অবৈধ অরণ্য – শফিউদ্দিন সরদার – ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড – Free PDF Download এই বইটি ডাউনলোড করে নিন এখনি। আরো নতুন নতুন বই পেতে ভিজিট করুন আমাদের বই লাইব্রেরি।
মহান আল্লাহ বলেন –
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
আল কুরআন
জগতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক সময়ে কিছু মানুষ এমন ছিল যারা অজানাকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছে বিশ্বজগতের গূঢ় রহস্য, অবলোকন করেছে পরম বিস্ময়ের সাথে মহাকাশের লীলাখেলা। এই মানুষগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি এবং এত সুন্দর কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের সোপান বেয়ে তরতর করে। এই পথচলার মাঝেই আরেকটি ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এই ওয়েবসাইট। এখানে বাংলাভাষায় এবং অন্যান্য সকল ভাষায় পরবর্তীতে সর্বাধিক বইয়ের লাইব্রেরি করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। বারবার এই সাইট বন্ধ হয়েছে, অন্য নামে আবার এসেছে, আসবে। এইজন্যে আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা প্রতিনিয়ত সাইটে ভিজিট করে যাবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের জানাবেন কোনো সমস্যা থাকলে।

বইটি সম্পর্কেঃ
অনুবাদঃ শফিউদ্দিন সরদার
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৩০
অবৈধ অরণ্য – বইটির এক ঝলকঃ
আরে এই- এই, এই বুরবক, গাড়ী গাড়ী, সামনে গাড়ী, সর্ সর্
রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে হাঁক দিলো ফতে আলী মহাজন। মিঃ চাধারীর ভাষায় ‘ফাটালী ‘মাজন’ ।
শহরের সদর রাস্তা। রাস্তাতো নয়, এটা এখন নরকের একাংশ। লোকজনের ভিড়ের মাঝে বেপরোয়া ছুটছে জীপ-বাস, হুন্ডা-সাইকেল, রিকশা-ভ্যান। ছুটছে অগ্র পশ্চাৎ। কোন ট্রাফিক পুলিশ স্পীডব্রেকার বা কোনরকম কোন নিয়ন্ত্রণ নেই যানবাহনের চলাচলের। ফলে, রাস্তা দিয়ে হাঁটার তো কোন প্রশ্নই উঠে না, রাস্তাটা পাড়ি দেয়াও বিপজ্জনক। ওদিকে আবার, আগে রাস্তার পাশ দিয়ে আরামেই হাঁটা যেতো। এখন সেটা একটা রীতিমতো ঝকমারি ব্যাপার। স্বাধীন বাংলার সোনার ছেলেদের বাঁদরামী আর ইতরামী রাস্তার দুইপাশ দিয়ে চলাচল দুঃসাধ্য করেছে। তাদের ফ্রিস্টাইল জটলা, চিৎকার, নাচানাচি, কুঁদোচুঁদি আর বিড়ি-সিগ্রেট ফুঁকাফুঁকির ভিড় ঠেলে রাস্তার পাশ দিয়ে চলা আর সহজসাধ্য নয়। বিশেষ করে, ভদ্র আর নিরীহ লোকদের পক্ষে মানসম্মান বাঁচিয়ে পথচলা এখন একটা গলদঘর্মের ব্যাপার। পান থেকে চুন খসলে জানটা বাঁচানোও অনেক সময় দায়। স্বাধীনতার ধ্বজাবাহী আর বখাটেদের কাছে রাস্তাটা যেন ইজারা দেয়া।
