আগ্নিবাণ – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৯২
আগ্নিবাণ – বইটির এক ঝলকঃ
তালিকায় রানা টিক চিহ্ন দেয়ার পর কামরা ছেড়ে বেরিয়ে গেল মেনেম।
সবাই এসে পৌঁছুতে এখনও আধ ঘণ্টা দেরি আছে। এই সুযোগে পকেট থেকে স্যাটেলাইট ফোন বের করে রানা এজেন্সির মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটা শাখা প্রধানের সঙ্গে কথা বলল ও। তাদেরকে জরুরী কয়েকটা নির্দেশ দিল।
তালিকাভুক্ত মার্সেনারিরা সময়মতই পৌঁছুল। দশজন বাদে বাকি সবাইকে একটা করে এনভেলাপ ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করল মেনেম।
দশজনকে নিয়ে বড় একটা কামরায় বসল রানা। যাদের সঙ্গে পরিচয় আছে, সবাই আলিঙ্গন করল ওকে। অন্যেরা হ্যান্ডশেক করল। ব্রিফিং শুরু হলো সাড়ে এগারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে। প্রথমেই সেফ হাউসের নিরাপত্তা সম্পর্কে সবাইকে আশ্বস্ত করল রানা। সেক্স শপের নাম পাল্টে ‘অ্যান্টিক’স শপ’ করা হয়েছে, উইন্ডো-শোকেসে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের শো পীস। ওরা বসেছে ভেতরের একটা কামরায়, কামরার বাইরে রানা এজেন্সির এজেন্টরা পাহারায় আছে। শপের বাইরেও নজর রাখছে একটা টীম।
কামরার দেয়ালে আগেই অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা ও গালফ অভ এডেন-এর একটা ম্যাপ টাঙানো হয়েছে। কথা বলার সময় পয়েন্টার দিয়ে দু’একটা জায়গার প্রতি মার্সেনারিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল রানা-সৌদি আরবের দাহরান, সোকোট্রা ছাড়িয়ে রনদেভো পয়েন্ট, তারপর এডেন বন্দর যেখান থেকে গোল্ডামেয়ার রওনা হবে। ব্রিফ করা হলো সংক্ষেপে, সব তথ্য এখুনি সবাইকে জানাবার প্রয়োজন নেই। কথা শেষ হতে কারও কোন প্রশ্ন আছে কিনা জানতে চাইল ও ।
‘একটা প্রসঙ্গ তুমি তুললেই না,” বলল আবু সাদাত। সরু মুখ, খুলি কামড়ে থাকা কোঁকড়ানো চুল, রানার সঙ্গে জিম্বাবুইয়ে লড়েছে সে। ‘অস্ত্র। সেগুলো কি,
এবং কখন হাতে পাব?’
‘প্রত্যেকে একটা করে উজি আর হ্যান্ডগান পাবে। উজির বদলে শটগানও নিতে পারো। এর বেশি অস্ত্র সঙ্গে রাখা সম্ভব নয়। ওগুলো আমরা হাতে পাব দাহরানে পৌঁছানোর পর। শিরিন আর হাসানের প্যাকেজে অ্যাকুয়ালাঙ আর লিমপেট মাইনও থাকবে।’ হাসানের সঙ্গে আর কি থাকবে, সেটা গোপন রাখল
ও।
চেহারা দেখে মনে হয় পাষাণ, নাম দিল নওশাদ, একটা হাত তুলল। তারও আফগানিস্তানে রানার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। নওশাদকে না-ও পাওয়া যেতে পারে, এ-কথা ভেবেই তালিকায় সালমা শিরিনের নামটা রেখেছিল রানা। দু’জনকেই পাওয়া গেছে শুনে প্রথমে দ্বিধায় পড়ে যায় ও। নওশাদ কমিউনিকেইশন ইকুইপমেন্ট সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ, তাকে বাদ দেয়া চলে না। ইসরায়েলি মিসাইল টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে একজন মহিলা রেডিও অপারেটর থাকবে, কাজেই শিরিনকেও বাদ দেওয়ার উপায় নেই। তাছাড়া, শিরিন ভাল ডাইভার হওয়ায় তাকে রানার অন্য কাজেও দরকার হবে। শেষ পর্যন্ত দু’জনকেই দলে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নওশাদকে হাত তুলতে দেখে তার দিকে “তাকাল রানা ।
‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইসরায়েলি মার্চেন্ট মেরিন কোডস, সেই সঙ্গে রেডিও প্রসিজারস সম্পর্কে ডিটেইল্স্ জানতে চাই আমি,’ বলল নওশাদ।
‘এই পেলে,’ বলে পকেট থেকে মোটা একটা এনভেলাপ বের করে তার দিকে ছুঁড়ে দিল ‘রানা। এনভেলাপটা আজ বিকেলে মেনেমের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার ফারাজি। এনভেলাপে রনদেভোর কো-অর্ডিনেটস উল্লেখ করা হয়েছে।
সবার কাছ থেকে একটু দূরে বসেছে মধ্যবয়স্ক মুনির মোস্তফা, ঘন ভূরুর ভেতর চোখ দুটোকে প্রায় দেখাই যায় না। মিশরীয় নৌ-বাহিনীতে ক্যাপটেন ছিল, যে-কোন কারণেই হোক চাকরিটা হারায়। গোল্ডামেয়ারের ক্যাপটেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে তাকে। রানার সঙ্গে পরিচয় আছে, তবে একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। এই মুহূর্তে সে একটা মেরিটাইম চার্ট পরীক্ষা করছে একাগ্রচিত্তে, কামরার আর কারও উপস্থিতি সম্পর্কে যেন সচেতন নয় ।
আরেকজন হাত তুলল। ‘আমি গোলাম বাখারা, সৌদি নেভীর সাবেক এঞ্জিনিয়ারিং অফিসার। কমান্ডিং অফিসারকে চড় মারায় আমার কোর্ট-মার্শাল হয়েছিল। অন্য কোথাও কাজ না পেয়ে মার্সেনারিদের খাতায় নাম লিখিয়েছি। বায়োগ্রাফির এখানেই সমাপ্তি।’
‘বাখারা,’ শান্ত গলায় বলল রানা, ‘তোমার কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারো।’ ‘আমাকে যদি এঞ্জিন নিয়ে কাজ করতে হয়, আমার একজন সহকারী লাগবে,’ বলল বাখারা ।
‘তোমার পাশেই বসে আছে, আয়েন জামালু
‘কোয়ালিফিকেশনঃ জেরার সুরে জিজ্ঞেস করল বাখারা-রানাকে নয়, আয়েন
জামালুকে।
*আমি আলজিরিয়ান। আব্বা একটা বার্জের স্কিপার ছিলেন, ওই বার্জেই আমার জন্ম। জাহাজ মাস্টারের সার্টিফিকেট আছে।’ আয়েন জামালু কটমট করে তাকিয়ে আছে বাখারার দিকে।
রাখারা অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল। রানা সিদ্ধান্ত নিল, এই দু’জনের ওপর নজর রাখতে হবে ওকে।
রানা কিছু বলেনি, জিয়া হাসান নিজেই দরজার কাছ থেকে এগিয়ে এল। সবার ওপর ঠাণ্ডা দৃষ্টি ‘বোলাল একবার। তারপর শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে শুরু করল, ‘আমি জিয়া হাসান, রানা এজেন্সি। এই অপারেশনে আমি সেকেন্ড-ইন-কমান্ড । কার কি প্রতিক্রিয়া হয় দেখার জন্যে আরেকবার দেখে নিল সবাইকে। সন্তুষ্টবোধ করল, কারণ প্রত্যেকের মনোযোগ নিজের দিকে ফেরাতে পেরেছে, এমন কি মুনির’ মোস্তফাও চার্ট থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ‘তোমরা কেউ এর আগে আমার সঙ্গে কাজ করোনি। কাজেই নিজের সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি।
‘প্রথম কথা, আমার দাবি নিঃশর্ত আনুগত্য। আমি যখন কোন নির্দেশ দেব, সঙ্গে সঙ্গে তোমরা তা পালন করবে, কোন প্রশ্ন ছাড়াই। উপস্থিত কেউ যদি ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হও, তার জন্যে তিক্ত বিস্ময় অপেক্ষা করছে। দ্বিতীয় কথা, ভুল বা অজুহাত আমি অ্যাকসেপ্ট করব না। প্রত্যেকে যে যার দায়িত্ব নিখুঁতভাবে পালন করার ওপর নির্ভর করবে আমাদের সবার জীবন। পরিষ্কার?’
