অন্ধপ্রেম – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৩৪
অন্ধপ্রেম – বইটির এক ঝলকঃ
‘গোটা ব্যাপারটা আমার কাছে রহস্যময় লাগছে,’ বলল রানা। ‘কেউ একজন চেয়েছে আমি যেন টাকাগুলো নিয়ে ওই ব্যাঙ্ক থেকে জীবিত বের হতে পারি। আমার নিরাপত্তা তার কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে নির্বিচারে খুন করেছে সে আমাকে রক্ষা করবার জন্যে। কেন?’ আপনমনে বুড়ো আঙুল আর তর্জনী ডলল রানা, সঙ্গে সঙ্গে টের পেল, বুদ্বুদ উঠছে আঙুলের ভেজা ভেজা জায়গাটা থেকে। গ্লাসের দিকে তাকাল ও। জোড়া লেগে যাওয়া বরফের টুকরো দুটো গরম পানি ঢাললে যেমন গলে, তেমনি করে গলছে!
ব্যাপার কী! আঙুলটা নাকের কাছে নিয়ে শুঁকল ও। গন্ধটা চিনতে পারল সঙ্গে সঙ্গে। হুড়মুড় করে চেয়ার ছাড়ল রানা, গলা কেঁপে গেল সামান্য। ‘মিস্টার লংফেলো! সার মাহতাব! টাকাগুলো আসলে বোমা!”
প্রায় দরজার কাছে পৌঁছে গেছে রানা, ছুটছে। দরজা খুলে ছিটকে বের হলো । ইন্টারকমে সেক্রেটারিকে দ্রুত নির্দেশ দিলেন লংফেলো, ‘বারবারা, সার মাহতাবকে ঠেকাও ! যেতে দিয়ো না কোথাও!’
বিএসএস-এর এক কর্মচারীর সঙ্গে বিল্ডিঙের সিকিউরিটি এরিয়ার দিকে এগিয়ে চলেছেন সার মাহতাব, জানেন না কী ঘটতে চলেছে। টাকাগুলোর কথা ভাবছেন তিনি। ওগুলো প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে সিকিউরিটি বারের ওদিকে রাখা হয়েছে। একজন অফিসার আরেকটা ব্যাগ হাতে এগিয়ে এলেন, তাঁর পিছনে শামশের আলী। পাগলা বিজ্ঞানী বললেন, ‘টাকাগুলো এখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি।’
হাতের ঝাপ্টায় কথাটা উড়িয়ে দিলেন সার মাহতাব। ‘পুরোটা আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই আমার। বিএসএস-এর সততাকে অবিশ্বাস করার কোন প্রশ্নই ওঠে না।’
শামশের আলী কিছু বলতে হাঁ করেছিলেন, কিন্তু অফিসার তাঁকে চোখের ইশারায় থামিয়ে দিলেন। তিনি চাইছেন না ব্রিটেনের অন্যতম ক্ষমতাশালী কারও সঙ্গে শামশের আলী তর্কে জড়িয়ে পড়ুন। বিশেষ চাবি দিয়ে দরজা খুলে বার সরিয়ে নিজের ব্যাগের ভিতর টাকাগুলো ভরলেন তিনি, সার মাহতাবের দিকে বাড়িয়ে দিলেন ।
‘ধন্যবাদ,’ ব্যাগটা নিলেন সার মাহতাব। ‘বেশ ভারী তো!’ বিএসএস-এর কর্মচারীকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার করিডরের দিকে পা বাড়ালেন তিনি।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে নিজের কাজের জায়গায় ফিরে গেলেন শামশের আলী, মাথা থেকে অন্য সব চিন্তা সরিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলেন তাঁর নতুন বোট পানির তলা দিয়ে যাওয়ার সময় আরও গতি বাড়াতে পারবে কীভাবে।
ওদিকে বিশাল বাড়িটার ভিতর শর্টকাট পথে সার মাহতাবের কাছে পৌঁছুনোর জন্য শামশের আলীর ল্যাবরেটরির ভিতর দিয়ে ছুটছে রানা। শামশের আলীকে দেখতে পেল, একটা বিদঘুটে চেহারার বোট নিয়ে ব্যস্ত তিনি। রানাকে ছুটে পাশ কাটাতে দেখে ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘দৌড়াচ্ছেন কেন, আগুন লেগেছে নাকি?’
