আজ হিমুর বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।
বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ হুমায়ূন আহমেদ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৯১
আজ হিমুর বিয়ে – বইটির এক ঝলকঃ
আমার মেয়েটা ভয়ঙ্কর খারাপ একটা ছেলের পাল্লায় পড়েছে। হিরোইন অ্যাডিক্ট একটা ছেলে। ছেলেটা তার নিজের জীবন তো নষ্ট করছেই, আমার মেয়ের জীবনটাও নষ্ট করছে। রেনু যে কত ভালো একটা মেয়ে তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। আচ্ছা তুমি কি সত্যিই কিছু করো না ?
আমি জবাব না দিয়ে হাসলাম। এই হাসির ইংরেজি নাম নন কমিটাল হাসি । যে হাসি হ্যাঁ না কোনো কিছুই বোঝায় না ।
ভদ্রমহিলা শুয়ে ছিলেন,’ এইবার উঠে বসলেন। নাকে লাগানো নল খুলে পড়ল। তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামালেন না।
হিমালয়, তোমার ডান হাতটা দেখি। হাতের রেখাগুলো দেখব।
আপনি হাত দেখতে জানেন ?
হাত দেখার অনেকগুলো বই পড়েছি— বেনহাম, কিরো। মানুষের ভাগ্য যে হাতে লেখা থাকে … এটা আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি। রেনুর হার্ট লাইন লি এবং আইল্যান্ডে ভর্তি। আমি জানতাম সে এরকম সমস্যায় পড়বে। আমি তোমার হাত দেখে যা বলব সব মিলে যাবে। তুমি টেবিলের উপর থেকে আমার কালো ব্যাগটা দাও ।
আমি ভদ্রমহিলার কালো হ্যান্ডব্যাপ এগিয়ে দিলাম। তিনি ব্যাগ খুলে ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করলেন। হাত দেখার বিষয়টা এই মহিলা সিরিয়াসলি নিয়েছেন তা বোঝা যাচ্ছে। চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সঙ্গে হাত দেখার ম্যাগনিফাইং গ্লাস থাকার কথা না। হাসপাতালে তিনি কার হাত দেখবেন ? ডাক্তারদের? না-কি নার্সদের ?
যাউন্ট অব জুপিটারে ক্রুশ চিহ্ন আছে। এই চিহ্নটা বেশ খারাপ। শুধুমাত্র মাউন্ট অব জুপিটারে এই চিহ্ন শুভ।
এই চিহ্ন থাকলে কী হয়
কী হয় পরে বলছি। সবার আগে তোমাকে যা বলা দরকার তা হলো, তোমার হাতে আছে অতি সুন্দর একটা সুলেমান’স রিং। এত স্পষ্ট রিং আমি আগে আর কারো হাতে দেখি নি। সুলেমানের নাম তো জানো ?
জানি। কিং সুলেমান। আমাদের নবীদের একজন। সেবার রাণীকে বিয়ে করেছিলেন। রাণীর নাম বিলকিস।
তিনি যে জ্বিনদের তাঁর অধীনে নিয়ে এসেছিলেন এটা জানো ? জি জানি। কী জানো বলো তো শুনি।
জ্বিনদের দিয়ে কিং সুলেমান অনেক কাজ করাতেন। জ্বিনদের বুদ্ধি-সুদ্ধি অনেক কম বলে সুলেমানের মৃত্যু হবার পরেও তারা কিছু বুঝতে পারে নি। কাজ করেই যাচ্ছে। সুলেমানের লাঠিতে একসময় ঘুণপোকা ধরল। তখনো জ্বিনের দল কাজ করে যাচ্ছে। তখন একটা ঘুণপোকা জ্বিনদের বলল, তোমরা এখনো কাজ করছ? তোমানের কর্তা তো বহু আগে মারা গেছেন। তখন বেকুব জ্বিনরা কাজ বন্ধ করে চলে গেল।
ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে বললেন, এই গল্প কোথায় শুনেছ ?
