বিপদজনক – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮৩
বিপদজনক – বইটির এক ঝলকঃ
ধীরে ধীরে মাথাটা উঁচু করল রামা
ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় সব পরিষ্কার। সাবধানে ঘোরান মাথাটা এপাশ ওপাশ। নাহ্, কেউ নেই। ওকে গর্তে পড়ে যেতে দেখে কি এরা তাড়া করা ছেড়ে দিল! নাকি তাড়া করেইনি? পিছন থেকে যে গুলি করেনি তাই রক্ষে।
রাস্তা ধরে বেশ কিছুদূর দৌড়ে এসে একটা প্রকাণ্ড মাঠে নেমে পড়েছিল নে । দূরে, ঘন ঝোপ-ঝাড়ের আভাস পেয়ে সেইদিকেই ছুটেছিল আত্মরক্ষার স্বাভাবিক তাগিদে লক্ষ্য নিবদ্ধ ছিল দূরে, তাই দেখতে পায়নি গর্তটা, হুড়মুড় করে পড়ে গেছে গর্তের ভিতর। আধমিনিটের জন্যে জ্ঞান হারিয়েছিল। জ্ঞান ফিরে পেয়ে হাত, পা, ঘাড়, মাজা, কোথাও কিছু ভাঙেনি বা মচকায়নি দেখে বিস্মিত হলো রানা। কিন্তু বিস্মিত হবারও সময় নেই এখন। চট করে ফিরে এল সে বাস্তবে।
পালাতে হবে। ধরা পড়বার আগেই পালাতে হবে এখান থেকে। ধরা পড়লে আর রক্ষা নেই ।
কিন্তু ব্যাটাদের মতলবটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আর একবার খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল সে চারিটা পাশ। কিছুই নড়ছে না কোথাও। জনশূন্য রাস্তা। চারদিক নিস্তব্ধ চাঁদের আলোয় অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ভারি ট্রাকের অত্যাচারে নিপীড়িত এবড়ো- খেবড়ো পীচ ঢালা রাস্তাটাকে। তাড়া করা ছেড়ে দিল কেন? ট্রাক ড্রাইভারের কাছে ঘুষ আদায় করতে গিয়ে এদিকে খেয়াল দেয়ার সময় পাচ্ছে না? কোনদিকে যাবে বানা এখন? মেইন রোডে গিয়ে উঠবে এই সাইড রোড ধরে? কিন্তু সেদিকেও তো চেকপোস্ট। এতক্ষণে খবর পৌঁছে গেছে নিশ্চয়ই। লাহোর এখনও বিশ মাইল। হেঁটে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া বিপজ্জনক। যত রাগ গিয়ে পড়ল ওর ট্রাক ড্রাইভারটার উপর। ব্যাটা পুলিস চেক-পোস্ট এড়াতে গিয়ে মেইন রোড ছেড়ে ঢুকেছে এই রাস্তায়, ঢুকেই পড়েছে আর্মির খপ্পরে। দুটো টাকা বাঁচাতে গিয়ে এখন জান নিয়ে টানাটানি।
বেশ আসছিল কাসুর থেকে পিত্তিগামী ট্রাকের পিছনে লুকিয়ে চাঁদের আলোয় ভিজতে ভিজতে। পরিষ্কার নীল আকাশ, অসংখ্য জ্বলজ্বলে তারা, ট্রাকের একটানা গোঁ-গোঁ শব্দ, আর পাকা গমের গন্ধ মাখা হু-হু হাওয়া। হাই এসে যাচ্ছিল রানার ঘুমের আমেজে। হঠাৎ এই আর্মি রক। গাড়ি থামিয়ে দু’জন সেন্ট্রি ট্রাকটা সাচ করতে চাইল। তড়াক করে লাফিয়ে উঠে অসতর্ক সেন্ট্রি দুটোর নাক বরাবর দুটো প্রচণ্ড ঘূলি লাগিয়ে দিয়ে আমাইল দৌড়ে চলে এসেছে সে। মোড়ের কাছে পিছন ফিরে দেখেছে রানা, মাটি ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে সিপাই দু’জন। অনেকখানি সোজা দৌড়ে এসে বা দিকে মাঠের ওপারে ঝোপ-ঝাড় ও জঙ্গলের আভাস পেয়ে ওখানে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে মনে করে যেই মাঠে নেমেছে, ওমনি হুড়মুড় করে পড়েছে এই গর্তে।
কিন্তু সিপাইগুলো থেমে গেল কেন? ওদের হাত থেকে পালাবার কোন উপায় নেই মনে করে? এত নিশ্চিত হচ্ছে কি করে ওরা? কেমন একটা অনিশ্চয়তা বোধ করছে রানা, আশঙ্কায় ঢিব ঢিব করছে বুকের ভিতরটা। কোনদিকে যাবে সে এখন?