এখানেই শেষ নয়। যানবাহনের শব্দ আর মানুষের কোলাহলের সাথে আছে বেশুমার মাইকের বেনজির দৌরাত্ম। দোকানে, রেস্তোরাঁয় আর বিশেষ করে, দুইপাশের ঘরের ছাদে পাল্লা দিয়ে বেজে চলেছে নিয়ন্ত্রণহীন অসংখ্য মাইক। হঁক্কা মারা হিন্দিগান আর কুৎসিৎ বাংলা গানের কলি তালা লাগাচ্ছে পথচারীদের ‘কানে। গৃহবাসীদের কানও এখন অষ্টপ্রহর ঝালাপালা। মাইকের দৌরাত্ম্যে রাস্তায় আরো উদোম। “হৈ হৈ কান্ড রৈ রৈ ব্যাপার,” “ সুখবর সুখবর,” “একটি ঘোষণা” “অমুক ভাইয়ের জনসভায় যোগদিন যোগদিন” ইত্যাদি এলানবার্তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাজছে সিনেমা হলের সিনেমার উৎকট প্রচার। বোঝার উপর শাকের আঁটি এখন আবার সামনেই ইলেকশান। রাজনৈতিক পাণ্ডাদের কর্ণভেদী ক্যানভাস আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে মিছিল-মিটিং এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশকে গোরআজাবে পরিণত করেছে। এমতাবস্থায় রাস্তায় এসে নামলে নরক দেখার অধিক আর বাকি থাকে কি? বলা বাহুল্য, সেই থেকে আজও এ দৃশ্য বিরল নয় ।
এই অবস্থা সামনে নিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে ফতে আলী মহাজন। কুলির খোঁজে দাঁড়িয়ে আছে সে। কয়েক বস্তা অবৈধ মাল রাত্রিকালে ইস্টিশনে পৌঁছানো তার দরকার। মনে তার আশা-নিরাশার দোলা। ভাবছে, ভুষিমালের মালের সাথে ঐ বস্তাগুলো বুক্ করতে পারলেই বাজিমাৎ। একদানেই সে মহারাজ। সমস্যা হয়েছে তার মালগুলো ইস্টিশনে পৌঁছানো নিয়ে । স্টেশানটা দূরে নয়। কিন্তু চেনা কুলি হলে চলবে না। চেনা কুলিরা মহাজনকে ভালভাবেই জানে। রাত্রিকালের কারবার। সন্দেহ করে বসবে তারা- এই তার ভয়। এ কারণে নতুন কুলি চাই তার। অজানা-অচেনা লোক চাই। এই নতুন কুলি ধরার উদ্দেশ্যে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে ফতে আলী মহাজন । নজর তার রাস্তার ওপর স্থির। বিশেষ করে চলমান কুলি মুটেদের ওপর। এই সময় সে দেখলো, এক জটাধারী সন্ত্রাসী ওপার থেকে রাস্তা পাড়ি দিয়ে এপারে আসছে। রাস্তার মাঝামাঝি আসতেই একটা ছুটন্ত গাড়ী জটাধারীর সামনে এসে গেল। মহাজনের মনে হলো সন্ন্যাসীটা গাড়ীর নিচে পড়ে আর কি । সন্ন্যাসীর নজর খুব তিক্ষ। তবু ফতে আলী মহাজন আওয়াজ দিয়ে উঠলো- “ আরে এই বুরবক, গাড়ী গাড়ী, সর্ সর্” ইত্যাদি । লোকটা শম্ভুজী। দ্রুতপদে ছুটে সে রাস্তার এপারে এলো এবং ফতে আলী মহাজনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে বললো- ব্যোম্ শংকর বোম শংকর্ । কিয়া তাজ্জব তুম্হারা এহি ছহর বেটা। আদমী গাড়ী পর সোওয়াব হোগা, ইয়ে ঠিক হ্যায়। লেকেন গাড়ি আদমী পর সওয়াব হোগাইয়ে তো ম্যায় কভি নেহি দেখা ।
ফতে আলী মহাজন ব্যঙ্গ করে বললো- নেহি দেখা তো, আর একটু দেরি কররেই দেখতে পেতে! আহম্মক কাঁহাকার! সদর রাস্তা পাড়ি দেয়ার সময় হা করে এদিকে তাকিয়ে কি দেখছিলে? শম্ভুজী বললো- দুকান-উকান বেটা, কুয়ী দুকান-উকান
মহাজন বললো- দুকান উকান!
হাতে গাঁজা ডলার ভঙ্গি করে শম্ভুজী বললো, থোড়া মাল মশলাকা দুকান উকান । ঃ কি, গাঁজা ?
: হুঁ হুঁ বেটা। ছংকরহীকা পেরসাদ। হ্যায় কুয়ী দুকান-উকান ইধার?
ঃ তোমার কতখানি দরকার?
ঃ দরকার তো জিয়াদা ভি হ্যায়, লেকেন-
: জিয়াদা পয়সা নেহি হ্যায়?