আমি বললাম, আমাদের কোরান শরিফে আছে। সূরা সাবা।
ভদ্রমহিলার চোখে মুগ্ধতার ঝিলিক দেখলাম। মেয়েদের একটা স্বভাব হচ্ছে, একবার কোনো কারণে যদি তারা মুগ্ধ হয়ে যায় তাহলে সে মুগ্ধ হতেই থাকে। এখন আমি যদি এই মহিলার সঙ্গে অন্যায় কোনো আচরণ করি, তিনি সেই আচরণেরও সুন্দর ব্যাখ্যা বের করবেন এবং আবারো মুগ্ধ হবেন। ছেলেদের ভেতর এই আচরণ দেখা যায় না। তারা মুগ্ধ হতে চায় না। কোনো কারণে মুগ্ধ হয়ে গেলে প্রাণপণ চেষ্টা করে মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে।
হিমালয়।
জি।
তোমার হাতে সুলেমান রিং খুব স্পষ্ট। তার মানে কী আনো?
না ।
তার মানে তোমার প্রচণ্ড আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। Intutive power আছে। ভবিষ্যতে যে ঘটনা ঘটবে তা আগেভাগে বলার ক্ষমতা আছে। এখন তুমি বলো তো- আজ রাতে কি সত্যি রেনুর বিয়ে হবে? তোমার যা মনে আসে সেটা বলো।
আজ রাতেই বিয়ে হবে।
আমার মেয়ে রাজি হবে বিয়েতে ?
আনন্দের সঙ্গে রাজি হবে।
আরো যদি কিছু বলতে চাও তাহলে বলো। আমি নিশ্চিত তুমি যা বলবে তাই হবে। চিন্তা-ভাবনা করে কিছু বলতে হবে না। যা মনে আসে তাই বলো। রেনুর বিয়েতে তার বাবা-মা দু’জনই উপস্থিত থাকবেন। ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে বললেন, ওর বাবা কীভাবে আসবে ? সে তো এখন নিউ অর্লিন্সে।
উনি কোথায় আমি জানি না, তবে আমার মন বলছে বিয়েতে উনি উপস্থিত থাকবেন।
তোমার এই কথাটা মিলবে না। রেনুর বাবার সঙ্গে আমার গত দশ বছর দেখা হয় নি। টেলিফোনে কথাও হয় নি। আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তোমাকে কি এই খবর দেয়া হয়েছে ?
খবরটা আমি জানি।
রেনুর বাবা তোমাকে দেখলে খুশি হতো। সেও তোমার মতো হণ্টক। সে একবার কী করেছিল জানো ? নিউ অর্লিপ থেকে হেঁটে মন্টানা গিয়েছিল। তার খুব ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে হেঁটে তেতুলিয়া পর্যন্ত যাবে। হাঁটলেন না কেন ?
আমি রাজি হলাম না, এই জন্যে বেচারার হাঁটা হলো না। সে আবার আমাকে ছাড়া হাঁটতে রাজি না।
হাঁটা ছাড়া তিনি আর কী করেন?
নিউ অর্লিস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য পড়ায়। আমি তার ইউনিভার্সিটিতে Ph.D করতে গিয়েছিলাম। সেখানেই আমাদের পরিচয়। সে ছিল আমার পাইড। ভালো কথা, বিড়াল মিউমিউ করছে কোথায় ?
আমার পকেটে।
সে-কী। তুমি পকেটে বিড়াল নিয়ে ঘোরো না-কি ?
আমি মোবাইল ফোন বের করলাম। খালু সাহেব টেলিফোন করেছেন। তাঁর গলার স্বর বরফের চেয়েও দশ ডিগ্রি নিচে।
হিমু ।
Yes sir বান্দা হাজির।
Stop. ইয়ারর্কি করবে না। তুমি এই মুহূর্তে আমার অফিসে আসো।
এই মুহূর্তে তো আসতে পারব না। আমি একজন মহিলার সঙ্গে কথা বলছি। আজ রাত দশটার পর তাঁকে আমার মা ডাকতে হতে পারে। তার প্রিপারেশন নিচ্ছি।
ইউ স্টুপিড! এক্ষুনি আসো।
আজ আমার বিয়ের দিন। বিয়ের দিন আমাকে বকাবকি করবেন না। বিয়ে মানে তোমার খালার এইসব ফাজলামি আমি সহ্য করব। তোমার মতো একটা ভ্যাগাবতের সঙ্গে রেনুর বিয়ে? বদমাইশ কোথাকার! তোমার খালা বললেই হবে? রেনুর মা তোমাকে দেখলে স্যান্ডেল দিয়ে পেটাবে এটা জানো ?
