ধ্বংসের নকশা – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১১৪
ধ্বংসের নকশা – বইটির এক ঝলকঃ
হয়ে গেল আমাদের। সন্দেহ হচ্ছে আমাদের বেশিরভাগ অপারেটরকে চেনে ওরা। কি করে, ঈশ্বরই জানে। পরেরবার যাকে পাঠাব, তারও হয়তো পরিণতি একই হবে। কাল আবার এসেছে আরগুয়েলো, মারকাল্ডি গেছে। দূর থেকে ওকে অনুসরণ করেছে আমার লোক, ধারেকাছে যেতে নিষেধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু দূর থেকে কাজ হবে না, রানা, রজারের কাছে পৌঁছতে হবে, তাই বাধ্য হয়ে তোমার সাহায্য চেয়েছি।’
‘বুঝলাম,’ চিন্তিত রানা মাথা ঝাঁকাল। ‘কিন্তু তার কাছে যাব কি করে, স্যার? সে ব্যাপারে ভেবেছেন কিছু?
‘ভেবেছি,’ সিগারেট অ্যাশট্রেতে ফেলে ঝুঁকে বসলেন বিএসএস প্রধান। ‘খুব শিগগিরই লোকটার কাছে যাওয়ার একটা সুযোগ আসবে, রানা। সেটা কাজে লাগানো সম্ভব।’
‘কি ধরনের সুযোগ?’
পরে বলছি। ওটা যদি কাজে লাগাতে পারো, রজার সাইমুরের কাছে পৌঁছে তাকে প্রভাবিত করতে পারো, তাহলে খুব সম্ভব তার ক্যাসেলে ঢোকার একটা সুযোগ তুমি পাবে।’
‘ওর মত একজন ঘুঘু লোককে প্রভাবিত করা নিশ্চই কঠিন হবে।’
‘সে ব্যবস্থা আমি করব,’ তাড়াতাড়ি বললেন বৃদ্ধ। ‘তোমার নতুন ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করে দেব আমি। পরিচয়ের পরে যদি তোমার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়, যে সব তথ্য লোকটা পাবে, তাতে আর কিছু না হোক, অন্তত অখুশি হবে না। সে ক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায় কিছু না কিছু প্রভাবিত হবেই। চাই কি খুশিমনে এক-আধটা কাজের অফারও দিয়ে বসতে পারে তোমাকে।
খানিকটা সময় চুপ করে থাকল ও। ‘সুযোগটা কখন, কোথায় পাচ্ছি আমি, স্যার?’
“আগামী সপ্তায়, অ্যাসকট হর্স রেসের মাঠে। ওখানে যাবে রজার সাইমুর, মে আর রোজিকে নিয়ে।’
রোজমেরির ছবি দেখছিল ও। চোখ তুলে লংফেলোর দিকে তাকাল। ‘শিওর যাবে তো?”
“নিশ্চই! বাৎসরিক গোল্ড কাপ রেস হতে যাচ্ছে ওখানে, রানা। রজারের নিজের ঘোড়া ব্লু চায়নাও অংশ নেবে। ঘোড়ার নামের তালিকা আছে আমার কাছে। ওপর নিচে মাথা দোলাল রানা।
‘তবে রজারের সাথে পরিচয়টা কষ্ট করে তোমাকেই করে নিতে হবে। আমি অবশ্য পথ বলে দেব। হাতে কয়েকদিন সময় আছে, এর মধ্যে প্র্যাকটিস কিছুটা ঝালিয়ে নিলে…’
‘প্র্যাকটিস! চোখ কুঁচকে উঠল ওর। ‘কিসের?’.
অমায়িক হাসি দিলেন মারভিন লংফেলো। ‘এই পকেট মারা বিদ্যের মতই অনেকটা আরকি!’