: হুঁ হুঁ বেটা। ঠিক বাত্ কাহা । উলিয়ে ম্যায় জিয়াদা মাংতে নেহি। সেরেফ দো- তিন গুল্লি-
হঠাৎ সেখানে এসে হাজীর হলো গোলাম আলী। মিঃ পাটোয়ারীর খাদেম গোলাম আলী। বললো- আরে গুল্লিমারো! ফদে আলী মহাজন ইচ্ছে করলে দো-তিন গুল্লি কোন্ বাহ্, দো-তিন গুদাম ভি সাপ্লাই করতে পারে।
এরপর শম্ভুজীকে লক্ষ করে বললো, আরে কে? বাবা শংকরজি? সেলাম বাবা সেলাম । সেলামের জবাবে শম্ভুজী বললো- সেলাম বেটা-জিতা রহো। লেকেন ফতে আলী বললো- হজামন নয় বাবা, মহাজন। মহান যে জন সেই হচ্ছে মহাজন । আর সেই মহান ব্যক্তি একেবারে স্বয়ং সম্মুখে- মহাজনের প্রতি ইংগিত করলো। মহাজন রুষ্ট কণ্ঠে বললো, গোলাম আলী-
গোলাম আলী বললো, কোন কুসুর নেবেন না সার্। মাথাটা আমার বিলকুল বিগড়ে গেছে। একদিকে মহাজন আর একদিকে জনদন! মানে স্বয়ং শিব! কাকে ছেড়ে যে কাকে দেখি কিছুই ঠাহর করতে পারছিনে। একটা ট্রাং মাথায় মংলু এসে’ গোলাম আলীকে উদ্দেশ্য করে বললো, হাই বাবু, হামি ভি কুচু ঠাহর করতে পারচেক লাই। তুর সামান হামি কুথায় রাখবো, বুলে দে না?
গোলাম আলী মেজাজের সাথে বললো, কোথায় মানে? মাথায় রাখবি। গোটা একখানা টাকা বন্দোবস্ত । ইয়ার্কি পেয়েছিস্ না? এই মাল পাটোয়ারী সাহেবের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তবে তোর ছুটি ।
: হুঁ, সি কুথা হামি বুঝিয়া লিছি। আখুন তু বল, উ বাবুর মকান কুথায়?
ঃ আমার সাথে গেলেই দেখতে পাবি । এত তাড়া কিসের? ভারী লাগলে এখানে নামিয়ে একটু আরাম কর ।
ঃ হুঁ বাবু, ই কথা তুই ঠিক বুলেছিস্ ।
ট্রাংটা নামিয়ে রাখলো। নামিয়ে রাখার সময় গন্ধ শুঁকে বললো আহ! কি খুসবু ! খাছ বিলাইতি, লয় বাবু?
: তবে কি তোমাদের মতো ধেনো, না তোমাদের হাঁড়িয়া? বিলাইতি মাল। এক এক বেতলের দাম কমছে কম তিনশো টাকা। চোরই মাল বলে এত সস্তা পাওয়া গেল । একথায় মহাজন লাফিয়ে উঠে বললো, এ্যা। চোরাই মাল কোথায় পাওয়া গেলরে? আর আছে?
গোলাম আলী বললো, আপনি আবার এদিকে নজর দিচ্ছেন কেন সাব। আপনি তো চলেন স্থলপথে। এটা যে জলপথ।
মহাজন বললো, আহ্, এই হলো তোমাদের দোষ। ব্যবসায়ীর আবার জল-স্থল কি হে? যেখানে দুটো পয়সা, আমিও সেখানে ।
শম্ভুজী গোলাম আলীকে বললো, কেয়াবাত্ বেটা? ম্যায় তো কুয়ী সমস্তে নেহি?
গোলাম আলী বললো, বুঝলেন না মহারাজ? পাটোয়ারী সাহেব তরলের ভক্ত। ইনি হচ্ছেন শুকনোর। মান এই যে-
হাতে গাঁজা ডলার ভঙ্গি করলো। হাঃ হাঃ করে হেসে উঠে শম্ভুজী বললো- বহুত আচ্ছা, বহুত আচ্ছা। সমঝ লিয়া।
মংলুর নজর এতক্ষণে শম্ভুজীর ওপর পড়লো । সে চমকে উঠে বললো, কে? একি, ছংকর বাবা! তু ইখানে?
শম্ভুজী বললো- ই বেটা। থোড়া সফর কনেকে লিয়ে আয়া হুঁ। তুম্ ইধার কিয়া করতে হো?
ঃ কুলিগিরি বাবা। লছমী আখুন বহুত কামাই করচে। মাষ্টার বাবুর কাম করচে। লেড়কি কাম করবে তো বাপ বছিয়ে থাকবেক কেনে? হামও কুলিগিরি লাগাই দিছি বটে।
ঃ আচ্ছা কিয়া বেটা। এয়ছাই তো হোনা হোগা । মেহনত কা রোটি সব্ছে উম্দা সবছে বেহুতর।
ফতে আলী মহাজনের মুখণ্ডল উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। এমন কুলিই চায় সে। এই রকম আনকড়াই তার দারকার। সে মংলুকে উদ্দেশ্য করে বললো এই, তুই আমার কাম করবি? মংলু বললো, তোর কাম! কি কাম বাবু?