জবাব দিল না রানা, একটা বাঁক ঘুরে তিন ধাপ সিঁড়ি টপকাল, ছুটল সিকিউরিটি এরিয়ার দিকে। সামনে লোক দেখে চিৎকার করল, ‘সার মাহতাবকে ঠেকান!
অনেক দূরে আছেন সার খন্দকার আজহার মাহতাব। হাঁটতে হাঁটতে উদ্ধার করা টাকাগুলোর কথা ভাবছেন। তারপর অয়েল পাইপলাইনের চিন্তা ঢুকল তাঁর মাথায়। খেয়াল করলেন না তাঁর কোটের ল্যাপেল-পিন মৃদু গুঞ্জন শুরু করেছে।
.‘থামুন!’ সার মাহতাবের পনেরো ফুটের মধ্যে চলে এসেছে রানা। “টাকার ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে দিন।’
কথাটা কানে গেছে সার মাহতাবের, ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেন তিনি জ কুঁচকে। ঠিক তখনই বিস্ফোরণের প্রচণ্ডতায় থরথর করে কেঁপে উঠল গোটা কমপ্লেক্স। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল ছাদের একটা অংশ। আগুনের শিখা আর ধোঁয়ায় ভরে গেল চারপাশ।
শকওয়েভের প্রচণ্ড ধাক্কায় বিশ ফুট দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ল রানা। কান ঝাঁ-ঝাঁ করছে। সারাশরীরে ব্যথার ঢেউ টের পেল। বিশেষ করে বাম কাঁধের কাছে।
ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় মিষ্টি-পানির লেক লক লোমন্ড। বিখ্যাত সব লেখকদের ভিড় লেগে থাকে ওখানে। গত এক শতাব্দী ধরে ওটা তাঁদের প্রিয় একটা অবসর বিনোদন কেন্দ্র। ওখানে বিরাট খামারবাড়ি আছে সার মাহতাবের। কুলখানির আয়োজন করা হলো সেখানেই।
দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক লোমন্ডে হাজির হলেন শোকাহতরা। যার-যার ক্ষেত্রে বিরাট অবস্থানের মানুষ তাঁরা। ক্ষমতাশালী, ধনী এবং বিখ্যাত। প্রত্যেকের পরনে শোকের কালো পোশাক ।
একটু দেরি হলো রানার পৌঁছুতে মিলাদ শেষ হয়ে গেছে তখন। ওর বামহাতটা গলার কাছ থেকে একটা স্লিঙে বাঁধা। বিস্ফোরণের ফল। বাম কাঁধের কলার বোন জখম হয়েছে।
অন্যান্যদের সঙ্গে বাড়ির লিভিংরুমে বসল ও ।
সবার সঙ্গে দেখা করছে সাবরিনা ম্যাকেনরো। ওর মনোযোগ কেড়ে নিল মেয়েটা। শুধু যে অসাধারণ সুন্দরী, তা-ই নয়, চেহারায় দেবীসুলভ সৌম্য-শান্ত কী একটা যেন আছে। যথেষ্ট লম্বা সে। কাঁধে লুটাচ্ছে রেশমী বাদামী চুল । মায়াবী পটলচেরা চোখ দুটোও বাদামী, তাতে অন্তর্ভেদী দৃষ্টি। ঠোঁট দুটো যেন কোন দক্ষ ভাস্করের তৈরি, কেমন অভিমানী-অভিমানী একটা ভাব এনে দিয়েছে অপূর্ব সুন্দর
কোমল চেহারায় ।
অদ্ভুত একটা আকর্ষণ বোধ করল রানা। খবরের কাগজে মেয়েটির ছবি দেখেছে ও, তবে সামনে থেকে আগে কখনও দেখেনি। ছবিতে সাবরিনার সত্যিকার সৌন্দর্য বোঝা যায় না । কতো হবে বয়স? বড়জোর পঁচিশ-ছাব্বিশ। কিন্তু আচরণে মনে হয় অন্তত ত্রিশ। বাদামী চোখের অন্তরালে কী যেন দুঃখ লুকিয়ে আছে, অনুভব করা যায়, অনেক কষ্ট পেয়েছে ও জীবনে। চেহারায় বিষাদের ছায়া। সেটা শুধুই যে সার মাহতাব এভাবে হঠাৎ মারা যাওয়ায়, তা নয় ।
