অপহরণ – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৯৩
অপহরণ – বইটির এক ঝলকঃ
কেনেডি এয়ারপোর্টের টি-ডাব্লিউ-এ টার্মিনাল, ভিড় ঠেলে নিউজস্ট্যাণ্ডের দিকে এগোল রানা । কনুই আর হাঁটু দিয়ে গুঁতো মারতে হলো ওকে, কারণ তা না হলে শুধু চারদিক থেকে বেমক্কা ধাক্কাই খেতে হবে, এক পা-ও এগোনো যাবে না। নিউ ইয়র্ক রানার প্রিয় শহরগুলোর একটা হলেও, শহরটা দিনে দিনে নরকতুল্য হয়ে উঠছে। ইউরোপের লোকেরা নিউ ইয়র্কের কথা উঠলেই আজকাল বলে, অসভ্যদের বাস ওখানে। কথাটা মিথ্যে নয়। ইউরোপের যে কোন শহরে দেখা যাবে, কিছুর জন্যে অপেক্ষা করতে হলে মানুষ এক লাইনে শান্তভাবে দাঁড়ায় । কিন্তু নিউ ইয়র্কে জোর যার মুলুক তার । কর্কশ গলায় সবাই সারাক্ষণ অশ্লীল মন্তব্য করে চলেছে । একা রাস্তা দিয়ে হাঁটার পর্যন্ত উপায় নেই, এক দুই ডলার পর্যন্ত ছিনতাই হয়ে যাবে । এক কপি নিউ ইয়র্ক টাইমস কিনে কাঁচের সুইং ডোর ঠেলে ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ডে বেরিয়ে এল ও । বগল থেকে নিয়ে হ্যাটটা মাথায় দিল, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে ।
স্ট্যাণ্ডে কোন ট্যাক্সি নেই। তীরবেগে ছুটে এল একটা সুটকেস, ঝট্ করে একপাশে সরে দাঁড়িয়ে মাথাটাকে বাঁচাল রানা । খুবই কম বয়স মেয়েটার, হাত খালি করে এবার প্রায় সমবয়েসী স্বামীর বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, দমাদম কিল মারছে । স্বস্তির একটা হাঁফ ছাড়ল রানা। দৃশ্যটা পুনর্মিলনের । উল্লট
আদরে অস্থির স্বামী শান্ত করার চেষ্টা করছে স্ত্রীকে, আর একদিনের জন্যেও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না । পথিকদের কাণ্ডজ্ঞানের ভারি অভাব, সবাই যেন পণ করেছে সুটকেসটাকে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা করবে । অনেক কষ্টে সেটাকে ফুটপাথ থেকে উদ্ধার করে আনল রানা, ফিরিয়ে দিতে গিয়ে শান্ত স্বামী-স্ত্রীর ঘেরাও-এর মধ্যে পড়ে গেল । ছেলেটা করমর্দন করল ওর সাথে, ব্যথায় আরেকটু হলে চেঁচিয়ে উঠতে যাচ্ছিল রানা। মেয়েটা পায়ের ডগার ওপর দাঁড়িয়ে চুমো খেলো-যেন হুল বিধল কপালে ।
এই অফুরন্ত প্রাণশক্তি আর কোন শহরে দেখেনি রানা । নিউ ইয়র্কের লোকেরা স্থির থাকতে জানে না-প্ৰেম, ঝগড়া, মিছিল, নাচ-গান, জগিং, মারপিট, ধর্মঘট-কিছু না কিছু একটা করছেই । এবং যাই করুক, কিছুই ওরা শান্তভাবে করতে জানে না ।
মধ্যবয়স্ক এক দম্পতিকে পাশ কাটিয়ে এগোল রানা, একটা ট্যাক্সি আসছে। ট্যাক্সি থামতে না থামতে দরজার হাতল ধরে ফেলল ও ।
সামনের খালি সীটের ওপর ঝুঁকে জানালা দিয়ে মুখ বের করল ড্রাইভার । ‘কোথায় যাবে, দোস্ত?’
