কর্কটের বিষ – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download

কর্কটের বিষ – কাজী আনোয়ার হোসেন – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।

মহান আল্লাহ বলেন –

পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন

আল কুরআন

জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ

অনুবাদঃ কাজী আনোয়ার হোসেন

পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮৬

কর্কটের বিষ – বইটির এক ঝলকঃ

“জিম্বাবুই পুলিস কোন সূত্র পায়নি, তাই না? অথচ আমার হাতে এত সূত্র, বুঝে উঠতে পারছি না কোনটা ধরে এগোব।’
‘শুনে মা যা খুশি হবে না!’ এই প্রথম একটু হাসল লরেলি। ‘শোনো, রানা, আমার মা সম্পর্কে তোমাকে আগেই একটু সাবধান করে দিই। পঙ্গু মানুষ তো, মেজাজটা…’
“ছিহ্, লরেলি। এ-সব নিয়ে কোন কথা নয়, প্লীজ।’
‘না, বলছিলাম কি…’
‘কোন প্রয়োজন নেই, লরেলি। হুইলচেয়ারে বসা মানুষ আগেও আমি দেখেছি। বিশ্বাস করো, আমার কোন সমস্যা হবে না।’
কাঁধ ঝাঁকিয়ে চুপ করে গেল লরেলি।
চেহারা একটা বিরাট সার্টিফিকেট, তার সঙ্গে যদি মানানসই ও রুচিসম্মত পোশাক থাকে, জানা থাকে অভিজাত মহলে প্রচলিত আদব-কায়দা, মানুষের মনে অনুকূল ছাপ ফেলা কোন সমস্যা হয় না। লরেলির লিভিং রূমে ঢুকে কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে, সসম্মানে মিসেস ভ্যান্সের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করল রানা, তারপর ঝুঁকে তাঁর হস্তচুম্বন করল, অকৃত্রিম আন্তরিকতার সঙ্গে নরম সুরে বলল, ‘আই য়্যাম অ্যাট ইওর সার্ভিস, মিসেস ফেয়ারলি ভ্যান্স।’
সব মিলিয়ে রানাকে ভাল লেগে গেল বৃদ্ধার, কিন্তু তার মানে এই নয় যে নিজের স্বভাব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি। ইঙ্গিতে একটা সেটি দেখিয়ে রানাকে বসতে বললেন, পরমুহূর্তে সরাসরি জানতে চাইলেন, ‘আমি কি চাই, লরেলি কি তা তোমাকে জানিয়েছে?’ উত্তরের অপেক্ষায় থাকলেন না। ‘আমি চাই খুনী ধরা পড়ুক, এবং তাদের শাস্তি হোক। শাস্তি প্রসঙ্গে বলতে চাই, জিম্বাবুই পুলিসের প্রতি আমার কোন আস্থা নেই। ওদের আইনেরও আমি এক পয়সা দাম দিই না। আমি প্রতিশোধ নিতে চাই। খুনের বদলে….
একটা হাত তুলে তাঁকে থামিয়ে দিল রানা। ‘ব্যাখ্যা করার দরকার নেই, মিসেস ড্যান্স । আপনি কি চান আমি বুঝতে পারছি।’
“তাহলে পরিষ্কার করে বলো, কাজটা তুমি পারবে? কেসটা নিচ্ছ?’
আমাকে একটু বিস্তারিত বলতে হয়, মিসেস ড্যান্স,’ বলল রানা। ‘আমার এজেন্সি ইনভেস্টিগেশন শুরু করার পর জানতে পেরেছে খুন দুটো নয়, তিনটে হয়েছে। সাইফুর রহমান মৃধা আর জেসিকা খুন হয়েছে জাম্বেজি নদীর কাছে, ওদিকে হারারেতে খুন হয়েছেন সাইফুর রহমানের চাচা ডক্টর খোদাবক্স মৃধা । দুটো ঘটনা, একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক আছে। জেসিকার জন্যে তো বটেই, তারপর যখন জানলাম যে ডক্টর খোদাবক্স আর তাঁর ভাইপো জুলজিস্ট রহমান বাঙালী ছিলেন, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম এই কেস আমাকে নিতেই হবে।’
