আলোর মিছিল ১ম খণ্ড – ডঃ আব্দুর রহমান রাফাত পাশা – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ ডঃ আব্দুর রহমান রাফাত পাশা
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৪৪
আলোর মিছিল ১ম খণ্ড – বইটির এক ঝলকঃ
পড়ন্ত বিকালের অস্তগামী সূর্য বাইতুল্লাহর উপর সোনালী রেখা বিস্তার
করতে শুরু করলো, এতে বাইতুল্লাহর উন্মুক্ত ও পবিত্র প্রাঙ্গণে শীতলবায়ু প্রবাহের আভাস পেয়ে জীবিত সাহাবী ও বড় বড় তাবেঈদের অনেকেই তওয়াফ শুরু করে দিলেন, তাঁরা হেরেমের বায়ুমণ্ডলকে সুবাসিত করে দিলেন তাকবীর ও তাহলীল দ্বারা, পুণ্যভূমির পরিবেশকে সুরভিত করে দিলেন উত্তম উত্তম দু’আর দ্বারা।
সারাদিনের গ্রখর উত্তাপে তেতে উঠা কা’বা অঙ্গনের ভাপ কমে যাওয়ায় এখন অন্যরাও দলে দলে হালকাবন্দী হয়ে পবিত্র কা’বার আশপাশে বসে পড়লো। এই ঘরের মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য বুকে নিয়ে তারা আসন করে নিলো বিভিন্ন স্থানে।
তারা বাইতুল্লাহর অপরূপ সৌন্দর্যমাখা দীপ্তি চোখভরে উপভোগ করছিলো। তারা পরস্পরের মাঝে চালাচ্ছিলো বিভিন্ন আলোচনা পর্যালোচনা, যার মাঝে কোন গুনাহ ছিলো না, ছিলো না কোন অর্থহীন কথা।
কা’বা শরীফের অন্যতম খুঁটি রুকনে ইয়ামানীর কাছে বসেছিলো সুবাসিত পোশাক পরা ও উচ্চ বংশীয় চার তরুণ। উজ্জ্বল চেহারার এই চার তরুণের পোশাকের মিল আর হৃদয়ের ঘনিষ্ঠতা দেখে মনে হচ্ছিলো—ওরা যেন এই মসজিদে উড়ে বেড়ানো কতগুলো পায়রা।
সেই চারজনের নাম আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর, মুস’আব ইবনে যুবাইর, উরওয়াহ ইবনে যুবাইর এবং আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান। পুণ্যপথের যাত্রী সেই চার তরুণের মাঝে আলোচনা ধীরে ধীরে এগিয়ে চললো, তাদের একজন হঠাৎ প্রস্তাব করে বসলো-
ঃ চলো আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই…….
এভাবে তাদের নিষ্পাপ কল্পনাগুলো অদৃশ্যের বিশাল ভুবনে ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে লাগলো, তাদের স্বপ্নগুলো আকাঙ্খার সবুজ উদ্যানে পাখা মেলে ভাসতে লাগলো। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বললেন—
ঃ “আমার আকাঙ্খা হলো হিজাযের কর্তৃত্ব লাভ করা, খেলাফতের গৌরব অর্জন করা…..”
তার সহোদর মুস’আব বললেন—
ঃ “কিন্তু আমার আকাঙ্খা — দুই ইরাকের (কুফা ও বসরার) শাসক হওয়া, আমি চাই এ দুই অঞ্চলে যেন আমার কোন প্রতিদ্বন্দ্বি জন্ম নিতে না পারে।”
আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান বললেন—
ঃ “ঠিক আছে, তোমাদের আকাঙ্খাগুলো যথার্থ, তবে আমি কিন্তু সমগ্র অঞ্চলের খলীফা না হওয়া পর্যন্ত থামবো না……
“মুআবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ানের পর খেলাফতের মসনদ আমিই লাভ করতে চাই…….