ঢাকার কোন স্যুট পরা লোককে ড্রাইভার যদি দোস্ত বলে, তুলকালাম কাণ্ড বেধে যাবে, ভাবল রানা। ‘ম্যান হাটন।’
মাথা ঝাঁকিয়ে দরজা খুলে দিল ড্রাইভার । আজকাল ট্যাক্সিতে চড়ার আগে ড্রাইভারের অনুমতি নিতে হয়, শুনেছে রানা । অথচ আইন আছে কোন লোক শহরের মধ্যে যে-কোন জায়গায় যেতে চাইলে ড্রাইভার তাকে নিয়ে যেতে বাধ্য ।
‘রিজন্সিতে,’ ট্যাক্সি আবার চলতে শুরু করলে বলল রানা । প্রাইভেট কোম্পানির ট্যাক্সি, ড্রাইভার আর আরোহীর মাঝখানে বুলেট-প্রুফ পার্টিশন নেই । থাকলে মস্ত একটা সুবিধে, ড্রাইভারের বকবকানি শুনতে হয় না ।
ভাঁজ খুলেই নিউ ইয়র্ক টাইমসে মন দিল রানা। আগেই দেখে নিয়েছে, ভ্যান উইক এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ছুটছে ট্যাক্সি। প্রথম পাতার হেডলাইনগুলোয় চোখ বুলিয়ে ভেতরের পাতা খুলল । হঠাৎ, অনেকটা যেন লাফ দিয়ে চোখে উঠে এল ছোট্ট খবরটা । নামটাই দায়ী, তা না হলে ভাঁজের ভেতর অর্ধেক লুকানো হেডিং দেখতেই পেত না । এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল
রানা ।
‘এথেন্স (এ-পি)-রড ডিকসন, পঁয়ত্রিশ, এখানকার মার্কিন দূতাবাসে অ্যাসিস্ট্যান্ট টু ফার্স্ট সেক্রেটারি, গতকাল বিকেলে গ্রীসে অ্যাটিক উপকূল থেকে খানিক দূরে সারডোনিক গালফে ডুবে মারা গেছেন । খবরে জানা যায়, একটা ইয়ট থেকে সাগরে পড়ে যান তিনি ।
ডিকসনের কয়েকজন বন্ধু, যারা ইয়টের মালিক, জানিয়েছেন, ডিকসন ভাল সাঁতার জানতেন না। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়, এখান থেকে বিশ মাইল দক্ষিণে লাগোনিসি র কাছে।’
ওর সাথে দেখা হলো, আর তার পরদিনই মারা গেল লোকটা! ডাবল রেড অ্যালার্টের সাথে এর কি কোন সম্পর্ক আছে? ব্রাসেলসের অশীতিপর বৃদ্ধের কথা মনে পড়ল রানার । সে-ও কি মারা গেছে? ভারতীয় মেয়েটা? কালোকেশী ?
“চিন্তার বিষয়!’ কাগজটা ভাঁজ করে সীটের এক ধারে ছুঁড়ে দিল ও ।
‘তারমানে?’ জিজ্ঞেস করল ড্রাইভার ।
“কিছু না।’ নিজেরই খেয়াল নেই, রানা তাকিয়ে আছে ড্যাশবোর্ডে লটকানো প্লাস্টিক মোড়া ড্রাইভারের লাইসেন্সের দিকে । উত্তরটা শুনে আপন মনে কাঁধ ঝাঁকাল ড্রাইভার । রানার মাথার ভেতর নানা রকম চিন্তা । হঠাৎ করেই একটা ঝাঁকি খেলো ও। এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল, কিন্তু দেখছিল না, এখন দেখতে পাচ্ছে । নাম: ভ্যান বেক । ফটো: গোলমুখো ষাট বছরের এক বুড়ো। ঝট্ করে ড্রাইভারের দিকে ফিরল রানা । বুড়োর চেয়ে অন্তত পঁচিশ বছর ছোট হবে লোকটা-চওড়া কাঁধ, শক্ত ঘাড়, কালোর বদলে ধূসর চুল, বাদামীর জায়গায় ম্লান নীল চোখ ।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল রানা। আরে, লোকটা ওকে নিয়ে যাচ্ছে কোথায় !
