চাই ঐশ্বর্য – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩৮২
চাই ঐশ্বর্য – বইটির এক ঝলকঃ
হাসল রানা। ‘তুই কোথায়?’
‘বার্নি-র রেস্টুরেন্টে বসে আছি, খিদেয় নাড়ি-ভুঁড়ি জ্বলছে। তুই কি আসবি, নাকি শুরু করে দেব আমি?’
‘দশ মিনিট অপেক্ষা কর, দোস্ত। এই এলাম বলে।
কাপড় বদলে বেরিয়ে পড়ল রানা। রেস্টুরেন্টটা পাড়ার মাথাতে, ওখানেই সাধারণত ডিনার করে রানা। পৌঁছুতে বেশি সময় লাগল না। ভিতরে ঢুকতেই সোহেলকে দেখতে পেল ও এক কোণে একটা টেবিল দখল করে বসেছে; হাতছানি দিয়ে ডাকল ওকে।
বন্ধুর মুখোমুখি বসল রানা, ওয়েইটারকে ডেকে খাবারের অর্ডার দিল। সোহেল জিজ্ঞেস করল, বুড়োর সঙ্গে কথা হয়েছে?”
‘হ্যাঁ,’ মাথা ঝাঁকাল রানা। তুই ফোন করবার ঠিক আগেই কথা হলো।’ ‘কী বলল কিম্বারলাইট পাইপের কথা শুনে?’
‘অবিশ্বাস করছে না, আমাকে বলল সম্ভব হলে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে।’ ভুরু কুঁচকে গেল সোহেলের। ‘এজেন্সির ঝামেলা আমার ঘাড়ে গছিয়ে দিয়ে কেটে পড়বার তাল করছিস নাকি?
‘না, না। স্রেফ অ্যাকাডেমিক রিসার্চ, কোথাও যাব না। তা ছাড়া এখানকার কাজ প্রায় শেষ। তোকে পহাবার মত কিছু অবশিষ্ট রাখিনি। আমি না থাকলেও ব্রাঞ্চ ওপেন করায় কোনও অসুবিধেয় পড়বে না তিশা। তাই বলে আলেয়ার পিছনে ছোটাছুটি করবার মোটেও ইচ্ছে নেই আমার। পাইপের ব্যাপারটা ভুয়া হবার সম্ভাবনাই বেশি। সারাদিন বইপত্র ঘেঁটে অমন ধারণাই জন্মেছে আমার মনে।’
খাবার এসে গেছে। চামচ তুলে নিয়ে সোহেল বলল, ‘জানিস তো, গ্যালিলিও-র মতবাদের আগে পৃথিবীকে স্থির বলে ভাবত লোকে—স্থির বিশ্বাস ছিল ওদের।
“জানি। কিন্তু সেটার সঙ্গে হীরার কী সম্পর্ক ? “বলতে চাইছি যে,’ খাবার চিবুতে চিবুতে বলল সোহেল, ‘গ্যালিলিও নতুন প্রমাণ করে ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের ধারণা পাল্টে দিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন—পৃথিবী স্থির নয়, সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। হীরার ব্যাপারটাও তেমন হতে পারে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে, ওখানে পাইপ থাকা সম্ভব নয়; কিন্তু ব্যাপারটার হয়তো একটা ব্যাখ্যা আছে।’
“আমার তা মনে হয় না,’ রানা মাথা নাড়ল ।
“অমন কথা পরমাণু সম্পর্কেও বলেছিল বিজ্ঞানীরা। ভেবেছিল, ওটাই পদার্থের মূল; ওটাকে ভাঙা সম্ভব নয়। পরে কিন্তু ঠিকই পরমাণু ভেঙে প্রোটন, নিউট্রন আর পজিট্রন বের করেছে।’
“তুই দেখি আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করবার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিস,’ বিরক্ত গলায় বলল রানা। ‘এত শখ হলে নিজেই ইরিত্রিয়ায় চলে যা না। কে মানা করছে? ব্যাগলির ফোন নম্বর দেব?’
হেসে ফেলল সোহেল। প্রসঙ্গ পাল্টাল। খাওয়া শেষ হবার খানিক পরেই রানার পায়ে হালকা একটা লাথি দিল সোহেল, দরজার দিকে ইশারা করল। ভুরু কুঁচকে ওদিকে তাকাল রানা, সঙ্গে সঙ্গে ভাষা হারাল।
অপূর্ব সুন্দরী এক তরুণী এসে ঢুকেছে রেস্টুরেন্টে। বেশ লম্বা- অন্তত পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। তম্বা, একহারা শরীর বলে আরও লম্বা লাগছে। সাদা রঙের একটা ঢোলা প্যাকস্ আর ধূসর রঙের ব্লাউজ পরে আছে: নোয়েটার খুলে বেঁধে রেখেছে গলায়। মুখের গড়ন আর চেহারায় কৃষ্ণাঙ্গদের আদল, তবে চামড়া তাদের চেয়ে অনেক ফর্সা—দুধ দেয়া কফির মত। মাথাভর্তি একরাশ ঘন কালো চুল, ঢেউ খেলে নেমে গেছে ঘাড় ছাড়িয়ে। চোখদুটো বাদামি। হাবভাবে আভিজাত্য। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল রানা ও সোহেল। বার্নির রেস্টুরেন্টে বেশ কিছুদিন থেকে আসা-যাওয়া করছে রানা, কিন্তু এমন সুন্দরী কখনও চোখে পড়েনি।
ভিতরে বসা সমস্ত পুরুষের বুকে কাঁপন তুলে বারের কাছে গেল মেয়েটি, বারটেণ্ডারকে কিছু জিজ্ঞেস করল, তারপর সোজা এগিয়ে এল ওদের টেবিলের দিকে ।
*মি. মাসুদ রানাকে খুঁজছি আমি,’ রিনরিনে কণ্ঠে বলল তরুণী। ‘বাড়িতে গিয়েছিলাম, পাইনি। একজন পড়শি বলল এখানে খোঁজ নিতে।
রানা জবাব দেয়ার আগেই ঝট্ করে উঠে দাঁড়াল সোহেল। ‘আমিই মাসুদ রানা,’ বলল ও। পুরনো অভ্যাস বন্ধুর মুখের গ্রাস কেড়ে নেবার পায়তারা করছে। ‘কীভাবে সাহায্য করতে পারি, বলুন?’,
হাত বাড়িয়ে হ্যাণ্ডশেক করল তরুণী। পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, মি রানা। আমি দিনা আবান… ম ইরিত্রিয়ান এম্বাসি – মি. এডওয়ার্ড ব্যাগলির লিয়াজো। আজ দুপুরে আপনার সঙ্গে লাঞ্চে আমারও থাকার কথা ছিল, কাজে আটকা পড়ে যাওয়ায় আসতে পারিনি :
‘আপনি এলে ভালই হতো,’ দিনার হাতটা ধরে রেখে বলল সোহেল, মেয়ে পটানোর ভঙ্গিতে কথা বলছে। আসলে খেপাচ্ছে রানাকে। নীরস লাফটাতে অন্তত প্রাণের ছোঁয়া পেতাম।’
দুঃখিত, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আসতে পারিনি। তবে মি. ব্যাগলির কাছে শুনেছি সব। আপনার যদি খুব বেশি অসুবিধে না হয়, তা হলে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই আবার… এবার আমাদের জনগণের পক্ষ হয়ে।
সোহেলকে আর সুযোগ দিল না রানা। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এক্সকিউজ মি. মিস আবান। মাসুদ রানা আসলে আমি। এ হলো আমার বন্ধু সোহেল আহমেদ। এর আচরণে কিছু মনে করবেন না, আসলে বেচারা মালটিপল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে ভুগছে। এই তো, আপনি আসার একটু আগেই ও নিজেকে মেরিলিন মনরো ভাবছিল।’
সপ্রতিভ মেয়ে দিনা, দুষ্টুমিটার তাল বজায় রাখল। হাসি ফুটিয়ে সোহেলকে বলল, ‘নাইস টু মিট ইউ, মিস মনরো। নায়াগ্রা ছবিটা দেখার পর থেকে আমি আপনার অন্ধভক্ত।’ সোহেলের চেহারায় বিরক্তি ফুটল। ‘আরে, আপনাদের জন্য দেখছি শাস্তিে ঠাট্টা-মশকরাও করা যাবে না। আমাকে মেরিলিন মনরো বানিয়ে দিলেন?’ রানার দিকে তাকাল ও, দৃষ্টি দিয়ে শাসাল – দাঁড়া, তোর খবর আছে!
করেন,
‘প্লিজ, বসুন, মিস’ আবান। চেয়ার টেনে ধরল রানা ।
‘ওয়াইন দিতে বলি?’ সোহেল জিজ্ঞেস করল ।
‘না, ধন্যবাদ,’ মাথা নাড়ল দিনা। শুধু কফি। আর ইয়ে… কিছু যদি মনে না মি. রানার সঙ্গে আমি একটু একান্তে কথা বলতে চাই….
‘কফির অর্ডারটা দিয়ে কেটে পড়, সোহেলকে বাংলায় বলল রানা। ‘আমাকে গোপন কথা বলবে সুন্দরী।
‘বলতে হবে না,’ হাত নাড়ল সোহেল। ‘প্রেমালাপ কি আর আমার সামনে জমবে?’
গটমট করে হেঁটে চলে গেল ও।
ওয়েইটার কফি পরিবেশন করে চলে যেতেই রানা বলল, ‘দেখুন মিস আবান, মি. ব্যাগলির প্রস্তাবটা আমি খুব ভালমত খতিয়ে দেখেছি। দুঃখের সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, ওটা গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই ফটোগ্রাফগুলোর ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না, কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি—ইরিত্রিয়ায় একটা হীরা ভর্তি কিম্বারলাইট পাইপ থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ… অলমোস্ট নিল।
‘আপনি এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?’ জিজ্ঞেস করল দিনা।
‘আমি নিশ্চিত নই, কারণ আমি জিওলজিস্ট নই। আমি শুধু আমার ধারণার কথা বলছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুটা পড়াশোনা করেছি আমি; বইপত্র তো বলছে— আপনাদের দেশে হীরা থাকতে পারে না। প্রাচীন ভলকানিক অ্যাক্টিভিটির কারণে ছিটেফোঁটা দু-এক টুকরো পাওয়া গেলেও যেতে পারে, তবে সেটা আপনাদের বা আমার সময় নষ্ট করবার মত কিছু নয়।
আপনি কি টাকার কথা ভাবছেন?’ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল দিনা। জানি, আপনার এজেন্সির ফি অত্যন্ত চড়া; কিন্তু অন্তত ছ’সপ্তাহ আপনার ফিল্ড-টাইম কেনার মত ফাও আছে আমাদের।
‘এটা ভুল ধারণা,’ শান্ত কণ্ঠে বলল রানা। ‘আমরা কেবল টাকার জন্য কাজ করি না। তা ছাড়া, আপনারা যদি মাত্র হ’সপ্তাহের এক্সপিডিশনের জন্য প্ল্যান করে থাকেন, তা হলে এখুনি টাকাটা বাঁচিয়ে দিতে পারি আমি। শুনুন, আপনার ওই পাইপের ডগায় যদি একটা সাইনবোর্ড ও লাগানো থাকে, তবু ছ’সপ্তাহে ওটা খুঁজে বের করা সম্ভব নয় । খামোকা টাকাটা পানিতে ঢালবেন না প্লিজ।’
‘মানে!’
“মানেটা খুব পরিষ্কার, মিস আবান। দুইশ’ বর্গমাইলের সার্চ-এরিয়া আপনাদের… বলতে গেলে প্রতিটা ইঞ্চি খুঁজে দেখতে হবে। যত বড় টিমই দারিত্ব নিক, মাত্র ২ সপ্তাহে কাজটা শেষ করা এক কথায় অসম্ভব। দুনিয়ার ত বড় এক্সপার্ট-ই আনুন, কপাল তার যত ভালই হোক… তারপরও মাসের পর মাস
লেগে যাবে রেজাল্ট পেতে।’ “বুঝতে পারছি, সময়টা একটু কম হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছু জেনেশুনেও আমরা যদি টাকা খরচ করতে চাই, তাতে আপনার আপত্তি কেন?’
কথা বলার ফাঁকে দিনার মুখের উপর দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে রানার। ঠোঁটদুটো আশ্চর্য নিখুঁত ও আবেদনময়। মেয়েটা কথাও বলছে মোহনীয় ভঙ্গিতে। একটু সন্দেহ জাগল ওর মনে—একে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে না তো ব্যাগলি? পুরুষমানুষকে যে-কোনও প্রস্তাবে রাজি করাতে সুন্দরী মেয়েদের জুড়ি নেই। তবে এত সহজে ওকে ধরা কারও কর্ম নয়। তাই বলল, ‘প্রশ্নটার জবাব আমি আগেই দিয়েছি—টাকাটা আমাদের কাছে মুখ্য নয়। যদি কিছু মনে না করেন, এবার আমি একটা প্রশ্ন করতে পারি?’
‘নিশ্চয়ই।’
‘ছ’সপ্তাহের ব্যাপারটা কী?!
চেয়ারে হেলান দিল দিনা। ফটোগ্রাফ বলছে, পাইপটার লোকেশন সুদান-সীমান্তের খুব কাছে। যত ভাল সিকিউরিটিই অ্যারেঞ্জ করি না কেন, ওখানকার দস্যুদের হাত থেকে কাউকে ই সপ্তাহের বেশি ওখানে কাজ করা নিরাপদ নয়। সার্চ-এরিয়াটা আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জায়গাগুলোর একটা. মি. রানা। কয়েক মাস আগে একজন আর্কিয়োলজিস্ট মারা পড়েছে ওখানে….
‘মি. ব্যাগলি বলেছেন আমাকে, রানা বলল। ‘আমাকে চাইবার পিছনে এটাই নাকি সবচেয়ে বড় কারণ। ওই পরিস্থিতি ট্যাকেল করে নাকি একমাত্র আমিই সার্ভেটা চালিয়ে যেতে পারব।
‘দ্যাটস কারেক্ট মি রানা।
আমি কথাটা মানতে পারছি না, রানা মাথা নাড়ল। বুঝতে পারছি না, আপনারা কানাডিয়ান বা ইয়োরোপের বড় কোনও মাইনিং আউটফিটের কাছে যাচ্ছেন না কেন বুঝতে পারছি না। ওদেরকে স্যাটেলাইটের খবর বলার প্রয়োজন নেই, এমনিতেই হীরার কথা শুনলে লাফিয়ে উঠবে। সার্ভের সময় ধে-কোনও ধরনের থ্রেট মোকাবেলা করবার মত নিজস্ব সেটআপ আছে ওদের।
‘ওটা নিয়ে ভেবেছি আমরা, পরে বাতিলও করে দিয়েছি। এ-মুহূর্তে এই পর্যায়ের কারও সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া স্রেফ বোকামি হবে। মাইনিং কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট কুখ্যাতি আছে—ওরা শুধু নিজেদের লাভটা দেখে, অন্য কারও নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা আর নামিবিয়ার কথাই ধরুন। বছরের পর বছর গুদের খনিগুলোর আয় চলে গেছে ইয়োরোপিয়ানদের পকেটে, দেশদুটোর কোনও লাভই হয়নি। তারচেয়ে চুক্তিতে যাবার আগেই যদি পাইপটা আমরা নিজেরা খুঁজে বের করতে পারি, তা হলে আলোচনার টেবিলে ভালমত দর-কষাকষি করতে পারব।’
‘আমি একমত।’ বলল রানা। ‘সত্যিই যদি ওখানে হীরা থাকে, তা হলে অন্যান্য দেশের ভুল থেকে শিক্ষা নেবার মত চমৎকার একটা পজিশনে রয়েছে আপনারা। সাফল্য আসতে পারে, কিন্তু তার জন্য আমি বলব তাড়াহুড়ো না করে ধীরে-সুস্থে এগোতে। সিরিয়াসলি যদি পাইপটা খুঁজে বের করতে চান, তা হলে অন্তত এক বছর সময় নিন। আর আপনাদের এখন যা বাজেট আছে, তা তিনগুণ করুন।
হতাশা ফুটল দিনার চেহারায়। ‘সেটা সম্ভব নয়, মি রানা।’
“তা হলে বাদ দিন আইডিয়াটা,’ বিরক্ত গলায় বলল রানা। ‘খামোকা টাকাগুলো নষ্ট না করে দেশের কাজে লাগান। পারলে সুদান থেকে কিছু শরণার্থী ফিরিয়ে আনুন, নইলে একটা ইণ্ডাস্ট্রি দিন। চাইলে দান-খয়রাতও করে দিতে পারেন। অন্তত নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হতে চলা একটা এক্সপিডিশনে চালার চেয়ে ভালভাবে খরচ হবে টাকাটা।’
কড়া কথাগুলো বলতে খারাপ লাগল রানার, না বলেও উপায় নেই । অর্থহীন এই আলোচনায় আর সময় নষ্ট করবার মানে হয় না। হ্যাঁ, দিনা আবানের দৃঢ়তা ওর মনে দাগ কেটেছে; কিন্তু শুধু মনের জোর দিয়ে অবাস্তব একটা প্রজেক্টকে সফল করা যায় না। কথাটা ওকে বুঝিয়ে দেয়া দরকার ছিল।
কয়েক মুহূর্ত নিঃশব্দে রানার দিকে তাকিয়ে রইল দিনা, চোখের তারায় পরাজয় ফুটল। বুঝতে পেরেছে, ওকে রাজি করাতে পারবে না। শাস্ত গলায় বলল, ‘আমরা হাল ছাড়ছি না, মি. রানা।’
‘সেক্ষেত্রে আপনাদের সৌভাগ্য কামনা করছি আমি… সত্যিই করছি। দুঃখিত, আমি সাহায্য করতে পারলাম না।’
চলে যাবার জন্য উঠে দাড়াল দিনা। তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরল রানা। খারাপ লাগছে, এতটা কঠিন না হলেও চলত। নরম গলায় বলল, ‘শুনুন, আমি ভুলও করতে পারি । হতে পারে, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় খনিজ আবিষ্কারের উপর বসে আছেন আপনারা। কিন্তু হতাশ হবার জন্য তৈরি থাকতে হবে আপনাদেরকে। ওখানে কিছু থাকুক, বা না-ই থাকুক; পুরো কাজটাতে অনেক সময় লাগবে।’
“মি. রানা, আমাদেরকে আপনি যতটা স্বপ্নবিলাসী ভাবছেন, তা কিন্তু মোটেই ঠিক না, খসখসে গলায় বলল দিনা। ‘হ্যাঁ, কাজটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা চেষ্টা করব না। ভাল থাকবেন।’
বিদায় নিয়ে চলে গেল দিনা। রানাও উঠে পড়ল, বিল মিটিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এল রেস্টুরেন্ট থেকে। সোহেলের দেখা পাওয়া গেল পেডমেন্টে, অলস ভঙ্গিতে পায়চারি করছে। ওকে দেখে বলল, ‘আলোচনাটা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ডানাকাটা পরীকে খুব আপসেট অবস্থায় চলে যেতে দেখলাম।’ ‘হ্যাঁ, মানা করে দিয়েছি।’ রানা বলল।
‘নিশ্চয়ই খুব কাঠখোট্টাভাবে বলেছিস? নইলে অতটা আপসেট হতো না।’ ‘না বলে উপায় ছিল না, কাঁধ ঝাঁকাল রানা। ‘বোকার স্বর্গে বাস করছে ওরা, মাটির পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা দরকার ছিল।’
‘এতটা নিশ্চিত হচ্ছিস কীভাবে? চিফ নিজেই তো সন্দিহান, তোকে খোঁজখবর নিতে বলেছে।’
‘সেটা ভিন্ন ব্যাপার। বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি আর ফিল্ডে নামার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক আছে। দুনিয়ার সবচেয়ে গরীব দেশগুলোর একটাতে বাস করে ওরা, অথচ জুয়ার মত একটা প্রজেক্টের পিছনে লাখ লাখ ডলার ঢালতে চাইছে। কাজটা অন্যায় … টাকাটা আসলে দরিদ্র জনগণের পিছনে খরচ করা
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!