‘অ্যাসকট ৫ মাইল’ লেখা মাইল স্টোন সাঁ করে পিছিয়ে গেল। আর ঘণ্টা দেড়েক আছে রেস শুরু হতে। প্রশান্ত মেজাজে গাড়ি ড্রাইভ করছে রানা, এক হাতে স্টিয়ারিঙ হুইল ধরা, অন্য হাতে সিগারেট পুড়ছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ দু’আঙুলের কারবার নতুন করে, খুব ভাল ভাবে প্র্যাকটিস করেছে ও কাটপার্সের ‘দ্য স্কিলস্, আর্টস অ্যান্ড সিত্রে টস্ অভ দ্য ডিপ’ পড়ে।
পকেট মারা বিদ্যের অনেকগুলো কৌশলের সাথে বইটায় নেকলেস লোপাট করার কায়দাও আছে, সবচেয়ে কঠিন কাজ। ওটাই শিখেছে রানা। শুধু শেখেনি, মডেলের সাহায্যে খুব ভালমতই প্র্যাকটিস করেছে। লংফেলোর দেয়া তথ্য যদি সঠিক হয়, যদি রেস দেখতে সাইমুরের সাথে তার ভাইঝি আসে, তাহলে এ বিদ্যা কাজে লাগবে। নিজের ওপর আস্থা আর বিশ্বাসের অভাব নেই রানার, জানে, ও সফল হবেই।
‘অ্যাসকট ৪ মাইল’ পোস্ট পেরিয়ে গতি কমাতে বাধ্য হলো ও, সামনে বেন্টলি, রোলস রয়েস আর ডিমলারের লম্বা লাইন। সবাই চলেছে রেস কোর্সের দিকে। আরও খানিকদূর এগোতে একটু একটু অস্বস্তি লেগে উঠল। মনে হলো গলার মধ্যে কোথাও গিঁট লেগে গেছে। বাতাসে বিপদ আর রক্তের দূরাগত গন্ধ । তবে যত বড় আর ভয়ঙ্কর বিপদই হোক, মোকাবেলা করার সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে রানা, এই যা সান্ত্বনা।
একেবারে বোঝাই কার পার্কে গাড়ি রেখে নামল ও। কোটের ল্যাপেলে জুল জ্বল করছে রয়্যাল এনক্লোজারে ঢোকার পাস। ও ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতে রানী মা ও প্রিন্স ফিলিপ পৌঁছলেন, তারপর রাজকীয় পরিবারের অন্য সদস্যরা। রেসে রানীমার ঘোড়া অংশ নিচ্ছে। ওটাই ফেভারিট। এছাড়া আছে ফ্রান্সিস ফলি, ডেসমন্ড’স ডিলাইট এবং সফট সেন্টারসহ আরও ছয়টা। সবার শেষে সাইমুরের চার বছর বয়সী চায়না ব্লু। প্রথম চারটের ওপর বাজী ধরা হয়েছে বহু টাকার। আর সব আছে শুধুই প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়াতে।
গত কয়েকটা রেসের রেকর্ড অনুযায়ী আজকের রেসে কোন চান্সই নেই চায়না ব্লুর। প্রথম চারটের ধারে কাছেও আসতে পারবে না। বুকুমেকারদের হিসেবে আজ ওটার জয়ের সম্ভাবনা শতকরা মাত্র চার ভাগ। তবু ওটার ওপরই বাজী ধরার সিদ্ধান্ত নিল রানা। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল কাছের বুকমেকারের স্টলের দিকে। একশো পাউন্ডের কড়কড়ে পাঁচটা নোট ঠেলে দিল গ্রিলের ফাঁক দিয়ে। ‘চায়না ব্লু,’ বলে হাসল ।
রসিদ বই বের করে লেখা শুরু করতে গিয়েও থেমে গেল লোকটা, ভুল শুনেছে ভেবে মুখ তুলে তাকাল। ‘এক্সকিউজ মি, স্যার?’
“চায়না ব্লু ।
নোটগুলো দেখল লোকটা। দ্বিধায় পড়ে গেছে। ‘এতগুলো টাকা পানিতে ফেলতে চান, মিস্টার?’