গোপন একটা মিশন নিয়ে চলেছে সে লাহোর। অবশ্য ভারতীয় জার্নালিস্ট হিসেবে প্লেনে যেতে পারত সে, কিন্তু তাহলে আই. বি.র নজর এড়িয়ে কাজ হাসিল করা অসম্ভব হয়ে পড়ত। তাছাড়া এই বিদঘুটে ছদ্মবেশ ভেদ করে রানার আসল পরিচয় বের করে নেয়া খুব একটা কঠিন কিছুই নয় পি.সি. আইয়ের পক্ষে। কাজেই গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে মাল বোঝাই ট্রাকের পিছনে উঠে লাহোের পৌঁছনোই স্থির করেছিল সে। কিন্তু পথের মধ্যে এই বিপদ হবে কে জানত! যাক, যা হবার হয়ে গেছে, এখন এর মধ্যে থেকে কৌশলে উদ্ধার পেতে হবে।
অল্পক্ষণেই দম ফিরে পেল সে। ভেবে দেখল, জনা ছয়েকের বেশি লোক নিশ্চয়ই থাকবে না এই পোস্টে। খুব সম্ভব এরা চোরাই মাল ধরার জন্যে সার্চ করতে চেয়েছিল ট্রাকটা, ভাবতেও পারেনি পিছনে কোন মানুষ লুকিয়ে থাকতে
পারে।
কিন্তু আসবে ওরা। পরিষ্কার বুঝতে পারল রানা, নিশ্চয়ই আসবে। অন্তত যে দু’জনের নাক থেকে পোয়াটেক রক্ত ঝরিয়ে দিয়েছে ও, তারা তো ব্যক্তিগত উৎসাহে আসবে। এখানে বসে থাকার আর কোন মানে হয় না। মাঠের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে সোজা হাঁটলে নিশ্চয়ই বড় রাস্তায় পৌঁছতে পারবে সে। ওখান থেকে কাহনায় পৌঁছে যাবে মাইল তিনেক হাঁটলেই। সেখানেই আবার চেষ্টা করা যাবে চুরি করে কোন ট্রাকের পিছনে ওঠা যায় কিনা। আকাশের দিকে চাইল রানা । পুব দিক থেকে একটা ঘন কালো মেঘ দ্রুত উঠে আসছে, এগোচ্ছে চাঁদের দিকে। ঝড়-বৃষ্টি হবে নাকি আবার?