কেউ কথা বলল না। বোধহয় নিঃশ্বাস ফেলতেও দ্বিধায় ভুগছে।
*এবার জাহাজটার কথা, বলল হাসান। ‘এডেন থেকে ওটা জিরো-জিরো- থারটি আওয়ারে রওনা হবে। জিরো-থ্রী- থারটি আওয়ারে অ্যাকশন শুরু করব আমরা। প্রাথমিক অবজেকটিভ চারটে ব্রিজ, রেডিও রূম, এঞ্জিনরুম আর ভূ প্রতিটি কাজ একই সঙ্গে সারতে হবে। ভুল করার কোন অবকাশ নেই। এখান থেকে বেরিয়ে যাবার আগে প্রত্যেকে তোমরা জাহাজের একটা প্ল্যান পাবে, তাতে চিহ্ন দেয়া আছে কখন কোথায় কাকে কি দায়িত্ব পালন করতে হবে বা কোন্ পজিশন নিতে হবে। প্ল্যানটা মনে গেঁথে নেয়ার পর পুড়িয়ে ফেলো। আরেকটা কথা। তোমাদের সবার হিব্রু শুদ্ধ নয়। কাজেই একান্ত বাধ্য না হলে মুখ না খোলাই ভাল। কথা বলার অবাধ অনুমতি থাকবে শুধু পাঁচজনের মুনির মোস্তফা, দিল নওশাদ, গোলাম বাখারা, শিরিন, আমার ও জানশেরের।
সৈয়দ জানশের নড়েচড়ে বসল। সে সোমালিয়ান, সোমালিয়ান নৌ- বাহিনীতে ফার্স্ট অফিসার ছিল। জাহাজ হাইজ্যাক করার পর মুনির মোস্তফার সহকারী হিসেবে কাজ করবে সে।
*কোন প্রশ্ন? নেই? তাহলে এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করছি।’ দরজার কাছে, নিজের জায়গায় ফিরে গেল জিয়া হাসান।
জানশেরের দিকে হাত তুলল রানা। ‘সিকিউরিটি স্কোয়াড,’ বলল ও। ‘তোমার দায়িত্ব। চারজনকে পাচ্ছ সালমা শিরিন, শেখ সোলায়মান, বিন জুবায়ের, সালভিক রাহমানভ। কাজটা সহজ হবে না, তবু আমি ইসরায়েলি ক্রু- অফিসারদের পুরোপুরি অসহায় অবস্থায় দেখতে চাই। কাজেই যা করার সবই করবে তোমরা। গার্ডরা সবাই ভাড়াটে খুনী; সে-কথা মনে রেখেই শেষ কথাটা বলল রানা, ‘তবে, প্রয়োজন না হলে রক্তপাত এড়িয়ে যাব আমরা। শিরিনকে স্পাই হিসেবে কাজে লাগাবে জাহাজের সব জায়গায় ঘুরে বেড়াবে ও।
রানা ভেবেছিল আর কেউ প্রশ্ন করবে না, কিন্তু চার্ট থেকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে পড়ল মুনির মোস্তফা। ‘ভাই, রানা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রসঙ্গ।
‘হ্যাঁ, বলো, মোস্তফা, ‘ উৎসাহ দিল রানা ।
‘গোল্ডামেয়ারের ক্রু ও অফিসারদের সামলানো তেমন কঠিন কাজ নয়,’ বলল মোস্তফা। “কিন্তু ওরা ছাড়াও এক কি দু’জন লোক থাকবে জাহাজে, তাদেরকে নিয়েই আমার সবচেয়ে বেশি ভয়। আমি মোসাড এজেন্টদের কথা বলছি। ইদানীং প্রতিটি ইসরায়েলি জাহাজে একজন করে থাকে। সাধারণত একজন সহকারী সহ। ওরা সত্যিকার বিপদ, রানা। ওদেরকে প্রথম সুযোগেই খতম করা দরকার।’
সৈয়দ সাফাত নিজের গলায় ছুরি চালাবার অভিনয় করল, বলল, ‘এটা কোন সমস্যাই নয়, ক্যাপটেন। জবাই করে রশিতে বাঁধব, ফেলে দেব পানিতে হাঙরগুলো খুশি হবে।’ “ব্যাপারটা এতই সহজ ভেবেছ?’ জিজ্ঞেস করল মোস্তফা। চিনবে কিভাবে যে জবাই করবে? ক্রু বা অফিসারদের ভেতর থাকতে পারে তারা সেইলর, গ্রিজার, ডেক অফিসার, অর্থাৎ যে-কোন ছদ্মবেশে। ওদেরকে তোমার নিজের চেষ্টায় খুঁজে বের করতে হবে। ইসরায়েলি ক্রু বা অফিসাররা ওদেরকে এত ভয় পায়, যতই টরচার করো, ওরা তাদের নাম মুখে আনবে না….