মাথা দোলাল রানা। ‘উহুঁ! আরও পনেরো হাজার ফেরত পেতে চাই।’ ‘ওয়েল, স্যার, শ্রাগ করল সে। ‘কিন্তু আমার মনে হয় আপনি শেষ পর্যন্ত হতাশ হবেন।’
টিকেট নিয়ে এনক্লোজারে ঢুকে পড়ল ও। হাঁটাহাঁটি করতে লাগল ভিড়ের মধ্যে। পুরুষ আর মেয়ে দর্শকের অনুপাত প্রায় সমান মনে হলো, মেয়েরা জবরজঙ ফ্যাশনে ড্রেস আর চওড়া কার্নিসের হ্যাট পরে ঘুরঘুর করছে পুরুষ সঙ্গীদের বাহু ধরে। কিশোরী থেকে বুড়ি পর্যন্ত। অনর্গল বক বক করে চলেছে।
এ মুহূর্তে নিরস্ত্র মাসুদ রানা, প্রিয় ওয়ালথার গাড়ির ড্যাশবোর্ডে রেখে এসেছে। সাথে আছে কেবল একটা বিশেষ কলম-ইমার্জেন্সি কন্ট্যাক্ট ডিভাইস।
হাঁটতে হাঁটতে নিরিবিলি দেখে বড় এক গাছের ছায়ায় এসে দাঁড়াল ও তাকিয়ে থাকল কাছের গোল প্যাডকের দিকে। প্রতিযোগী প্রায় সব ঘোড়াই আছে ওখানে, ট্রেইনার, জকি ও স্টেবল-বয়রাও আছে নিজ নিজ ঘোড়ার সাথে। চায়না রুকে ওর মধ্যে থেকে খুঁজে বের করতে কিছু সময় লাগল। প্যাডকের ও প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে ওটা প্রবল প্রতাপশালীর মত। আপোসহীন, দুর্জেয় ভঙ্গিতে। অন্যগুলোকে ওটার পাশে ম্লান লাগছে।
অনেকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকল রানা। কপালে মৃদু কুঞ্চন ফুটল। কেন যেন মনে হলো, আজ একটা অঘটন ঘটিয়ে বসবে চায়না । গত কয়েকটা রেসের রেজাল্ট যা-ই হোক, আজ অন্য কিছু ঘটবে। প্রায় নিশ্চিতভাবে বুঝে ফেব্রুল, ওটার মধ্যে এমন কিছু আছে যা চোখে দেখা যায় না, শুধু অনুভব করা যায় সহজাত প্রবৃত্তির সাহায্যে। দীর্ঘদিন ধরে জীবন-মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে রানার এই অনুভূতি অনেক তীক্ষ্ণ, অনেক শানিত হয়েছে, বিপদ-আপদ বা একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু ঘটে বসার আগে তাই টের পেয়ে যায় ও। আজও পেল-বুঝল চায়না ব্লু জিতবেই ।
কিন্তু কিভাবে? অস্বস্তি লেগে উঠল। আজকাল ইংল্যান্ডে ঘোড় দৌড়ে কোনরকম ঠগবাজি চলে না, তাছাড়া সেরকম কিছু রজার সাইমুর করবে বলেও মনে হয় না। এতবড় এক প্রতিযোগিতায় ডোপিং বা অন্য কিছু করে নিজের ঘোড়া জেতাবার ঝুঁকি সে নেবে না, ধরা পড়লে সর্বনাশ ঘটে যাবে। তারপরও রানা একশো ভাগ নিশ্চিত, আজ জিতবেই চায়না ব্লু ।
অজানা এক রোমাঞ্চে গায়ে কাঁটা দিল ওর, ঘাড়ের কাছের খাটো চুলগুলো দাঁড়িয়ে গেল। তখনই চোখ পড়ল এক পকুকেশ বৃদ্ধ ও দুই মেয়ের ওপর। প্যাডকের ভেতরে ঢুকেছে তারা, চায়না ব্লুর দিকে এগোচ্ছে। হ্যাট খুলে ঝুঁকে তাদের নড করল ওটার ট্রেইনার। পাখির মত চকিত মাথা দুলিয়ে জবাব দিল বৃদ্ধ । এই প্রথম সামনাসামনি দেখল ও বিজ্ঞানীকে।
পকেট থেকে বিএসএসের সরবরাহ করা প্যাডকের গেট পাসটা অনুভব করল রানা। ঘোড়ার মালিকদের বিশেষ পাস ওটা-জাল। ভেতরে প্রচুর মানুষ। প্রতিটি ঘোড়ার সাথে কম করেও তিনজন তো রয়েইছে, সাথে সপরিবারে মালিকরাও। এরমধ্যে রানা কোন্ ঘোড়ার মালিক, কেউ জিজ্ঞেস করতে আসবে না আশা করা
যায়।
