর বলল, ‘লা পাইটাসের গ্রুপটা নিজেদের ক্যাম্পে পৌঁছেছে, জেনারেল। স্কাউট রিট করেছে, জিনিস-পত্র গোছগাছের লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে কাল সকালেই ওরা চলে যাবে।’ ‘গুড, জবাব দিলেন জেনারেল। ‘স্কাউটকে জিজ্ঞেস করো, পাইটাসদের ওই ক্যাম্পে পৌঁছাবার উপায় কী,
ক্যাপ্টেনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রেডিও অপারেটর। হাতের রেডিও অন করে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করল সে, সম্ভবত স্কাউটের সঙ্গেই। কয়েক সেকেন্ড পর সেট অফ করে বলল, ‘স্কাউট বলছে, গিরিপথের ভেতর দিয়ে একটা পথ ওপর দিকে উঠে গেছে, সেটার মুখে পাহারা বসিয়েছে ওরা। তবে ক্যাম্পের পিছনে পাহাড়-প্রাচীর বা আগুনে জলার ওপর নজর রাখছে না।’
চেহারায় সন্তুষ্টির ভাব ফুটিয়ে জেনারেল মাথা ঝাঁকালেন। ‘তা হলে ওরা মারা গেছে,’ ঘোষণা করলেন তিনি। তাঁর নির্দেশে দুটো অতিরিক্ত ঘোড়া আনা হলো।
সব মিলিয়ে বিশজন ঘোড়সওয়ার রওনা হয়ে গেল তখুনি। ঢালের গায়ে বাদামী ও সবুজ ঝোপগুলো বেশ উঁচু, তার ভেতর দিয়ে ওপরে উঠছে ওরা। বাতাস ক্রমশ আরও ঠাণ্ডা আর ভারী হয়ে উঠল। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা রিজ- এ উঠে এল ওরা দু’দিকে হাজার ফুট গভীর খাদ, দমকা বাতাস সরু ট্রেইল থেকে ঘোড়াগুলোকে হটিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। খানিক পরপর বাতাস বয়ে আছে দু’এক প্রস্থ মেঘ, তখন বাধ্য হয়েই লাগাম টেনে দাঁড় করাতে হচ্ছে ঘোড়াগুলোকে। মেঘ না সরা পর্যন্ত সবাই ওরা অন্ধ ।
“ক্যানিয়ন ট্রেইল ধরে যাওয়াটাই সহজ হবে, রানাকে বললেন জেনারেল । “তবে তা গেলে পাইটাসদের সারপ্রাইজ দেয়া যাবে না।’
অবশেষে ঢাল বেয়ে নামা শুরু হলো। হঠাৎ ট্রেইলে বেরিয়ে এল এক তরুণ রাখাল, গায়ে চামড়ার তৈরি ঢোলা কোট। ওদেরকে চিনতে পেরে হাতের সাবমেশিন গানটা নিচু করল। তার প্যাকে রেডিওর অ্যান্টেনা রয়েছে। এই-ই তা হলে ক্যাপ্টেনের স্কাউট।
‘দু’জন গার্ড,’ বলল সে। ‘দু’জনেই ক্যানিয়ন ‘পাহারা দিচ্ছে। আপনারা ঝুঁকি নিতে রাজি থাকলে পাহাড়চূড়া থেকে গিরিপথে নামার পথটা দেখিয়ে দিতে পারি।’
‘পৌছাতে কতক্ষণ লাগবে?’ জানতে চাইলেন জেনারেল
‘ক্যাম্পে? সাত কি আট ঘণ্টা।’
“ততক্ষণে ওরা চলেও যেতে পারে। নাহ্!’ মাথা নাড়লেন জেনারেল। ‘দ্বিতীয় পথটাই ধরতে হবে।’
দ্বিতীয় পথ মানে জলা, সেই জলাও এমন অদ্ভুত যে নাম রাখা হয়েছে টিয়েররা ডেল ফুয়েগো আগুনে মাটি। বিপজ্জনক বাতাস ও অশুভ মেঘের চেয়েও জলাটাকে বেশি ভয় পাচ্ছে সৈনিকরা। কিনারায় পৌঁছে কারণটা বুঝতে পারল রানা।
নিরেট, যেন দুর্ভেদ্য, ফেনা ও ধোঁয়ার একটা মাঠ ওদের সামনে; পাতালের সমস্ত বিষনিঃশ্বাস যেন সহস্র কোটি ছিদ্রপথ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। নারকীয় দৃশ্যটা মাইলের পর মাইল বিস্তৃত, যেন প্রাণহীন একটা মাইন ফিল্ড, পা ফেলতে ভুল করলে সওয়ার সহ ঘোড়া ডুৰ দেবে টগবগে ফুটন্ত ডোবায় কিংবা বুদ্বুদে ঢাকা কাদায়, যেখান থেকে কাউকে কোনওদিন। উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top