‘আমি আমার প্রশ্নের আংশিক উত্তর পেলাম,’ মিসেস ড্যান্সের গলা এমনিতেই কর্কশ, অভিযোগের সুর থাকায় প্রায় রূঢ় শোনাল ।
‘আমি শুধু চেষ্টা করে দেখতে পারি, মিসেস ড্যান্স,’ বলল রানা। ‘সফল হবই, এমন কথা বলতে পারি না। লরেলি আমাকে খবর দিতে দেরি করে ফেলেছে। আমাদের আরও দুর্ভাগ্য, ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় সমস্ত ট্র্যাক মুছে গেছে। জিম্বাবুইয়ের জঙ্গলে এক হাজার বা তারও বেশি লোক রোজ অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, নিজেদের স্বার্থে পরস্পরের অপরাধ চেপে রাখে তারা। এই অবস্থায় আপনাকে কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
‘হ্যাঁ, ঠিক আছে, যুক্তিটা আমি বুঝতে পারছি,’ বৃদ্ধা বললেন। ‘পরবর্তী প্রসঙ্গ। দু’দিন আগে লরেলির মামা একটা এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ওই এজেন্সির দু’জন লোক আমার সঙ্গে দেখা করে গেছে। কেসটার কথা শুনে আংশিক ফি হিসেবে আমার কাছে তিন লাখ ডলার অগ্রিম চেয়েছে তারা।
‘মা!’ প্রতিবাদের সুরে আরও কি যেন বলতে যাচ্ছিল লরেলি, হাত তুলে রানা তাকে থামিয়ে দিল ।
“মিসেস ড্যান্স, এই কেসে আপনাকে কোন ফি দিতে হবে না।’
‘আচ্ছা! তা বেশ।’ আড়চোখে মেয়ের দিকে একবার তাকালেন মিসেস ড্যান্স। ‘আরেকটা প্রসঙ্গ। অপরাধী ধরা না পড়া পর্যন্ত ব্যবসার কাজে আমি ফিরে যেতে পারব না। অস্থিরতা দূর করার জন্যে আমারও কিছু একটা করা দরকার। আমি যদি তোমার সঙ্গে জিম্বাবুইয়ে যাই, তোমার অসুবিধে হবে?”
“মা, কেসটা অত্যন্ত বিপজ্জনক, তাড়াতাড়ি বলল লরেলি। ‘রানাকে যদি তোমার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, ওর কাজে বিঘ্ন ঘটবে।’
‘প্রশ্নটা রানাকে করা হয়েছে, সে-ই উত্তর দিক। আমি হারারেতে থাকব, ওর সঙ্গে জঙ্গলে ঢুকব না।’
‘রানা এজেন্সির আফ্রিকান চীফ মামুন থাকবে ওখানে,’ বলল রানা। ‘অত্যন্ত যোগ্য ছেলে, আমি নিজের হাতে তাকে ট্রেনিং দিয়েছি। আপনি হারারেতে থাকলে কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না, মামুন আপনার নিরাপত্তার দিকটা দেখবে।’
সন্তুষ্ট হয়ে মাথা ঝাঁকালেন মিসেস ড্যান্স। এই প্রথম সরাসরি মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকালেন, যেন বলতে চাইলেন রানাকে তাঁর অপছন্দ হয়নি।
খেতে বসে মিসেস ভ্যান্স জানতে চাইলেন আফ্রিকার উদ্দেশে কবে রওনা হচ্ছে রানা।
‘কাল,’ জবাব দিল রানা। ‘ব্রাসেলস্ হয়ে।’
‘ব্রাসেলস হয়ে কেন?’
‘ওখানে আমার এক বন্ধু আছে, জিম্বাবুইয়ে যাবার আগে তার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। হারারেতে এক কি দু’দিন থাকব আমরা, তারপর বুলাওয়েওতে যাব। সব মিলিয়ে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা প্লেনে থাকতে হবে আমাদের।’