খালু সাহেব, রেনুর মা আমাকে খুবই পছন্দ করেছেন। অনেকক্ষণ আমার ডান হাত ধরে বসেছিলেন।
তোমার ডান হাত ধরে বসেছিলেন! ফাজলামি করো ?
ফাজলামি করব কেন? উনি আমার সামনেই আছেন। আপনি কথা বলবেন ? নিন কথা বলুন।
খালু সাহেব টেলিফোন লাইন কেটে দিলেন।
রেনুর মা আবারো তাঁর বিখ্যাত হাসি হাসতে শুরু করেছেন। হাসির কারণে এবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললেন, হিমু, আমাকে টেনে তোলো তো। পায়ে জোর পাচ্ছি না।
আমি তাঁকে টেনে তুললাম। তিনি বললেন, রাত দশটার জন্যে অপেক্ষা করার দরকার নেই। তুমি এখন থেকেই আমাকে মা ডাকবে।
অবশ্যই ডাকব।
অবশ্যই ডাকব বলে চুপ করে আছ কেন ? ডাকো ।
মা! মা! মা!
থ্যাংক য়্যু। নিশ্চয়ই তোমাকে আমি আগে কোথাও দেখেছি। মনে করো তো। তোমার মনে করতে হবে না। আমার নিজেরই মনে পড়বে। কী ব্যাপার হাসছ কেন ?
আপনার কাণ্ডকারখানা দেখে হাসছি।
আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে ?
খুব পছন্দ হয়েছে। আপনার মতো চমৎকার একজন মানুষকে রেনুর বাবা পছন্দ করলেন না কেন ভেবে অবাক হচ্ছি।
আমার মেয়েও আমাকে পছন্দ করে না। তার ধারণা আমি পৃথিবীর সবচে’ বোকা মহিলা। রেনু সবসময় বলে, যে-মহিলা বাবার মতো মানুষকে ধরে রাখতে পারে না সে মহা মহা বোকা।
স্বামীকে ধরে রাখতে বুদ্ধি লাগে না ।
কী লাগে বলো তো? ভালোবাসা।
রেনুর মা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ঐ জিনিসের অভাব আমার কখনো ছিল না। এখনো নেই।
আবার মিউমিউ শব্দ। এবার টেলিফোন করেছেন মাজেদা খালা।
হিমু, এক্ষুনি বাসায় চলে আয়।
কেন ?
তোর পায়ের মাপ লাগবে না ? জুতা কিনতে হবে। তুই কি বিনা জুতায় বিয়ে করবি ? এটা ছাড়াও ব্যাপার আছে।
কী ব্যাপার ?
রেনু ভোর সঙ্গে কথা বলতে চায়। টেলিফোনে কথা বলবে না। সামনাসামনি কথা বলবে।
মারবে না তো?
শুধু শুধু মারবে কেন? মেয়েটার মন এখন একটু ভালো। সে তার বাবার সঙ্গে কথা বলেছে। বাবা টেলিফোন করেছেন KLM-এর এয়ারক্র্যাফট থেকে। তিনি বাংলাদেশে আসছেন।
পৌছবেন কখন ?
সন্ধ্যা ছ’টায়।
আমি হাওউই এর বেগে চলে আসছি।
ভালো কথা, তুই কি তোর খালু সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছিস ?
হুঁ। উনি অফিসে যেতে বলেছেন।
খবরদার যাবি না। টেলিফোন করলেও ধরবি না।
টেলিফোন ধরব না কেন ?
তোর উপর ভয়ঙ্কর রেগে আছে।
এটা তো নতুন কিছু না, উনি সবসময় আমার উপর রেগে থাকেন।
রেনুর সঙ্গে তোর বিয়ে হবে— এটা সে নিতেই পারছে না। সে চেষ্টা করছে
বিয়ে ভণ্ডুলের।
শুনেছি ‘বিবাহ’ ব্যাপারটা আল্লাহপাক নিজে কন্ট্রোল করেন। খালু সাহেব চেষ্টা করেও ভণ্ডুল করতে পারবেন না। তাই না ?
এত প্রশ্নের জবাব দিতে পারব না। রাখলাম ।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!