চোখ সরাতে পারছে না রানা। সাবরিনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন অনেকে। মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে শুনছে সে। মার্ভিন লংফেলো জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। কপালে চুমু দিলেন। হাত বুলিয়ে দিলেন মাথায়। সাবরিনার প্রতি ভদ্রলোকের পিতৃসুলভ স্নেহ স্পষ্ট অনুভব করতে পারল রানা।
ধীর পায়ে মার্ডিন লংফেলোর পাশে হাঁটছে সাবরিনা। মাঝে মাঝে থামছে, এর-ওর সঙ্গে কথা বলছে।
এক সময় আনুষ্ঠানিক শোকপ্রকাশ শেষ হয়ে গেল, বাইরে বেরিয়ে এলো সবাই। লেকের ধারে মার্ভিন লংফেলোর সঙ্গে দাঁড়াল বিষণ্ন সাবরিনা। মনের ভিতর একটা অপরাধবোধ অনুভব করল রানা, তারপর সেই জায়গা দখল করল অস্বস্তি। কেন তা ও জানে না ।
ব্যাগের টুকরো আর পাউন্ডের কুচি ছাড়া আর কিছু পায়নি বিএসএস-এর ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট। এসব থেকে জানা গেছে টাকাগুলো ইউরিয়া দিয়ে ভেজানো হয়েছিল, তারপর শুকিয়ে নিয়ে বান্ডিল বাঁধা হয়। জিনিসটাকে সার-বোমাও বলা যেতে পারে। রানার টাকা স্পর্শ করা হাতে যখন পানি লাগে, তখনই কেমিকেল রিয়্যাকশন শুরু হয়ে যায় ।
কুলখানি থেকে ফিরেই বিএসএস কর্মকর্তাদের মীটিং ডেকেছেন মার্ভিন লংফেলো। রানাকেও থাকতে বিশেষ অনুরোধ করেছেন। নিজেকে এখনও একটু দায়ী ভাবছে রানা। আরেকটু আগে যদি বরফ খণ্ডটা খেয়াল করত!
হাজির আছেন বিজ্ঞানী শামশের আলী। দূর থেকে ট্র্যান্সমিটারের মাধ্যমে ফাটানো হয়েছে বোমাটা,’ বললেন তিনি। ‘একটা পাউন্ডের কাউন্টারফিটিং ঠেকানোর স্ট্রিপ সরিয়ে ফেলা হয়, তার জায়গায় রাখা হয় ম্যাগনিযিয়াম স্ট্রিপ। ডেটনেটর হিসেবে কাজ করে ওটা।’
বিস্ফোরণে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া সার মাহতাবের ল্যাপেল-পিনটা টেবিল থেকে তুলে দেখালেন তিনি। ভিতর থেকে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ উঁকি মারছে এখন । ‘সার মাহতাব এমনই একটা ল্যাপেল-পিন ব্যবহার করতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল ওটা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তবে আমরা এখন যেটা দেখছি সেটা আসলটা না। ট্র্যান্সমিটার যখনই সিগনাল দিল নকল ল্যাপেল পিনকে, ওটা সঙ্কেত পৌঁছে দিল পাউন্ডের ম্যাগনিযিয়াম স্ট্রিপে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটল বিস্ফোরণ ।
একটা সুইচ টিপলেন মার্ভিন লংফেলো। দেয়ালের স্ক্রিনে ধ্বংসের ছবি দেখা গেল । ছড়িয়ে ছিটিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে সব
‘প্রশ্ন হচ্ছে কাজটা কার?” সবার উপর চোখ বুলালেন তিনি ।
মুখ খুলল রানা। ‘তাঁর খুব কাছের কারও। এমন কেউ, যে ল্যাপেল-পিন বদলে ফেলার সুযোগ পেয়েছে। সার মাহতাবের চারপাশে লোকের অভাব ছিল না।’