আবু সাদাত দাঁড়াল। এই সমস্যার একটাই সমাধান,’ বলল সে। ‘জাহাজ হাইজ্যাক করার পর ডেকে ক্রুদের লাইন দিয়ে দাঁড় করাব… কথা শেষ না করে মেশিন গান চালাবার ভঙ্গি করল সে।
চাবুকের মত সপাং করে উঠল রানার গলা, “না!”
কামরার ভেতর নিস্তব্ধতা নেমে এল।
হাসান ছাড়া উপস্থিত বাকি সবাই জানে লিবীয়ার জন্যে একটা মিসাইল হাইজ্যাক করা হবে। সোকোট্রা দ্বীপের ইসরায়েলি ন্যাভাল বেস উড়িয়ে দেয়ার প্ল্যানটা ওদের কাউকে রানা জানায়নি, একান্ত প্রয়োজন না হলে জানাবেও না। শুধু এই কারণে গোল্ডামেয়ারের ইসরায়েলি ক্রুদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, ওরা সবাই হেলিকপ্টারে চড়ে কেটে পড়ার পরও।
কাঁধ ঝাঁকাল আবু সাদাত। রানাকে বলল, ‘দোস্ত, ভুল করে থাকলে মাত চাই!’ বিমূঢ় দেখাল তাকে।
হাতঘড়ির ওপর চোখ বোলাল রানা। ব্রিফিং শেষ।’ স্তর খেয়াল আছে, একজন বাদে সবাই কোন না কোন প্রশ্ন করেছে। সেই একজন হলো সালমা শিরিন। ট্রাউজার আর শার্ট, বুট আর হ্যাট পরে থাকায় তাকে অবশ্য মেয়ে বলে চেনার উপায় নেই। একজন-দু’জন করে বেরিয়ে যাও তোমরা। হাসান তোমাদেরকে একটা করে এনভেলাপ দেবে। ভেতরে খরচার টাকা, এয়ারলাইন টিকেট আর গোল্ডামেয়ারের নকশা আছে। শনিবারের আগেই নতুন পাসপোর্ট পেয়ে যাবে সবাই। মাঝখানের সময়টা সাবধানে থাকবে। শনিবার সকালে, ইলেতেন-জিরো-ফাইভে টেক অফ করবে প্লেন। সময় মত পৌঁছতে হবে সবাইকে !
একে একে বেরিয়ে গেল সবাই, তাদের পিছু নিয়ে হাসানও। কামরাত্র এখন শুধু রানা আর শিরিন।
‘তুমি কিছু জানতে চাওনি, নিস্তব্ধতা ভাঙল রানা !