মহাজন বললো কুলিগিরি। একদম বাঁধা কাম । যখন যে মাল যেখানে পৌঁছানো দরকার, তুই পৌঁছে দিবি । পারবি?
ঃ হুঁ হুঁ, জরুর পারবেক। কেনে পারবেক লাই? মাল পৌঁছাই দিবেক আওর পয়ছা লিবেক । রাত লাগলে লেড়কির কাছে-
মহাজন ব্যস্ত কণ্ঠে বললো না না, রাতে কোথাও যাওয়া চলবে না। আমার কাজ রাতেই বেশি। বরং ইচ্ছে করলে তুই দিনে দু’একবার যেতে পারবি। রাজি?
ঃ হুঁ বাবু, জিয়াদা পয়ছা দিলে রাতদিন সোব্ সুময় হামি মাল টানি দিবেক বটে ।
ঃ নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই । যেমন কাম তেমন দাম । এখন যা উপায় করছিস্ তার ডাবল পয়সা পাবি।
ঃ ডবল পয়সা ? তু ঠিক বলছিস্ বাবু?
ঠিক মানে, এই ফতে আলী মহাজন একটা ফালতু লোক নয়, বুঝলি? তার মানে? তার যে কথা সেই কাজ । এই নে দু’টাকা অগ্রিম। আগাম দু’টাকা নে। আজ সন্ধ্যার সময়ই কাজে চলে আসবি।
পকেট থেকে দুটো টাকা বের করে মংলুর হাতে দিলো ।
মংলু বললো- সন্ধ্যার সুময়? কিন্তু তুর মাকান তো হামি চিনলেক লাই বাবু?
ঃ মাকান চেনার দরকার নেই। দোকান চিনলেই হবে।
এরপর গোলাম আলীকে লক্ষ্য করে বললো- গোলাম আলী, ওকে একটু চিনিয়ে দিও। গোলাম আলী বললো, কোন্ দোকান সার্? আপনার দোকান তো আবার একটা দুটো
নয়।
মহাজন বললো, আপাতত আমার রেশানের দোকানেই ওকে নিয়ে যাবে। সেখানে যদি আমাকে না পাও, তাহলে ঐ মহাজন এন্ড কোম্পানী
মহাজন চলে যেতে উদ্যত হলো। শম্ভুজী তার সমনে এসে বললো ব্যোম্ শংকর । খোড়া ঠাইরিয়ে বেটা,
মহাজন বললো- কি, ভিক্ষে?
ঃ নেহি বেটা। শংকরজিকা পেরসাদ। এক দো ছিলুম যো কুছ মিলেগা
ঃ ও হ্যাঁ হ্যাঁ। তা গাঁটে কত আছে? দাম দিতে পারবে তো?
কোমরে হাত দিয়ে শম্ভুজী বললো- আট আনে হ্যায় বেটা, আট আনে-
মহাজন বিকৃত কণ্ঠে বললো, ওঃ! তবে তো তুমি একদম রাজা। এত পুঁজি নিয়ে খামাখা গাঁজার পেছনে ছুটছো কেন? একটা রাজ্য-টাজ্যই কিনে নাও গে-
ঃ কিয়া বেটা?
: দো রুপিয়া কলাগে গা। এক ছিলুমকা দাম কড়কড়ে দো রুপিয়া- বুছেছো?
: ঠিক হ্যায়। আগারী তুমহারা দোকান হামকো পয়চান করিয়ে দে, ম্যয় ভিখ্ মাংনেছে দো রুপিয়া দে দেউঙ্গা ।
ঃ তাহলে আগে ঐ ভিখ্ই মাঙ্গো, পরে দোকান দেখো । যত্তসব!