উঠে দাঁড়িয়ে জামা কাপড় থেকে ধুলো বালি ঝেড়ে ফেলল রানা। পর মুহূর্তেই বসে পড়ল আবার। ডান হাতটা দ্রুত চলে গেল কোটের নিচে শোল্ডার হোলস্টারের কাছে। আসছে ওরা।
এতক্ষণে বুঝতে পারণ রানী কেন ওরা এত দেরি করছিল পিছু নিতে। ইচ্ছে করলে আরও দেরি করতে পারত। কিছু এসে যেত না। ও ভেবেছিল, কোন শব্দ বা নড়াচড়া হলেই ধরা পড়বার ভয় আছে—ভুলেই গিয়েছিল গন্ধ বলে একটা জিনিস আছে পৃথিবীতে। এবং কোন কোন জানোয়ারকে দোষ বেঁধে ছেড়ে দিলেও দিব্যি পৌঁছে যেতে পারে গন্তব্যস্থলে গন্ধ এঁকে এঁকে। কুকুর! ভয়ার্ত দৃষ্টি মেলে দেখল রানা মাটির কাছে নাক নিয়ে গন্ধ শুঁকে এগিয়ে আসছে দুটো ওয়ান কুকুর। মিশমিশে কালো গায়ের রঙ। এক নজরেই চিনতে পারল রানা-ডোবারম্যান পিনশার। পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম কুকুর। ইদানীং ব্যবহার করছে পাকিস্তান, খবর পেয়েছে সে। পিছনে শেকল হাতে খোশ গল্প করতে করতে আসছে চারজন সেটি।
লুকিয়ে থেকে লাভ নেই । তিন লাফে গর্ত থেকে বেরিয়ে একটা ঢিবির আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল রানা। হাতে ন্যুগার। পঞ্চাশ ফুট দূর থেকে একটা কমলা লেবুকে দশবারের মধ্যে দশবারই ফুটো করতে পারে সে এই যন্ত্রটা দিয়ে। কিন্তু সে হচ্ছে। ধীর স্থির মস্তিষ্কে শান্ত পরিবেশে প্র্যাকটিসের সময়। আজকের কথা আলাদা। ভ পেয়েছে রানা, শুকিয়ে গেছে কণ্ঠতালু, হতাশায় ছেয়ে গেছে মন। নাহ্, বাঁচবার কোন রাস্তা নেই।
সেফটি ক্যাচ নামিয়ে প্রস্তুত হলো রানা। তিরিশ গজের মধ্যে এসে গেছে সিপাইগুলো শেকল বাঁধা কুকুরের টানে। অস্থির হয়ে উঠেছে কুকুর দুটো, আরও দ্রুত এগোবার জন্যে টেনে ছিড়ে ফেলতে চাইছে শিকল। স্পষ্ট টের পাচ্ছে ওরা রানার উপস্থিতি। নিস্তব্ধ রাত্রিকে কাঁপিয়ে দিয়ে হুঙ্কার ছাড়ল একটা কুকুর।
আর সময় নেই। জুতোর শব্দ পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে রানা। একটা পাথরের টুকরোতে লাখি মারল একজন বুট দিয়ে, খট্ খট্ শব্দ তুলে রাস্তার উপর লাফাতে লাফাতে বেশ কিছুদূর চলে গেল সেটা। কোমরের কাছে বাঁধা লুকানো খাপ থেকে থোয়িং নাইফটা বের করে বাম হাতে রাখল রানা- কাজে লাগতে পারে। একটা বোতাম টিপতেই সড়াৎ করে বেরিয়ে এল ছুরিটার চার ইঞ্চি ব্লেড। চায়নিজ স্টেন হাতে সেন্ট্রি চারজন এবার এগোচ্ছে সতর্ক পায়ে। কুকুরের ব্যবহারে টের পেয়েছে ওরা রানার মোটামুটি অবস্থান। হঠাৎ কুকুরগুলো ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়তে পারে। একটা আধমনী পাথরের উপর ডান হাতের কব্জি রেখে পিস্তলটা তাক করল রানা বাম ধারের সেন্ট্রির বুক বরাবর। এক সেকেণ্ডে চারটে গুলি করে প্রথমে চারজন সেপাইকে খতম করতে হবে, তারপর শেষ করতে হবে কুকুর দুটোকে। একটা গুলিও নষ্ট করলে চলবে না। কারণ স্পেয়ার ম্যাগাজিন রয়ে গেছে ট্রাকের উপর ফেলে আসা সুটকেসের মধ্যে।