‘বারবার প্লেন বদল করার দরকার কি, মিসেস ড্যান্স বললেন। ‘আমি বরং একটা প্রাইভেট ইন্টারকন্টিনেন্টাল-রেঞ্জ জেট চার্টার করি, ককপিট ও কেবিন ক্রুসহ। নার্স সিলভিয়াও সঙ্গে যাবে, আমার দেখাশোনা করার জন্যে। রানা বা লরেলি কিছু বলছে না দেখে আবার তিনি মুখ খুললেন, ‘তাহলে সেই কথাই রইল। কাল সকাল দশটায় এয়ারপোর্টে যাচ্ছি আমরা।’ *এত সব আয়োজন এরইমধ্যে শেষ করতে পারবেন?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘কেন পারব না । এটা মার্কিন মুল্লুক, এখানে টাকা কথা বলে ।’
নিচে আটলান্টিক, আকাশের পঁয়ত্রিশ হাজার ফুট ওপরে রয়েছে প্লেন। প্রাইভেট জেটটা অত্যাধুনিক গালফস্ট্রীম ফোর। কেবিনের ঠিক পিছনেই ক্রুদের কোয়ার্টার, তারপর গ্যালি ও সার্ভিস এরিয়া। ডাইনিং এরিয়া ও লাউঞ্জ পার হয়ে পিছনে যেতে হয়, ওখানে রয়েছে একটা স্যুইট কেবিন, দুটো সাধারণ কেবিন। প্রতিটি কেবিনে তিনটে করে বাঙ্ক আছে ।
আকাশে থাকতেই জেরা শুরু করলেন মিসেস ভ্যান্স। ‘ব্রাসেলসে আমাদের প্রোগ্রাম কি?
‘ওখানে আমার বন্ধু লোটন নড়বেল আছে,’ বলল রানা। লোটন নড়বেল সম্পর্কে সংক্ষেপে একটা ধারণাও দিল। জিম্বাবুয়েই জন্ম তার, একজন মুক্তিযোদ্ধা। জিম্বাবুই স্বাধীন হবার পর আদর্শগত বিভক্তির কারণে মুক্তিযোদ্ধারা বহু বছর পরস্পরের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে মেতে ছিল, সেই সংঘর্ষে লোটন নড়বেল- এর পক্ষ নিয়ে রানাও লড়াই করেছে। ফ্রিডম ফাইটার নামে পরিচিত একটা সশস্ত্র সংগঠনের লীডার হিসেবে যে এলাকায় অপারেশন চালাত নড়বেল, ঘটনাচক্রে সেখানেই খুন হয়েছে জেসিকা আর সাইফুর রহমান। সেজন্যেই তার সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। গৃহযুদ্ধ কোন সমাধান দিতে পারবে না, এই উপলব্ধি হওয়ায় দেশ ছেড়ে ব্রাসেলসে চলে এসেছে নড়বেল। ব্রাসেলাসে সে ব্যবসা করে। মার্সেনারিদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখে ।
“তারমানে ওই লোটা ন্যাটবেল না কি যেন নাম, তার অভিজ্ঞতা ধার করবে তুমি?’
“আফ্রিকা সম্পর্কে আমার নিজের কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে,’ সবিনয়ে বলল রানা। যদিও আমি বেশিরভাগ সময় লড়াই করেছি মোজাম্বিক সীমান্তের কাছাকাছি। তবে একটা কথা স্বীকার করি, নড়বেলের তুলনায় আমার অভিজ্ঞতা কিছুই নয়। জিম্বাবুইয়ে আমার ভাল কন্ট্যাক্ট আছে, কিন্তু নড়বেলের কন্ট্যাক্ট আরও অনেক ভাল। জিম্বাবুইয়ে এখনও তার আত্মীয়স্বজন আছে। ওর নাম লোটন নড়বেল, মিসেস ড্যান্স।’
‘ব্রাসেলসে আর কি কাজ আমাদের?’ জানতে চাইলেন মিসেস ভ্যান্স। “ওস্তাদ আর শিষ্য মিলে মাত্র দু’জন হলে। আমার তো ধারণা ছোটখাট একটা আর্মি ছাড়া জেসিকার খুনীদের ধরা সম্ভব নয়। কথাটা আরেকবার মনে করিয়ে দিই। টাকার কথা তোমাকে ভাবতে হবে না। প্রয়োজন মনে করলে যত বেশি সম্ভব মার্সেনারি ভাড়া করতে পারো তুমি।’
‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট বলে একটা কথা আছে, মিসেস ড্যান্স,’ বলল রানা। ব্রাসেলসে আমার জন্যে রানা এজেন্সির আফ্রিকান চীফ মামুন অপক্ষা করছে।’