‘জানার কিছু নেই, ভাই,’ অপরূপ চাঁদমুখে মরণ হাসি, চোখে কৌতুকের ঝিলিক। ‘আপনি আনার আদর্শপুরুষ, মাসুদ ভাই। ডেকেছেন, সেজনে। আমি ধন্য। ভাগ্যকেও ধন্যবাদ দিতে হয়, আমস্টারডামে ছিলাম।
একটু আড়ষ্টবোধ করল রানা। কোন মেয়ে ভালবাসলে সেটাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারে ও। কিন্তু ওকে আদর্শচরিত্র ধরে নিয়ে কেউ যদি ভক্তিতে গদগদ হয়ে পূজনীয় ভাবতে শুরু করে, বিব্রত না হয়ে পারে না। শিরিনের সঙ্গে অনেক দিন পরপর হঠাৎ দেখা হয় ওর যখনই দেখা হয় কিছু না কিছু ওকে প্রেজেন্ট করে মেয়েটা, এবং সেই সঙ্গে এমন ভাব দেখায় “রানাকে যেন সৈ দেবতার আসনে বসিয়ে রেখেছে। ব্যাপারটা রানার মনে এক ধরনের হতাশা ও সৃষ্টি করে। দেশে-বিদেশে বহু মেয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ওর, অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও জন্মায়, কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর হতে চলল কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছে করেনি ওর একমাত্র ব্যতিক্রম সালমা শিরিন।
এত মেয়ে থাকতে শিরিনকে ওর কেন ভালবাসতে ইচ্ছে করল, এর কোনও ব্যাখ্যা রানা দিতে পারবে না। মেয়েটা অসাধারণ সুন্দরী, তবে সেটাই কারণ নয়। গেরিলা ফাইটের ট্রেনিং নেয়া সত্ত্বেও শিরিনের মধ্যে কমনীয়তা, কোমলতা, নারীসুলভ আকর্ষণ, সরলতা ইত্যাদি সমস্ত ঐশ্বর্যই অক্ষুণ্ণ আছে। কিন্তু এগুলোও তাকে ভালবাসতে চাওয়ার কারণ নয়। এত সব গুণ থাকায় বিশ্বাস করা কঠিন যে শিরিন পেশায় একজন গেরিলা, ওঅর-করিসপনডেন্স আসলে ওর কাভার। জর্দান, লেবানন আর ইসরায়েলি সীমান্তে দায়িত্ব পালন করে সে, প্রতি পদে যেখানে মৃত্যুর আশঙ্কা। পেশার প্রতি শিরিনের নিষ্ঠা বিস্মিত করে রানাকে। হিযবুল্লাহ গেরিলাদের সঙ্গে যখন হামলা কাভার করতে যায়, দেখে মনে হবে পিকনিক করতে যাচ্ছে। ক্যামেরায় চোখ রেখে যখন গোলাগুলির ছবি তোলে, এতটুকু নার্ভাস হতে দেখা যায় না। বহু বছর আগে স্বদেশী একটা মেয়েকে ভালবেসেছিল। রানা, তার সঙ্গে শিরিনের চেহারা খানিকটা মেলে। ভালবেসেছিল, পেয়েও ছিল, কিন্তু তারপর ব্যাখ্যাতীত জটিল কি সব কারণে মেয়েটা ওর জীবন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে, অথচ আজও তার কথা রানা ভুলতে পারে না। সেই ভুলতে না পারাটাই কি শিরিনকে ভালবাসতে চাওয়ার কারণ?
রানার নিজেরও তা জানা নেই।
“কি ভাবছেন, মাসুদ ভাই?’ চেয়ার ছেড়ে উঠে এল শিরিন। ‘আমি কি আপনাকে বিব্রত কর
‘না। নাহ্।’ তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিল রানা। ‘কেমন আছ বললে না তো? আমস্টারডামে কি করছিলে?’
‘বললে বিশ্বাস করবেন? হঠাৎ হেসে উঠল শিরিন ।
বলো, কেন বিশ্বাস করব না।’
‘যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে এখানে আমি আপনার জন্যেই এসেছিলাম, বলল শিরিন। *আপনার সঙ্গে দেখা হবে, সে আশায় নয়। আপনার জন্যে একটা রোলের কিনতে।’
‘হোয়াট?’
‘আমার অনেক দিনের শখ, আপনাকে একটা রোলেক্স রিস্টওয়াচ প্রেজেন্ট করি,’ আড়ষ্ট হেসে বলদ শিরিন। জর্দানে ছিলাম, শুনলাম এখানে রোলেক্সের একটা প্রদর্শনী হচ্ছে, কিনসে ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। তাই চলে এলাম। ভাগ্যটা এতই ভাল, ঘড়িটা যেদিন কিনলাম সেদিনই খবর পেলাম আপনি আমাকে খুঁজছেন। অবাক কাণ্ড, তাই না?’
‘দেখা হলেই আমাকে কিছু প্রেজেন্ট করবে, তুমি বুঝতে পারো না ব্যাপারটা আমাকে কি রকম বিব্রত করে? নরম সুরে বলল রানা।
“তাহলে বলে দিন অন্য আর কি উপায় আছে আপনার ঋণ শোধ করার?! শিরিনের গলায় প্রায় চ্যালেঞ্জের সুর।
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!