হঠাৎ চোখ পড়ল রানার, আরও চারজন সেন্ট্রি বাকটা ঘুরে মার্চ করে এগিয়ে আসছে এদিকে। হাতে চায়নিজ স্টেনগান। বুকের ভিতর হাতুড়ির ঘা থেমে গেল এক সেকেন্ডের জন্যে। মুহূর্তে মিলিয়ে গেল আশার শেষ রশ্মিটুকু। ঢোক গেলার * চেষ্টা করল রানা। শুকনো খটখটে জিভ। আটজন সিপাই, আর দুটো কুকুর উহু, অসম্ভব। এখন গুলি করা আর আত্মহত্যা করা এক কথা। বন্দী হলে হয়তো মুক্তির সুযোগ আসতেও পারে, কিন্তু অনর্থক খুন হয়ে গেলে কারও কোন লাভ হবে না। তার চেয়ে আশাবাদী হওয়াই ভাল।
টুপিটা খুলে চাঁদির উপর রাখা রানা ছুরিটা, আবার বসার চুপি যথাস্থানে তারপর সেফটি ক্যাচ তুলে দিয়ে ছুড়ে ফেলল পিস্তলটা সেন্ট্রিদের পায়ের কাছে। ঢিবির আড়াল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠে এল সে দুই হাত মাথার উপর তুলে। মেঘে ঢাকা পড়ল চাঁদ। পশ্চিম আকাশের তারাগুলো উজ্জ্বলতর দেখাচ্ছে।
তিন
আর্মি চেক পোস্টের ছোট ঘরটা পর্যন্ত চুপচাপ এসে দাঁড়াল ওরা। মাঝে কোন ঘটনা নেই। রানা ভেবেছিল রাইফেলের কুঁদোর গুঁতো আর আমি বুটের অকৃপণ লাথিতে শুয়ে পড়তে হবে ওকে পথের উপর। নিদেন পক্ষে কিছু কিল, চড় আর কনুইয়ের ব্যবহার হবে প্রথমেই। কিন্তু তা হলো না। যেন রীতিমত ভদ্রতা করছে, এমনি ভাবে নিয়ে চলল ওরা রানাকে অফিসারের কাছে। যেন রানার উপর কারও কোন রাগ নেই, এমন কি রানার প্রচণ্ড ঘুসির ফলে যে লোকটা রুমাল দিয়ে নাক চেপে ধরে আছে এখনও, তারও না। অন্য কোন অস্ত্র আছে কিনা সংক্ষিপ্ত ভাবে পরীক্ষা করে দেখেছে একজন। কেউ একটা প্রশ্নও করেনি। কাগজ-পত্র কিছু দেখতে চায়নি। অসস্তি বোধ করতে আরম্ভ করল রানা ভয়ানক ভাবে। তবে কি এরা আশা করছিল ওকে? ফাঁদ পাতা ছিল আগে থেকেই? মিথ্যে খবর দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে ওকে?
যে ট্রাকটার পিছনে উঠে এতদূর এসেছিল রানা, সেটা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এখনও। ড্রাইভারটা দুই হাত নেড়ে প্রবল যুক্তি তর্কের অবতারণা করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবার চেষ্টা করছে একজন সেন্ট্রির কাছে। নিশ্চয়ই রানার গোপন উপস্থিতি সম্পর্কে ‘ওর কোন হাত আছে বলে ধরে নিয়েছে এরা। থেমে দাঁড়িয়ে ড্রাইভারের হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল রানা, সুযোগ হলো না। সামনে একটা ভিড়ানো দরজা। দু’জন সিপাই দু’পাশ থেকে ধরল ওর দুই হাত, পিছনের ধাক্কায় ‘ ঢুকে পড়ল সে দরজা দিয়ে ঘরের ভিতর।
ছোট ঘরটা। চারকোনা আসবাবের বিশেষ বালাই নেই। এক কোণে একটা ছোট নড়বড়ে ডেস্কের উপর টেলিফোন, ডেস্কের এপাশে দুটো কাঠের খালি চেয়ার, ওপাশে অল্পবয়সী একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট বসে আছে। ইউনিফরমের হাতায় লেখা M.P. চেহারায় বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য নেই। ঠোঁটের উপর নতুন গজানো পাতলা গোঁফ। পাঞ্জাবী। ছোট ছোট চোখ জোড়ায় নীচতার আভাস। এটা পশ্চিম- পাঞ্জাবীদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য, দোষ ওর নয়। খুব সম্ভব গত বছর বাঙালী দমন করার জন্যে তাড়াহুড়ো করে রিট করা। সদ্য পর অফিসারী ডাঁট প্রকাশ পাচ্ছে হাবে- ভাবে। দুর্বল চরিত্রের ছোকরা, দুর্বলতা ঢাকবার জন্যেই কর্তৃত্বের খোলস পরে হম্বিতম্বি করে তটস্থ করে রাখে অধঃস্তন কর্মচারীদের।
এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিল রানা সিপাইদের কাছ থেকে। লম্বা দুই-তিন পা ফেলে পৌঁছল ডেস্কের কাছে। ধাঁই করে কিস বসাল ডেস্কের উপর। নড়বড়ে টেবিলের উপর লাফিয়ে উঠল টেলিফোনটা। টিং করে শব্দ হলো একটা।
অফিসার-ইন-চার্জ কে? আপনি?’ জিজ্ঞেস করল রানা কর্কশ কণ্ঠে, বিশুদ্ধ
পাঞ্জাবীতে।
চমকে উঠেছিল ছোকরা ভয় পেয়ে। চট্ করে পিছনে সরে একটা হাত তুলে ফেলেছিল আত্মরক্ষার জন্যে সামলে নিল। মাঝখানে হাতটা থামিয়ে দিয়ে কপাল চুলকাল। কিন্তু ওর অধীনস্থ কর্মচারীরা যে ওর এই আঁতকে ওঠা দেখে ফেলেছে, সেটা বুঝতে পেরে কান দুটো লাল হয়ে উঠল ওর। রেগে গেল সে নিজেরই উপর। “নিশ্চয়ই। আপনার কোন সন্দেহ আছে?’ উত্তর দিল সে।
‘এইসব গুণ্ডামির কি অর্থ আমি জানতে চাই। চট করে পকেট থেকে পাসপোর্ট আর আইডেন্টিটি কার্ড বের করল রানা। ছুঁড়ে দিল টেবিলের উপর। এগুলো পরীক্ষা করে দেখুন। ফটো আর ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলিয়ে দেখুন। তারপর যেতে দিন আমাকে।’ অবাক হয়ে ছোকরাকে ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে অসহিষ্ণু কন্ঠে বলল, “নিন জলদি করুন। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। আজকে কপালটাই খারাপ, পদে পদে খালি বাধা।’ ঘড়ি দেখল। ‘কই নিন, তাড়াতাড়ি দেখুন।
রানার এই আত্মবিশ্বাস আর তেজ দেখে একটু যেন দমে গেল ছোকরা। ধীরে ধীরে কাগজগুলো তুলে নিল টেবিলের উপর থেকে।
“আলতাফ ঘোরি, বর্ন লাহোর, ওয়্যাস্ট পাকিস্তান, জার্নালিস্ট, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট অফ দ্য হুরিয়াত, বিড় বিড় করে পড়ল সেকেণ্ড লেফটেন্যান্ট। এবং এখন ফিরছি নয়াদিল্লী থেকে। আগামী পরশুর জরুরী প্রেস কনফারোটা কাভার করেই আবার যাব ব্যাক টু নয়াদিল্লী। ছোকরাটাকে চিন্তার সুযোগ না দিয়েই এবার একটা চিঠি ফেলল রানা টেবিলের উপর। ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে পাকিস্তানের তরফ থেকে বিশিষ্ট সাংবাদিক আলতাফ ঘোরির যোগদানের জন্য বিশেষ অনুমতি পত্র। ডিফেন্স মিনিস্ট্রির অফিশিয়াল সীলমোহর জ্বলজ্বল করছে।
পা বাধিয়ে ডেস্কের কাছে টেনে আনল রানা একটা চেয়ার। ভাতে বসে প্লেয়ার্স নাম্বার স্ত্রী ধরাল একটা। ছোকরাটাকে সাধল, কিন্তু নিল না সে। নাক মুখ দিয়ে প্রচুর ধোঁয়া ছেড়ে প্রায় আপন মনে বলল রানা, ‘আজকের এই ঘটনা আপনার সুপিরিয়র অভিসারের উপর কিরকম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে, আঁচ করতে পারছেন নিশ্চয়ই? ব্যাপারটা পত্রিকায় বেরোলে খুব খুশি হবে না আপনাদের কমান্ডিং অফিসার, কি বলেন?’
চট্ করে চাইল সে একবার রানার দিকে। আবার মনোনিবেশ করল চিঠিতে।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!