‘এই মামুন সম্পর্কেও আমার একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার,’ বললেন মিসেস ড্যান্স। কারণ, সেই তো আমার নিরাপত্তার দিকটা দেখবে, তাই না? মামুনের ইতিহাস রীতিমত অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর। চুপচাপ ও শান্ত প্রকৃতির মেধাবি ছাত্র ছিল সে, ঢাকা ভার্সিটি থেকে ইংলিশে মাস্টার্স করার পর চাকরি না পেয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখছিল। রেজাল্ট বেরোবার পর হোস্টেলে থাকার অধিকার হারায়, কিন্তু ঢাকায় অন্য কোথাও থাকার জায়গা না পেয়ে বন্ধুদের পরামর্শে সীটটা দখল করে রাখে। গ্রামের বাড়িতে ফেরার কোন উপায় ছিল না, কারণ অশিক্ষিত সরল মায়ের ওপর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন কোন ছেলের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। জননীকে মামুন কথা দিয়ে এসেছে, চাকরি পেলেই ঢাকায় বাড়ি ভাড়া নেবে, মাকে নিয়ে এসে নিজের কাছে রাখবে। মাসের পর মাস কাটে, বছর ঘুরে আসে, চাকরি আর হয় না। অন্যায়ভাবে আর যারা হোস্টেলের সীট দখল করে রেখেছে বেশিরভাগই তারা বহিরাগত সন্ত্রাসী, পুলিস হোস্টেলে হানা দিলে তাদের সঙ্গে মামুনকেও পাঁচিল টপকে পালাতে হয়, সঙ্গীরা হাতে বোমা গুঁজে দিলে পুলিসকে লক্ষ্য করে ছুঁড়তেও হয় সেগুলো, কারণ এই সন্ত্রাসীরাই তার থাকা-খাওয়ার পয়সা যোগায়। এভাবেই হাতেখড়ি। তারপর ছোটখাট অপারেশনে যাবার ডাক পড়ল। হঠাৎ সবাই খেয়াল করল, মামুন নিজেও, ছিনতাই ও অপহরণের প্ল্যান এত নিখুঁতভাবে করতে পারে সে, ধরা পড়ার প্রায় কোন সম্ভাবনাই থাকে না। শুধু তাই নয়, যে- কোন অপারেশনে সবার আগে থাকে সে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নেয়, নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরেও আসে সবার আগে। সন্ত্রাসীদের মধ্যে তার কদর বেড়ে গেল। সবাই তাকে ‘গুরু’ বলে ডাকতে শুরু করল। পুলিসের খাতায় টপ মাস্তানদের তালিকায় তার নামটা চলে এল সবার ওপরে। এরপর একের পর এক অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য সব প্রস্তাব আসতে লাগল। রাজনৈতিক দল থেকে বলা হলো, আমাদের হয়ে কাজ করো, মাসে দু’চার লাখ টাকা নিয়ে যাও। ফেনসিডিল ব্যবসায়ীরা প্রস্তাব দিল কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি করলে দশ লাখ টাকা কমিশন পাবে। এত টাকার লোভ সামলানো কঠিন, তার ওপর সন্ত্রাসী ভক্তদের চাপ তো আছেই । এক বছরে প্রচুর টাকা কামাল মামুন, অথচ ঢাকায় কোন বাড়ি ভাড়া নিল না, গ্রাম থেকে মাকে নিয়ে এসে নিজের কাছেও রাখল না ।
এ-সব কথা অনেক পরে জেনেছে রানা। মামুনের সঙ্গে ওর পরিচয় হয় চরম সঙ্কটময় এক মুহূর্তে, জীবন-মৃত্যুর কিনারায় সে তখন ঝুলছে। বিসিআই হেডকোয়ার্টার মতিঝিল থেকে বেলা সাড়ে এগারোটার সময় একটা কাজ নিয়ে বেরিয়েছে রানা, গাড়িতে ওঠার মুহূর্তে শুনতে পেল রাস্তার ওপারে বোমা ফাটছে । সেদিকে তাকাতে বিশতলা বিল্ডিঙের নিচে লোকজনের ভিড় দেখতে পেল ও। বিল্ডিংটার নিচতলায় একটা ব্যাংক। লোকমুখে শুনল, একদল সন্ত্রাসী ব্যাংক লুঠ করতে এসে ধরা পড়েছে। সংখ্যায় ছিল ছয়জন, দু’জন পালিয়েছে, দু’জন গণপিটুনিতে মারা গেছে, একজন পালাতে না পেরে বিল্ডিঙের সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেছে।