ড্রাইভারের দিকে ফিরল রানা । দুটো হাতই স্টিয়ারিং হুইলে । রিয়ার ভিউ মিররে চোখ, রানার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে । চোখাচোখি হতে লোকটা বলল, ‘হাতে সময় কি রকম?’ ‘নেই ।’ মুখস্থ করা সংলাপ আওড়াল রানা ।
‘সেজন্যেই আপনার কোন জায়গায় যাচ্ছি না।’
‘জানি,’ বলল রানা । গলার সুর শুনেই বোঝা যায়, লোকটা জার্মান । ‘বাপজানকে কোথায় রেখে এলে? ভ্যান বেককে? ‘শাবাশ!” লোকটা হাসল । ‘লাইসেন্সটা পাল্টাতে ভুলে গেছি । দুঃখিত ।’
কিন্তু রানা পাল্টা হাসল না। বলল, ‘দুঃখিত হবার কিছু নেই ।’ কিন্তু লোকটা যে এ-ধরনের ভুল করে মনে সেটা গেঁথে রাখল ।
‘ভাল কথা, আমি ডানিয়েল।’ রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়ে পিছন দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল সে । ‘ডাবল রেড অ্যালার্টের শেষ মাথা বলতে পারেন আমাকে। প্রস্তাব পেয়েছেন, কিন্তু কাজটা কি এখনও আপনাকে বলা হয়নি। আমার কাছ থেকে শুনবেন ।’
মৃদু ঝাঁকি দিয়ে হাতটা ছেড়ে দিল রানা। অপেক্ষা করছে, ডানিয়েল একাই কথা বলুক । কয়েক মুহূর্ত গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকল লোকটা । একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, সরু হয়ে গেছে রাস্তা । যানজট থেকে বেরিয়ে এসে গ্যাস পেডালে জোরে চাপ দিল ডানিয়েল । আশি মাইল স্পীডে ছুটছে একটা ফোক্সওয়াগেন আর একটা লিমুসিন, গাড়ি দুটোর মাঝখানে থাকল লিমুসিনটাকে পাশ কাটাবার সময় ব্যাক সীটে বসা আরোহীকে দেখতে পেল রানা । সাদা চুল, নির্লিপ্ত চেহারা । চিনতে পেরে গম্ভীর হয়ে গেল ও । বিখ্যাত বেহালা বাদক, হফ ভ্যানডেরবার্গ ।
ওরা ।
দু’বছর আগের কথা মনে পড়ে গেছে রানার । পৃথিবীতে এমন লোক অনেক আছে যাদের খুন করলে অন্যায় হবে না, হফ ভ্যানডেরবার্গ সেরকম একজন লোক । অ্যানি দিয়েত্রিচ-এর সাথে ব্রাজিলে দেখা হয় রানার, তার স্বীকারোক্তি আদায় করে ও ।
কাগজগুলো কোথায় আছে স্মরণ করার চেষ্টা করল রানা । বিদ্যুৎচমকের মত মনে পড়ে গেল-নিউ ইয়র্কেই! সিটি ব্যাংকের একটা ভল্টে… ।
চিন্তায় বাধা পড়ল ।
‘আমরা আপনাকে মালী হিসেবে দেখতে চাই,’ সকৌতুকে বলল ডানিয়েল, নাটুকে হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে । ‘একটা গোলাপ কুঁড়ি তুলে আনতে হবে। ভাল কথা, অ্যাসাইনমেন্টের নামও তাই—গোলাপ কুঁড়ি ।’
শুধু পিছনটা নয়, ভিউ মিররে ডানিয়েলের সামনেটাও দেখতে পাচ্ছে রানা । হাসিখুশি, শান্ত প্রকৃতির লোক । শুধু ম্লান নীল চোখ দুটো ফাঁস করে দেয়, এ লোক সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর । হাসিখুশি, কিন্তু হাসিটুকু কখনোই চোখ স্পর্শ করে না । লোকটার ভেতরটা যেন পরিষ্কার দেখতে পেল রানা- প্রতিটি স্নায়ুর শেষ মাথা স্টেনলেস স্টীলের তৈরি মেরুদণ্ডের সাথে সংযুক্ত ।
ট্রাইবরো ব্রিজ পেরোচ্ছে ওরা, সামনে আর দু’পাশে মনোহর
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!