দ্রুত এগোল ও প্যাডকের গেটের দিকে। যেন ভারি ব্যস্ত, এমনভাবে সিকিউরিটি গার্ডের নাকের সামনে পাসটা দুলিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল সুডু করে। ওটা ভালমত দেখার বা ওকে দাঁড় করিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার কথা ভাবলও না পর্যন্ত লোকটা, হলুদ পাস দেখেই সন্তুষ্ট। ভেতরে এসে যথেষ্ট কাছ থেকে বৃদ্ধকে দেখল রানা। স্টিল ছবিতে কারও হাঁটাচলা বা অঙ্গভঙ্গি ধরে রাখার উপায় নেই, থাকলে চেহারার সাথে লোকটার সে সবও জানা থাকত । নতুন করে তার সম্পর্কে হিসেব-নিকেশ করতে হত না ।
টেনেটুনে পাঁচ ফুট হবে লেয়ার্ড অভ মারকাল্ডি। হাঁটে ছোট ছোট, দ্রুত পদক্ষেপে, অনেকটা ছাগলের বাচ্চার মত- এ ছাড়া আর কোন যোগ্য তুলনা খুঁজে পেল না ও। মাথা, হাত, আঙুল, ঘাড়, সবকিছুর মুভমেন্টও তেমনি দ্রুত, চকিত। সব মিলিয়ে মানুষটাকে ভূচর পাখির মত লাগে। স্কটিশ চীফটেইনের সহজাত গাম্ভীর্য বা ধীরস্থির ভার, কিছু নেই-সারাক্ষণ ছট্ফট্ করছে। হঠাৎ দেখলে যে কারও চোখে দৈহিক প্রতিবন্ধী মনে হবে তাকে।
অথচ এতকিছুর আড়ালেও যে লোকটার মধ্যে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা আছে, ব্যাপারটা ওর নজর এড়াল না। তার সঙ্গী দুই মেয়ে একই ডিজাইনের ড্রেস পরেছে, রঙ আলাদা। ভি গলার ক্লাসিক ড্রেস, ওপরে খাটো, পীভলেস জিলেট
রোজালিনের দিকে নজর দিল রানা। ছবির চাইতে বহুগুণ সুন্দরী মেয়েটি পাঁচ ফুট সাত, পিম ফিগার। হাসছে চায়না ব্লুর দিকে তাকিয়ে। মৃদু বাতাসে বুক ফাড়া জিলেট ‘বারবার সরে যাচ্ছে, ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে উন্নত বুক আর মোহায়ের মুক্তো বসানো মহামূল্যবান নেকলেস। মারভিন লংফেলোর সূত্র যদি সত্যি হয়, তাহলে ওটার দাম পাঁচ লাখ পাউন্ড।
রোজালিনের বাবা রবার্ট সাইমুর বিয়ের সময় স্ত্রীকে উপহার দিয়েছিল ওটা। বেশির ভাগ সময় ব্যাঙ্কের ভল্টেই পড়ে থাকত, বিশ বছর পূর্তির দিন উত্তরাধিকার সূত্রে রোজালিনের গলায় উঠেছে। আজকাল প্রায় সব বড় অনুষ্ঠানে ওটা পরে আসে মেয়েটি। মুচকে হাসল রানা, উপযুক্ত গলাতেই জায়গা হয়েছে নেকলেসটার, ওর মত অপূর্ব সুন্দরীকেই মানায় মোহায়ের পার্ল ।
ভাল করে ওটা দেখে নিল রানা। দুদিক থেকে নেমে আসা তিনটে করে খাটো সোনার দড়িতে ঝুলছে আসল জিনিস। দুই কানের কাছে এক হয়ে গেছে দড়ি, পিছনে এক নকশা করা খুদে সোনার বাক্সের মধ্যে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়েছে। ছোট্ট এক লিভারে চাপ পড়লে ভেতরের স্প্রিঙের ধাক্কায় খুলে যাবে বাক্স, তারপর…।
রজার সাইমুরকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখল ও। দুই সঙ্গিনীর সাথে কথা বলছে। তার ট্রেইনার চায়না ব্লুর জকির কানের কাছে মুখ নিয়ে কি যেন বলছে-রেস জেতার অব্যর্থ কৌশল বোধহয়। পিছনে সদম্ভে দাঁড়িয়ে অপ্রতিরোধ্য চায়না ব্লু, চক্চকে চেহারা থেকে ঠিকরে পড়ছে যেন শক্তির ছটা। প্যাডক এন্ট্রান্সের কাছে এসে দাঁড়াল রানা, ভেতরের লোকজন সব বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