রাস্তা পেরিয়ে বিল্ডিঙের ভেতর ঢুকল রানা, পুলিস ওর পরিচয় পেয়ে পথ আটকায়নি। তবে তারা ওকে সাবধান করে দিল, ছাদে কেউ উঠতে চেষ্টা করলেই বোমা ফাটাচ্ছে ছেলেটা, গুলি করারও হুমকি দিচ্ছে। খোলা ছাদে একাই উঠল রানা। রেইলিংবিহীন ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করতে যাচ্ছিল মামুন, রানাকে দেখে হাতের রিভলবার তুলল গুলি করার জন্যে। তার লম্বা করা হাতটা কাঁপছে দেখে নরম সুরে হেসে উঠল রানা, বলল, ‘আগে কখনও মানুষ মারোনি, এই প্রথম, তাই না?’ ‘কে আপনি?’ রেগে গিয়ে জানতে চাইল মামুন ।
*পরিচয় জেনে কি লাভ,’ বলল রানা। ‘উদ্দেশ্যটা বলি। আমি তোমাকে গণপিটুনি থেকে বাঁচাতে চাই। জানো নিশ্চয়ই, নিচে তোমার দুই সঙ্গীর লাশ পড়ে আছে?’
হাত কাঁপলেও, গলা কাঁপেনি মামুনের। “ভয় দেখিয়ে কোন কাজ হবে না । যান, বিদায় হোন, নিজের চরকায় তেল দিন গিয়ে।
“পাবলিক খেপলে কি ঘটে, তোমার তো জানার কথা, বলল রানা। খুব বেশি হলে আর দশ-পনেরো মিনিট লোকজনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে পুলিস। “উপদেশ দেবেন না । গা ঘিন ঘিন করে। যান, কেটে পড়ুন। আমি চাই না আমার সঙ্গে আর কেউ মারা যাক।’
“তুমি তাহলে গণপিটুনি খেয়ে মরতে চাইছ?’ রানা বিস্মিত
হেসে উঠে মাথা নাড়ল মামুন। ‘আপনি আমার সময় নষ্ট করছেন। শেষ একটা সিগারেট খেয়ে নিচে লাফ দেব আমি, আপনার পাবলিক বা পুলিস আমাকে জ্যান্ত ছুঁতে পারবে না।’
“কি আশ্চর্য, তোমার মত একটা কাপুরুষ ব্যাংক ডাকাতি করতে আসে কিভাবে?’
‘কি বললেন?’
‘আমার যা পেশা, প্রায়ই আমাকে তোমার মত কোণঠাসা অবস্থায় পড়তে হয়,’ বলল রানা। ‘আমি কিন্তু কখনোই কাপুরুষের মত আত্মহত্যার কথা ভাবি না। আমি সব সময় আত্মরক্ষার কথা ভাবি, এবং কোন না কোনভাবে উপায় একটা পেয়েও যাই।’
হাতের রিভলবারটা ফেলে দিল মামুন। “মিথ্যে ভয় দেখাচ্ছিলাম। ওটায় কোন গুলি নেই। সঙ্গে আর কোন বোমাও নেই। ধরুন, সিদ্ধান্ত পাল্টেছি। এখন আমি নিচে লাফ দিতে চাই না। এবার বলুন, আমার বাঁচার উপায় কি?
*দেখলে তো, সত্যি সত্যি মরার কোন ইচ্ছে তোমার নেই। কারণ, তুমি কাপুরুষ নও। আর কেউ যদি বাঁচতে চায়, নিয়তি বা প্রকৃতি ঠিকই তাকে সাহায্য করবে
“আমাকে কে সাহায্য করবে?’
‘কেন, আমি,’ বলে পকেট থেকে নিজের রিভলবারটা বের করল রানা। “আমি তোমাকে অ্যারেস্ট করছি। আমার সঙ্গে পুলিসের গাড়িতে চড়ে থানায় যাবে তুমি।’
‘ও, তারমানে সিভিল ড্রেসে পুলিস আপনি,’ মামুনের গলায় তাচ্ছিল্য। ‘পুলিসকে আমি ঘৃণা করি। আপনি যদি আর এক পা-ও এগোন, এখুনি আমি লাফ দেব।’

বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!

বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top