‘আমরা তাকে ঠিকই ধরব,’ দৃঢ় শোনাল লংফেলোর গলা। ‘কেউ একজন আমাদের বোকা বানিয়ে হাসছে এখন। ব্যবহৃত হয়েছি আমরা। ব্যবহৃত হয়েছি তার হাতের পুতুলের মতো। রানার দিকে তাকালেন তিনি। ‘আমি নতুন নির্দেশ দিয়েছি, যে যেখানে থাকুক, বিএসএস-এর ডাবল-ও ক্যাটাগরির এজেন্টরা হাতের কাজ ফেলে ফিরে আসবে, খুঁজে বের করবে কে করেছে কাজটা। আমরা ওদের গন্ধ শুঁকে বের করব, ধাওয়া করব প্রয়োজনে দুনিয়ার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। পালানোর উপায় নেই দায়ী লোকটার। শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’
‘আমি অপমানিত বোধ করেছি, লংফেলো থামবার পর গম্ভীর চেহারায় বলল রানা। ‘এটা আমার কাছেও ব্যক্তিগত পরাজয় মনে হয়েছে। ঘোল খেয়েছি আমিও, পেছনের লোকটাকে বের না করা পর্যন্ত থামব না।’
মাথা নাড়লেন লংফেলো। ‘দুঃখিত, রানা। মেজর জেনারেলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন তুমি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে। সেরকমই তাঁর নির্দেশ। তাঁর সম্মতি নেই জেনেও তোমাকে আমি বিএসএস-এর কাজের সঙ্গে জড়াতে পারব না।’
ভ্রূ কুঁচকে উঠল রানার। ‘যদি বিএসএস-এর ফিজিশিয়ান আমাকে সুস্থ মনে করেন? খুনীকে খুঁজে বের করতে বিএসএস-এর সাহায্য দরকার হবে আমার।
‘আমাদের ডাক্তার বেনসন যদি তোমাকে ক্লিয়ার করেন তা হলে মেজর জেনারেলকে বোঝাতে চেষ্টা করে দেখতে পারি আমি,’ বললেন লংফেলো। ‘তবে ডাক্তার যে তোমাকে সার্টিফাই করবেন না, সে ব্যাপারে আমি শিওর।’
উঠে দাঁড়াল রানা। ‘আমি যাচ্ছি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। মার্ভিন লংফেলো কিছু বলবার আগেই পা বাড়াল ও গম্ভীর চেহারা। ঘর থেকে বেরিয়ে পিছনে ভিড়িয়ে দিল দরজাটা ।
বিএসএস-এর চীফ ফিজিশিয়ানকে একটা জাঁদরেল বাঘ বললে পরিষ্কার চিত্রটা পাওয়া যাবে। সাড়ে ছয়ফুট লম্বা রাগী এক ডাকাবুকো বুড়ো দানব। লালচে হাঁড়ির মতো চেহারায় কেউ কোনদিন হাসি দেখেছে এমন রেকর্ড নেই। কথা খুবই কম বলেন। কিন্তু যা বলেন তা অমান্য হওয়ার উপায় নেই। শোনা যায়, একবার অসুস্থ রানীকেও জোর এক ধমক দিয়েছিলেন তিনি কথা না শোনায় ।
টেবিলে ঝুঁকে কী যেন লিখছিলেন তিনি, রানা নক করে ঢোকায় মুখ তুলে তাকালেন ।
সরাসরি কাজের কথায় এলো রানা। ‘আমার একটা সার্টিফিকেট দরকার, ডক্টর। আমি যে সুস্থ সেটা বোঝানোর জন্যে।’
‘বসুন।’ ভ্রূ কুঁচকে হাতের ইশারা করলেন বেনসন। রানা বসবার পর বললেন, ‘আপনি সুস্থ? সে-কথা বলতে হবে আমাকে? কিন্তু আপনি তো সুস্থ নন, মিস্টার রানা।’
‘আমিও তা জানি,’ স্বীকার করল রানা। ‘আপনি তো শুনেছেন কীভাবে সার মাহতাবের হত্যাকাণ্ডে আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি ব্যবহৃত হতে পছন্দ করি না, ডক্টর বেনসন।’
রানার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন ডক্টর বেনসন । হয়তো আরেকজন সত্যিকার খাঁটি পুরুষের অন্তরের অনুভূতি বুঝে নিলেন। কাশলেন খুকখুক করে, তারপর গম্ভীর চেহারায় বললেন, ‘বুঝতে পারছি আপনার কেমন লাগছে, কিন্তু ডাক্তার হিসেবে বলব, সত্যিই বিশ্রাম দরকার আপনার।’