‘উরওয়াহ ইবনে যুবাইর নীরব হয়ে রইলেন; কিছুই বললেন না, ফলে সবাই তাঁর দিকে তাকালো—
ঃ “হে ‘উরওয়াহ! তোমার আকাঙ্খার কথা তো কিছুই বললে না?” তিনি বললেন—
ঃ “তোমাদের পার্থিব আকাঙ্খায় আল্লাহ বরকত দান করুন, কিন্তু আমার আকাঙ্খা ভিন্ন রকম, আমি এমন একজন আমলদার আলেম হতে চাই, যার নিকট থেকে মানুষ আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ গ্রহণ করবে, দ্বীনের আহকাম শিখবে……”
আমার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো—
“আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রাপ্তির মাধ্যমে আখিরাতের জীবনকে সফলকাম করা…..”
এরপর সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে, একসময় ইয়াযিদ ইবনে মু’আবিয়ার পর আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর খলীফা নির্বাচিত হন।
আবার কা’বা শরীফের পাশেই—যেখানে বসে তিনি খলীফা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার অদুরেই একদিন নিহতও হন…… এরপর মুস’আব ইবনে যুবাইর একদিন নিহত ভাই আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে ইরাকের শাসক নিযুক্ত হন এবং শাসন প্রতিরক্ষায় তিনিও শেষ পর্যন্ত আততায়ীর হাতে নিহত হন…….
এরপর আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের পালা, নিজ পিতার মৃত্যুর পর তিনি হলেন খিলাফতের সর্বোচ্চ মর্যাদার উত্তরাধিকারী। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর এবং মুস’আব ইবনে যুবাইয়ের নিহত হওয়ার পর তার পক্ষেই সকল মুসলমানের সম্মিলিত সমর্থন ব্যক্ত হয়, তারই পক্ষে সর্বস্তরের মানুষের বাই’আত গৃহীত হয়।
এভাবে তিনি হয়ে উঠেন বিশাল সাম্রাজ্যের সর্ববৃহৎ সম্রাট। তখনকার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাদশা।
কিন্তু সেই স্বপ্ন ও কল্পনার চতুর্থ সঙ্গী ‘উরওয়াহ ইবনে যুবাইরের কি হলো ?
এসো আমরা তাঁর কাহিনী শুরু করি একেবারে গোড়া থেকে।
‘উরওয়াহ ইবনে যুবাইরের জন্ম হয় হযরত উমর ফারুক (রাঃ)এর খেলাফতকাল শেষ হওয়ার এক বছর পূর্বে। তাঁর পরিবার ছিলো সম্মান ও মর্যাদার বিচারে তৎকালীন পৃথিবীর সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ।
তাঁর পিতা ছিলেন যুবাইর ইবনে আওয়াম, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘হাওয়ারী’ বা বিশেষ সহচর, যিনি ছিলেন ইসলামের সর্বপ্রথম তরবারী কোষমুক্তকারী, সর্বপরি যিনি ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের এক ভাগ্যবান অংশীদার।
তাঁর মাতা ছিলেন আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর কন্যা আসমা, যার ডাকনাম দেওয়া হয়েছিলো যাতুন্নেতাকাইন বা দুই বেল্টওয়ালী’।
তাঁর নানা ছিলেন আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ), রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
১ এই নাম দেওয়ার কারণ, তিনি হিজরতের দিন নিজের কোমরবন্ধনী দুই টুকরো করে একটিতে বেঁধেছিলেন রাসূলের খাদ্যরসদ আর অন্যটিতে রাসূলেরই পানপাত্র। আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম খলীফা এবং হিজরতের সময় তাঁর পর্বত গুহার অকৃত্রিম সঙ্গী ও জানবাজ বন্ধু।
তাঁর দাদী ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফুফু হযরত সফিয়্যাহ বিনতে আবদুল মুত্তালিব। খালা ছিলেন উম্মুল মুমিনীন হযরত আইশা (রাঃ)।
এমন কি দাফনকালেও হযরত আইশা (রাঃ) এর কবরে অবতরণকারী তিনিই। তিনিই নিজের দুই হাতে উম্মুল মুমিনীনের কবরের মাটি সমান করেছিলেন।
প্রিয় পাঠক !