ফতে আলী রুষ্টভাবে চলে গেল। ব্যোম্ শংকর আওয়াজ দিয়ে শম্ভুজী নীরব হলো। সমবেদনা জানিয়ে গোলাম আলী বললো- কসাই কসাই । ব্যাটা একদম কসাই ।
হা করে চেয়েছিল মংলু। এবার সে অপার বিস্ময়ে বললো- হাইরে বা ছংকরজী ভিখ মাংবে? লাই ছংকরজি। তুলে এই দো রুপিয়া-
মহাজনের দেয়া সেই দুই টাকা শম্ভুজীকে দিতে গেল। কিন্তু তেড়ে এলো গোলাম আলী । সে ধমক দিয়ে বললো- আরে থাম্ বেটা কুলি। এই মহারাজকে চিনিস? একটা ছু-মন্তর ঝাড়লে দুনিয়াটা গোটাই রসাতল হয়ে যেতে পারে। তাকে দিতে চাস্ কিনা মাত্তর দু’টাকা দক্ষিণা, এই নাও বাবা, আমি পাঁচ টাকা দিচ্ছি। আমাকে শুধু একটা দোআ- তাবিজ দাও বাবা। কাজে কামে বড় একটা হুঁশবুদ্ধি পাইনে।
গোলাম আলী পাঁচ টাকার একটা নোট শম্ভুজীর হাতে দিলো। টাকাটা কোমরে গুঁজতে গুঁজতে শম্ভুজী বললো ঠিক হ্যায় ব্যাটা। এই লেলো-
টাকা গুঁজে রেখে কোমর থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে গোলাম আলীকে দিলো। কাগজটা কপালে ঠেকিয়ে গোলাম আলী বললো- জয় মহারাজ- জয় মহারাজ। আসুন বাবা, আমাদের সাথে আসুন, আপনাকে আমি এক্ষুণি এক ছিলুম গাঁজা ফ্রি কিনে দিচ্ছি।
মংলুকে আসার ইঙ্গিত দিয়ে শম্ভুজীসহ গোলাম আলী রওনা হলো। মংলু তখন আর ইহ জগতে নেই। এক কদমও না নড়ে সে স্বগতোক্তি করলো- হাই ভাগোয়ান! ছংকর বাবা দাওয়াই জানে! উতে কাম হয়। তাজ্জব! হামি ছালা একটা চিড়িয়া আর্চি বটে। এতদিনেও উকে হামি চিনতে পারলেক লাই। কিছুদূর এগুনোর পর গোলাম আলী সগর্জনে বললো- আরে এই ব্যাটা বুনো, চলে আয়-
চমকে উঠলো মংলু । ট্রাংকটা মাথায় তুলে নিয়ে সে সংগে সংগে তার পেছনে ছুটলো ।
দুই রমণী গল্প করছে পাশাপাশি বসে। দুইজনের একজন ঘরপোড়া গরু আর অন্যজনের ঘর পুড়বো পুড়বো করছে। দুইজনই দুই-এর কাছে কিছুটা পরিচিত, কিন্তু কেউ কারো ভেতরের খবর জানে না। এদের একজন রাজিয়া বেগম রোজী, অন্যজন মোসলেমা খাতুন মমতা। মমতা এসেছে পাটোয়ারীর কাছে হেড মাষ্টার মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। মামুনকে জব্দ করতে চায় সে। পাটোয়ারী সাহেব ভেতরে ব্যস্ত থাকায় ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে দুই রমণী, তথা দুই যুবতী। গল্পে গল্পে এসে পড়েছে মমতার মর্মদাহের কথা। মামুন কর্তৃক মমতার উপেক্ষিত বা অপমানিত হওয়ার কথা। মমতার কাহিনীর মধ্যে মিস্ রোজী তার নিজের জীবনের একটা মিল খুঁজে পেয়েছে। মজলুম হিসেবে নয়, জালিম হিসেবে খুঁজে পেয়েছে মিলটা। প্রতারিতের নয়, প্রতারকের ভূমিকায় অবস্থান এখন মিস্ রোজীর। তাই সে ঝুঁকে পড়েছে মমতার কথার মধ্যে । প্রশ্ন
বইটি ডাউনলোড করে নিন নিচের দেয়া লিঙ্ক থেকে এবং পড়ে নিন সহজেই। লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে না পারলে আমাদের জানিয়ে দিন। ফিক্স করে দেয়া হবে। অথবা নিচে কমেন্ট করুন কেমন লাগলো বইটি!
বই পড়া অনেকের জন্য নেশা, অনেকের জন্য পরম ভালোবাসার একটি বস্তু। এই বইকে আমরা সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়ার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি, তাই আমাদের সাইট আমরা ডিজাইন করেছি ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বজায় রেখে। সাইটের কোনো ধরনের ইস্যু নিয়ে কোনো মতামত থাকলে জানাতে পারেন, এবং বই এর জন্যে রিকুয়েস্ট করতে পারেন উপরে বাটন দেয়া আছে নিচেও লিঙ্ক দেয়া আছে। সর্বোপরি সকলের সহযোগিতা কাম্য সাইট চালাতে হলে, ইনশাআল্লাহ আমরা সকলেই বই পড়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো!