ব্ল্যাকমেইলার – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৩৩
ব্ল্যাকমেইলার – বইটির এক ঝলকঃ
রাত ন’টা। টেমস নদীর মাইল দুয়েক দক্ষিণে বার্কশায়ার কাউন্টির উইক্সফোর্ড গ্রামের রাস্তা ধরে গাড়ি চালাচ্ছে মাসুদ রানা। গন্তব্য, লেডি জোয়ালিন হেইফোর্ডের খামারবাড়ি।
লণ্ডনে থাকতেই সোহানার ফোন পেয়েছে রানা। সলীল সেনের নিখোঁজ সংবাদ শুনেছে। সোহানা ফোন করে জানিয়েছে, যত শীঘ্রি সম্ভব রানাকে ফ্রান্সে যেতে বলেছেন বিসিআই চিফ। এই কাজটা সেরে এমনিতেও ওর সলীল- সোহানার কাছে যাওয়ার কথা ছিল ওবার্যে।
আধ ঘণ্টা পর লেডি জোয়ালিনের মস্ত খামারবাড়িতে পৌঁছল রানা। সুসজ্জিত ড্রইং রুমে ওকে নিয়ে বসাল জোয়ালিন ।
‘তারপর, রানা, কেমন আছো?’
‘ভাল। তুমি কেমন?’
*এমনিতে তো ভালই। পায়ের যন্ত্রণা বাদ দিলে। মাঝে মাঝে খুব চুলকায়। তখন খারাপ লাগে।’
একজন বিশিষ্ট আর্লের মেয়ে জোয়ালিন। ঝোঁকের মাথায় বিয়ে করে বসে এক প্লেবয়কে। মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করে ওর স্বামী। গাড়িতে ছিল তখন জোয়ালিন। সেই অ্যাক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা যায়, আর একটা পা হারায় জোয়ালিন। নষ্ট পা-টা হাঁটুর নীচ থেকে কেটে বাদ দিয়েছেন ডাক্তাররা।
মাসখানেক পর একটা নকল পা নিয়ে, সামান্য খুঁড়িয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে জোয়ালিন। একজন নতুন মানুষ। বাবা ওকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাজি হয়নি জোয়ালিন, স্বামীর খামারটা পরিচালনার ভার তুলে নেয় নিজের হাতে। চার বছর কঠোর পরিশ্রমের পর খামার থেকে লাভ আসতে শুরু করে। ততদিনে তার বয়েস হয়ে গেছে আটাশ। সোহানার বান্ধবী ও। সোহানার মাধ্যমেই রানার সঙ্গে পরিচয়।
‘ওষুধ খাও না?’ রানা জিজ্ঞেস করল।
*ওষুধ খেয়ে তেমন একটা কাজ হয় না। ডাক্তার মলম দিয়েছেন, মাখালে কিছুটা কমে। যাকগে, বাদ দাও তো রোগ-শোকের কথা। তোমার কী খবর বলো । কাজকর্ম?’
সলীলের নিখোঁজ সংবাদটা জানাল ওকে রানা। ওকে চেনে জোয়ালিন পছন্দও করে । একবার ওর খামারবাড়িতে এসেছিল সলীল, রানা-সোহানার সঙ্গে।
“আমার একটু তাড়া আছে, জোয়ালিন,’ রানা বলল। ‘সোহানা ফোন করেছিল। ফ্রান্সে যেতে হবে। সলীলের ঘটনাটার খোজ-খবর নেবার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের বস। বলো দেখি, কীজন্যে ডেকেছ আমাকে।’
‘তোমাদের এই মানসিক অবস্থায় আর কোনও সমস্যার ভার চাপাতে চাই না, রানা।’
“কোনও অসুবিধে নেই, জোয়ালিন। বিপদ-মৃত্যু-ভয় নিয়েই তো আমাদের কারবার, ভেঙে পড়ি না কখনও। তুমি বলো।’
‘চা খাবে?’ জোয়ালিন জিজ্ঞেস করল।
‘খাব।’
মেইডকে ডেকে চা আনতে বলল জোয়ালিন। মেইড চলে গেলে রানার দিকে ফিরল। ‘ব্ল্যাকমেইলের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া উচিত, রানা?’
ভুরু কোঁচকাল রানা। ‘তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে কেউ?”
‘না।’ সামান্য দ্বিধা করে আবার বলল জোয়ালিন, ‘রিয়া, আমার ছোট বোনকে। নিউ ইয়র্কের এক বিশিষ্ট শিল্পপতিকে বিয়ে করেছে ও। কয়েক দিন আগে এখানে এসেছিল। তখন বলেছে।’
“তারমানে কেউ একজন ভয় দেখাচ্ছে ওকে?’
‘হ্যাঁ, দুই বছর ধরে। ভেঙে পড়েছে ও, স্নায়ুর চাপ আর সহ্য করতে পারছে না, তাই আমাকে এসে ধরেছে, কিছু একটা ব্যবস্থা করা যায় কি না।’
‘সমস্যাটা কী? কী করেছিল?’
তিন বছর আগে একটা ছেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছিল। বেশিদিন থাকেনি, দ্রুত শেষ হয়ে গেছে ব্যাপারটা। কিন্তু সেটা জেনে ফেলেছে একজন।’ ‘স্বামীকে সব খুলে বলে মাপ চেয়ে নিলেই তো হয় ।
‘না, হয় না। এত উদার নয় ওর স্বামী যে মেনে নেবে। জানতে পারলে স্রেফ গলা টিপে খুন করবে ওকে। তা ছাড়া দুটো বাচ্চাও আছে রিয়ার।’
‘ব্ল্যাকমেইল কি ছেলেটাই করছে?’
মাথা নাড়ল জোয়ালিন। ‘না। হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে ও। ব্ল্যাকমেইলারের কাছে প্রমাণ আছে?”
“রিয়া তো বলল, আছে। আর একজন নয়, রিয়ার ধারণা ব্ল্যাকমেইলারদের একটা সংঘবদ্ধ দল আছে। ওর গোপন কথা সব জানে ওরা। যে দেখা করে ভয় দেখিয়েছে, সে একজন নান, স্কটিশ নান।’
‘নান? মানে ভুয়া নান?’
‘তাই তো হওয়ার কথা। আসল নান কি আর ব্ল্যাকমেইলের মত একটা বিশ্রী অপরাধে জড়াবে?’
‘কোন নোট লিখে দেয়নি নিশ্চয়? শুধু ভুয়া নানকে পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছে, তাই না?’
‘নোট পাঠিয়েছে কি না জানি না। এ প্রশ্নটাই আমার মাথায় আসেনি । তাই জিজ্ঞেস করিনি।’
‘হুঁ।’ এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করল রানা, ‘তা কত করে দিতে হয় রিয়াকে, বলেছে কিছু?”
‘মাসে এক হাজার ডলার।’
‘ব্যস? এত কম?’
‘হ্যাঁ। কমই, কিন্তু নিয়মিত দিতে হয়। ‘দেয় কীভাবে? হাতে হাতে?’
‘না, ব্যাংকের মাধ্যমে। ম্যাকাও-এর এক ব্যাংকে একটা চ্যারিটি রিলিফ ফাণ্ডের অ্যাকাউন্ট আছে। সেই নাম্বারে টাকা জমা দিতে হয়।’
‘ব্যাংকটার নাম জানো?’
*নাম? রিয়া তো বলেছিল, কিন্তু কেমন খটমটে নাম, মনে রাখতে পারিনি।’ “ব্যাংকো ম্যাকাও ডা কমার্শিয়াল?’
বিস্মিত দৃষ্টিতে রানার দিকে তাকিয়ে রইল জোয়ালিন কয়েক মুহূর্ত, তারপর বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। কিন্তু তুমি জানলে কী করে?
“হং কং, ম্যাকাও, এ সব জায়গায় কাজ করেছি আমি।’ অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে জবাব দিল রানা। ‘চ্যারিটি ফাও। আমি শিওর, ওই নামে কোনও ফাণ্ড সত্যিই আছে, লেনদেনেও অবৈধ কিছু পাওয়া যাবে না। পুলিশ খুঁত বের করতে পারবে, এত কাঁচা কাজ করবে না ব্ল্যাকমেইলাররা।’ জোয়ালিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রূকুটি করল ও। কিন্তু এত কম টাকা, মাসে মাত্র এক হাজার, ঠিক মিলতে চাইছে না।’ ‘কী মিলতে চাইছে না?’
টাকার অংকটা । এত কম নিয়ে চলে কী করে দলটা?”
“রিয়া আমাকে যা বলেছে, সব জানিয়েছি তোমাকে। আমি ওকে বললাম, ব্যাংকটাতে গিয়ে খোঁজ নিতে, কারা রয়েছে এই চ্যারিটি ফাণ্ডের পিছনে। কিন্তু ও ভয় পায়। ও বলে, জেনে কী হবে? সমস্যার তো কোনও সমাধান হবে না। স্বামীর কানে কথাটা চলে যাওয়ার চেয়ে টাকা দেয়াটাই বেশি নিরাপদ মনে করে ‘ও।’
‘কিন্তু একসময় তো এর শেষ একটা হবেই। বাড়বে চাহিদার অঙ্ক … টাকা নিতে নিতে নিঃস্ব করে ফেলবে রিয়াকে।
জবাব দেয়ার আগে ভাবল জোয়ালিন। তারপর ধীরে ধীরে বলল, ‘ব্যাপারটা ওরকম নয়, রানা। এই ব্ল্যাকমেইলাররা বেশি টাকা দাবি করে না, ওরা বছরে বারো হাজার ডলারেই সন্তুষ্ট। রিয়ার নিজের একটা উপার্জন আছে। সেখান থেকে দিয়ে দেয়। কষ্ট হলেও, প্রচণ্ড কোনও চাপে পড়ে না।’
“তারমানে প্রতি মাসে টাকাটা দিয়েই চলেছে ও?’
‘হ্যাঁ। ও আমাকে বলেছে কোনও কিনারা করার জন্যে নয়, কাউকে বলে মনের ভার হালকা করার জন্যে। ওর ধারণা, এ ব্যাপারে আমি কিছু করতে পারব না।’ কাঁধ ঝাঁকাল জোয়ালিন। কিন্তু, রানা, আমি জানি ওর প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে… ইংল্যাণ্ডে হলে আমি নিজেই পুলিশের কাছে যেতাম। কিন্তু আমেরিকায় আমি অপরিচিত, কিছু করার ক্ষমতা নেই। আচ্ছা, ইন্টারপোল কি এ ব্যাপারে কিছু করতে পারে?’
মাথা নাড়ুল রানা। ‘না। পুলিশ অনুরোধ করলে হয়তো ওরা এদিকে নজর দিতে পারে। কিন্তু আমেরিকান পুলিশকে জানাতে হবে তো। বোঝাই যাচ্ছে, রিয়া জানাবে না।’ পুরো একটা মিনিট চুপ করে রইল রানা। ওর চোখে চিন্তার ছায়া । তারপর বলল, ‘আমাকে চেষ্টা করে দেখতে বলছ?’ উত্তেজনা ফুটল জোয়ালিনের মুখে। ‘তা হলে তো খুবই ভাল হয়, রানা। আমি জানি, তুমি কেসটা হাতে নিলে এর একটা কিনারা হবেই। কিন্তু তুমি কেন এ কাজটা করতে যাবে? এটা তো তোমার অফিশিয়াল ব্যাপার নয়।
হাসল রানা। ‘সব কিছুই অফিশিয়াল হতে হবে, এমন নয়। বন্ধুত্ব বলেও তো একটা কথা আছে, জোয়ালিন। তা ছাড়া সেই রাতের কথা ভাবো। সেরাতে গ্লাসগোর ওই কাসল গ্লেনক্রফটে সোহানার সঙ্গে তুমি যদি তোমার বাবার প্লেন নিয়ে আমাকে উদ্ধার করতে না যেতে, আমি আজ কবরে থাকতাম । তাই না?’
জোয়ালিনও হাসল । “তারমানে ঋণ পরিশোধ?’
‘উঁহু, ওই ঋণ কোনও দিন শোধ হবার নয়। তোমার জন্যে কিছু করতে পারলে আসলে ভাল লাগবে আমাদের। আর তা ছাড়া ব্ল্যাকমেইলারদের প্রচণ্ড ঘৃণা করি আমরা, দুচোখে দেখতে পারি না। ওদের গ্যাংটাকে শায়েস্তা করতে পারলে খুশিই হব।’
“থ্যাংক ইউ, রানা, থ্যাংক ইউ। আমি জানতাম, তোমার সাহায্য আমি পাবই।’
“তবে একটা কথা, রিয়াকে এ-সব ব্যাপারে কিছুই জানানোর দরকার নেই ।
সকাল ন’টায় লণ্ডনে সোহানার পেন্টহাউসে ফোন করলেন ডাক্তার রেনাও সিডেনিজ ।
ইজেলে ছবি আঁকছিল সোহানা। গামলাভর্তি ফলের ছবি। তুলি রেখে গিয়ে ফোন ধরল। ডাক্তার বললেন, ‘আপনার মিস্টার ডিন মার্টিন মোটেও সুবোধ রোগী নয়, মিস চৌধুরি।’
হেসে বলল সোহানা, ‘শুনে আপনার জন্যে আমার মোটেও মায়া হচ্ছে না, ডাক্তার । আপনার বেশিরভাগ রোগীই বড়লোক, বদমেজাজি। ডিনও বদমেজাজি, তফাৎ শুধু, ওদের মত টাকা নেই। যাকগে, পরীক্ষাগুলো করেছেন? কী অবস্থা?”
“তেমন খারাপ কিছু নেই। কব্জির হাড় ভাঙেনি, মাথার খুলিও ঠিক আছে। তবে বাড়িটা খুব জোরেই লেগেছে। আরও অন্তত তিনদিন এখানে শুয়ে থাকতে হবে ওকে।’
ও কী জানে, চিকিৎসার খরচ ওকে দিতে হবে না?
‘জানে। আর জানার পর থেকে সারাক্ষণ আমাকে জ্বালিয়ে মারছে— আপনি কোথায় গেছেন, আপনাকে কোথায় পাওয়া যাবে, এ-সব প্রশ্ন করে করে।
‘বলবেন না। আর যদি বেরিয়ে যেতে চায়, আটকান। প্রয়োজন হলে ওর কাপড়-চোপড় সব লুকিয়ে রাখুন। তিন দিনের আগে কোনমতেই ছাড়বেন না । “ঠিক আছে। বলে ওকে বোঝানো যাবে না, ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হবে। আপনার মিস্টার ডিন মনে হচ্ছে নেশায় আসক্ত।’
‘সেটা আমিও লক্ষ করেছি। আজকাল এ আর নতুন কথা কী, অনেকেই তো আসক্ত।’
“হ্যাঁ। মানসিক রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ঠিক আছে, রাখি এখন।’
‘আচ্ছা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, ডাক্তার, ফোন করে জানানোর জন্যে।’ রিসিভার নামিয়ে রেখে ইজেলের দিকে তাকাল সোহানা। কিচ্ছু হয়নি, মনে মনে বলল। টিউব টিপে প্যালেটে নতুন করে রঙ ঢেলে মিশাতে শুরু করল। ডিনের কথা ভাবছে। কোথায় যেন একটা খটকা, ঠিক ধরতে পারছে না। খটকাটা খচখচ করেই চলেছে মনের কোণে।
জো লুই বলল, ‘একটা মেয়ের হাতে এভাবে মার খেয়ে ফিরে এল! এমন জানলে আমি নিজেই যেতাম। ছিঁচকে চুরি আর গুণ্ডামি ছাড়া ওই ছাগলগুলোকে দিয়ে আর কোনও কাজ হবে না।’
লম্বা ডাইনিং টেবিলের এক মাথায় বসা জেনি ডান নিতম্বে দেহের ভার রাখল, বাঁ নিতম্বে যেখানে খামচে ধরেছিল জো লুই, সেখানটায় এখনও ব্যথা আছে। খাটো স্কার্টের নীচটা আরেকটু তুলে দিল, যাতে ওর পাশে বসা হুয়ান ক্যাসটিলো ওর উরু দুটো ভালমত দেখতে পারে। হুয়ানই এই হতচ্ছাড়া দুর্গে একমাত্র লোক, যাকে কিছুটা পছন্দ করে ও। কথাবার্তা তেমন বলে না লোকটা, তবে কোথায় যেন একটা আকর্ষণ রয়েছে ওর মধ্যে। এক ভাগ চিনা আর তিন ভাগ পর্তুগিজ রক্ত ওর শরীরে।
টেবিলের অন্যপাশে বসেছে টোপাক, পাতলা হয়ে আসা চুল, মাথার বেশির ভাগটাই টাক, তাতে আলো চকচক করছে। তা ছাড়া কথার আঞ্চলিক টান, সবকিছু মিলিয়ে ওকে ঘৃণা করে জেনি। এ ছাড়া আছে আরও তিনজন। ওরা জাপানি না চিনা, জানে না ও, তবে ওদেরও দেখতে পারে না। এত জঘন্য খাবার বাছাই আর রান্না করে ওরা। আর আছে জো লুই, জঘন্য স্বভাব, এত খারাপ লোক জীবনে দেখেনি ও… ওর কথা ভাবতেই ভিতরে ভিতরে কুঁকড়ে গেল জেনি ।
টেবিলের অন্য মাথায় যে লোকটা, তাকে পছন্দও করে না, অপছন্দও করে না ও। গায়ে উজ্জ্বল হলুদ উলেন শার্ট, গলার রুমালের দুই কোণ একটা সোনার রিঙের ভিতর ভরে অনেকটা নেকটাইয়ের মত আটকে দিয়েছে। পনির চিবুতে চিবুতে জো লুই-এর মন্তব্য শুনল। লোকটার নাম হেনরি ক্লিঙ্গার, ওদের বস্। মোটাসোটা, ওজনদার লোক, বয়েস পঞ্চাশের বেশি, ঝোলা পেটটা দেখতে অনেকটা নাশপাতির মত, কোদালের মত চোয়াল, পুরু ঠোঁট, ক্রু-কাট ধূসর চুল, আর ঘন ভুরু যেন কপালের ওপর ছোটখাট ঝোপের মত কামড়ে বসে আছে। দেখে লোকটাকে তত ভয়ঙ্কর মনে না হলেও, মাঝে মাঝে জেনি বুঝে উঠতে পারে না ভয় কাকে বেশি পায়, জো লুইকে, নাকি মিস্টার ক্লিঙ্গারকে?
হেনরি ক্লিঙ্গারকে ঊরু দেখানোটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়, বিশেষ করে ওর স্ত্রী এমিলির উপস্থিতিতে। কোটর থেকে অস্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে থাকা চোখ মেয়েটির, সোনালি কোঁকড়া চুল, আর মিহি কণ্ঠস্বর ।
সবাই ‘বস’ ডাকে ক্লিঙ্গারকে। নাম ধরে ডাকে ডাকার সাহস দেখায়, একমাত্র তার স্ত্রী এমিলি। যেমন নিষ্ঠুর, তেমনি ধূর্ত লোকটা। জেনির মনে হয়, শয়তানকেও হার মানায়। আগে আমেরিকার অপরাধ জগতে খুবই দাপটের সঙ্গে ছিল, এখন সেখান থেকে চলে এসেছে। ওর সঙ্গে দুর্গে থাকার চেয়ে অপারেশনের
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!