‘প্লিজ, ডক্টর। আমি খুব কষ্টে আছি!” ‘কিন্তু আপনি তো আমাদের কর্মচারী নন।’
‘অবৈতনিক উপদেষ্টা। আমি বিদেশী বটে, কিন্তু ঘটনার সময় আপনাদের হয়ে কাজ করছিলাম।’
রানার কণ্ঠের আবেদনটা ঠিকই টের পেলেন বেনসন, কলমটা টেবিল থেকে তুলে প্রেসক্রিপশন প্যাডে খসখস করে লিখলেন: এই মর্মে প্রত্যায়ন করা যাচ্ছে যে, ট্রমা না থাকায় মাসুদ রানা হাঁটাচলা করবার মতো সুস্থ। কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন রানার দিকে। ওটা নিয়ে উঠে দাঁড়াল রানা, ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বেরিয়ে এলো।
মার্ভিন লংফেলোকে অফিসে গিয়ে কাগজটা এগিয়ে দিল রানা। চোখ বুলালেন তিনি, তারপর বললেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব হলো জানি না, তবে মেজর জেনারেলের সঙ্গে কথা বলব আমি। ব্যাপারটা যে তুমি ব্যক্তিগত ভাবে নিচ্ছ, সেটাও বলব। উনি মত দিলে আপাতত ডাবল-ও ক্যাটাগরির এজেন্টদেরকে যার- যার কাজ চালিয়ে যেতে বলব আমি।’
বিদায় নিয়ে রানা চলে এলো ল্যাবোরেটরিতে। শামশের আলী একটা টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ‘মিস্টার আলী,’ বলল রানা, ‘আমার গাড়িটা তৈরি?’
আটদিন আগে গাড়িটা শামশের আলীর পছন্দ মতো রেডি করবার জন্য দিয়েছিল ও।
আস্তে করে মাথা ঝাঁকালেন পাগলাটে বিজ্ঞানী, টেবিলের সামনে থেকে সরে গিয়ে একটা সুইচে টিপ দিলেন।
ঘরের এক পাশে মেঝে ফাঁক হতে শুরু করল। দু’পাশে সরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে একটা প্ল্যাটফর্ম উঁচু হচ্ছে। ওটার উপর দাঁড়িয়ে আছে রানার বিএমডব্লিউ যে এইট। গাড়িটা একদম নতুন। রংটা ধূসর, কনভার্টিবল-টপ।
একজন টেকনিশিয়ান ওটার সাইড গ্রিলে মিসাইল ঢোকাচ্ছে। কাজটা শেষ করে সরে গেল সে।
*এখন এটাকে একটা ভাল গাড়ি বলা যায়,’ মন্তব্য করলেন শামশের আলী। “ইন্টারসেপ্ট আর কাউন্টারম্যোরের জন্যে নতুন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। টাইটানিয়াম আর্মার। মালটিটাসকিং হেডআপ ডিসপ্লে। আগের অন্যান্য সুযোগ সুবিধেও আছে।’
টেকনিশিয়ানের দিকে ফিরলেন শামশের আলী। ‘আচ্ছা, ওই কোটটা পরে নিন তো! মিস্টার রানার সামনেই পরীক্ষাটা করে নিই।’
সতর্ক হয়ে উঠল রানা। শামশের আলীর জটিল মগজে কী খেলছে আল্লা মালুম। কিছু একটা বিদঘুটে কাণ্ড ঘটবে বুঝতে পারছে ও।
একটু দ্বিধা করল টেকনিশিয়ান কালা আদমীর নির্দেশ মানতে গিয়ে, তারপর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কালো কোট পরতে শুরু করল।
‘এই যে এই সানগ্লাসটা,’ টেবিলের উপর রাখা জিনিসটা দেখালেন শামশের আলী, তুলে নিয়ে রানাকে দিলেন। ‘এটা এক্সরে ভিশন গ্লাস। লুকানো অস্ত্র দেখতে সাহায্য করবে।’ আরেকটা টেবিলের সামনে রানাকে হাতের ইশারা করে নিয়ে এলেন তিনি । একটা ওমেগা হাতঘড়ি ধরিয়ে দিলেন। ‘ডুয়েল লেযার আছে এটায় ।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!