কাঁধে ঝোলানো যেইস লেন্সের শক্তিশালী ফিল্ড গ্লাসের ফিতে আরেকটু ওপরে তুলল ও, আসল সময় হাজির বুঝতে পেরে হার্টবিট একটু বেড়ে গেছে। গলা শুকিয়ে আসছে। ওদিকে সব ঘোড়ায় জিন চাপানো শেষ, একটা-দুটো কোর্সের গেটের দিকে রওনাও হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে চায়না ব্লুর জকিকে এক পলক দেখতে পেল রানা। চেহারায় প্রবল আত্মবিশ্বাস। আবার সেই চিন্তা পেয়ে বসল ওকে কি ভাবে জিতবে চায়না ? কোন্ অলৌকিক শক্তির বলে? নিজের চারদিকে ভিড়ের চাপ অনুভব করল ও। ক্রমেই বাড়ছে। ঘোড়ার মালিক, পরিবারের সবাই, বন্ধু-বান্ধবসহ জকি বাদে অন্য কর্মচারীরা সবাই একযোগে সরু গেটের মুখে এসে জড়ো হয়েছে। রজার আর মের কাছ থেকে হয়তো ভিড়ের চাপেই পিছিয়ে পড়ছে রোজালিন, তাই দেখে ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিল রানা, দ্রুত কয়েক পা সরে এসে মেয়েটির ঠিক পিছনে দাঁড়াল। তার সাথে তাল রেখে এক পা এক পা করে এগোল গেটের দিকে।
পেট মোটা বোতলের সরু গলা দিয়ে ঘন কিছু বের করার সময় জিনিসটার গতি যেমন খুব ধীর হয়ে যায়, তেমনি হয়েছে গেটের অবস্থা। প্যাডকের চওড়া পেট থেকে অনেকে একসাথে বের হতে গিয়ে আটকে গেছে সরু মুখে। সবাই তাড়াতাড়ি পৌঁছতে চায় নিজেদের বক্সে, অথবা গ্যালারিতে। গেটের কয়েক গজ ভেতরে বলতে গেলে থেমেই আছে মানুষ, পিঁপড়ের মত এগোচ্ছে। একদম চোখের সামনে রোজালিনের নেকলেসের বক্সটা দেখতে পাচ্ছে রানা এখন মাত্র দু’হাত সামনে ।
ওর গায়ের মিষ্টি সুবাস নাকে আসছে। মিলি ডি প্যাটো, ভাবল রানা, বাজারের সবচেয়ে দামী সেন্ট। এতই দামী যে এক শিশি কিনলে সঙ্গে একটা সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়। পিছন থেকে অরেকটু ধাক্কা খেতে রানার নাক রোজালিনের চুলে ঠেকে যাওয়ার অবস্থা হলো। আশেপাশে তাকিয়ে অবস্থা বুঝে নিল ও। অসুবিধে নেই, কেউ নিচে দেখছে না, দেখছে ওপরে। থুনি উঁচু করে সামনের বাধার ওপর দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে গেট কতদূর।
চট্ করে বাঁ হাত তুলল রানা, তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে রোজালিনের নেকলেসের ক্ল্যাপ্ বক্সটা আলতো করে ধরে আধ ইঞ্চিমত ওপরে তুলে ফেলল, যাতে আসল সময়ে ঘাড়ে আঙুলের ছোঁয়া না লেগে যায়। দুই আঙুলের ভেতরদিক দিয়ে জিনিসটা একবারের চেষ্টায় আটকে ধরে তোলা, ওটাই মূল-পরের কাজ সহজ। অন্য হাতের মধ্যমা দিয়ে নাকের ডগা চুলকাল রানা, হাত নামাবার সময় তর্জনীর নখ দিয়ে খুদে লিভারে চাপ দিল, লাফিয়ে খুলে গেল ক্ল্যাসপ বক্সের নকশা করা ঢাকনা। তার মেরুদণ্ডের ভাঁজের কাছে গোল এক রিঙের সাহায্যে আটকে আছে ওপাশের দড়ির মাথা।
চাপটা দিয়েই বক্স গলিয়ে দিল ও রিঙের মধ্যে দিয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে। বিএসএসের এক মেয়ে অফিস কর্মীর গলায় ঠিক এইরকম বক্সওয়ালা নেকলেস পরিয়ে কয়েকদিন অবিরাম প্র্যাকটিস করেছে রানা। শেষের তিন দিন কিছুই টের পায়নি সে, রোজালিনও পেল না। রিঙের মধ্যে দিয়ে বক্স গলিয়ে দিতেই দুই দড়ি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, ও দুটো ছেড়ে হাত নামিয়ে নিল রানা। রোজালিনের বুকের ঢেউয়ের ওপর দিয়ে গড়িয়ে নিঃশব্দে টার্ফের ওপর পড়ল মোহায়ের পার্লের নেকলেস, একই মুহূর্তে তার ওপর পড়ল রানার ফিল্ড গ্লাস। ঝুঁকে দাঁড়িয়ে জিনিস দুটো তুলল ও এক হাতে, মুহূর্তের জন্যে ব্রেক কষল পিছনের ভিড়, তারপর আবার নড়ে উঠল। রোজালিনের নেকলেস ততক্ষণে সবার অলক্ষে রানার কোটের সাইড পকেটে চালান হয়ে গেছে।
এরপর ভদ্র দূরত্ব বজায় রেখে সাইমুরের পার্টিকে অনুসরণ করে ট্যাটারসাল
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!