তোমার কি মনে হয় এর চেয়েও সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ বংশ হতে পারে ? ঈমান ও ইসলাম ছাড়া কি এর চেয়েও বড় সৌভাগ্য হতে পারে?
পবিত্র কা’বা অঙ্গনে ‘উরওয়াহ একজন সত্যিকার আলেম হওয়ার যে আকাঙ্খা পেশ করেছিলেন তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি রাসূল (সাঃ)এর বেঁচে থাকা অবশিষ্ট সাহাবীদেরকে গনীমত মনে করতেন।
তিনি সবকিছু পেছনে ফেলে রেখে সেই সাহাবীদের গৃহে ছুটে যেতেন, তাঁদের পিছে নামায আদায় করতেন, তাঁদের মজলিসেই পড়ে থাকতেন, ফলে তিনি হাদীস শিখেছেন ও বর্ণনা করেছেন হযরত আলী ইবনে আবী তালেব থেকে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, যায়েদ ইবনে সাবেত, আবু আইয়ূব আনসারী, উসামা ইবনে যায়েদ, সাঈদ ইবনে যায়েদ, আবু হুরায়রা, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, নু’মান ইবনে বশীর প্রমূখ সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুম থেকে……
তিনি সর্বাধিক হাদীস শিখেছিলেন স্বীয় খালা উম্মুল মুমিনীন হযরত আইশা (রাঃ) থেকে, এভাবেই তিনি শেষ পর্যন্ত মদীনার সেই বিখ্যাত সাতজন ফকীহের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন, দ্বীনি বিষয়গুলোতে মুসলিম জাতি যাদের শরণাপন্ন হতেন বারবার।
এমন কি সৎ ও নেক শাসকবর্গও দায়িত্ব পালনে সাহায্য কামনা করতেন তাদেরই। এ বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো-
হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) খলীফা ওয়ালীদ ইবনে আবদুল মালিকের আঞ্চলিক প্রশাসক হিসাবে মদীনায় এলেন। তখন বহু মানুষ তাঁর কাছে সমবেত হলো এবং তাঁর সঙ্গে সালাম বিনিময় করলো।
জোহরের নামায আদায়ের পর তিনি মদীনার দশজন ফকীহকে আমন্ত্রণ জানালেন, যাদের শীর্ষে ছিলেন ‘উরওয়াহ ইবনে যুবাইর……. আমন্ত্রিত ফুকাহায়ে কেরাম হাজির হলে তিনি নিজেই সবাইকে স্বাগত জানালেন, স্ব সম্মানে তাদেরকে বসতে দিলেন।
এরপর তিনি আল্লাহ তাআলার যথাসাধ্য হামদ ও ছানা (গুণগান)
আদায়ের পর বললেন—
“আমি আপনাদেরকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে আমন্ত্রণ জানিয়েছি যার ফলে আপনারা হবেন আমার ন্যায় ও ইনসাফের সহযোগী এবং লাভ করবেন অশেষ নেকী।
আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি যে আপনাদের মতামত ছাড়া কোন বিষয়ে আমি চূড়ান্ত ফয়সালা করবো না।
আপনারা যদি কাউকে অন্যের উপর জুলুম করতে দেখেন, অথবা কারো উপর আমার কোন কর্মচারীর জুলুমের খবর শুনতে পান, তাহলে আপনাদের কাছে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, দয়া করে সেটা আমাকে জানাবেন।”
*উরওয়াহ ইবনে যুবাইর একথা শুনে তাঁর জন্য কল্যাণের দু’আ করলেন এবং হক ও হেদায়াতের উপর তাঁকে অবিচল রাখার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন।
‘উরওয়াহ ইবনে যুবাইর ছিলেন ইলম ও আমলের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ইবাদত-বন্দেগী, তাকওয়া-পরহেযগারী ও যোহদের সর্বোচ্চ ধাপ তিনি অতিক্রম করেছিলেন, যার ফলে প্রচণ্ড গ্রীষ্মেও তিনি বিরামহীন রোযা রাখতেন।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!